আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত বিশ্বকে দায়ী করে রায় দিয়েছে প্রতীকী আদালত। স¤প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ আদালত পরিচালিত হয় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি জুরি বোর্ডের মাধ্যমে। বোর্ডের প্রধান ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন দেশ বিদেশের জন প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী এবং এনজিও কর্মীরা।

পরিবেশ দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা এ আদালতে বাদী ছিলেন। তাদের অভিযোগের পক্ষে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় এবং তাতে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এরপর রায় ঘোষণা করে উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করা হয় এবং প্রতিকার স্বরূপ ১৫টি দিক নির্দেশনা জারি করা হয়। এগুলো হলো, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের আইনী প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, জলবায়ু সংক্রান্ত একটি পূর্নাঙ্গ আইন প্রণয়ন, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় আরো শক্তিশালী করণ, ঊষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখা ইত্যাদি। দেখা যাচ্ছে, উন্নত দেশগুলো বায়ু মন্ডলে মাত্রাতিরিক্ত কার্বণ নি:সরণ করার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

সৃষ্টি হচ্ছে গ্রীণ হাউজ প্রতিক্রিয়াসহ নানারূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিভিন্ন তথ্যে উপাত্যে দেখা যায় যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতে যেখানে গড়ে বছরে ৮টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে সেখানে বর্তমানে হচ্ছে ১২ টি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতাও বাড়ছে অনেক। শত শত বা হাজার হাজার মানুষ হাতহত হচ্ছে।

অনেক সময় মৃতের সংখ্যা হচ্ছে কয়েক লাখ লাখ। পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে যদি বায়ুতে কার্বণ নি:স্মরনের মাত্রা না কমানো যায়, তাহলে মেরু এলাকার বরফ গলে যাবে এবং সমুদ্র তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবে। এ পর্যায়ে রয়েছে মালদ্বীপ পুরোটাই। বাংলাদেশের ১৮ থেকে ২০ ভাগ এলাকাও সমুুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। তা যেতে শুরুও করেছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সীমানায় জেগে উঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ সমুদ্রের নিচে তলিয়ে গেছে। এখন বন্যা হলে দেশের প্রায় পুরে অংশই তলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আমরা উন্নত বিশ্বের কার্বন নি:স্মরণের কারণে একদিন পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবো এবং বর্তমানেও সীমাহীনভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে মালদ্বীপ সমুদ্রের নিচে তাদের মন্ত্রী সভার বৈঠক করেছে।

নেপাল একই ধরনের বৈঠক করেছে হিমালয়ের উপরে। এ পর্যায়ে উন্নত বিশ্ব তাদের কার্বণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়েছিলো। পরিবেশ উন্নয়নে উন্নত বিশ্ব সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করবে বলেও জানা গিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এসব প্রতিশ্র“তি ও আশ্বাসের কোন বাস্তবতাই দেখতে পাচ্ছি না। প্রকৃতি থেমে নেই।

একের পর এক সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হচ্ছেই। এমনি এক পরিস্থিতিতে ঢাকায় ঐ আদালত রায় দিয়েছে। আমরা এ রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, এ আদালত যে রায় দিয়েছে তার একটি কপি উন্নত দেশগুলোর হাইকোর্টে পাঠানো দরকার। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এ রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

আমাদের দেশের মানবাধিকার কর্মীদের পরিবেশ উন্নয়নে আরো যতœবান হওয়া দরকার। কেননা, পরিবেশ বিপর্যয়ে আমরা সবচেছে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আজ উন্নত বিশ্ব বায়ুতে অতিমাত্রায় যে কার্বন নি:স্মরণ করছে, এবং প্রতিবেশীদেশ নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের পরিবেশের যে ক্ষতি সাধন করছে তা থেকে রেহাই পেতে হবে আমাদের। অন্যথায় আমরা শুধুমাত্র সাগরে তলিয়েই যাব না, সাগরে তলিয়ে যাবার আগে জীব বৈচিত্র হারাবো। এমনকি নিজেরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারি।

কাজেই নদী মাতৃক বাংলাদেশ আবার পুন:রুদ্ধার করতে হবে আমাদের। প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। দেশের নদ-নদী জলাশয় খনন ও পুন:খনন এবং সংস্কার করতে হবে অবশ্যই। আমরাও পৃথিবীতে টিকে থাকতে চাই। এটাই আমাদের চিরায়ত প্রত্যাশা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।