আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাইগাররা খেলুক টাইগারের মতো

প্রতিটা মানুষেরই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে একবারের জন্য হলেও পাখি হওয়ার ইচ্ছে জাগে। ‘পাখি যদি হতাম আমি, ঘুরতাম সারা বিশ্ব রে!’ -ছড়াকাররা এমন করে পাখি হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন। সে বাসনা ছড়িয়ে গেছে আমাদের প্রাণেও। পাখি হয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখার বাসনা থেকেই

প্রত্যাশার বেলুনটা অনেক ফুলে উঠেছিলো। গত ৪ মার্চ ১৮ ওভারের এক খোঁচায় ফেটে গিয়েছিলো সে বেলুন।

গত দুই-তিন দিনে নতুন করে প্রত্যাশার আরেকটি বেলুন ফুলে উঠেছে। সেটা অবশ্য বিশেষ কোনো আকার ধারণ করে নি। প্রতিপক্ষ পরিবর্তন হচ্ছে, হচ্ছে মাঠ ও আবহাওয়ার পরিবর্তন। আর এতেই আবার প্রত্যাশার বেলুন ফুলে উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের গহীনে। মাঝে সাকিবের আচরণ বেশ বিতর্কের জন্ম দিলেও আগামীকাল সাকিবদের খেলা দেখতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হাজির হবে ক্রিকেটপ্রেমীরা, টেলিভিশনের সামনে চোখ রাখবে বাকিরা।

এবারের প্রত্যাশা অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনাল বা ইংল্যান্ডকে তুলোধুনো করে দেয়া নয়, যেমনটা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা ক্রিকেটাররা যেনো মাথা নত করে মাঠ না ছাড়ে। জয়-পরাজয় নিয়ে ভাবতে অনেকেই এখন নারাজ। তারা দেখতে চায় বাকি তিন ম্যাচে টাইগাররা কী করে। ‘জিতবে জিতবে’ এমন প্রত্যাশার ভারেই হয়তো ভেঙে পড়ছে টাইগাররা।

বছর দুয়েক আগেও এমন প্রত্যাশার চাপ সামলাতে হয় নি টাইগারদের। গত একবছর ধরে টাইগাররা যে মানের ক্রিকেট খেলেছে প্রত্যাশা বেড়েছে তাতেই। প্রত্যাশার এই চাপ সামলানো এখনো শেখে নি হয়তো টাইগাররা। তাই ‘জিতবে’ এই প্রত্যাশার চেয়ে অনেকেই টাইাগার সমর্থকই বলে দিচ্ছেন, ‘খেলুক ওরা ওদের মতো। যেমন খুশি তেমন খেলুক।

জিতলে উল্লাস করবো হারলে মন খারাপ করবো না। তবে খেলতে হবে টাইগারের মতো। বিড়ালের মতো না। ’ সাকিব-তামিমরা অবশ্য বলছেন ইংল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য তাদের আছে। আমজনতাও জানে তাদের সে সামর্থ্য আছে।

গত বছর জুলাইতে ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠেই তাদের বিপক্ষে জেতার স্মৃতি আছে। গত বছর মার্চে দেশের মাটিতেও ইংলিশদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলো টাইগাররা। সে স্মৃতি রোমন্থন করে কী হবে! বছর দেড়েক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও তো তাদের মাটিতেই বাংলাওয়াশ করেছিলো টাইগাররা। অথচ ৪ মার্চ কী করলো টাইগাররা। দেড় বছর আগেকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ৪ মার্চের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে পার্থক্য ছিলো।

কিন্তু এমন তো নয় যে অন্য কোনো গ্রহ থেকে পৃথিবীর চেয়ে উন্নতমানের ক্রিকেটার এসে যোগ দিয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে! মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে অবশ্য সে রকমই ইঙ্গিত দিয়েছে টাইাগাররা। চট্টগ্রাম তামিমের ঘরের মাঠ। চট্টগ্রামের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলবেন তিনি। তিনি জানাচ্ছেন, গত ম্যাচের ব্যর্থতা-হতাশা-লজ্জা ঢেকে দেবেন এ ম্যাচ জিতে। সাকিবও বলছেন, কোয়ার্টার ফাইনালের সুযোগ এখনো আছে।

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখতে চান সাকিব। আমজনতা তামিম-সাকিবের এমন ভাষ্যে ভরসা করতে পারছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার স্মৃতি তাদের হৃদয়ে দগদগে হয়ে আছে। আমজনতা তাই সাকিবদের নির্ভার করে দিতে চাইছে। নিজেদের যেমন খুশি তেমন খেলার সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন টাইগার সমর্থকরা।

ইংল্যান্ড দল থেকে বিদায় নিয়েছেন পিটারসেন। ব্রডও পারবেন না খেলতে। প্রতিপক্ষের এই দুর্বলতাও সাকিবদের সাহস জোগাচ্ছে জয়ের কথা বলতে। পিটারসেনের পরিবর্তে দলে যোগ দিয়েছেন আইরিশ বংশোদ্ভূত এউইন মরগান। আগামীকাল মাঠেও নামবেন তিনি।

গত বিশ্বকাপ তিনি খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। বছর দুয়েক ধরেই তিনি ইংলিশ মিডিল অর্ডারের ভরসা। গত বছর মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে জয় বঞ্চিত করেছিলেন টাইগারদের। পিটারসেন নেই কিন্তু এই মরগান আগামীকাল আবার টাইগারদের হন্তারক হয়ে যেতে পারেন। তারপরও সাকিব-তামিম জয়ের ব্যাপারে আশাবদী।

আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫তম বারের মতো ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো। গত বছর জুলাইতে ব্রিস্টলের জয়ই ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগারদের একমাত্র জয়। চট্টগ্রামে গত বছর মার্চের ম্যাচটায় হারলেও টাইগাররা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো। আগামীকাল বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ।

গত বিশ্বকাপে ১৪৩ রানে অলআউট হয়েও জয় পেতে ধুঁকতে হয়েছিলো ইংলিশদের। পরিসংখ্যান কেবলই কিছু সংখ্যা ও স্মৃতির সমাহার। এটা কোনো ম্যাচের ফল নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে না। মুখে ফুটে বেরোনো আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদও ম্যাচের নির্ধারক নয়। আগামীকাল চট্টগ্রামে টাইগাররা ইংলিশদের বিপক্ষে মাঠে নামছে।

টাইগাররা খেলুক টাইগারের মতোই। জয়-পরাজয় বাদ দিয়ে প্রত্যাশা এটুকুই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।