আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেট! ভারত পাকিস্তান ও আমরা।।।



ক্রিকেট খেলার সাথে আমার পরিচয় আজ থেকে না, ঊনিশশো কটকটি ষাল থেকে। ছোট্ট বেলাতেই আমার ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি। একদিন হঠাৎ করেই একটা লম্বা তক্তা আর টেনিস বল এনে দিল মামা। ওই তক্তাটির নাম ব্যাট। টেনিস বল তো অনেক আগে থেকেই চিনতাম।

আরো অনেক আগেই এই গোল জিনিষটি দিয়ে আমি খেলেছি। সবুজ সুন্দর গন্ধযুক্ত এই জিনিষটি আমার খুবই পছন্দ। নতুন বলের গন্ধ আমার খুবই পছন্দ ছিল। প্রায়দিনই আমি নতুন বল কেনার বায়না ধরতাম। তো এই বল ব্যাট নিয়ে শুরু হল আমার ইন্ডোর ক্রিকেট প্র্যাক্টিস।

সেকি দিন ছিল! রান, উইকেট, আউট, নিয়মকানুন কিছুই জানতাম না। একটাই প্রয়াস ছিল তক্তা থুক্কু ব্যাট দিয়ে বলটাকে কত জোরে মারা যায়! দেয়াল ছিল আমার বল আর আমি একমাত্র ব্যাটসমান যার কোনো পারটনার নাই। একাই দুইশ। সচিন টেন্ডুলকার এর মতো। দুঃখজনক ব্যাপার হল কত ফিল্ডার মেরে ফেললাম মেহরাব হোসেন অপির মত না বুঝে (ঢাকার মাঠের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা, রমন লাম্বা মারা গিয়েছিলেন)তার জন্য অপিকে কোন শাস্তি পেতে হয়নি কিন্তু আমাকে প্রচুর মাইর খেতে হয়েছে।

সব বাবা-মাই অন্তরের গভীরে জানেন, প্রয়োগ ও করেন। ফাউল পেচাল মেলা পাড়লাম, এখনও যারা পড়ছেন তাদের বলি আবার ক্রিকেট এর মহারন নিয়ে। আমি প্রথম ক্রিকেট খেলায় যে কেউ জিতে বা কেউ হারে এটা বুঝি ১৯৯২'র ওয়ার্ল্ড কাপ এ ফাইনাল খেলার সময়। টিভি সারাদিন চলছে, বড়রা টিভির সামনে সারাক্ষন। বাসায় ভাল ভাল রান্না।

দুপুরে হেব্বি খাওয়া দিলাম। সবাই ক্রিকেট নিয়ে আলাপে ব্যাস্ত। আমিও অতিউৎসাহে সবাইকে আমার ক্রীড়া প্রতিভা দেখানোর চেস্টা করলাম। কিন্তু কার আমার শতক দেখার আগ্রহ নেই! আশ্চর্য। বাংলাদেশে আসলেও প্রতিভার কন মুল্য নেই।

মন খারাপ হয়ে গেল। তবে বাসায় আরও মানুসজন আসায় আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলাম। গল্প-গুজব করলাম কিছুক্ষন। অবশ্য ৬ বছরের একটা যা গল্প করে আর কি! পাকনা পাকনা কথা বলে সবাইকে হাসানর চেস্টা। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল সন্ধ্যাবেলাতেও সবাই যখন আমাকে কার্টুন দেখতে দিলনা! সহ্য হয় এইসব? কি আর করা দেখতে বসলাম ক্রিকেট বা তক্তা-বল।

পরে দেখলাম একটু একটু বুঝি আর খুব একটা খারাপ তো না। আর পাকিস্তান অষ্টে্লিয়ার প্লেয়ারগুলাও তো বেশ। তো সেই প্রথম আমি খেলা বুঝলাম এবং পাকিস্তান যেহেতু জিতেছিল আমিও পাকিস্তান টিম এর সমর্থক হয়ে গেলাম! বাচচকাচচারা একটু সুবিধাবাদি হয়ই। মাইন্ড খেয়েন না। পরে যখন ফুল ক্রিকেট ফ্যান হয়ে গেলাম তখন পাকিস্তান টিম এর রমরমা অবস্থা।

2A সাঈদ আনোয়ার, আমির সোহেল ব্যাটহাতে চার-ছয় মারেন আর বলহাতে 2W ওয়াসিম আক্রাম আর ওয়াকার ইউনিস ব্যাটসমানদের বুকে কাপন ধরায়ে দেন। আমিও পাকিস্তান ক্রিকেট টিম এর একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে গেলাম। আমার চারপাশেও সবই পাকিস্তানি সাপোর্টার। স্কুল এ প্রায় সব বন্ধুই পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের স্টিকার নিয়ে ঘুরে। গল্প হয়, উফফ! কি বলিং ওয়াসিম এর, ছয়টা বল ছয়রকম।

ওয়াও! সাঈদ আনোয়ার এর কি সুন্দর ব্যাটিং স্টাইল! এরমদ্ধে অল্প সংখ্যক ইন্ডিয়ান সমর্থকও ছিল। তারা খুব একটা বেল পাইতো না। সচিন ত একাই। ওদেরতো আর সেরাকম বোলার ছিলনা। সচিনকে আমরা ভাও দিতাম কিন্তু বাকি আর সব? ফুহ! বাঙ্গালিরা তখনো ক্রিকেট এ তখনো অনেক নিচে।

তাদের খেলা টিভিতেও দেখাত না। মাঠ এ যেয়ে আমরা দেখতাম। প্রথম খেলা দেখতে গেলাম পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কার মদ্ধে একটা খেলা। কি আনন্দ আর উত্তজনা নিয়ে সেই খেলা দেখেছি। ২দিন আগে থেকে প্রস্তুতি।

কি পরব কয়ঘন্টা আগে যাব। মাঠ এ যেয়ে আমি অভিভুত! এত্ত মানুষ। আর কি মজা সামনাসামনি খেলা দেখা। আমার চোখের সামনে বিশ্বের সব নামিদামি খেলোয়াড়। ১৯৯৮'এ মিনি বিশ্বকাপ হলো।

মাঠ এ যেয়ে ২টা খেলা দেখেছিলাম। কত্ত টিম এসছিলো! খেলা দেখতে যেয়ে মামা ক্যালিস এর আর ক্রনিয়ের অটোগ্রাফ নিয়ে দিল। উফফ! কতদিন যে ডায়েরিটা বালিশ এর পাশে রেখে ঘুমিয়েছি। দিন গেল আর পাকিস্তান সাপোর্ট আর পাকাপোক্ত হল। তারপরই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ও সামিল হয়ে গেল বিশ্বক্রিকেট এর দরবার এ।

আমরা তখন সেভেন এ পড়ি, নির্মাণ স্কুলক্রিকেট দেখতে যাই এম্পি হোষ্টেল মাঠে। দলবেধে যাই। আর বাংলাদেশ এর খেলা এখন থেকে টিভি তে দেখাবে, খুশির সীমা নাই। বড় বড় দলগুলি আসবে আমাদের মাঠে খেলতে। সাব্বাশ বাঘের বাচ্চারা।

চালিয়ে যাও। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ এ বাংলার বাঘরা ৩১মে এক মহাকাব্বো্ রচনা করে ফেললো! পাকিস্তান বধ ক্রলো বীর বাঙ্গালি ক্রিকেটার’রা। কি যে খুশি হয়েছিলাম, নাচ, গান আর ফুরতি চারপাশে। পাকিস্তান কে আগে থেকে সাপোর্ট ক্রলেও নিজের দেশ তো সবকিছুর আগেই সবসময়। এরপরই চলে আসলো সেই বিতরক, “পাকিস্তানিদের যারা সাপোর্ট করে তারা ১৯৭১ এর মতই রাজাকার!” আগেও এম্ন কথা উঠতোনা যে তা না কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দরবার এ ঢোকার সাথে সাথে এই রব উঠলো অনেকদিকে! ইন্ডিয়ান সমর্থকরা আগে এইকথা ব্লতো আর পালটা জবাব ছিল “মালু”।

“রাজাকার বনাম মালু” পরিবেশ হয়ে গেল চারিদিকে। ক্রিকেটখেলা শুধু খেলা না, এর দ্বারা পুরজাতিই পরিচিতি পায়। কথাটি বহুলাংশে ঠিক। আমার এক বন্ধু সেদিন বললো পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলার পর আমার খুশি দেখে ব্ললো, “ছিহ! তুই এখনও পাকিস্তানকেই সাপোর্ট করিস? পাকিস্তান এর নাম শুনলে বা পাকিস্তানিদের সমর্থন ক্রলে কত বাঙ্গালি বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও তাদের পরিবার’রা কস্টো পায়; তাদের কথা কি তোরা ভাবিস? বাংলার হন্তারকদের নামে তরা জয়োধধনি দিস, ছিহ। ” আমি জোর গলায় বললাম তা কেন হবে? খেলা আর দেশযাবে সাথে কি যুদ্ধ আর রাজনীতি ও মেশানো যাবে? সেও তার যুক্তি দেখালো যে তাহলে একটা টিম জিতলে সবাই বলে ওই দেশটির নাম।

কেউ সাথে ক্রিকেটটিম কথাটা উচ্চারন করে না! আর ক্রিকেট এর যেপরিমানে প্রসার ঘটেছে তাতে এখন এটা দলভিত্তিক না দেশভিত্তিক খেলা হয়ে গেছে। অকাট্য যুক্তি! তাইবলে এতদিন এর ক্রিকেটপ্রেম কি বাদ দিতে পারি? আমিও পাকিস্তান রাস্ট্র ও এর রাজনীতিকে মনেপ্রানে ঘৃনা করি; যারা পাকিস্তানের ও ৭১’এ ওই কুত্তাদের পক্ষে কথা বলে তাদেরকে মারার অথবা বিকৃত শাস্তি দেয়ার প্ল্যান করি। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটটিম এর কেউ কি এখনো আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে কোন অপমান করেছে? আমার জানা নেই, আমার দৃষ্টিতে বা অনুভবে এখনো পাইনি। আপনারা পেয়ে থাকলে আমাকে দয়া করে জানাবেন। আমার কথা হচ্চে ২০০ বৎসর এর নির্মম শাসন এর পরও আমাদের পুর্বপুরুষরা ইংল্যান্ডকে সাপোর্ট করতে পারে, ইংল্যান্ড এ যেয়ে বসবাস করতে পারে তাহলে আমরা শুধু পাকিস্তান ক্রিকেটটিম কে সাপোর্ট করলেই রাজাকার হয়ে যাব? ইন্ডিয়া আমাদেরকে ১৯৪৭ থেকে এপর্যন্ত কত ভাবে যে হত্যা, শাসন, শোষণ করেছে এবং এখনো ক্রচে তার জন্য কি আমরা ইন্ডিয়ান সাপোর্টারদের কিছু বলা হয় না ওদের সরকারকে কিছু বলা হয়? আল্লাহই জানে আমার নাম আবার রাজাকার এর লিষ্টে উঠে যায় কিনা??? কোনো মহান শহীদ বা তার পরিবারকে আমাদের কোনো সরকারই পাত্তা দেয়না।

এতো আমরা সবাই দেখি। আমরা সাধারণ মানুষই তাদেরকে ভালবাসি। এই শহীদ এবং জীবিত মুক্তিজোদ্ধারা ও তাদের পরিবারকে সাধারণ মানুষ অকুন্ঠ সম্মান দেয়। কিভাবে বললাম? আমার সবচেয়ে বড়মামা ৭১’এ মারা গেছেন। সেইকথা বলার পরে সবার যে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পাওয়া যায় তা আমি নিজে দেখেছি।

তাই আমি বলতে চাই (ভাষণ হয়ে গেল তো! ভয় নেই আমি জীবনেও নেতা হব না!!!) যদি কারো খারাপ লাগে যে এদেশে ৭১’এ’ই পাকিস্তান ক্রিকেটটিম এর সাপোর্টার তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্চি আমাদের সবার পক্ষ থেকে। এতসবকিছু বোঝার আগেই এই দলটির সাপোর্টার হয়েছিলাম, সমর্থন ছেড়ে দেয়ার ও অনেক চেষ্টা করেছি এখনো করছি, কিন্তু পারছিনা যে ভাই! বাংলাদেশ ক্রিকেটটিম এর পর পরই এই টিমটার প্রতি অজানা সমর্থন চলে আসে আমার, আমি তো ভাই পারছিনা পাকিস্তানিদের মত গাদ্দার, কুত্তা, খেকশিয়ালদের এই ক্রিকেট খেলাটা বর্জন করতে?? হয়তো আমি বাঙ্গালি বলেই! ওদের মতো গাদ্দার হলে অবশ্যি পারতাম! যাইহোক, একা একা যথেস্ষ্ট ফ্যাচফ্যাচ করলাম। কেউ যদি এখনো থেকে থাকেন তাহলে অবশ্যি আমাকে ধরে পিটানোর চিন্তা করছেন। ভাই, মাফ চাই। আর ভুল হবে না( যদিও শুনসি মানুষ মাত্রই ভুল!) এম্নিতে আমি খুবই "চুপচাপ" কিন্তু পাকিস্তান আর ইন্ডিয়ার খেলা তো তাই আর চুপ থাকতে পারলাম না!! আর এমন কথা শুনে এত কষ্ট পেয়েছি যে নিজে নিজেই বকবক না করে পারলাম না।

প্লিজ, কেউ ভেবে বসবেন না যে এই লেখাটা আমি পাকিস্তানিদের পক্ষে লিখলাম!!! না!!!আমি ওদেরকে ততোটাই ঘৃণা করি যতটা একটা তেলাপোকা বা কেচোকে করি। পেলে পিষে মেরে ফেলব, গু বের করে ফেলব। এটা শুধুই আমার সমর্থন আর কালকের মহারণ এর জন্য আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। যাইহোক ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানি খেলোয়াড় ও সমর্থকদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। টিভির সামনে দেখা হবে(ময়দানে তো আর যাইতে পারব না)!!! পুনশচঃ যদি কারেন্ট থাকে আর কি তাহলে দেখা হবে! নয়ত রাস্তায় উস্কোখুস্কো যে ছেলেটিকে বাংলাদেশ এর জার্সি পরে টিভির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন বুঝবেন ওইটাই আমি!!! নাজরেন


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.