আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নজরুলের ঝালমুড়ির স্টলে

I am also expert in body builder.

দাম যা-ই হোক, স্বাদের গুণেই নজরুলের ঝালমুড়ির স্টলে জমেছে নামটাই বেশ নামী—‘মিডনাইট মুন চাইনিজ কিং অব চিটাগাং’। জিনিসটাও বেশ দামি—৩৫০ টাকা। দুজন পেট পুরে খেতে পারেন। কিন্তু জিনিসটা কী? এটা হলো বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ঝালমুড়ি। খাসির মাংস দিয়ে ঝালমুড়ি হয়? শুধু কি খাসি? কবুতরের মাংস দিয়ে তৈরি ঝালমুড়ি, দাম ৬০০ টাকা (আটজন খেতে পারেন); চিংড়ি ফ্রাইমুড়ি, দাম ৪৫০ টাকা ( খেতে পারবেন ছয়জন)।

কী, জিভে জল এসে গেছে! ইচ্ছে হলেই কিন্তু খাওয়া যাবে না। তিন দিন আগে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ফরমাশ দিতে হবে। ঝালমুড়ির এই স্টল চট্টগ্রাম শহরের গোলপাহাড় মোড়ে। এক নামে সবাই চেনে ‘ফিল্টার নজরুলের ঝালমুড়ি’। নজরুল অবশ্য নাম দিয়েছেন ‘ভিন্ন স্বাদের ঝালমুড়ি’।

তাঁর ভালো নাম নজরুল ইসলাম। বয়স ৫০ পেরিয়েছে। ছোটখাটো গড়নের নিরীহদর্শন এই মানুষটা প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টায় চলন্ত রেস্টুরেন্ট নিয়ে গোলপাহাড় মোড়ে আসেন। রাত নয়টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। গোলপাহাড়সংলগ্ন জিইসি মোড়, প্রবর্তক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও শিল্পকলা একাডেমী এলাকার বাসাবাড়ি, ক্লিনিক ও দোকানে সন্ধ্যার নাশতায় তাঁর ঝালমুড়ি থাকবেই।

আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে খান অসংখ্য মানুষ। তাঁদের জন্য তিন পদের ঝালমুড়ি আছে। দাম পড়বে ২৫, ৩৫ ও ৬০ টাকা। পথের কথা যাক, এবার অন্তঃপুরের কাহিনি শুরু করি। নজরুলের ঝালমুড়ি দেদার বিক্রি হয় পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে।

এর মধ্যে জন্মদিন ও গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে বড় ফরমাশ আসে। ছোটদের জন্মদিনে একটু ভিন্ন রকম আনন্দের জন্য ‘ভিন্ন স্বাদের ঝালমুড়ি’ নিয়ে যান মা-বাবারা। জন্মদিনের ৩০০ প্যাকেট ঝালমুড়ির দাম ছয় হাজার টাকা। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ১২ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার প্যাকেজ আছে। ১২ হাজার টাকার ৩০০ প্যাকেটের প্রতিটিতে একটি ডিম থাকে।

৭০ হাজারের প্যাকেজে থাকে ৩০০ প্যাকেট। তাতে প্রতি প্যাকেটে এক টুকরো দেশি মুরগি থাকে। চার দিন আগে এর ফরমাশ দিতে হয়। সন্ধ্যাবেলায় নজরুলের স্টলে গিয়ে দেখি, বেশ মজা করে ঝালমুড়ি খাচ্ছেন রাসেল মনির চৌধুরী ও ফারজানা আফরোজ দম্পতি। তাঁরা বললেন, ‘এমন মজাদার খাবার আর কোথাও আছে কি না জানি না।

বিশেষ করে কবুতরের মাংস দিয়ে তৈরি ঝালমুড়ির তুলনা হয় না। ’ নজরুল তাঁর ঝালমুড়ি তৈরির রেসিপি সম্পর্কে বলেন, ‘মাদ্রাজের মসলার (টক, ঝাল, মিষ্টি, কষ) সঙ্গে মেশানো হয় সালাদ। সালাদ তৈরি হয় আপেল, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ (আংশিক), বোম্বাই মরিচ, এলাচি, লেবু ও কিশমিশ দিয়ে। এর সঙ্গে যোগ হয় পাইন্যা কচু (পানিকচু), পুদিনাপাতা, রসুন, ধনেবাটা, কাঁচা মরিচ ও সরিষা। এত সব উপাদানে দারুণ উপাদেয় হয় ঝালমুড়ি।

নজরুল বলেন, ‘প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বাজার করি। মাস শেষে যে জিনিস উদ্বৃত্ত থাকে, সেটাই আমার লাভ। ’ নজরুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তাঁর সংসার। বড় ছেলে মোহাম্মদ রুবেল বাবার সঙ্গে ঝালমুড়ি তৈরিতে সহায়তা করে।

ছোট ছেলে পাভেল দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং মেয়ে রুমা নবম শ্রেণীতে পড়ে। কোথায় শিখেছেন এই খাবার তৈরির পদ্ধতি? ‘আমি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতাম, নানান দেশ ঘুরতাম। ভারতের মাদ্রাজে এমন ঝালমুড়ি তৈরির কায়দা জেনে নিয়েছি। পরে নিজের কিছু পদ্ধতি যোগ করেছি। আমি সেনবাগ, ঝালকাঠি ও বিক্রমপুর থেকে মুড়ি কিনে আনি।

’ বললেন নজরুল। আপনার নাম ফিল্টার নজরুল কেন? প্রশ্ন শুনে তাঁর হাসি আর থামেই না। শেষে নিজের নামের কাহিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে এক গ্লাস পানি বিক্রি করতাম সাত টাকায়, এখন ১১ টাকা। সামনে ৩০ টাকা করব। মিনারেল ওয়াটারকে মালয়েশিয়ার ফিল্টারে দুবার ছাঁকার পর এই পানি তৈরি হয়।

অনেক চাহিদা এর। ফিল্টারের পানি বিক্রি করতে গিয়ে আমার নাম হয়ে গেল ফিল্টার নজরুল। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।