আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজা গৌরাঙ্গ, বোন জয়ন্তিয়া দেবী ও অন্যান্য........

( এই গল্পে সাল কিংবা তারিখ উল্লেখ করা হবেনা। কারন খুঁটিনাটি তারিখ গুলো পুরোপুরি মনে নেই আর এখানে এইসবের প্রয়োজনও নেই। ) আজকের সিলেট শহর ১৪ দশকে কেমন ছিল ভাবুন তো। এই আধুনিক পরিপাটি শহরটির নাম ছিল শ্রীহট্ট। শ্রীহট্ট কোন শহর ছিল না।

ছিল ঘন জঙ্গল ঘেরা একটি রাজ্য। চারিদিকে প্রচুর পাহাড় আর জংলি পরিবেশের করনে তখন এটি এই বঙ্গের সবচেয়ে দুর্ভেদ রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। একদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর সীমানা আর অন্য সব দিকেই জঙ্গল। যেসব পথ খোলা ছিল সেখানে চৌকস যোদ্ধারা সর্বক্ষণ পাহারা বসিয়া রাখত অর্থাৎ নজর এড়িয়ে কোন মানুষের পক্ষে ওই রাজ্যে প্রবেশ ছিল রীতিমত অসম্ভব একটা ব্যাপার। আর রাজ্য শাসন করতো যাদু টোনার ওস্তাদ কারিগর রাজা গৌরাঙ্গ ( এই রাজার যাদু বিদ্যা সর্ব মহলে এতই স্বীকৃত একটি বিষয় ছিল যে এ নিয়ে কেউ পরীক্ষাও করতে চাইত না পাছে যাদুর বলি হয় )।

এই রাজ্যের পূর্ব দিকে খাসিয়া অধ্যুষিত যে রাজ্য ছিল তাঁর নাম জয়ন্তিয়া। শাসন করতেন রানি জয়ন্তিয়া দেবী। গৌরাঙ্গের বোন। একটা মুসলিম পরিবার বসবাস করতো বলে ইতিহাসে জানা যায়। কিন্তু এটি কিভাবে সেখানে প্রবেশ করে এই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

যা হোক তাঁদের কোন সন্তানাদি ছিলনা। বংশ রক্ষার কোন উপায়াদি না দেখে পুরুষ সদস্যটি আল্লার কাছে একটি পুত্র সন্তানের জন্য কান্নাকাটি করতে লাগলেন। দিনরাত শুধু প্রার্থনা করেন। বছর গড়ায় কিন্তু কোন সুখবর নেই। আল্লার বান্দা আশা ছাড়লেন না।

তিনি একমনে লেগে রইলেন আল্লা একদিন না একদিন তাঁর কথা শুনবেন এই আশায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনে নিয়ত করলেন যদি আল্লাহ তাঁদের উপর সামান্য করুনা করেন তো তারা একটি গরু কোরবানি করে বিলি করবেন। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্ত্রী ঘোষণা করলেন যে তিনি সন্তান সম্ভবা। মহান কারিগর তাঁদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন ।

ধীরে ধীরে সন্তান গর্ভে বড় হতে লাগলো এবং একসময় মা নিরাপদে সেই পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। বৃদ্ধ বয়সে সন্তান লাভ করে দুজনেই সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন নি। বিধির বিধান মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। যথা নিয়মে গরু কোরবানি করা হল। মাংস বণ্টন করা হল।

যারা গো মাংস খায় এমন হাতে গোনা দুএকটি পরিবার সেই মাংস নিল। বাকি মাংস পশুদের মাঝে বিলি করা হল। গরু কোরবানির কারনে আশ পাশের পড়শিরা ভীষণ ক্ষব্ধ হল কিন্তু মুখে কেউ কিছু বলল না। এদের মাঝে দু একজন ছিল এক ডিগ্রী সরস। তারা এক টুকরা গরুর মাংস নিয়ে গোপনে গৌরাঙ্গের মন্দিরে নিক্ষেপ করলো।

আর যায় কোথায়। সাথে সাথে পাইক পেয়াদা দিয়ে ওই মুসলিম ব্যক্তিটিকে টেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে ধরে নিয়ে গেল। ঢোল বাদ্য বাজাতে বাজাতে মহা উৎসাহে পড়শিরা সব সেই উৎসবে যোগ দিল । একে একে সবাই রাজার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকলো এই মহান কর্ম সমাধান করার জন্য। রাজা গৌরাঙ্গ তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করলেন।

যদিও রাজা খুব ভাল করেই জানতেন মূল বিষয়ের শানে নযুল। কিন্তু সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় কে বলুন? বিচারে নির্দোষ লোকটি আল্লাহর নামে বারবার শপথ করে বলল যে, সে এই দৃষ্টটা পূর্ণ অপকর্মটি করেনি। তাঁর কোন ফরিয়াদ-ই সেদিন গৃহীত হল না। তাঁর পক্ষে সাক্ষী দেবার জন্যও কাউকে পাওয়া গেল না। কোন কিছুতেই কিছু হল না।

অবশেষে বিচারের রায় ঘোষণা করা হল। তাঁর এ গুরুতর অপরাধের জন্য সিদ্ধান্ত হল তাঁর ছোট দুধের সন্তানকে তারই চোখের সামনে খণ্ড খণ্ড করা হবে । কাজটা শুরু হবে পায়ের পাতা থেকে একটু একটু করে। যেন শিশুটি অল্প অল্প করে মৃত্যু বরন করে। যেন পিতা সন্তানের এমন করুন পরিনতি নিজ চোখের সামনে দেখে।

অসাধারন এই ফর্মুলার জন্য রাজা বিচারক কে বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিলেন। রাজ্যের সকল নাগরিক রাজাকে আবারও অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানালো। বিচার শেষে বিশাল ভোজের আয়োজন হল আর হল নাচগান আনন্দ উৎসব। রায় কার্যকর করার সময় হল। ইমানদার লোকটি আবারও প্রার্থনায় রত হল।

এই নির্মম অত্যাচার থেকে বাচার আকুতি জানালো প্রভুর নিকট। কিন্তু সত্যটা হল সেদিন প্রভুর ধ্যান ভাঙ্গেনি। হয়তো একজনের প্রার্থনা বার বার মঞ্জুর করতে ঈশ্বরের ভাল লাগেনা। হয়তো নিয়তির নির্মম পরিনতি দেখাবার এক মহান স্টেজ নির্মাণে প্রভু সেদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। হয়তো এটাই জীবনের এক অমোঘ নিয়ম যা মঞ্চস্ত করবার প্রয়োজন হয়েছিলো।

( বাকি অংশ কাল ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.