আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যামেরার চোখ

ঝিনুক নীরবে সহো...ঝিনুক নীরবে সহে যাও...ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!

নীতু আর ধ্রুবকে বাইরে থেকে দেখলে যে কেউ মনে করবে যে এটা সুখী পরিবারের আদর্শ বিজ্ঞাপন। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে ভিন্ন। ভালোবেসে বিয়ে করলেও নীতু-ধ্রুব পরিবারের গহীনে রয়েছে ভাঙ্গনের গল্প। পাঁচ বছর আগে যখন তারা তাদের জীবন শুরু করে তখন ধ্রুব ছিল ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার আর নীতু ছিল ছাত্রী। আজ ধ্রুব আন্তির্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফার আর নীতু একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায়।

দ্বন্দ্বটা শুরু হয় অনেকটা এভাবে- আবেগপ্রবণ নীতুর সেদিন কোন এক কারণে মন খারাপ ছিল। অবশ্য এটা এমন কোন নতুন কিছু যে তা না। প্রায়শই ছোটখাটো কারনে নীতুর মন খারাপ হয়ে যায়। তবে তা অন্য গল্প। এখন যেদিনের কথা বলছি তা ছিল বছর দুয়েক আগের কথা।

কোন এক গল্পের বই পড়ে নীতুর খুব মন খারাপ। চোখের মাঝের নদীটা বাঁধ ভেঙ্গে উপচে পড়ল নীতুর গাল বেয়ে। ঠিক তখনি ধ্রুব ঘরে ফিরল। ফটোগ্রাফার ধ্রুবর চোখ খুঁজে নিল এক অপূর্ব কম্পোজিশন। পড়ন্ত বিকেলের আলো পড়েছিল নীতুর গালের জমে থাকা পানিতে।

চুলগুলো উড়ছিল হাওয়াতে। চটপট হাতের ক্যামেরায় ধ্রুব ছবিটি তুলে নিয়েছিল। ক্যামেরার শব্দে নীতু ফিরে তাকালো। মনে হল তার ভালোবাসার মানুষটা তার চোখের জলে কেবল ছবি তোলার উপকরণ খুঁজে পায়, এছাড়া চোখের জলের আর কোন মুল্য নেই ধ্রুবর কাছে। দ্বন্দ্বটা শুরু হয় এর পর থেকে- নীতুর কেবলি মনে হতো ধ্রুব যেন তাকে আর ভালোবাসে না।

ধ্রুবর সকল ধ্যান-ধারণা যেন জুড়ে রয়েছে তার ফটোগ্রাফী, সেই জগতে যেন নীতুর কোন জায়গাই নেই। নীতুর যেন সব থেকেও কিছু নেই। ঘটনাটা ছিল অনেকটা এরকম- ধ্রুবর সেদিন কোন এক ফটোগ্রাফীর কনফারেন্সে সিডনি যাওয়ার কথা। বহুদিন পর নীতু আর ধ্রুব একসাথে কোথাও যাচ্ছে। ঠিক শেষ মুহূর্তে গাড়িতে ওঠার আগে নীতু ধ্রুবর লেন্সের ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল।

হঠাৎ সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে নীতু পড়ে গেল। নীতু উঠে দেখল কপাল কেটে রক্ত পড়ছে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধ্রুবর হাত নেমে এলো নীতুর গালে। হ্যাঁ, নীতুর আরো সাবধানে নামা উচিত ছিল। আরো সাবধানে নামলে ধ্রুবর এত সাধের লেন্সগুলো ভেঙ্গে যেত না।

হ্যাঁ, নীতুরই ভুল ছিল। নীতুকে রেখে রাগত ধ্রুব একলা চলে যায়। একলা পড়ে থাকে নীতু। তিনদিন পর বাসায় ফিরে আসে ধ্রুব। একটু ভয়ে ভয়েই দরজা খোলে।

আগেরবার নীতু রাগ করে তিনদিন না খেয়ে ছিল। এবার না জানি কি হয়! নাহ! ধ্রুব নিজেও বোঝে ওভাবে নীতুকে মারাটা উচিত হয়নি। কিন্তু খেপা রাগ যে উচিত অনুচিত বোঝে না! ভয়ে ভয়ে বেডরুমের দরজা দিয়ে উঁকি দেয় ধ্রুব। জানালা দিয়ে গোধূলির আলো পরে ছিল নীতুর গায়ে। নীতুর পরনে ছিল নীল শাড়ি।

দুহাতের ধমনী থেকে ছিটকে পড়া লাল রক্তে ভেসে ছিল সমস্ত মেঝে। নীল, লাল, হলুদ এর কি অপূর্ব কম্পোজিশন! তবুও ধ্রুবর হাত ক্যামেরার দিকে গেল না। নীতুর অস্তিত্ব ছিল না কোথাও। তবু সারা ঘর জুড়ে যেন নীতু ছড়িয়ে ছিল কি অদ্ভুত ভাবে! জানি, জীবন এমন না। তবুও এটা নিতান্তই গল্প।

বাস্তবের নীতুরা এভাবে নিজেকে শেষ করে দেয় না। উপন্যাসের নীতুরা অনেকটা জীবনানন্দ দাশের কবিতার মত... “জানি - তবু জানি নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় - আরো এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে; আমাদের ক্লান্ত করে; ক্লান্ত - ক্লান্ত করে; লাশকাটা ঘরে সেই ক্লান্তি নাই; তাই লাশকাটা ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে। ’’ ধ্রুব এখন আর ছবি তুলতে পারে না। শেলফের ভেতর থেকে ক্যামেরাটি শূন্য এক চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।