আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনলিপিঃ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ... :দীর্ঘশ্বাসের ইমো:

ইহা একটি তেলাপোকা ব্লগ, ম্যালাদিন ধইরা টিকা আছে, তেলাপোকার মত।

০১. আজকে জুম্মার নামাযে যাই নাই, কেন যেন ভাল লাগতেছে না, বসে আছি অফিসেই, আমি সেই কয়েকটা অভাগাদের মধ্যে একজন যারা শুক্রবারেও অফিস করে। অবশ্য শুক্রবারে অফিস করার একটা বড় সুবিধা হল, অফিসে বস, টস কেউ থাকে না। যে বনে বাঘ নাই, সে বনে শেয়ালই রাজা। শেয়াল হয়ে রাজত্ব করতে খুব একটা খারাপ লাগে না।

তাছাড়া শনি আর রবি টানা দুইটা দিন অফ পাই। লাইফ ইজ নট ব্যাড অ্যাট অল। ০২. আজকে রাতে স্বপ্নে দেখলাম, টিভির সামনে বসে আছি, এখনকার টিভিটা না, ১৯৯২ সালের আমাদের বাসার সেই ন্যাশনাল সাদাকালো ১৪ ইঞ্চি টিভিটার সামনে। টিভিতে সেই গোল রঙের একটা সাদাকালো গোলক, পরে কালার টিভি কেনার পরে জেনেছি গোলকটা আসলে রঙিন। একটা টুউউউউ করে শব্দ হত বিকেল পৌঁনে পাঁচটা থেকে।

তিন মিনিট আগে থেকে যন্ত্রসংগীতে বাজত, ও আমার, বাংলাদেশের মাটি। এরপরে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত, এরপরে বাইবেল, গীতা কিংবা ত্রিপিটক পাঠ। ত্রিপিটক পাঠ করতেন শীল ভদ্র ভিক্ষু। লোকটাকে দেখলে খুব মায়া লাগতে কেন যেন, গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ত্রিপিটক পাঠ করতেন। এরপর অনুষ্ঠান পরিচিতি।

মন দিয়ে শুনতাম আজ কি কি আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার এক পর্বের সাপ্তাহিক নাটক হত, বুধবার ম্যাকগাইভার, মঙ্গলবারে ধারাবাহিক নাটক। নয়টা বাজলেই টিভির সামনে বসে পড়তাম। "তথাপি" নাটকের লাটভাই (তারিক আনাম) এর সাথে, কিংবা "রূপনগর" নাটকের হেলাল (খালেদ খান) কিংবা শামীম (তৌকির আহমেদ) এর সাথে সময়টা দারুণ কাটত। আর এখন, বাসায় দুইটা টিভি, কিন্তু শেষ কবে নাটক দেখেছি মনে পড়ছে না।

০৩. একটা সময় ছিল, জীবনে একমাত্র চাওয়া ছিল রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি আর বিকেল পাঁচটা বাজলেই বাইরে খেলতে যাওয়ার স্বাধীনতা। আর এখন, রাত দশটা, এগারোটা, বারোটা পর্যন্ত জীবিকার তাগিদে থাকতে হয় বাইরেই। বাসায় ফিরে ঢেকে রাখা ঠান্ডা ভাত, তরকারী গরম করতেও ইচ্ছে করে না কোন কোন দিন। ক্লান্ত দেহ বিছানায় এলিয়ে দিতে দিতে বলতে ইচ্ছে করে, আম্মু, আমাকে আবার ছোট করে দাও, আমি তোমার কোলে উঠে ঘুমাব। ০৪. আম্মু টিচার হওয়ায়, সাত বছরের জায়গায় চার বছর বয়সেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম, কিন্তু বিধি বাম, ক্লাসে আমার নাম উঠত না হাজিরা খাতায়, আমি ছিলাম দুধ ভাত স্টুডেন্ট।

আব্বুর চাকুরীর সুবাদে অনেকটা দীপু নাম্বার টু স্টাইলের শৈশব কেটেছে আমার সিলেটে, ছাতকে, ময়মনসিংহে এবং সবশেষে মিরপুরের পীরেরবাগে। তফাৎ একটাই, দীপু প্রতিবছর প্রমোশন পেত, আমি পেতাম না, প্রতিটা বছরই ক্লাস ওয়ানে পড়তে পড়তে যখন আব্বু বলল, এবার তুমি ক্লাস টু তে পড়বে, বলে আমার হাতে একটা ইকোনো কলম তুলে দিল, সেদিন আমার খুশি দেখে কে? পেন্সিল দিয়ে আর নয়, এখন আমি কলম দিয়ে লিখবো, আমি বড় হয়ে গেছি না? ০৫. ১৯৯৯ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে যেদিন প্রথম গেলাম, আমার দশজন রুমমেটের মধ্যে মোটা ছেলেটা দেখি কাঁদছে, দেখাদেখি আরো কয়েকটা ছেলে কান্না জুড়ে দিল। আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম। বাবা মা কে ছেড়ে এই প্রথম বাইরে থাকছি, অথচ আমার একটুও খারাপ লাগে নি। ওদের কান্না দেখে মনে হল, আমি কি খারাপ, আমার কেন কান্না পাচ্ছে না? চামচ দিয়ে খাওয়া আর সকালের মাইল খানেক দৌড়ের কোনটাই আমাকে কাবু করতে পারে নি তখন।

অথচ ২০০৫ সালে সেই অচেনা দশটা ছেলে সহ ৫৩ জন বন্ধুকে ছেড়ে আসার সময় কি না আমি কেঁদে ফেললাম! ০৬. আমার বন্ধু অনেক, বিএমডব্লিউ হাঁকানো শিল্পপতির পোলা (ভার্সিটিতে পরিচয়) থেকে শুরু করে সাধারণ একজন মুদি দোকানদার (ছোটবেলায় একসাথে খেলতাম বিকেলে) সব ধরনের বন্ধুই আছে আমার। পাট লইতেছি না, আমি সবার সাথেই মিশতে পারি, যেখানে যেমন দরকার, তেমন হয়ে যাই। কিন্তু অবাক হয়ে গতকাল রাতে আমি আবিষ্কার করলাম, আমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নাই, যাকে আমি আমার সবকিছু খুলে বলতে পারি। ০৭. পোস্ট লম্বা হয়ে যাইতেছে, শেষ করা উচিত। জোক্স দিয়ে শেষ করুম ভাবছিলাম, কিন্তু এখন জোক্স মনে পড়তেছে না, মুড অফ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।