আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপের আইরিশ চমক।। বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট।।



দু’দিন আগে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি ঘোষণা করেছিল যে, আগামী বিশ্বকাপে ১০টি দলকে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে। এ ঘোষণা শোনার পর বোধ হয় আয়ারল্যান্ড আইসিসিকে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার একটা সুযোগ খুঁজছিল। আর সে জবাবটা যে এভাবেই দেবে আইরিশরা তা বোধ হয় আইসিসি প্রধান নিজেও ভাবেননি। আর অনেক কিছু ভাবনার বাইরে হয় বলেইতো ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এবারের বিশ্বকাপে কোন আপসেট ঘটছে না বলে অনেকেই হা হুতাশ করছিল কিন্তু গতকালের ম্যাচটাকে যদি আপসেট বলা হয় তাহলে আয়ারল্যান্ডকে খাটো করা হবে।

কারণ এক ম্যাচে যে দল বিশ্বকাপের এতগুলো নতুন রেকর্ডের জন্ম দেয় সে ম্যাচটাকে আপসেট বলা মানে জয়ী দলকে খাটো করা। বিশ্বকাপের সবচাইতে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জয়, বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি, সব মিলিয়ে আয়ারল্যান্ডের ৩ উইকেটের এই জয়টা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য একটি বড় সতর্কবাণী হিসেবেই ধরে নিতে হবে। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকে দেওয়া আয়ারল্যান্ড গতকাল যা করলেন তা চমক নয় রীতিমত বজ্রপাত। আর সে বজ্রপাতের আওয়াজে ক্রিকেট বিশ্ব যেন নতুন একটি দলের পদধ্বনি শুনতে পেল। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারের ক্ষতটা শুকাতে গিয়ে ইংল্যান্ডের মত পরাশক্তিকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে আইরিশরা তা বোধ হয় ইংল্যান্ড স্বপ্নেও ভাবেনি।

আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৩৩৮ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে পেরেছিল ইংলিশরা। কিন্তু টপকাতে পারেনি। কিন্তু আয়ারল্যান্ড দেখিয়ে দিল ৩২৭ রান টপকেও ম্যাচ জেতার সামর্থ তাদের রয়েছে। দুই প্রতিবেশীর ম্যাচ। শক্তির বিচারেও পার্থক্যটা বিশাল।

ম্যাচের বাজিও ছিল ইংলিশদের পক্ষে। কিন্তু একজন কেভিন ও ব্রায়েন কোথা থেকে যেন দৈত্য হয়ে এসে এবারের বিশ্বকাপের ফেভারিটের তকমা লাগিয়ে আসা ইংল্যান্ডকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিলেন। ম্যাচটা ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যে হয়েছে এমন না বলে ইংল্যান্ড আর কেভিন ও ব্রায়েনের মধ্যেই হয়েছে তেমন বললে বোধহয় খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবেনা। কারণ এই কেভিন ও ব্রায়েনের অতি মানবীয় এক ইনিংস হারিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে। তার ৬৩ বলে ১১৩ রানের এই ইনিংসের ফলে বিশ্বকাপে সবার চাইতে নিজেকে উপরে তুলে রাখলেন এই আইরিশ।

তার ৫০ বলে সেঞ্চুিরটা এখন বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি। এতদিন যা ছিল অস্ট্রেলিয়ার হেইডেনের দখলে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে হেইডেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের গড়া ৩১৩ রান টপকে শ্রীলংকা যে জয় পেয়েছিল এতদিন তাই ছিল বিশ্বকাপের সর্বাধিক রান টপকে জয়ের রেকর্ড। গতকাল আইরিশরা তাও দখল করে নিলো।

এক কথায় বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক সূর্যোদয়ের ঘোষণাই যেন দিলো ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। সেঞ্চুির পূরণের পর কেভিন ও ব্রায়েনের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আইসিসি এবং ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে যেন বললেন মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকো। ৩২৮ রানের বিশাল টার্গেট। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০৫ রান টপকাতে না পারা আয়ারল্যান্ডের পক্ষে এত বড় টার্গেট টপকে ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখাটাওতো রীতিমত অপরাধের শামিল। কিন্তু কথায় আছেনা “এভরি ডে ইজ নট সানডে”।

আর ক্রিকেটের সেই ঐতিহাসিক প্রবাদ গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট তাও তো ভুলে গেলে চলবে না। আর গতকাল আয়ারল্যান্ড আরো একবার প্রমাণ করলেন ক্রিকেটের এই চিরন্তন প্রবাদের সত্যতা। ৩২৮ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে প্রথম ওভারেই যখন দলের ব্যাটিং ভরসা পোর্টারফিল্ডকে হারিয়ে ফেলে তখন এত বড় রানের পেছনে ছুটে ম্যাচ জেতার চিন্তা করাটাওতো বোকামি। প্রথম ওভারে কোন রান যোগ করার আগে উইকেট হারালেও শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্টারলিং এবং জয়সি ৬২ রান যোগ করেন। ৩২ রান করা স্টারলিংকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন ব্রেসনান।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে জয়সি এবং নেইল ও ব্রায়েন মিলে যোগ করেন আরো ৪১ রান। এ জুটি ভাঙ্গার পর সোয়ানের আঘাতে দ্রুত আরো তিনটি উইকেট হারিয়ে ফেললে ১১১ রানে ৫ উইকেটে পরিণত হয় আয়ারল্যান্ড। কিন্তু কে জানত এরপর ইংল্যান্ডের জন্য জমদূত হয়ে আবির্ভূত হবেন কেভিন ও ব্রায়েন। ১১১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর কসেককে সঙ্গী করে ইংলিশ বোলারদের শাসন করতে থাকেন কেভিন। এত দ্রুততার সাথে রান তুলছিল যে, যেন টুয়েন্টি- টুয়েন্টি খেলছিলেন এই তরুণ।

৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা কেভিন পরের পঞ্চাশ করতে খরচ করেছে মাত্র ২০ বল। সব মিলিয়ে ৫০ বলে কেভিনের সেঞ্চুরিতে ১৩ টি চার এবং ৬ টি ছক্কার মার ছিল। যার মধ্যে একটি ছিল এবারের বিশ্বকাপের সবচাইতে বেশি লম্বা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কসেককে নিয়ে ১৬২ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ার পর ৪৭ রান করে ফিরেন কসেক। দলকে প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে ৩১৭ রানের মাথায় কেভিন ফিরে এলেও মুনির ৩০ বলে ৩০ রান ৫ বল হাতে রেখে আয়ারল্যান্ডকে ঐতিহাসিক জয় পাইয়ে দেয়।

ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস রচনা করলো আয়ারল্যান্ড। আর সে ইতিহাসের নায়ক একজন কেভিন ও ব্রায়েন। এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালই ছিল। দুই ওপেনার স্ট্রস এবং পিটারসেন ৯১ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা স্ট্রস ৩৪ রান করে আউট হলে ভাঙ্গে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি।

১১ রানের মাথায় ৫০ বলে ৫৯ রান করা পিটারসেন ফিরে এলে ২ উইকেটে ১১১ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড। এরপর দলের হাল ধরেন ট্রট এবং বেল। এ দুজন তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৬৭ রান যোগ করে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান ইংল্যান্ডকে। তবে মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে ট্রট এবং বেল দুজনকেই ফিরিয়ে দেন মুনি। ট্রট ৯২ বলে ৯২ রান করে ফিরলে ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন।

আর বেলও ফিরেন ৮১ রান করে। ২৮৮ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের পরের ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশা অনুযায়ী রান তুলতে পারেনি। শেষ ৩৩ বলে কলিংউড, প্রায়র, ব্রেসনানরা মাত্র ৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কলিংউডের ১১ বলে ১৬ রান। তারপরও ৩২৭ রানে গিয়ে পৌঁছে ইংল্যান্ডের ইনিংস।

আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ৬৩ রানে ৪ উইকেট নেওয়া মুনিই সেরা বোলার।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.