আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেহেরজান: সাময়িক নয় স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি ‘জার্নালিস্টদের’ সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন রুবাইয়াত



মেহেরজান: সাময়িক নয় স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি ‘জার্নালিস্টদের’ সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন রুবাইয়াত জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম মেহেরজান: সাময়িক নয় স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি‘জার্নালিস্টদের’ সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন রুবাইয়াত ঢাকা: ‘বার বার কেন আমার থিসিসের বিষয়টি আসছে আমি বুঝতে পারছি না। আর আমি জার্নালিস্টদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। ’ মেহেরজান ছবির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেনের সঙ্গে ছবিটির প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল। কিন্তু যখনই বলা হলো ‘মেহেরজান ছবিটি থিসিসের ভিত্তিতে নির্মিত’, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পরিচালক রুবাইয়াত। তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এরপর তাকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘মেহেরজান’ ছবির প্রদর্শনী সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মেহেরজান ছবিতে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করা হয়েছে। এবিষয়ে ছবির পরিচালক, পরিবেশক সংস্থা, সেন্সর বোর্ড সদস্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন বাংলানিউজের কাছে। মেহেরজান ছবি নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে ছবিটির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ছবির বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে।

তাই দক্ষিণ এশিয়ায় ইতিহাস নিয়ে যারা কাজ করেন, বীরাঙ্গনাদের জীবনী নিয়ে কাজ করেন, তাদের কাছে আমি ছবির সিডি পাঠিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, যারা এই ছবির বিরুদ্ধে কিছু না বুঝেই বিতর্ক করছেন তারা লজ্জা পাবেন ইতিহাসবিদদের কাছ থেকে জবাব আসার পর। ’ তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘এই ছবি নিয়েতো মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কিছু বলেনি। মফিদুল হক কি কিছু বলেছেন, আলী যাকের কিছু বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের কোনো শিক্ষক কি এর প্রতিবাদ করেছেন, মুনতাসীর মামুন কি কোনো আপত্তি উত্থাপন করেছেন? তারা তো কিছু বলেননি। বলছে কিছু ছেলে, যারা ব্লগে ‘আযাইরা’ লেখালেখি করে সময় কাটান।

তাদের এই কর্মকাণ্ড পুরো জাতীর জন্য লজ্জাজনক। ’ রুবাইয়াত হোসেন বলেন, ‘তারা কতোটুকু জানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে? আর আমি আপনার মাধ্যমে তাদের বলে দিতে চাই, তাদের জন্য এক বিশাল লজ্জা অপেক্ষা করছে, যখন দক্ষিণ এশিয়ার খ্যাতনামা ইতিহাসবিদদের কাছ থেকে এই ছবির প্রশংসা আসবে। ’ ছবিটি হঠাৎ করে কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো? জানতে চাইলে রুবাইয়াত হোসেন বলেন, ‘আর্শীবাদ চলচ্চিত্রের কর্নধারকে এই ছবির বিষয়ে অনেক থ্রেট করা হয়েছে। অনেক চাপ ছিলো তার ছবি বন্ধ করা নিয়ে। তাই তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন।

’ আপনার এই ছবির মূল ভাবনা এসেছে আপনার থিসিস পেপার থেকে- এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বার বার কেন আমার থিসিস এর বিষয়টি আসছে আমি বুঝতে পারছি না। আর আমি “জার্নালিস্ট” দের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না’। একথা বলে তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন। ছবিটির পরিবেশক আর্শীবাদ চলচ্চিত্রের কর্ণধার হাবিবুর রহমান খানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তার উপরে কোনো ধরনের চাপই ছিল না। ‘তাহলে কেন ছবিটি হঠাৎ করেই সাময়িক বন্ধ করা হলো?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অনেক কাছের মানুষেরাই ছবিটির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

ছবির প্রিমিয়ার শো’র দিনই তারা বলেছেন, এটি তুলে নিতে। অনেকেই বলেছেন এটি আইএসআইয়ের টাকায় বানানো ফিল্ম। ৪০ বছর আগে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেখানে কেন এখন এই ছবির জন্য রাজাকার হবো। অনেকেই পরোক্ষভাবে রাজাকার বলেছে। ’ তিনি বলেন, ‘আমি ছবিটি নিয়েছিলাম, এর প্রতি আমার ভাললাগা থেকে।

আমি সবসময় তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে থাকি। মেয়েটি (পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন) ছবিটি বানিয়েছে, তাই তার সঙ্গে ছিলাম। এতে আর কতো টাকা আমার ব্যবসা হতো। বরং আমার আর্র্থিক ক্ষতিই হয়েছে। আর একটা কথা, যারা ছবির ব্যাপারে ব্যাখ্যা (ইনটারপ্রেটেশন) দিচ্ছেন তারা ভুল দিচ্ছে।

আমি আমার অভিমান থেকেই ছবিটি তুলে নিয়েছি। কারণ আমাদের ভিতরে বিভেদ আছে, কিন্তু রাজাকারদের ভিতরে কোনো বিভেদ নাই। ’ আর সবার দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতো এক না। এক জিনিস একেক জন একেকভাবে দেখেন। ছবিতে মুক্তিযুদ্ধকে ‘গণ্ডগোল’ বলা হয়েছে কেন?, জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটি তখনকার মানুষের গ্রামের ভাষা।

’ পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে প্রেম নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উল্টো এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন ‘ আপনার কাছেই জানতে চাই, প্রেমের কী কোনো জাত, ধর্ম, দেশ, বিভেদ আছে?’ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে প্রেম করা কতোটুকু বাস্তবসম্মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রেমতো একটা মানবিক বিষয়। প্রেম হতেই পারে। তবে যারা এই ছবির বিরোধিতা করছে তাদের মতামতকে (ওপিনিয়ন) আমি শ্রদ্ধা জানাই। ’ ছবিটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আবার কবে প্রদর্শনী শুরু হবে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেখা যাক, সবাই ঠাণ্ডা হোক, তারপর।

’ মেহেরজান ছবিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য আছে বলতেই সেন্সর বোর্ডের সদস্য সানোয়ার মুর্শীদ বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে ১০০ ভাগ দ্বিমত পোষণ করছি। ’ তিনি বলেন, ‘ভদ্রমহিলা (পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন) তার দৃষ্টিভঙ্গিতে ছবিটি নির্মাণ করেছেন, এখানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কিছুই নেই। ’ পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে প্রেম হতে পারে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতেই পারে। পাকিস্তানি সৈন্যরা সবাই যে খারাপ তাতো নয়। ’ সানোয়ার মুর্শীদ কিছুটা রাগান্বিত স্বরে এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনারা যারা ছবির বিরোধিতা করছেন, তারা কিছু না বুঝেই করছেন।

’ সেন্সর বোর্ডের সবাই কী ছবিটির বিষয়ে একমত ছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ছবি দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হককে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম। তিনি আর আমরা সেন্সর বোর্ডের ১৪ সদস্য সবাই একসঙ্গে ছবিটি দেখেছি। যেখানে যেটুকু আপত্তি আমাদের ছিল, সে টুকু আমরা কেটে দিয়েছি। ’ মফিদুল হক কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনিও আমাদের সঙ্গে একই মত পোষণ করেছেন। ’ বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছবিটি আমি দেখেছি।

প্রথমত, আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি দুর্বল ছবি এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার বিরোধী ছবি। দ্বিতীয় কথা হলো, ছবিতে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ ও হেয় করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের, বীরাঙ্গনাদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আমাদের যে শ্রদ্ধাবোধের জায়গা আছে, সেটিকে অপমান করা হয়েছে। ছবিটি দেখে আমাদের কোনো শ্রদ্ধাবোধ জাগবে না।

’ তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড ছবিটি প্রত্যাহার করুক বা নিষিদ্ধ করুক সেটা আমি চাই না। এটা দর্শকরাই বিচার করবে। দর্শকদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত তারা কী করবে। ’ আপনি সেন্সর বোর্ডের একজন প্রাক্তন সদস্য। আপনি যদি বর্তমান কমিটির সদস্য হতেন তাহলে কী করতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পয়েন্টগুলো বের করতাম।

’ মেহেরজান ছবিটি সাময়িক বন্ধ করার পর ছবির সহকারী পরিচালক একটি প্রতিবাদ লিপিতে বলেছেন, ‘একটি শৈল্পিক কাজের ত্রুটি বিচ্যুতি শৈল্পিকভাবে চিহ্নিত না করে মুষ্টিমেয় জনমতকে অপপ্রচারে উত্তেজিত করার মাধ্যমে নস্যাৎ করার এ হেন চর্চা আপামর শিল্পী সাহিত্যিক ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী যে কারো জন্যই অশুভ ইঙ্গিতবাহী’। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না, কী করে এই ছবি এ সময়ে মুক্তি পেল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি যেখানে ক্ষমতায়। এই ছবিতে আমাদের গৌরবকে ( মুক্তিযুদ্ধ) অপমান করা হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড কী করে এই ছবির ছাড়পত্র দিলো সে জিজ্ঞাসা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রতিটি মানুষের।

সাময়িক নয়, পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে পাকিস্তান-প্রেমী এই মেহেরজানকে। ’ বাংলাদেশ সময় ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.