আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলবায়ু পরিবর্তনঃ জেগে উঠবার এখনই সময়

আলোকের খোঁজে নিরন্তর পথ চলা

আচ্ছা গতকাল সারাদিন কি আপনার বাসায় পানি ছিল, চুলায় কি ঠিকমত গ্যাস ছিল, রাতে কি একবার ও লোডশেডিং এর ফাঁদে পরেননি? আপনি যদি গুলশান-বনানির বাসিন্দা না হয়ে থাকেন, তবে নিশ্চয় আপনি হয়ত পানির অভাবে গোসল করতে পারেননি কিংবা সারাদিনে একবারই হয়ত আপনার বাসায় রান্না হয়েছে কিংবা সন্ধ্যা থেকেই আঁধারে বসে মশক বাহিনীর পুষ্টির যোগান দিয়ে চলেছেন। কখনো কি ভেবেছেন ? কেন পানি-গ্যাসের এত অভাব, কেন এত লোডশেডিং? যদি না ভেবে থাকেন, তবে আজই আদা জল খেয়ে লেগে পড়ুন ভাবতে। আবার ভাবতে ভাবতে যেন ঘুমিয়ে পড়বেন না। জ্বী আপনি,হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। একদল লোক কোট-টাই পড়ে এসি রুমে বসে মুখে জলবায়ু জলবায়ু বলে ফেনা তুলে ফেলছে, সেমিনার আর সিম্পোজিয়ামের জন্য বস্তার পর বস্তা লেকচার লিখছে আর ভাবছে সরকার আর এনজিওর ভাগ বাটোয়ারার মাঝে তাদের পকেট কতটা গরম হবে।

এই দলের সদস্যরা বিশ্বব্যাংক-আই এম এফ ফর্মুলায় মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করার কাজে বিশাল পারর্দশী, তা না হলে কয়েক দশকের ভিতরে আমাদের জারুল-শিমুল, বট-অশ্বথের গ্রাম্য বন হাওয়া হয়ে গিয়ে ইউক্যালিপ্টাস আর একাশিয়ায় দেশটা ভরে উঠল কিভাবে? দেশি স্বাদের বোয়াল-চিতল উধাও হয়ে সিলভার আর গ্রাস কার্পে ভরে উঠেছে আমাদের পুকুর নদী, হাজারো নামের বাহারি গুনের ধানের জায়গায় হাইব্রিড আর জি এম ও নামের ফাসির রশি কৃষকের গলায় পরিয়ে দিচ্ছে এই মীরজাফরের দোসররা । যাই হোক,জলবায়ু পরিবর্তন এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পরা প্রসংগ হলেও মাঝে মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রিও-কোপেনহেগেনের পথে যেভাবে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন তাতে বাঙ্গালী হিসেবে কারো কারো বুকের ছাতি ফুলে এভারেস্ট চূড়া কিংবা কারো কারো জিহবার লোলে বাংলাদেশ তলিয়ে যাবার আশংকা দেখা দিলেও এমন কিছু মানুষ আছে যাদের চোখে মুখে চিন্তার বলি রেখা ফুটে উঠে বৈকি? এতক্ষন যখন ধৈর্য নিয়ে এটুকু পড়েছেন, তখন অবশ্যই আপনি সেই দলের মানুষ, যাদের হৃদয়ের কোনে জমা আছে বাংলাদেশের জন্য অফুরন্ত ভালবাসা। তবে আসুন না আমরা চিন্তা করে দেখি ভিক্ষা চেয়ে নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় আছে কিনা? আমাদের মহাবিশ্বের এই আশ্চর্য সুন্দর গ্রহের পরিবেশ-প্রতিবেশ কিছু অর্থলিপ্সু মনুষ্যরুপী জানোয়ারের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরনের দরকষাকষির মারপ্যাচে পড়ে বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা,গলছে বরফ,আসছে সমুদ্রের নোনা জল আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশকে গ্রাস করতে। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হারিয়ে যাক সমুদ্রের অতলে।

বাংলাদেশ তথা এই ধরনীকে রক্ষা করতে হলে ভিক্ষা নয় বরং নিচের কাজগুলো নিজে এবং অন্যকে করার জন্য উৎসাহিত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন আপনি । ১। সকল প্রকার অপচয় রোধ করতে হবে। (বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাস,সকল প্রাকৃ্তিক সম্পদ ইত্যাদি) ২। যতটা সম্ভব বিলাস দ্রব্য পরিহার করে চলতে হবে।

৩। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দ্রবাদি ব্যবহার সম্পূর্ন বন্ধ করতে হবে। (পলিথিন,প্লাস্টিক,এরোসল ইত্যাদি) ৪। বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে ,পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন বৃক্ষ রোপন করা। ৫।

হাইব্রিড,জি এম ও(জেনেটিক্যালি মডিফাইড অরিজিন)এবং বিদেশি প্রজাতির ফসল ও গাছের ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা। এই পাঁচটি কাজ নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আপনিই পারেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের হাত আমাদের প্রানের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে। আর আপনিও যদি মাথামোটা বুদ্ধিজীবিদের(!)মত ভিক্ষার অর্থে বাংলাদেশ ডুবে যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকেন,তবে নিশ্চিত থাকুন গতকালের মত আজ এবং আগামীকাল ও অদূর ভবিষ্যৎ আপনার জন্য তৃষ্ণাময় অন্ধকার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আপনি যদি আপনার অনাগত ভবিষ্যতে কোন এক রোদ্রৌকরজ্জ্বল সকালে খোলা প্রান্তরে নীল আকাশের বুকে উড়াতে চান রঙ্গিন ঘুড়ি কিংবা প্রিয় বন্ধুর সাথে পাহাড় চূড়ায় মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে চান কিংবা প্রেয়সীর হাত ধরে হাঁটতে চান নীল জলরাশির আলতো স্পর্শমাখা সমুদ্রসৈকতে, তবে উপরের কাজগুলো করার কোনো বিকল্প নেই। আর তা না হলে নিশ্চিত থাকুন আগামি ১৫-২০ বছর পর নিজেকে আপনি আবিষ্কার করবেন কোনো এক জলবায়ু উদ্বাস্তু শিবিরে।

এখন ঘুমিয়ে যান, ঠিক ঐ দল লোকদের মত যাদের ভূড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতকেও লজ্জা দেয়। আহ্,কি শান্তির ঘুম! অথবা জেগে উঠুন। কারন জেগে উঠবার এখনই সময়। আলোকের অভিযাত্রী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।