আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার প্রতীক মহানবী (সা.)

নিজের সম্পর্কে কিছু বলার মত নাই। এক কথায বলতে গেলে উদ্দেশহীন ভাবে বেচে থাকা এক অলস যুবক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার আধার। তার ব্যবহারে ছিল অপরিসীম কোমল ও স্নিগ্ধতা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন।

আপনি যদি রুঢ় ও কঠিন-হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার চারপাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকুন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। ’ (সূরা আলে ইমরান-১৫৯) ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার ফজিলত উল্লেখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ক্ষমার কারণে আল্লাহ কেবল মর্যাদাই বৃদ্ধি করেন। আর যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তার সম্মান অবশ্যই বৃদ্ধি করে দেন। ’ (মুসলিম) অন্য হাদিসে আছে, ‘যে তোমার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করে তুমি তার মোকাবেলায় সবর কর।

যে তোমার সঙ্গে মূর্খতার আচরণ করে তুমি তার প্রতি সহনশীল হও। আর যে তোমাকে জ্বালাতন করে তুমি তাকে ক্ষমা কর। ’ (তাফসিরে মাযহারী) ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার সৌন্দর্যে রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবন ছিল ভরপুর। এ সৌন্দর্য ও আদর্শের দ্বারাই তিনি ভুবন জয় করেছেন। নবীজীর সহনশীলতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার খাদেম হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি আমি দশ বছর ধরে আল্লাহর রাসুলের খেদমত করেছি।

এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি আমার কোনো আচরণে বিরক্ত হয়ে কখনও উহ বলেননি এবং কখনও বলেননি যে, অমুক কাজটি কেন করলে? অমুক কাজটি কেন করলে না? (মুসলিম) মহানবী (সা.) এর সুদীর্ঘ সান্নিধ্যপ্রাপ্ত চাচাত ভাই হযরত আলী (রা.) তার মহান চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মন্দের বদলা মন্দের দ্বারা দিতেন না। বরং ক্ষমা ও মাফ করতেন। তিনি কখনও কারো ওপর হাত তুলেননি একমাত্র জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া। কখনও কোনো খাদেম কিংবা মহিলার ওপর হাত উঠাননি। কোনো প্রকার জুলুমের প্রতিশোধ নিতে কেউ তাকে কখনও দেখেনি, যতক্ষণ না কেউ আল্লাহর নির্ধারিত হুদুদ বা সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে।

যখন আল্লাহর কোনো হুকুম লঙ্ঘিত হতো তখন তিনি সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হতেন। (শামায়েলে তিরমিযি) শুধু মুসলমান নয় অমুসলিমদের প্রতিও রাসূলুল্লাহর (সা.) ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার সৌন্দর্য ছিল সমানভাবে কার্যকর। ইসলামের ঘোর শত্রুরাও তার আচরণের এ সৌন্দর্যের কারণে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তে একচ্ছত্র শক্তির অধিকারী রাসূলুল্লাহর (সা.) দিকে সবার দৃষ্টি ছিল-না জানি আজ তিনি কী প্রতিশোধ নেন। ভয়ে ও আতঙ্কে সবাই ছিল তটস্থ।

কিন্তু না, মানবতার নবী ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক কারো কোনো প্রতিশোধ নেননি। সবাইকে বিস্মিয় করে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে দেন। ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াকু প্রধান সেনাপতি আবু সুফিয়ানকে (রা.) শুধু ক্ষমাই করে দেননি বরং বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন। যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নিবে তাদেরকেও নিরাপত্তা দেয়া হয়। তায়েফবাসীর কাছ থেকে প্রিয়নবী (সা.) নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ পাওয়া সত্ত্বেও কোনো বদদোয়া করেননি।

পাহাড়চাপা দিয়ে তাদেরকে নির্মূল করে দেয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন হযরত জিবরাইল (আ.)। কিন্তু অনুমতি মিলেনি রহমতের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছ থেকে। ইসলাম ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার যে নজীর পেশ করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। ইসলামের কাছে আদর্শের শক্তিটাই বড় শক্তি। অন্যকে সহ্য করতে পারাই সবচেয়ে বড় বীরত্ব।

সামাজিক সহাবস্থানে সম্পর্কের টানাপোড়েন হতেই পারে। অসংলগ্ন ও অবাঞ্ছিত কিছু আচরণের কারণে সামাজিক শৃঙ্খলায় মাঝে মধ্যে ব্যাঘাত ঘটাও বিচিত্র কিছু নয়। তবে এসব মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখা, বাড়াবাড়ি না করে ধৈর্য, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আজীবনের মিশন ছিল শান্তি-সৌহার্দ্যর স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা। মহানবীর (সা.) কাঙ্ক্ষিত সেই সমাজ বিনির্মাণে সিরাতুন্নবীর এ মোবারক মাসে আসুন আমরা তৎপর হই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.