আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপসহীন খালেদা ! তালুবন্দি মুক্তিযুদ্ধ !!

মানুষ আমার সাধন গুরু. সেই মোকামে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাননীয় খালেদা জিয়া নীতির প্রশ্নে বরাবরই আপোসহীন---- ২০১৩ সালের মহান স্বাধীনতার মাসে আরো একবার প্রমাণ করলেন। সত্যিই নীতির প্রশ্নে তিনি চীনের প্রাচীরের মতোই অটল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত তরুণ প্রজন্ম আর জনতার হৃদস্পন্দনও তাকে বরাবরের মতো এবারও তাকে কক্ষচ্যুত করতে পারেন। সাবাশ আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া। আপসহীন হওয়া ভালো, কিন্ত জনতার দাবীর সঙ্গে একটি বড় গণতান্ত্রিক দলের নেত্রী হিসেবে আপস করবেন না -- এটা মোটেও গণতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

দেয়ালে দেয়ালে একসময় লেখা হয়েছে খালেদা জিয়ার উক্তি -- ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস - বেগম খালেদা জিয়া’। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে সর্ম্পৃক্ত বিএনপি নেত্রী তার ২৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনের এই পর্যায়ে মনে করছেন ‘জামাতে ইসলামী সকল ক্ষমতার উৎস’। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা হীন একজন গৃহবধূ থেকে জাতীয় নেত্রী এবং দুইবার মসনদের শীর্ষে আরোহনকারী খালেদা জিয়ার নামের আগে জোরালোভাবে যে উপাধি ব্যবহার করা হয়, তা হলো ‘আপসহীন নেত্রী’। নব্বুইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অটল ও অবিচল ভূমিকার কারণে নন্দিত এই নেত্রীকে ‘আপসহীন’ বিশেষনে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের কান্ডারী শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নিলেও নীতির সঙ্গে আপস করেন নি খালেদা জিয়া।

অটল ছিলেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকারে। এই দৃঢ় ভূমিকা প্রশংসিত হয় দেশবাসীর কাছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি হয়ে উঠেন বিপুল জনপ্রিয়। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্র দল শক্তিশালী হয়ে উঠে। ছাত্র দল তথা তরুণ প্রজন্মের কাঁধে ভর করেই অগোছালো সাংগঠনিক অবস্থানে থেকেও ৯১ সালের নির্বাচনে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করেন। ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার নের্তৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগ তাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। তারই প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে জামাতকে সাথী করে বিএনপি নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধীতাকারী দল জামাতকে রাষ্ট্র ক্ষমতার স্বাদ দেয়। এ বিষয়টি যে গণমানুষ ভালোভাবে নিতে পারে নি, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। নিদারুণভাবে জনগণ প্রত্যাখান করে বিএনপি-জামাত জোটকে।

প্রায় ৩০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকলেও দূরদর্শী হতে পারেন নি খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের পরিণতি থেকে তিনি শিক্ষা নিতে পারেন নি। ছুঁড়ে ফেলতে পারেন নি অপশক্তি জামাতকে। ঝুঝতে পারেন নি গণমত। জামাতের প্রশ্নে তিনি রয়ে গেলেন আপসহীন।

যে তরুণ প্রজন্ম তাকে প্রথমবার ক্ষমতায় আসতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল, তারুণ্যের সেই শক্তিকে তিনি অবমূল্যায়ন করলেন। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ সম্পর্কে তার মন্তব্য, 'শাহবাগ থেকে সবার ফাঁসির দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের ঘটনা নজিরবিহিন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালের পক্ষে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব নয়। এই ট্রাইব্যুনালের যে কোন রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।

' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে তারুণ্যের অভ্যুত্থানের প্রথম দিকে খালেদা জিয়া নিরব ভূমিকা পালন করেন। শাহবাগের আন্দোলনের শুরুতে অবশ্য তার দলে বেশ কজন শীর্ষ নেতা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে হলেগণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিলো। এতে অনেকেই ধরে নিয়েছিল, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে এ আন্দোলনের প্রতি খালেদা জিয়ারও রয়েছে নিরব সমর্থন। শাহবাগে তার দল বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের অনেক কর্মীকেই শ্লোগান মুখর হতে দেখা গেছে। তাছাড়া বিএনপি তো মুক্তিযুদ্ধের এক সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষকের প্রতিষ্ঠিত দল।

এই দলে এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা সম্পৃক্ত আছেন। কাজেই খালেদা জিয়া ও বিএনপির কাছে তরুণপ্রজন্ম ও দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, তিনি যুদ্ধাপরধীদের দল জামাতকে প্রত্যাখান করবেন এবং আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা আর তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী নিয়ে মাঠে থাকবেন। এতে নিশ্চিত বেড়ে যেত খালেদা জিয়া ও বিএনপি জনসমর্থন। শাহবাগ আন্দোলনের ফসল এককভাবে আওয়ামী লীগের ঘরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হতো।

.... কিন্তু হায়, ধন্য আশা কুহকিনী! খালেদা জিয়া উল্টো পথেই চললেন। জামাতের সাথে জোট গড়ে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি যে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে তা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার কোনো চেষ্টাই তিনি করলেন না। এই সঙ্কটে আরো অধিক মাত্রায় পতিত হওয়ার পথকেই প্রশস্ত করেছেন খালেদা জিয়া। জামাতের সমর্থনে তিনি রয়ে গেলেন আবারও কঠোর আপসহীন। এই ভূ-খন্ডে ইতিহাস বলে,অতীতে জনগণের হৃদস্পন্দন না-বোঝার খেসারত দিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল।

যাদের পরিনতি হয়েছে ভয়াবহ। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় দল মুসলিম লীগ আজকে কোথায়? আজ মুসলিম লীগের কোনো অস্তিত্বই নেই। বিএনপি কী আরেকটি মুসলীম লীগ হতে চললো। খালেদা জিয়া ও বিএনপির বোধদয় না-হলে ২০০৮ সালের চেয়েও করুণ পরিণতি নেমে আসবে তাদের উপর। ফলাফল হবে, দেশে একচেটিয়া একদলীয় সরকার।

স্বেচ্ছাচারিতা হয়ে উঠে একদলীয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি জনগণের জন্য কল্যানকর হবে না মোটেও। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র হবে বিপন্ন। খালেদা জিয়া যেহেতু জনধিকৃত যুদ্ধপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখার বিষয়ে আপসহীন, সেহেতু বিএনপির পরিণতি সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক কথা বলার সুযোগ নেই। তাহলে বিকল্প প্লাটফর্ম কী হবে? কুলাঙ্গার এরশাদ! অসম্ভব.. যার মধ্যে নৈতিকতার বালাই নেই, কথার কোনো ঠিক নেই.. সেই এরশাদের উপর ভরসা করা যায় না কিছুতেই।

তাহলে উপায়? উপায় একটাই-- চাই নতুন শক্তি, চাই নতুন নের্তৃত্ব। শাহবাগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত নতুন প্রজন্ম কী পারবে এরকম সময়ের দাবী পূরণ করতে। নাকি নিজ দলে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী রেখে আওয়ামী লীগ সাবজনীন মুক্তিযুদ্ধকে করে রাখাবে তালুবন্দি?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।