আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"বহুরূপী এক জেনারেলের নানা অপকর্ম"



জলপাই ভাইদের তো দেশপ্রেমিক,সৎ-ই জানতাম। এইডা কি? শীর্ষ নিউজ ডটকম, ঢাকা: এখানে যার কথা বলা হচ্ছে, তাকে সবাই কমবেশি চেনেন। নানান জন নানাভাবে চেনেন। কেউ হয়তো চেনেন চাঁদাবাজির শিকার হয়ে, কেউ তার অবৈধ লোভলালসার শিকার হয়েছেন, কেউবা তার অন্যায় আবদার পূরণ করতে না পেরে রোষাণলের শিকার হয়েছেন। আবার কেউ চেনেন রাতারাতি বেড়ে ওঠা একজন সম্পদশালী জেনারেল হিসেবে।

আর সাধারণ জনতা চেনেন তাকে অতিলোভী, চতুর ও বহুরূপী হিসেবে। যার কথা বলা হচ্ছে, এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন- এই সেনা কর্মকর্তা আর কেউ নন, মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ। সাধারণ আর্মি অফিসাররা চেনেন অবশ্য তাদের অর্থ আত্মসাতকারী হিসেবে। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা চেনেন তাদের দুর্নীতিতে ভাগ বসানোকারী হিসেবে। অন্য সাধারণ বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা চেনেন বড়ো চাঁদাবাজ হিসেবে।

তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মন্তব্য হলো, সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এমন দুর্নীতিবাজ, স্বার্থপরায়ণ ও বহুরূপী কর্মকর্তা আর দেখা যায়নি। সেনাবাহিনীতে বহুরূপী কর্মকর্তার স্বার্থকতা তিনি একটি উদাহরণই যথেষ্ট। ওয়ান ইলেভেন সরকারের জেনারেল মাসুদ এবং মঈন দু’টি টার্ম পার করেছেন। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন। তার সব অপকর্ম ধরা পড়ে যাবার পর ডিজিএফআই থেকে আউট হয়ে এখন পথ খুঁজছেন আবারো কীভাবে দাপুটে হওয়া যায়! পেছনের কথা একটু পিছনে ফিরলে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে জেনারেল মঈন একজন মেজর থেকে তুলে এনে পরে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি দিয়ে ডিজিএফআই এর গুরুত্বপূর্ণ পদ সিআইবি’র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন ‘বারী’কে।

এই বারীকে দিয়েই জেনারেল মঈন ১/১১’র যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করান। শ’ শ’ কোটি টাকা লুটপাটের জন্য হাজার হাজার মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন করে ‘বারী ও তার দল’। ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারায় ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেনারেল মাসুদের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পদচ্যুত হন ব্রিগেডিয়ার বারী এবং পোষ্টিং নেন ওয়াশিংটন মিশনে সামরিক এ্যাটাচের। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রিগেডিয়ার বারীর স্থলে তারই যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে বসানো হয় তদানীন্তন কর্নেল শেখ মামুন খালেদকে। তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা বলে প্রতিষ্ঠালাভের আশায় সেখানে অনেক অর্থকড়ি খরচ করে এলাকার প্রতিষ্ঠিতদেরকে আরও প্রতিষ্ঠিত এবং অপ্রতিষ্ঠিতদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন।

একশ্রেণীর মানুষের মৌখিক স্বীকৃতও পান। ভবিষ্যত বিবেচনায় রেখে মামুন খালেদ সে সময় সাবজেলে থাকা দুই নেত্রীরই আস্থা অর্জনের জন্য স্বউদ্যোগে একই ধরনের দেশী মাছের ঝোল খাওয়ানো, উভয়কেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশ্বাস প্রদান থেকে শুরু করে সবকিছুই করেন। যদিও ওই সময়কার ডিজিএফআই এর তার সহযোগী কিছু সেনা কর্মকর্তা, যাদেরকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মামুন খালেদের দ্বৈত চরিত্রের সাক্ষী হওয়ার অপরাধে তিনি ঢাকায় আসার পথ রুদ্ধ করে দেন। তৎকালীন কর্নেল মামুন খালেদ রাতারাতি প্রমোশন পেয়ে ভেল্কিবাজির মাধ্যমে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার, অতঃপর মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি ও পরে ডিজিএফআই এর ডিজি হওয়ারও সুযোগ তৈরি করে নেন। সুতরাং তার জেনারেল হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল চাতুর্য্যে ভরা।

একটু পেছনে তাকালে দেখা যায়, ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে মামুন খালেদ তার খালাতো ভাই শরীফ শাহ কামাল তাজকে খুলনা বিএনপির সাধারণ নেতা থেকে শীর্ষ নেতার কাতারে অধিষ্ঠিত করতে চান। তিনি নিজে দুই নেত্রীকে যেমন একই মেনুতে খাবার খাওয়ান এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখান, অন্যদিকে নিজে আওয়ামী মুখোশ ধারণ করে ভাইকে বিএনপির শীর্ষ নেতা বানাতে কলকাঠি নাড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় তখন মামুন খালেদের সহযোগিতায় তার খালাতো ভাই শরীফ শাহ কামাল তাজ তরুণ নেতা হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও সেবামূলক কর্মকা-ের নামে খুলনার বিএনপি রাজনীতিতে বেশী সক্রিয় হন এবং নির্বাচনে প্রার্থী হবার প্রচারণা শুরু করেন। মামুন খালেদের ক্ষমতার দাপটে, প্রভাবে ও নির্দেশে তার ভাই তাজকে স্থানীয় প্রশাসন হাই-প্রোফাইল প্রটোকল দেয় এবং যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে থাকলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে থাকতে হতো বিশেষ অতিথি হিসেবে। মামুন খালেদের প্রভাবে তাজ নানা ব্যবসা-বাণিজ্য ও কমিশন বাবদ ওই সময়ই প্রায় দু’শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে মামুন খালেদ ভোল পাল্টিয়ে নিজেকে পুরোপুরি আওয়ামী লীগার বানানোর কাজে নেমে পড়েন। শেখ হেলালের মামাবাড়ি সূত্রের আত্মীয় বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। তবে বিএনপি ঘরানায় লাইন রাখার দ্বৈত চরিত্রটি এ সময়ও তিনি পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের কৌশল হিসেবে খালাতো ভাইকে বিএনপির কাছে আইটি বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেয়ার ব্যবস্থা করেন এই মামুন, যদিও তার খালাতো ভাই মূলত পড়াশোনা করেছেন কমার্স বিষয়ে। চলচ্চিত্র জগতে সুপরিচিত শাহ কামাল তাজ, ২০০৯ সালে সুপার হিরো এবং সুপার হিরোইনদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করে বিশেষভাবে আলোচিত হন।

উক্ত অনুষ্ঠানের পর থেকেই মামুন খালেদের কাছে তাজ আরো যোগ্য হয়ে উঠেন। তিনি মি. মামুনের মনোরঞ্জনের জন্য একাধিক সুন্দরী নির্বাচন করেন। একদিকে দেশের সেরা দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে তিনি বোকা বানিয়ে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন, অন্যদিকে তিনি ললনাদের রঙ্গমঞ্চে নতুন হিরো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্মিতাসহ অনেকেরই নাম তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। যাহোক, এ অধ্যায় আপাতত থাক।

ফিরে আসা যাক ভাই তাজের বিষয়ে। মামুন খালেদ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে তাজকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে বেগম জিয়াকে অনুরোধ করেন। তার কারণেই স্থানীয় বিএনপির প্রধান নেতা ও সাবেক এমপি এম নুরুল ইসলাম দাদুকে বাদ দেওয়া হয়। বেগম জিয়া সেনা কর্মকর্তা মামুন খালেদকে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিশ্চিত হয়েই তার কথায় তাজকে মনোনয়ন দেন। মামুন খালেদের প্রকৃত স্বরূপ বোঝা বড়ই মুশকিল।

যেমন, তার বড় ভাই শেখ আলিমুজ্জামান যিনি পাকিস্তানে লেখাপড়া করেছেন, সেখানে সেটেল্ড হয়েছেন; কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই মামুন খালেদ তাকে দ্রুত পাকিস্তান হতে প্রথমে সুইজারল্যান্ড, পরে সিংগাপুর এবং সবশেষে বাংলাদেশে (মামুন খালেদ ডিজিএফআইতে থাকাবস্থায়) নিয়ে আসেন। এর মাধ্যমে মামুন খালেদ তার পরিবারের পাকিস্তান প্রীতির বিষয়টি সরকারের কাছে আড়াল করার চেষ্টা করেন। মামুন খালেদ ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। তার তৃতীয় ভাই শেখ শরীফ ইকবাল পাকিস্তানে প্রথমে মাদ্রাসায় ও পরে ইসলামী আইন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে পাকিস্তানেই চাকরি শুরু করেন। পাকিস্তানী গন্ধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য মামুন খালেদ তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

তিনি দেশে এসে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী আইন পড়াতেন। পরবর্তীতে মামুন খালেদ তাকে দুবাই-এ তারই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ধন-সম্পদ দেখাশোনার জন্য ‘সেটেল্ড’ করেছেন। চতুর্থ ভাই, শেখ মোস্তফা আজিজ, তালেবান এর সাথে জড়িত হয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধে মারা যায়। মামুন খালেদের বাবা পুলিশের একজন কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে হাবিলদার এবং পরে এএসআই হয়ে অবসরগ্রহণ করে বর্তমানে তারই বাসায় অবস্থান করছেন। তার শ্বশুর শেখ মোহাম্মদ কাশিম একজন চেইনম্যান থেকে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি পেয়ে তহশিলদার হয়ে অবসরে যান।

অথচ জামাইয়ের বদৌলতে সেই তহশিলদার আজ শতকোটি টাকার মালিক হয়ে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। মামুন খালেদের সঠিক পরিচয় জানার পরই খুলনাবাসী তাকে জামায়াত-বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী জেনেই তার ভাই শাহ কামাল তাজকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করে। যদিও অবশেষে পাস করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আরোহণ করার পর খালেদ মামুন মুহূর্তের মধ্যে তার স্বরূপ পরিবর্তন করে রাতারাতি আওয়ামী লীগার বনে যান এবং সরকারের কাছে থেকে দুটি পদোন্নতি ও ডিজি, ডিজিএফআই’র মতো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পদ দখলের সুযোগ বাগিয়ে নেন শুধুমাত্র তার চাতুর্যপূর্ণ বুদ্ধির বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে। এ সুযোগকে কেন্দ্র করে জেনারেল মামুন খালেদ নিজে আওয়ামী লীগের ও ভাই শাহ কামাল তাজের মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি খুব কৌশলে উভয়কূল রক্ষা করে চলছিলেন।

এক্ষেত্রে, তিনি উভয় দলের কিছু শীর্ষস্থানীয় নীতি নির্ধারকদের ভয়-ভীতি ও অর্থ দিয়ে নিজের কব্জায় রাখেন। এর ফলেই কিছু দিন আগ পর্যন্তও আওয়ামী সরকারের চাপের মধ্যেও বিএনপি-জামায়াত শুধুমাত্র মামুন খালেদের সহযোগিতায় (ডিজি, ডিজিএফআই থাকাকালে) বেশ স্বস্তিতে ছিল। শুধু তাই নয়, মামুন খালেদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে স্যাবোটাজ করেছেন, এমন খবরও ফাঁস হয়ে যায়। বিশেষ করে সাঈদীর রায়ের পর জামায়াত সারাদেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাতে জনাব মামুনের হাত রয়েছে। কারণ, দেশে এতো বড়ো নৈরাজ্য সৃষ্টি হলো, অথচ ডিজিএফআই’র মতো সংস্থা আগে থেকে কিছুই জানতো না, কিছুই তাদের প্রস্তুতি ছিলো না এটা হতে পারে না।

এসব কারণে মামুন খালেদের সব চালাকি ও কৌশলী ভূমিকা সরকারের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই সরকার তাকে ডিজি, জিজিএফআই এর পদ হতে অব্যাহতি দেয়। ফলে মামুন খালেদ নিজে ও বিএনপি-জামায়াত হঠাৎ করে দ্বিধার মধ্যে পড়ে। একদিকে বিএনপি-জামায়াত যেমন চিন্তায় পড়ে, অন্যদিকে মামুনের অভিনব খেলা বিএনপিও কিছুটা বুঝতে পেরে তার ভাই তাজকে পূর্বের নিয়োগ থেকে সরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় মামুন খালেদ প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তার পুরাতন হিতকাংখীদের সহযোগিতায় শুরু করেন নতুন খেলা। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সরকারকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।

এ মুহূর্তে তার এই অভিনব খেলায় সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিএনপির নেপথ্যে থাকা কতিপয় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল। জেনারেল মামুন বর্তমানে সেনাবাহিনীতে গ্রুপিং করে এই সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানটিকে অশান্ত করে তোলার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য স্বভাবজাত খেলায় মেতে উঠেছেন যা তার নিজের এবং পরিবারের রক্তে প্রবাহমান। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে ডিজি, ডিজিএফআই হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মামুন খালেদ ১৯৯৪-১৯৯৬ সময়ের জন্য ডিজিএফআই-এ জিএসও-২ (স্পেশাল অপারেশন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি তৎকালীন বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এর উপর কড়া নজরদারি করেন। জেনারেল মামুন খালেদ সেনাবাহিনীর স্কুল অব মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স এর কমান্ডান্ট হিসেবে থাকাকালীন সময়ে ১/১১ কে টেকসই করার জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীকে বিভিন্ন প্রজেক্ট পেপার ও সিডি তৈরি করে দেন।

এমনকি জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকেও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। ১/১১ পরবর্তীতে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি ওয়ান ইলেভেনের সময় মামুন খালেদ কর্ণেল পদে ছিলেন। এসময় প্রথমদিকে তিনি ডিজিএফআই’তে পরিচালক মিডিয়ার দায়িত্বে ছিলেন। শুধুমাত্র মিডিয়ার দায়িত্ব পেলেও সেখানেই তিনি থেমে থাকেননি, শুরু থেকেই ব্রিগেডিয়ার বারী এবং তার দলবলের পাশাপাশি মামুনও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে হুমকি, চাঁদাবাজি ছাড়াও এসময় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মামুন বড় অংকের অর্থের মালিক হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার বারী আউট এবং তার চেয়ারে বসার পর মামুন আরো দোর্দ- প্রতাপে এসব চালিয়ে যান। ১/১১’র সময়ে ‘জাগো বাংলাদেশ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেন। ওই সময় বিএনপি নেতা জনাব একরামের (আরএকে গ্রুপ) অফিসে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার আইপিও শেয়ার নিজের নামে লিখে নেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ১৮৩৬ নম্বর একাউন্ট এর মাধ্যমে জেনারেল মামুন খালেদ এই ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় এবং নিকট আত্মীয়ের কাছে বিক্রি দেখিয়েছেন।

তার বিও একাউন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে অন্ততঃ ১৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ‘জাগো বাংলাদেশ’ এর জন্য চাঁদা হিসেবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর পার্টনার লুৎফর রহমান বাদল এর কাছ থেকে তিনি ৫ দফায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এনটিভি’র এমডি এনায়েতুর রহমানের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। এছাড়া, জনাব বাদলের কাছ থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের ৮১ লাখ টাকার শেয়ারসহ অন্যান্য কোম্পানির ৯ কোটি টাকার শেয়ার নিয়েছেন। ওই শেয়ার মেজর জেনারেল মামুন খালেদের নিজের, স্ত্রী ও শ্যালক এর নামে আছে। হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়ন ল্যাবরেটরিজ’ এর ৫০ লাখ টাকার শেয়ারসহ মোট ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার মেজর জেনারেল মামুন খালেদ তার স্ত্রী, শ্বশুর ও শ্যালকসহ নিকট আত্মীয়দের নামে গ্রহণ করেন।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ইউনাইটেড এয়ার থেকে ২৭ লাখ টাকার, মোসাদ্দেক আলী ফালুর কাছ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি’র ৭০ লাখ টাকার এবং সালমান এফ রহমানকে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে ব্যাংকের বিভিন্ন পরিচালককে বাধ্য করার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ২৫ লাখ টাকার শেয়ার। শেয়ার ব্যবসায় বিগত কয়েক বছরে গড়ে তার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। এ সকল লেনদেনের সব কিছুই তিনি ১/১১ এর শেষ হতে শুরু করে ডিজিএফআইতে থাকাবস্থায় করেছেন। বিএনপির দুর্দিনের সহায় হিসেবে খ্যাত মামুন খালেদ পুরাতন সখ্যতার সুবাদেই বিগত আমলে বিএনপির নিকট হতে সকল প্রকার সুবিধা লাভ করেছেন। যার প্রতিদান হিসেবে তিনি বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিএনপির নিকট পাচার করে আসছিলেন।

নির্বাচন পরবর্তী কর্মকা- জেনারেল মামুন খালেদ ডিজিএফআইতে থাকাবস্থায় বিডিআর বিদ্রোহের খবর আগাম জেনেও কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, বিদ্রোহের সময় অনেকগুলো রাইফেল তিনি বাইরে বের করে আনিয়েছিলেন। মামুন খালেদ বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন কৌশলে সাহায্য করেছেন। যেমন, স্থগিত হয়ে যাওয়া যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের কাজ ওরিয়ন গ্রুপকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পাইয়ে দিয়েছেন। এই প্রকল্পের ব্যয়ও অবৈধভাবে তিনগুণ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।

বিনিময়ে উক্ত প্রকল্পের ২০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজের শ্বশুর, স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ‘গ্রিন রেড লিমিটেড’ নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। যার পরিশোধিত মূলধন দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে শ্বশুর শেখ মোহাম্মদ কাশিম এর ২৫ হাজার শেয়ারের বিপরীতে ২ কোটি ৫০ লাখ, স্ত্রী নীগার সুলতানা খালেদ এর ২০ হাজার শেয়ারের বিপরীতে ২ কোটি ও শ্যালক শেখ আনিসুর রহমান এর ৫ হাজার শেয়ারের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। পরিচালকদের কারো কারোর ঠিকানা মেজর জেনারেল মামুন খালেদের তখনকার (ডাইরেক্টর, ডিজিএফআই থাকাবস্থায়) সরকারি বাসভবন ৮০, মঈনুল রোড, ঢাকা সেনানিবাস দেখানো হয়েছে।

এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলে বনানী ডিওএইচএস এর ১০৮ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার ফ্ল্যাট থেকে। উল্লেখ্য, উক্ত ফ্ল্যাটটি (২৭০০ স্কয়ার ফুট বিশিষ্ট) মামুন খালেদ ৪ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। ১/১১’র অন্যতম কুশীলব এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলেন এই মামুন খালেদ। মেজর জেনারেল এহতেশামের বিরুদ্ধে পত্রিকায় মিথ্যা রিপোর্ট করানোসহ সরকার অনুগত বহু সেনা কর্মকর্তার নামে ভুয়া এসএমএস এর মাধ্যমে মিথ্যা রটনা রটিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, মেজর জেনারেল মামুন খালেদ ডিজি, ডিজিএফআই হিসেবে নিয়োগ পাবার পূর্বে তিনি এবং মেজর জেনারেল রেজা নূর এই দু’জন কর্মকর্তা বিএনপি নেতা শমসের মুবিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এর এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ-এর সাথে যোগাযোগ করেন।

পরিকল্পনা হয়, তাদের দু’জনের মধ্যে যে কোন একজন ডিজিএফআই এর ডিজি হয়ে বিএনপির আন্দোলন পরিকল্পনা সফল করবেন। যা পরবর্তীতে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তারা ভিন্ন মেরুতে ছিটকে পড়েন। ফলে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও পরস্পরকে অসহযোগিতার জন্য মৌন মতবিরোধ শুরু হয় এবং এতে জেনারেল মামুনের কৌশলের কাছে জেনারেল রেজা নুর পরাস্ত হন। ফলে কৌশলে জনাব মামুন ডিজি হলেও তারই চক্রান্তে জেনারেল রেজা নুর ঢাকা ছেড়ে যশোর যেতে বাধ্য হন। জেনারেল মামুন খালেদ ডিজিএফআই এর ডিজি হওয়ার ৩ মাস পূর্বেই ডিজি হচ্ছেন এই ঘোষণা দিয়ে গলফ ক্লাবে টি পার্টি দিয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের অফিসারদেরকে বলেছিলেন যে, আমি ১ দিনের জন্য হলেও ডিজি হব।

হলেনও তাই। ফলে শুরু হলো বিএনপি-জামায়েতের পোয়াবারো। একের পর এক ঝামেলায় পড়তে লাগল সরকার। শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হলেন জেনারেল মামুন খালেদ। বিভিন্ন ব্যবসা, উপটৌকন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে।

শেষমেষ টনক নড়ল সরকারের। দুষ্টগ্রহ খুঁজে পেলেন। ব্যবস্থা নিলেন। জেনারেল মামুন নতুন করে শুরু করলেন মরণ খেলা, সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সে খেলা এখনো চলছেÑ চলবে- যতদিন মেজর জেনারেল মামুন খালেদ ও তার সহযোগীরা জামায়াতকে এ দেশের সরকার হিসেবে না পায়।

কারণ, ওটাই যে তাদের আসল ঠিকানা। সেনা অফিসারদের টাকা আত্মসাৎ মেজর জেনারেল মামুন খালেদকে চেনেন না এমন কোন সেনাসদস্য যেমন নেই, তেমনি এমন কোন রাজনৈতিক দল, নেতা, কিংবা ব্যবসায়ী অথবা অন্ধকার জগতের মাফিয়া ডনও নেই। দেশী প্রডাক্ট কিন্তু দেশ, জাতি ও মানুষকে নিয়ে যারা খেলতে পারে এমন বিদেশী ব্যক্তি, সংস্থার সাথে তার সখ্যতার শেষ নেই। দেশী যারা উভয় ধারার সাথে গা ভাসিয়ে কিংবা রং বদলিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায় এমন ব্যক্তিদের সাথে আর কারও সম্পর্ক যাই না থাকুক, মেজর জেনারেল মামুন খালেদের সাথে তাদের সম্পর্ককে একমাত্র ‘শিরি-ফরহাদের’ সাথেই তূলনা করা চলে। উদাহরণ স্বরূপঃ ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম, লুৎফর রহমান বাদলসহ আরও নাম উল্লেখযোগ্য।

ওবায়দুল করিমের গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার এর কাজ নিজ শ্যালক শেখ আমিনুর রহমান (বুলবুল) এর মালিকানাধীন ‘গ্রীন রেড লিমিটেড’ নামে ফার্মটি করছে। যেখানে মামুন খালেদের শ্বশুর এবং নিজ সহধর্মীনীও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর প্রমাণ হিসেবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির শেয়ার বণ্টনের পাতাটি ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি মামুন খালেদের স্বার্থ বিষয়ে সেনা অফিসারদের ‘রক্ত পিয়াসু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেনা অফিসারগণ তাদের জীবন বাজি রেখে বিদেশে শান্তি রক্ষা মিশনে গমন করে স্বল্প কিছু অর্থ উপার্জন করেন।

দেশে ফিরে অফিসারগণ নিজের পরিবারের শান্তির চিন্তায় ওই সবেধন নিলমনি অর্থকে শান্তির নীড় রচনায় পরিকল্পনা নেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই সকল অফিসারদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নীড় গড়ার লক্ষ্যে ‘এএইচএস’ প্রজেক্ট করার চিন্তা করা হয়। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগকে সমর্থন করে অফিসারদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়ায়। বর্তমান সরকার, সেনাবান্ধব এরই ক্রমধারায় সরকারের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই প্রজেক্টকে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মেজর জেনারেল মামুন খালেদ ‘এএইচএস’ (আর্মি হাউজিং সোসাইটি) প্রজেক্ট এর কর্ণধার হওয়ার লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

এরই ক্রমধারায় মামুন খালেদ ডিজিএফআই’র ‘ডাইরেক্টর, সিআইবি’ এর দায়িত্বে থাকাকালীন সেই সময়ের ‘এএইচএস’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন কিউএমজি লে. জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া (বর্তমান সেনাপ্রধান)কে নাজেহাল করার লক্ষ্যে রূপগঞ্জে স্থানীয় লোকদের দিয়ে ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর এক নাটক মঞ্চস্থ করেন, যার মাধ্যমে কিছু সেনাসদস্য স্থানীয়দের হাতে মার খায় এবং স্থানীয় কিছু লোক নিহত হয়। এর ফলে উক্ত প্রকল্প তখন কিছুটা স্ববির হয় এবং এ ব্যাপারে মামুন খালেদের চক্রান্তে সকল দোষ তৎকালীন কিউএমজি’র উপর বর্তানোর চেষ্টা করা হয়। সেই সুযোগকে ব্যবহার করে তৎকালীন কিছু ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার যোগসাজশে লে. জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়াকে চাকরিচ্যুত করার পরিকল্পনা করেন মামুন খালেদ। সরকার অত্যন্ত তীক্ষèভাবে না হলেও বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পারে। যে কারণে মামুন খালেদদের চক্রান্ত সফল হয়নি।

তবে কিউএমজিকে এ দায়িত্ব হতে সরিয়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, মেজর জেনারেল মামুন খালেদ এক সময় (কর্ণেল অবস্থায়) প্রাক্তন সেনাপ্রধান যখন ৫৫ ডিভিশনের জিওসি তখন তার কর্নেল স্টাফ ছিলেন বিধায় তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই খুব সখ্যতা ছিল, যার প্রেক্ষিতে মামুন খালেদ পরবর্তীতে সেনাপ্রধানের আনুকূল্য পেয়েছিলেন। যে কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধানের ইচ্ছায় ‘এএইচএস’ প্রজেক্টের সকল দায়িত্ব মামুন খালেদকে দেয়া হয়। তখন থেকেই মামুন খালেদের আসল ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক চেহারা প্রকাশ পেতে থাকে। মামুন খালেদ তখন থেকে নিজ শ্বশুর ও শ্যালকের নামে একাধিক কোম্পানির জন্ম দেয়া শুরু করেন।

তন্মধ্যে, সাবলাইম নেটওয়ার্ক লি. (রেজিঃ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২), সাবলাইম আইটি লিঃ (রেজিঃ ২৭ মার্চ ২০১২), সাবলাইম বাংলাদেশ লিঃ (রেজিঃ ২৮ মার্চ ২০১৩), সাবলাইম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (রেজিঃ ১৯ ডিসেম্বর ২০১২), সাবলাইম বিজনেস লি. (রেজিঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০১০), সাবলাইম রিসোর্স লি. (রেজিঃ ০৮ ডিসেম্বর ২০১০), সাবলাইম প্রোপার্টিজ লি.( রেজিঃ ২৮ মার্চ ২০১১) উল্লেখযোগ্য। অত্যন্ত লক্ষণীয় যে, মামুন খালেদ এএইচএস প্রজেক্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ‘আশিয়ান সিটি’র মাধ্যমে এএইচএস প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নজরুল ইসলামের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। যে নজরুল ইসলামের এই ‘আশিয়ান সিটি’ কোম্পানির একজন শেয়ারহোল্ডার হলেন বিএনপির সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ‘ফারহাত কাদের চৌধুরী’। ‘এএইচএস’ প্রজেক্টের জমি ও টাকা আত্মসাৎ করার জন্য মেজর জেনারেল মামুন খালেদ এ যাবৎ সর্বমোট ৩টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন আশিয়ান সিটির সাথে। তার মধ্যে ২টি একই দিনের অর্থাৎ ২০ মার্চ ২০১১।

অন্য ১টি ২৫ মে ২০১১ তারিখে। এ সকল চুক্তিতে তার সহযোগিতায় ছিল এবং আছে, তারই প্রাক্তন এপিএস ‘মেজর নাশরা’, কর্নেল সাইদ (নিজ কোরের অফিসার) এবং মেজর (অব.) আসাদ যিনি কমপক্ষে ‘এক লক্ষ টাকা’ মাসিক বেতনে কোন কাজ ছাড়াই চাকরি করছেন। মামুন খালেদ প্রথম চুক্তিতে অফিসারদের জন্য ৩০০০ বিঘা জমি ক্রয়ের চুক্তি করলেও ওই দিনই তা পরিবর্তন করে ডুপ্লিকেট ২২০০ বিঘার চুক্তি করেন। যেখানে, নজরুল ইসলাম-মামুন খালেদ বাকি ৮০০ বিঘা জমি ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছেন। পরে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবার ৩য় চুক্তি করেন, যেখানে শুধুমাত্র ২২০০টি প্লটের কথা উল্লেখ আছে এবং অফিসারদের প্রত্যেককে ৫ কাঠা করে জমি দেয়ার কথা পূর্বে থাকলেও তিনি তাদেরকে ৪ কাঠা করে দেওয়ার জন্য নতুন চুক্তি করেন।

অফিসারগণ লক্ষ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে (৫১০৩ জন চাকরিরত, ৮৮৫ জন অব. এবং নৌ ও বিমানবাহিনীর) মোট ১০০১ কোটি ৪০ হাজার টাকা মামুন খালেদের হাতে তুলে দিয়েছেন বিশ্বাস ও আস্থায়। আর সেই মামুন খালেদ তাদের রক্ত ও ঘাম ঝরানো টাকা নিয়ে করেছেন লুটপাট-ব্যবসা যার মধ্যে রাতারাতি গড়ে উঠা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল কোম্পানি সবই মামুন খালেদের নিজের শ্বশুর এবং শ্যালকের নামে এবং তার সবগুলোর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে নজরুল ইসলামের সাথে ‘এএইচএস’ চুক্তির পর পরই। প্রশ্ন হচ্ছে এত কোম্পানি খোলার জন্য মামুন খালেদ অফিসারদের টাকা আত্মসাৎ না করে থাকলে তিনি এত টাকা পেলেন কোথায়? কে দেবেন এর জবাব? ছোট একটা হিসাব এ লক্ষ্যে তুলে ধরা হলো। মামুন খালেদ এএইচএস প্রজেক্টের একটি খরচের তালিকায় উল্লেখ করেছেন: স্থানীয় প্রভাবশালীদের অর্থপ্রদান ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ফসলের ক্ষতি বাবদ ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, মিডিয়া ব্যবস্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, অন্যান্য সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পরিকাঠামো খরচ ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, স্থানীয় কর্মীদের বেতন ৪৮ লাখ টাকা, শান্তকরণের জন্য অর্থ প্রদান ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা- এভাবে বিভিন্ন অযৌক্তিক খাতে শুধু এক দফায়ই মোট ৫২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা খরচ দেখিয়েছেন।

যা সেনা অফিসারদের (মধ্যম সারির) ঘাম ঝরানো অর্থ আত্মসাতের নতুন কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। উল্লেখ্য, এ জাতীয় কাল্পনিক খরচ মামুন খালেদ আরো অনেক দেখিয়েছেন। কাজেই বোঝা যাচ্ছে, অর্থ আত্মসাতে মামুন খালেদের কৌশল কি এবং তাও আবার তারই সেনা ভাইদের কষ্টার্জিত অর্থ। এরপরও কি বলবেন সেনাবাহিনী, দেশ, জাতি মামুন খালেদ নামের এই ব্যক্তিটির নিকট নিরাপদ? শীর্ষ নিউজ ডটকম/এসএইচ/কেজেএন/টিএইচ ০৪ আগস্ট ২০১৩ ১১.০০ঘ. লিংকঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।