আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজাকারদের কি মেহেরজানের মতো মনে হয়?

নিঃসঙ্গতায় একশ বছর :( :( :(

বীরাঙ্গনার সন্তান জার্মান দম্পতি পালিত সারাহ বাংলাদেশে এসে রামকৃষ্ণ মিশনে এসে উঠেছে নিজের নাড়ীর খোঁজে। সারাহ দেশে এসে দেখা করতে গেলো তার মায়ের কাজিন মেহেরজান এর সাথে এভাবেই শুরু "মেহেরজান" সিনেমা। দুপুরে মুভি না দেখে চাপাবাজি করার জন্য তিরষ্কৃত হওয়ায় মুভি দেখাটা আমার জন্য ফরয হয়ে পড়েছিলো। একা যেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই বুয়েটের আমার রুমমেট জুনিয়র ব্লগার আশরাফ জামান কে কল দিলাম, কিরে তুই কি ফ্রি আছিস নাকি ব্যস্ত? ভাই আমার কোনো কাজ নাই পরীক্ষা শেষ তাই হলে বসে মাছি মারতেসি। তাহলে দেরী না করে বলাকায় গিয়ে ২টা টিকেট কেটে ওয়েট কর আমি আসছি ২০ মিনিটের মধ্যে।

সিনেমা হলে এটার আমার সেকেন্ড টাইম এর আগে দেখেছিলাম "দুই দুয়ারী"। ডিসি তে ঢুকে দেখি সব মিলে ৩০-৪০জন ছিলো(হয়ত সন্ধ্যার সময় বলে হাউসফুল ছিলো না) সিনেমা শুরু হলো। মেহেরজান(জয়া বচ্চন) সারাহ কে বল্লেন তুমি আমার বাসায় চলে আসো। সারাহ মেহেরজানের অনেক দিনের জমানো এবং লুকোনো ব্যাথা টাকে আবার জাগিয়ে দিলো। একটা ডায়েরী।

মেহেরজানের দিনলিপি। পুরোনো স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলার আরো কিছু অনুষঙ্গ (যেমন খাজা সাহেবের তসবীহ) মেহেরজানকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো ৭১ এর সেই প্রেমময় দিন গুলোর আরো কাছাকাছি। ২৫শে মার্চের পর পুরো দেশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে ও মেহেরজানের নানার বাড়ী অর্থাৎ খাজা সাহেবের এলাকায় কোনো যুদ্ধ হয়নি কারণ গ্রামে খাজা সাহেবের(ভিক্টর ব্যানার্জী)গ্রাম পিতা সুলভ প্রভাব। তাই মেহেরজানের পরিবার যুদ্ধাক্রান্ত দেশের একমাত্র বেহেশত নানার বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। গ্রাম পিতা আলীগড় এবং লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি।

সবাই খাজা সাহেবক কে অনেক বেশী সম্মান করেন। এই জন্য মুভির অক্ষম মুক্তিযোদ্ধারা খাজা সাহেবের অনুমতি নিতে যান অপারেশনের জন্য। আমার বিশ্বাস এরকম মুক্তিযোদ্ধারা বাস্তবিক পক্ষে থাকলে আমাদের স্বাধীনতা সোনার হরিণ হয়ে থাকতো। খাজা সাহেব কেনো যুদ্ধের অনুমতি দেননি? দেননি কারণ তিনি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ উনি রক্তপাত পছন্দ করেন না। যুদ্ধবিরোধী রাজাকার বামপন্থী থেকে শুরু করে রাজাকার,মুক্তিযোদ্ধা সবাই খাজা সাহেবের অনুমতি জন্য খাজা সাহেবের দরবারে (একটা বাগানে একটা স্লিপিং চেয়ারে খাজা সাহেব বসে থাকেন এবং অন্যদের বাসর জন্য আরো ২-৩টা চেয়ার রাখা আছে) পিস কমিটির সদস্য(হুমায়ুন ফরীদি) খাজা সাহেবকে দলের টানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন কারণ খাজা সাহেম ব্লাডশেড চান না।

মুক্তিযোদ্ধা যাদের কাজ ছিলো চায়ের দোকানে রাজা উজির মারা তারা ও অপারেশনের অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। আবার বামপন্থী নেতা(আজাদ আবুল কালাম) শান্তিপ্রিয় গ্রামে নিজের পার্টির জন্য আশ্রয় চেয়ে পেয়ে যান(খাজা সাহেবের দয়ার শরীর বলে কথা) মেহেরজান এর বিয়ে পাগল খালা সালমা একজন সোলজার বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেন এবং নিজের আকাঁ স্বপ্নের ছবি মেহেরজানকে দেখান। সৈনিক যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে সালমার কোলে নিজেকে সপে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। (সালমা চরিত্রটা ছিলো এই সিনেমার সবচে বিরক্তিকর অংশ। বাড়ামী টা চরম বিরক্তির উদ্রেক করছিলো।

সালমার বাড়ামীতে আমার নিজের ই লজ্জা লাগছিলো। ) সালমার একটা কথা মনে ঘুমের মধ্যে ও কানে বাজবে "আব্বা আমাকে একটা সৈন্য(সৈন্য মানে কি মুক্তিযোদ্ধা?) এনে দাও" যদি ও সালমা যুদ্ধে ক্লান্ত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে (চরিত্রের নাম শিমুল কিন্তু সালমা আদর করে ডাকে লম্বু) বিয়ে করেছে যুদ্ধকালীন সময়ে তার আকাঁ ছবিটা দেখলে যে কারোরই মনে হবে এটা একটা খান সেনার ছবি। আমার জানামতে, তখন কোনো ইন্ডিয়ান কিংবা পাকিস্তানী চ্যানেল ছিলো না। এরপরে ও গ্রামের অশিক্ষিত মেয়ে উর্দুতে কথা বলতে দেখে অবাক হয়েছি। অনেকটা আজকালকার ছেলে-মেয়েদের বান্ধবীর সাথে ফাজলামো করে ২/১টা হিন্দী বলার মতো।

মেহেরজান শহরের মেয়ে গ্রামে এসে উদ্বেলিত। সাইকেল ভ্রমেণে গিয়ে আহত। নায়িকাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে ফেরেশতা। অন্যান্য বাংলা সিনেমার মতো এখানে ও ফেরেশতাদ্বয়কে আমার ভাংতি পয়সা ,মনে হয়েছে। একজন রিফাত চৌধুরী এবং আরেকজন অরুপ রাহী।

উনারা নায়িকাকে বাড়ী পৌছে দিয়ে নায়িকার ভালো বন্ধু হয়ে যান। এই দুই ভালো বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের সৌন্দর্য আবিষ্কার করে বেড়ায় মেহেরজান। এভাবে সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে করতে একলা জঙ্গলে হারিয়ে যায় মেহেরজান। মেহেরজান জানতো না আশেপাশে খানসেনারা মজুদ আছে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন মেহেরজানকে মাটিতে ফেলে মুখ চেপে ধরে।

পরে মেহেরজান বুঝতে পারে তাকে বাচাঁনোর সদিচ্ছা নিয়ে বেলুচী ওয়াসিম খান এই কাজ করেছিলো। ঘরে এসে যথারীতি বালিশ চেপে ধরে ওয়াসিম খানের কথা ভাবতে থাকে মেহেরজান---তাকে খানসেনাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাচাঁনো আহত ওয়াসিম খানকে জঙ্গলে ফেলে আসা কি ঠিক হলো? খাজা সাহেবের মানবতা শীর্ষক লেকচার শুনে নায়িকা ঠিক করে ফেলে অসুস্থ খান সেনাকে বাচাঁতে হবে(মুরগী নিজে শেয়ালের খাচাঁয় বেড়াইতে যাওয়ার কাহিনী এটাই প্রথম)। বেহায়া সালমর কারণে আরো প্রভাবিত হয়ে মেহেরজান প্রিয় বন্ধু রাহীকে নিয়ে ওয়াসিম খানকে উদ্ধার করতে যায়। বেলুচী হানাদার বাহিনীর সৈন্য ওয়াসিম পাক আর্মির থেকে আলাদা হলো কেনো?কারণ তার কামান্ডার তাকে একটি মসজিদে গুলি করতে বলে যেটা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। ভাইয়ের গায়ে গুলি চালানোটা তার কাছে সম্ভব ছিলো না।

পাক বাহিনীর কোনো সোলজার এতো মহান হতে পারে এটা আমার কল্পনায় ছিলো না কারণ ছোটোবেলা থেকে শুধু ওদের হিংস্রতার গল্প শুনেছি। হানাদার বাহিনী তাকে বরখাস্ত করে আরেস্ট করে ক্যাম্পে আটকে রাখে। ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর আক্রমনে সাবই বেচারা ওয়াসিম খানকে ফেলে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের বন্দী দশা থেকে ওয়াসিম আহত অবস্থায় পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। যাই হোক ওয়াসিম এখন রাহীর ঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে এবং বোনাস হিসেবে নায়িকার সেবা।

সেবা করতে করতে প্রেম বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা গানে ওয়াসিম খানের মনের কোমল দিক তুলে ধরা হয় এই যেমন প্রকৃতি প্রেম মজার ব্যাপার খান সেনা একটা কিউট ছাগুকে কোলে নিয়ে আদর করে। এটা দেখে নায়িকা বেশ মুগ্ধ হয়। প্রেম হওয়ার পর বনে জঙ্গলে রোমান্টিসিজম চলতে থাকে। আসলে ওদের পিরীতের দৃশ্য আপনাদের বোঝানোর মতো সামর্থ্য আমার নাই।

কিছু না বুঝে এবং চিন্তা না করে শুধু ওদের প্রেমের দৃশ্য দেখলে আপনারা বিমোহিত হবেন। যুদ্ধের কোনো নিশানা নাই কি টেনশন ফ্রি প্রেম----সবুজ ঘাসে কপোত-কপোতীর খালি পায়ে হাটাঁ,নৌকায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা,সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি ওদের প্রেমের জয়গান করছিলো। (আমার মতে সিনেমার বেস্ট পার্ট ছিলো এই অংশটাই) মেহেরজান গ্রামে পা রাখার পর থেকেই কাজিন সামির নজর পড়ে মেহেরজানের উপর। মেহেরজানের খালাতো বোন নীলা অর্থাৎ সারাহ'র মা যার কাহিনী শুনতে সারাহ জার্মানী থেকে এদেশে এসেছে। যাকে নিয়ে সিনেমাটা শুরু।

কিন্তু আলটিমেটলী পুরোটা জুড়ে মেহেরজানের প্রেম কাহিনী ছিলো বেশী। নীলা একদিন খাজা সাহেবের বাড়ীতে এসে হাজির। খানসেনাদের অত্যাচারে নির্যাতিত নীলা বীরাঙ্গনা। নীলাকে উপস্থাপন টা অরুচিকর এবং দুঃখজনক ছিলো। নীলা সবসময় স্লিভলেস ব্লাউস পরিয়ে আবেদনময়ী ভাবে ফুটিয়ে তোলাটা যথেষ্ট দৃষ্টিকটু ছিলো।

নীলার রেপের প্রতিশোধ নিতে কাজিন সামি যুদ্ধে যায় কিন্তু যুদ্ধ ভালো লাগেনা এই অজুহাতে সে ঘরে ফেরত আসে এবং মেহেরজানকে বিয়ে করার বায়না ধরে। এদিকে নীলা বাম নেতা সুমনকে (আজাদ আবুল কালাম) ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু খাজা সাহেব এই সম্পর্ক মেনে নিবেন না কারণ নীলা আর সুমনের দুধ বোন (নীলার জন্মের পর মা মারা যায় তখন নীলাকে লালন করেন সুমনের মা ) । নীলা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ গিয়ে "মেহেরজান" কথাচিত্র থেকে মুক্তি পায়। ভিলেন সামী একদিন ওয়াসিম-মেহেরজানের অভিসার দেখে ফেলে।

তারপর ধরে নিয়ে আসা হলো ওয়াসিমকে। নায়িকার আকুতি ওয়াসিমকে নতুন জীবন দেয়। খাজা সাহেব ওয়াসিম দেশে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেন। এবার বিরহ-বিধুর বিদায়। একটা হিন্দী কিংবা উর্দু গানের মাধ্যমে (আমি দুইটা ভাষার একটা ও ভালো বুঝি না তাই আমার এন্টেনা ধরতে পারে নাই )।

অবশ্য রাহী সাহেবের গান শুনে দুই লাইন শায়েরী শুনিয়েছিলো খানসেনা ওয়াসিম (খান সেনা হলে ও তখন সে পুরোদস্তুর প্রেমিক পুরুষ )। গ্রাম পিতা খাজা সাহেব যুদ্ধের মধ্যে ও বেহায়া সালমা এবং যুদ্ধে উদাসীন মুক্তিযোদ্ধার হাত এক করে দেন এবং সব কাজ শেষ করে প্রস্তুতি সহকারে খান সেনাদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধের সময় যেভাবে প্রেমের অভিসার দেখানো হয়েছে তা আসলেই খুব হতাশাজনক। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে এই সিনেমায়। এই সিনেমায়।

বীরাঙ্গনাদের অপমান করা হয়েছে। জয় হয়েছে শুধু খানসেনার ভালোমানুষী এবং গভীর ভালোবাসার (মহান ভালোবাসা গুলো পরিণতি পায় না)। তখন দেশ মাতৃকার জন্য রক্ত দিতে মায়ের আচল ছেড়ে সোনার ছেলেরা যুদ্ধে গিয়েছিলো সেখানে এই মুভিতে মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বাচাঁর জন্য বিয়ে-সাদী করে নিজেকে সুখী করতে চেয়েছিলো। সিনেমার ভাষা ছিলো আধুনিক "খাইসো,গেসো,করসি টাইপ"। ড্রেস আপের কথা নাই বা বললাম।

মুভির শেষ দিকে মেহেরজানের উপলব্দি খান সেনাকে মন দিয়ে সে ভূল করেনি। সারাহ এসে প্রশ্নের মুখে দাড়ঁ না করালে হয়ত গিল্টি ফিলিংস নিয়েই তাকে বাকী জীবন কাটাতে হতো (রাজাকারদের কি মেহেরজানের মতো মনে হয়?)। এই সিনেমায় ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে লেখক এবং পরিচালক তার বিকৃত কল্পনা দিয়ে কলুষিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমি সরকারের কাছে এই সিনেমা বন্ধ করে দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। বিঃদ্রঃ লেখক এবং পরিচালক(একজন) শুরুতেই বলেছেন কাল্পনিক কিন্তু এতো বাজে কল্পনার অধিকার উনাকে কে দিয়েছে??? নতুন মাদার টেরেসা ওরফে রুবাইয়াত ম্যাডাম সিনেমায় মেসেজ দিয়েছেন "মুক্তিযুদ্ধের উপর ভালোবাসা সত্য" তাই রুবাইয়াত ম্যাডামকে নোবেল দেয়ার দাবী জানাচ্ছি অপারগতাঃ DVD সাথে নিয়ে বসতে পারলে আরেকটু পয়েন্ট ধরে লিখতে পারতাম।

যতোটুকু মনে পড়েছে ততোটুকু তুলে ধরেছি। অনেকগুলো উর্দু ডাইলগ (মহান নায়কের বলা )আমি ক্যাচ করতে পারিনি। বানান ভূল মার্জনা করবেন। [/si

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.