আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের শরীরে আগুন দিয়ে চাকুরিপ্রত্যাশীর বিক্ষোভ: একটি প্রতীকী বাংলাদেশ

আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে

ঘটনা ১. গতকাল ৩১ জুলাই সময় রাত ৯.০০ টা। একটা মশাল মিছিল নিয়ে জনা পঞ্চাশেক ছাত্র এগিয়ে থামল শাহবাগ মোড়ের ফোয়ারারার পাশে। মশালগুলো রাস্তায় হুটোপুটি খাচ্ছে, রাস্তায় ও আগুন ধরে গেছে, এর মধ্যে এক ব্যাক্তি নিজের গায়ে সেই মশালের আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। মাইকে আগুন লাগানো ব্যাক্তির নাম বলা হচ্ছে কামাল আহমেদ, তার শরীরের অনেক জায়গা পুড়ে গেছে। সহকর্মীরা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে।

মাইকে কথা বলা ব্যাক্তি নিজেকে কামালের বন্ধু পরিচয় দিয়ে বলছে, কামাল নাকি গতকাল রাতেই তার কাছে গায়ে আগুন দেবার পরিকল্পনার কথা বলেছিল। এরপরই মাইকের বক্তা মাইকে পরবর্তীতে শহীদ মিনারে জড়ো হবার কথা বলে অনেকে মেডিকেল চলে যান। ঘটনার পেছনের ঘটনা ২. কাল রাতের এ ঘটনা আজকের প্রিন্ট মিডিয়ায় খুব বেশী জায়গা করে নিতে পারেনি, তবে বোধ করি প্রতীক আকারে এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন যাবত "সাধারণ ছাত্র পরিষদ" এই ব্যানারে তারা আন্দোলন করছেন, তাদের দাবি হল বি.সি.এস চাকুরীর প্রবেশসীমা ৩৫ বছর করা। তাদের দাবিটাও খুব বেশী জরুরী মনে হয়নি আগে, তারপর আবার বি.সি.এস!! তবে বি.সি.এস নিয়ে ঢা.বি ছাত্রদের উদ্বেগ অত্যন্ত লক্ষনীয়।

এই মাত্র কয়েকদিন আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কোটা আরোপের পর মিছিলে ১ম বর্ষ কিংবা ২য় বর্ষের ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল নিকট অতীতের অন্যান্য যে কোন আন্দোলনের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশী। এই "সাধারণ ছাত্র পরিষদ" ব্যানারের ( নামটা কার মাথা থেকে এসেছে কে জানে, যে কোন বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকা ছাড়া অন্য কোন জায়গা আছে কিনা জানিনা। ) আন্দোলনের সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। উনারা শহীদ মিনারে অনশন করেছেন , সমাবেশ করেছেন, মশাল মিছিল করেছেন আর গতকাল একটা আল্টিমেটাম ও দিয়েছেন। তারা চাকরি পাচ্ছেন না, বা পাচ্ছেন তবে তা সারাজীবন ব্যায়িত সেই আকাঙ্খিত সোনার হরিনের মতন নয়।

উনাদের বয়স পার হয়ে গেছে ফলে বি.সি.এস পরীক্ষায় আর অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকছেনা। আর বি.সি.এস ছাড়া দেশে আর তো চাকুরি নেই। শিল্পধ্বংসের নীতি আর বি.সি.এস ভরসা ৩. গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পরেও ক্ষমতাসীন সরকারগুলো শিল্পধংসের নীতিকেই আকড়ে ধরেছে প্রবল আবেগে। বাংলাদেশে পাট শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরেও পাটকল গুলো দুর্নীতি আর লোকসান দেখিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যাংক আর আই.এম.এফ সরকারকে ঋন দিয়েছে পাটকলগুলো বন্ধ করার।

সেদিন একটা শটফিল্ম দেখলাম "সাইরেন" নামের। খুলনার পিপলস জুট মিল বন্ধ হবার পর সেখানকার কয়েকজন শ্রমিক আত্মহত্যা করে এই ঘটনাকে উপজীব্য করে শর্টফিল্ম। এই পাটকল বন্ধ হচ্ছে, জাতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বিকাশের উদ্যোগহীনতা, গার্মেন্টকে মজুরি দাসত্বের নিগড়ে আটকে রাখার বিরুদ্ধে ছাত্রদের কোন প্রতিরোধ নেই, নেই মাথা ব্যাথাও তাই আছে বি.সি.এস। বি.সি.এস ছাড়া কোন চাকরি নাই, ফলত. যেকোন মূল্যেই তা পাওয়া চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওই তিন চারশ ছাড়া কেউ তো চাকুরী পাবে না।

শেষকথা ৪ বয়স শেষ হয়ে গেছে বি.সি.এস এর। গায়ে আগুন দিয়ে কামাল দেখালেন এদেশের অসংখ্য শিক্ষিত তরুনের বেকারত্বের কারণে চরম হতাশাজনক অবস্থার। বুয়াজিজি তিউনিসিয়ায় গায়ে আগুন দিয়ে জমে থাকা ক্ষোভকে উসকে দিয়েছিল। বাংলাদেশের কর্মসংস্থানহীনতার প্রতিবাদে আন্দোলন গর্জে উঠতে পারে বি.সি.এস দাবির ছলে। বিস্ফোরণ হতে পারে বি.সি.এস আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে।

তাই কামাল আহমেদদের সালাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.