আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাটক- তরিকা

সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম যে করেনা কখনও বঞ্চনা....

নাটক- তরিকা রচনা- এমএবি সুজন প্রকাশকাল- ১৩ ডিসেম্বর /১৯৯৮ উৎসর্গ- সুসময়ে যারা দুরে থাকেন সেইসব অসময়ের মানুষগুলো। নাট্য প্রচেষ্টা - তরিকা বাল্যকাল থেকেই মজার মজার গল্প পড়া/শোনা/বলার নিদারুন অভ্যাস আমার। জাত-বেজাতের সাত সতেরো গল্পের মাঝে তরিকা একটি অনবদ্য হাসির খোরাক। এটি গল্প হলেও স¤প্রতি বাঙ্গালী সমাজে কুলীন মুসলিম স¤প্রসদায়ের চালচিত্রে এরূপ ঘটনা বাস্তবরূপে কখনও ধরা পড়ে। আমার জন্ম একটি পীর অধ্যষিত অঞ্চলে।

সেসব পীর মাহাত্যের আষ্টেপৃষ্ঠে নিমজ্জিত ছিল আমার শৈশব ও কৈশর। তাই গল্পটির নাট্যায়নে সচেষ্ট হই। গল্পটি সংগ্রহ। তবে নাটকের ফ্রেমে বাঁধাই করেছি অনেকটা নিজের মতো করে। ধর্মীয় গোড়ামী পীর পুজারী মানুষকে ঠেলে দেয় অন্ধকারের অতল গহ্বরে।

তখন সে হয় অমানুষ, শঠ, ভন্ড প্রতারক। আর এরা যখন হয় সংখ্যা গরীষ্ঠ তখন আদীম বর্বর যুগের ন্যায় অন্যায় অসত্য, কুসংস্কার আর পাপের বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন হয় ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রযন্ত্র। সামাজিক প্রথায় বিবর্তন আসে। পীর প্রথার শঠতা-ভন্ডামী-পৈচাশিক কর্মকান্ডের চক্করে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সুব্রত-সুশীল সমাজ। তথাপি সত্যের মশাল জ্বালে পুন্যপুজারী বিবেকবান বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ।

এ নাটকের কেন্দ্রবিন্দু চতুর কুশলী নারী চরিত্র আলোমতি তাদেরই একজন। সময়ের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। এ নাটকের সংশ্লিষ্ট বিষয় সমুহের ভাবনা যাদের মনে জাগান দেয় তারা হামেশা বিতর্কিত প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তর্ক যুদ্ধ বাঁধে সত্য আর মিথ্যার। এ যুদ্ধে সত্যের বিজয় হয় কদাচিৎ।

স্থায়ী হয় ক্ষণকাল। নাট্যকারের লিখিত অনুমতি ছাড়া নাটকের কোন প্রকার নাট্য প্রদর্শণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ চরিত্র পরিচিতি আলোমতি মুরিদ আম্বর আলীর স্ত্রী আম্বর আলী পীর গোলাম আদমের মুরিদ গোলাম আদম একজন পীর ৫ জন জ্বীন গোলাম আদমের সফর সঙ্গী তরিকা- (খোলা মঞ্চ/মাঠ/উচু কোন স্থান-মনে হবে কৃষানের আঙিনা। বাঁশের তৈরী বেড়া বারান্দার আংশিক সাজেশন্স থাকতে পারে। নেপথ্যে একটি গানের সূর তীব্র হয়) অন্ধকারে আর কতদিন থাকবিরে পাগল মন নিজকে নিজে না চিনিলে তার বন্দেগী অকারণ। ।

কোরানে পুরানে কয় নিজেরে কর পরিচয় খোদে খোদা লুপ্ত আছে বাতেনের সে মহাজন অন্ধকারে-------------------------অকারণ। । তোর জীবন লীলা সাঙ্গ হবে জীবন-সম্পদ বেহাত হবে মিছা মোহে সব হারাবি বৃথা হবে দুই জীবন অন্ধকারে-------------------------অকারণ। । (গান শেষে সবুজ বোরখায় সমস্ত শরীর আবৃত আলোমতি মঞ্চের কেন্দ্রভাগে ধীরগতিতে এসে দাঁড়ায়) আলো ঃ আমি বনেদি-সম্ভ্রান্ত-রক্ষণশীল ও ঐতিহ্যবাহী কুলীন মুসলিম পরিবারে অতি যত্মে লালিত একজন গ্রাম্য মেয়ে- জন্মের পর বিগত ছয়মাস এই প্রথম নতুন আধারে নতুন জীবনের পথচলা- আমি সুরক্ষিত পর্দাপ্রথায় বেষ্টিত- ইসলামী শরীয়তের অনুশাসনে শৃঙ্খলিত একজন অবলা নারী- মহিলা মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছি- পবিত্র কোরান খতম দিয়েছি মোট উনিশবার- আমার স্বামী পরহেজগার পাঞ্জেগানা নামাজ পড়েন- তার অন্তরে-মুখে কেবল আল্লাহ-খোদার নাম- আওলাদে রসুল হযরত গোলাম আদম ঢগঢগি তরিকায়ে চিশতী তার পীর কেবলা- স্বামী আমার একজন নিবেদিত প্রাণ অতিভক্ত সুযোগ্য মুরিদ- তরিকাপন্থী সহজ সরল ধর্ম ভীরু এই মানুষটি- আমাকে ভালবাসেন তার জীবনের মত- ধন্য আমি তার সংসারে এসে কিন্তু সহসা তিতি বিরক্ত হই- অতিষ্ট হই হরহামেশাই- যখন প্রকৃত ধর্মচ্যুত হয়ে তিনি পীর বাবার কথায় ওঠেন বসেন- কিংবা মিথ্যা ফতোয়ার যাদুমন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে কোন অনুচিত কাজ করেন- কিন্তু তাতে তার কিছু আসে যায়না- এই জন্যে যে পুরুষের সংসারে মেয়েলোকের কোন দামই নেই- তাই তার কাছে আমার কথা সর্বদাই কথার কথা- আমাদের ছোট সংসার- স্বল্প আয় উপার্জন- খেয়ে পড়ে কোনমতে বাঁচি- গুনি একটি একটি করে দিন- অস্ট প্রহর- তার উপর অহেতুক ঝুট ঝামেলা- পীরবাবার চক্র-ক্রমিক আগমন- নানা রকম ভোজন বিলাস- রঙ্গীন সাজসজ্জা- সুগন্ধিময় মনোরম পরিবেশ- এসব ঠাট বজায় রাখতে আমরা রিক্ত নিঃস্ব প্রায়- ভবিষ্যত রঙ্গীন স্বপ্ন অভাবের তোড়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে গ্যাছে সেই কবে- দুচোখে নিয়ত অজানা শংকা- ভাবুক মন-নির্ঘুম রাত- নিত্য স্বামী স্ত্রী মুখোমুখী- প্রতিরাতে বাকযুব্ধ- কাছা ঢিলা স্বামী আমার সর্বদা আমাকেই ভুল বোঝে- অথচ এটা বোঝেনা যে- পীরবাবা মুখে গ্রাস করে আমার হাতের সু-সস্বাদু খাবার- আর নিজের খেয়ালে দুচোখে চিবিয়ে খায় আমাকে- চেতন স্বামী আমার তাকে জাগাতে পারিনা কোন সংকেতে- আমাদের এই টানাপোড়নের সংসারে- পীর মাহাত্যের খামখেয়ালী আর ভন্ডামীর বলি আমরা- তাই গত এক মাস ধরে ভাবছি কিভাবে চিরদিনের জন্য তাড়ান যায় পীর ব্যাটাকে- ভাবতে ভাবতে শেষে গতকাল রাতে স্বপ্নে পেয়েছি এই ভুত তাড়ানোর মন্ত্র দাওয়াই- উপরে নীল আসমান নীচে ধূসর জমিন- চারপাশের সূধীজন- একটু পরেই আমার নাটক শুরু হবে- দেখবেন শুনবেন- মজা পাবেন কিন্তু করজোড়ে মিনতি জানাই- অবুঝ নাদান শিশুর মত আমার গোপন রহস্য ফাঁস করবেননা- (আঙুল দিয়ে ইশারায় সবাইকে চুপ থাকতে বলে) ঐ যে! আমার স্বামী আসছেন! আম্বর আলী- আমি যে ফন্দি এঁটেছি- সেকথা ভুলেও তাকে বলবেননা কিন্তু- যে শান্ত শিষ্ট ইতর বিশিষ্ট ভদ্রলোক বলবেন- বেইমানের খাতায় নাম উঠবে তার- আর স্বামীর রোষানলে পুড়ে ছাই হব আমি- নাটক বন্ধ হবে- চলবেনা- (নেপথ্যে দর্শক সারি থেকে আওয়াজ আসে- না না নাটক চলবে- আমরা কথা দিচ্ছি- কাউকে কিচ্ছু বলবনা- আমাদের মুখ বন্ধ- চোখ কান খোলা- শুরু করুন) ধন্যবাদ- আহলান ওয়াসাহলান! (কুনীশ করে) খোশ-আম-দেদ- উপস্থিত হাজিরান মজলিশ- দর্শক শ্রোতা সকলে- আজ এক নিদারুন নাটক দেখবেন সবাই মিলে- তার আগে শেষ বারের মত সবাইকে জানাই অনেক অনেক প্রীতি-শুভেচ্ছা আর সাদর সম্ভাষণ- তবে সাবধান! মনে রাখা চাই- কথা দিয়ে কথা না রাখে যে মূর্খ- সে হয় মোনাফেক! শয়তানের দোস্ত- মীর জাফর- আর সময় নাই- ঐ যে আসছে- আমি আর আমি নাই- বদলে গেলাম- আজ নিজেই নিজেকে যেন না পারি চিনিতে- (নেপথ্যে আম্বর আলী গজল গাইতে থাকে) তোরা কে যাবিরে ঢগঢগিতে কে যাবিরে কে যাবিরে ঢগঢগিতে দেখতে নুরের তাজেল্লা গোলাম আদম বসাইছে এশকের মেলা।

। (আলোমতি বোরখা খুলে ফেলবে ইতিমধ্যে) আম্বর ঃ (গজলের শেষ লাইন নিয়ে প্রবেশ করবে আলোমতিকে ছালাম দিবে) কেমন আছেন বউ? নাস্তা কি তৈরী হয়েছে? খাব চলুন- (আলো বিছু বলতে চায়) কি হয়েছে ? কিছু বলবেন? নিঃসংকোচে বলুন- আর ঝগড়া নয়- এখন থেকে আপনার সব সু-পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব- হ্যাঁ- আমি আব্বা হুজুর মহাপবিত্র পীর কামেল গোলাম আদম জিন্দাবাদ সাহেবকে বারন করেছি- উনি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ময়ালে আসবেননা- (আলো কাঁদে) বউ! আহা কাঁদছেন কেন? আপনি খুশি হননি? আলো ঃ না! আম্বর ঃ কেন! কেন? আলো ঃ আপনি পাপ করেছেন- পাপবিব্ধ হয়েছেন আপনি- সেই পাপে তাপে আমাকেও জ্বলতে হবে আজীবন- এ কি করেছেন আপনি- মহা পাপ! আম্বর ঃ পাপ! মহা পাপ!! কি বলছেন আপনি ? কি করলাম আমি! পাপ করলে তো বাবা নৌকায় জায়গা দিবেননা- তাহলে তাঁর সাথে আমি বেহেশতে যাব কিভাবে ? না না আমার জান্নাতুল ফেরদাউস চাই- বলুন বিবি আলোমতি কি পাপ করেছি আমি ? আলো ঃ আপনার পাপের কোন সীমা নেই- আম্বর ঃ সীমা নেই- এ কোন পাপ- কত বড় ? কত ওজন ? আমার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সব পুন্যেওকি তার মোচন হবেনা ? আলো ঃ না- পাহাড় সমান গগনচুম্বী পাপের বোঝা আপনার মাথায় চেপে বসেছে- জীবনের সমস্ত পুন্য দিয়ে সেই পাপ মোচন করতে পারবেন না- আমার বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার সাথে আমাকেও জ্বলতে হবে হাবিয়া দোজখের অতল গহ্বরে- আম্বর ঃ না না- পারবোনা- হাবিয়া দোজখের কঠিন আজাব আমি সইতে পারবোনা- আমি প্রায়শ্বিত্ত করব- বলুন ছগিরা-কবিরা- জাহেরী-বাতেনী-জানা-অজানা কি পাপ করেছি আমি- আলো ঃ পীর বাবা আমাদের পথ প্রদর্র্র্শক- সত্যের দূত কান্ডারী- তাকে আসতে নিষেধ করলেন কেন? তিনি আসবেন- এ বাড়িতে পদধুলি দিবেন- ধন ধন্যে আমরা তার নূরানী পায়ে ফুল চন্দন দিয়ে পুজা করব- ইহকাল-পরকালের-সুখ-শান্তি-আশ্রয় নিরাপত্তা পাব- আর আপনি সেই মহাপুরুষ- স্বর্গীয় পুরুষের অবলীলায় আগমন-আগ্রাশন অধিকার হরন করে না জানি তার মনে কতটা কষ্ট দিয়েছেন- হায় আল্লাহ! এ পাপের কি মাশুল দিতে হবে জানিনা- তবে আমার স্বামীর বেহেশতের টিকেট তুমি কেড়ে নিওনা- আল্লাহ আম্বর ঃ সোবহান আল্লাহ! বউ! আল্লাহু আকবর- এতক্ষণে আমার প্রাণ ফিরে পেলাম- যাক বাঁচা গেল- আমি মহা শংকায় পড়ে গিয়েছিলাম- না জানি কি মহাপাপ করে ফেলেছি- আসলে কথা হলো কথা আসলে সেটানা- কথা হলো- আসলে পীরবাবাকে আমি আসতে বারন করিনি বউ- আলো ঃ কি ? আম্বর ঃ হ্যাঁ- কথায় কথায় তুমি রেগে যাও- তাই মিথ্যে করে বলেছি- বাবা আর আসবেন না- ও খোদা যদি সত্যি সত্যিই নিষেধ করতাম- তাহলে আমার ইহকাল পরকালের সব আশা ভরসা ধুলিষ্মাৎ হয়ে যেত- আমাকে ক্ষমা করে দিন বৌ- আসলে আপনি সত্যিই মহান- আপনার হৃদয়ের মনি কোঠায় যে ভালবাসা এতদিন লুক্কায়িত ছিল তা আজ ফুটে উঠেছে- এতদিনে আপনার সুমতি হয়েছে- কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে এই হেকমতে তরিকতের গোপন রহস্য কি? দয়া করে বলবেন কি? আলো ঃ অবশ্যই- গতকাল রাতে- বিবেক আমার! স্বপ্নের কড়া নেড়ে- ধমকের সাথে জিজ্ঞেস করল-আলোমতি! পীরে ভক্তি- আখেরাতে মুক্তি- ভক্তিতে আল্লাহ মেহেরবান- আর অভক্তিতে মুরতাদ ইবলিশ শয়তান- আমি স্বপনে দেখিলাম পীর বাবার আদম সুরত- স্বপ্ন ভঙ্গ হল- কিন্তু আপনাকে পেলাম না- আরও পেরেশান হয়ে গেলাম- তারপর আপনি আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলাম এই রহস্যময় কাহিনী আপনার এবং বাবার দরবারে পেশ করার জন্য- আম্বর ঃ আলহামদুলিল্লাহ! বউ! বড় খোশ খবর- রাব্বুল ইজ্জতের অপার মহিমা- আমি বুঝতে পেরেছি- এসব পীরবাবার কেরামতি- অলীক স্বপ্ন- মিলে গ্যাছে- পুড়ো পুড়ি মিলে গেল! বাবাজিও তাই বলেলন- আলো ঃ কি? বাবাজিও বললেন ? কি বললেন তিনি ? বলুন- আম্বর ঃ ইয়া আল্লাহ! শরীরের পশম সব খাড়া হয়ে যাচ্ছে- আমি মাটিতে পা রাখতে পারছি না- যেন হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছি দূরে অনেক দূরে সুদূর নীলাঞ্চলে- আলো ঃ হায় আল্লাহ! উত্তেজনায় আমার শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে- বলুন কি সেই কথা! কি সেই মন্ত্রবানী? আম্বর ঃ বাবাজি বললেন- “তুমি চলিয়া যাও! নিস্ক্রান্ত হও আম্বর আলী! যতদিন তোমার বিবি নিজ গরজে আমাকে নিমন্ত্রন না করিবে- ততদিন আমি তোমার বাড়ির ত্রিসীমানার দিকে পা বাড়াইবনা”- তাইতো তেলেসমাতি কারবার হিসেবে পীর বাবা আপনাকে অগ্রীম স্বপ্ন দেখিয়েছেন- আহ্হারে এই মুহুর্তে কদম পাগলার গজল মনে পড়ল- বাবা তোমায় ডাকতে জানিনা ডাকার মত ডাকলে বাবা কেন শুনবে না- বাবাগো কেন শুনবেনা- আলো ঃ আমার মন ভালনাগো প্রাণ ভালনাগো পীরবাবা ছাড়া সময় কাটেনা। । যদি সে না আসে যাব তার তালাশে। ।

বুঝাইলে মন যে বোঝেনা বোঝেনা- আহ্ আমি আর স্থির থাকতে পারছিনা- আমার মন ছটফট করছে আপনি দেড়ি না করে এই মূহুর্তে চলে যান- আমার হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চান- খোশ মেজাজে দাওয়াত করুন- আমি মুগ্ধ চোখে চপল হরিণীর মত দেখতে চাই তাকে- আজ দুপুরে খুশি মনে- আমি নিজ হাতে তার মুখে তুলে দিব- কোরমা পোলাও জর্দা বিরানী আর সরিষার তেলে ভাজা- মস্তবড় রুই মাছের মাথা- (আম্বরের দৃষ্টির আড়ালে একটি পুতা দেখায়) সাথে আতপ চালের ভাত- আম্বর ঃ আলহামদুলিল্লাহ! আলোমতি বউ আমার- আপনি সত্যিই আলো- নূরের জ্যোতি আমার- পীর বাবার দোয়ায় আপনার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হোক- আলো ঃ আমিন! আপনি দেরী করবেননা প্লিজ! রওনা দিন- না জেনে না বুঝে আমরা তার মনে আঘাত দিয়েছি- তার অজান্তে তাকে কটাক্ষ করে জাহেরী বাতেনি, ছগিরা কবিরা, কতনা গুনাহ করেছি! আহ! আমি গায়েবী যাতনায় ভুগছি- ইস্ গোনাই বিবির মত, চিতায় চিতায় আমার যৈবন শতায় যাইতাছে- আম্বর ঃ বউ! আপনি আর অধীর হবেননা- আমি আপনার উপর এত খুশি! এত খুশি হয়েছি যে, আমার মন বলছে- আপনাকে আমি মাথায় তুলে রাখি- জুটি বেঁধে নাচি- গাই- ফুর্তি করি। আলো ঃ আহা! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে- পবিত্র হাতের স্পর্শ ছাড়া আমার শ্বাস-প্রশ্বাস অচল- আমি আর সহ্য করতে পারছিনা- আম্বর ঃ আমারও তো সহ্য হচ্ছেনা আলোমতি! একি যন্ত্রণা- কি মায়াময় মোহ- কেমন ইন্দ্রজাল- আমি যেন পা-গ-ল হয়ে যাচ্ছি- আমার আদম বাবা পীরকা বাবা ওহে দয়াময় অন্তর চক্ষু খুইলা দাও যদি দয়া হয় বাবাগো- দিন গুজারী পাপী আমরা বড় অসহায়- বাবা মুক্তি দাও- দেখা দাও বাবা- তোমাকে খোশখবর না দিয়ে আমি দৈহিক ভারসাম্য ফিরে পাচ্ছিনা- আলো ঃ তবে আর দেড়ি কেন? যাত্রা শুরু করুন- আম্বর ঃ বেশ যাচ্ছি- (কিছু দুর গিয়ে ফিরে আসে) আলো ঃ কি হল? আম্বর ঃ কিছুনা যাচ্ছি- নাস্তাটা সেরে যাই ? ক্ষুধা পেটে এতটা পথ হেঁটে যাব ? আলো ঃ কিছু হবেনা- ঈমানটাকে শক্ত করুন- ভক্তি সহকারে কল্পনায় পীরবাবার চেহারা সুরত দেখুন- আপনার আহার-বিহার-বিশ্রাম-স্নান-নিদ্রা-ঘুম সব দূর হয়ে যাবে- যান- ফিরে এসে খাবেন- পীর বাবাকে সঙ্গে করে তিন জন এক দস্তর খানায় বসে একত্রে এক পাত্রে আহার করব আমরা- আম্বর ঃ ও খোদা তোমার অশেষ মেহেরবানী- দুনিয়ার তাবৎ মেয়েছেলেকে তুমি- আমার স্ত্রীর মত ইমানদার- মুত্তাকি আর দিলদার বানিয়ে দাও- বউ আমাদের হেদায়েতের সরদার- তসকেরাতুল আউলিয়া- চেরাগে চিশতীয়া- নিরিবিলি নির্জন ঘরে এক ঘন্টা আপনার শরীরে দোয়া কালাম পড়ে ফুঁ দিবেন- আপনার আপাদমস্তক তার অন্তর চক্ষু দ্বারা নিখুঁতভাবে পরখ করে দেখবেন- আর তাতে আপনার আমার ঘরে জন্ম নিবে আল্লার অলি- গাউস কুতুব- বিশ্ব বুজুর্গ- আলো আমার আলো- কাছে আসুন কি ভাবছেন? আলো ঃ কিছুনা- এতে ভাবাভাবির কি আছে? আমি রাজি- বিশ্বাস আর পরীক্ষা হচ্ছে বড় জিনিস- আমি বিবি হাজেরার মত পরীক্ষা দিতেও প্রস্তুত আছি- পীরবাবা আমাদের দো-জাহানের মালিক- আমি কি তার কথায় অবাধ্য হতে পারি- আম্বর ঃ কক্ষনও না- পীর বাবার সেচ্ছাচারিতায় আমরা বাঁধা দিয়ে অকল্যান ডেকে আনলে- আমাদের কপালে বিনা হিসাবে হাবিয়া দোযখ নসীব হবে- আলো ঃ তওবা! তওবা! অমন কথা মুখে আনাও পাপ! বেদাতি গুনাহ- এবার রওনা হউন- দোহাই আপনার আর দেরি করবেননা- আম্বর ঃ আহা! বেশ- বেশ! যাচ্ছি- (আম্বর প্রস্থান উদ্যত- এমন সময় পাঁচজন অদ্ভুত রঙ্গীন পোষাকে আবৃত জ্বীন, দুইজন সামনে, একজন পেছনে এবং দুইজনের হাতের উপর ভর করে পালকির মত হয়ে আসে গোলাম আদম) গোলাম ঃ ঠেরিয়ে বাচ্চে- যাও মাত- তোমাকে আর কষ্ট করিয়া যাইতে হইবেনা বাপধন- আমি নিজেই বড় পেরেশান হইয়া চলিয়া আসিলাম- আওর! আওর! এধারছে নিকাল হো যা- (ইশারায় পালকি চলে যায়) আম্বর আলী তুম অর তুমহারি খুব সুরত বিবিকো দেকভাল কি লিয়ে মাইনে বহুত সমজদারহু- বহুতই উদগ্রীব হোতা হায়- তোমহারি তবিয়ত বহুত আচ্ছা হোগি- ইসমে জাত-উ-খোদা তোমহারি দিলকি হার মাকসুদ পুড়ি করেগা- (গোলাম সালাম দেয় উভয়ে উত্তর দেয়, কদমবুছি করে) উঠো বাচ্চে- ঘাবরাও মাত- তুম জিয়ো হাজারো সাল- ইয়াদ রাখনা মেরি জান কি টুকরে- পীর কেবলা শ্রেফ ওহি হোতা হে- জো জাহের বাতেন সব মালুম কিয়া- তাই তোমাদের মন বাসনা আমি গায়েবী তরফছে ইয়াকিন করিয়াছি- তোমাদের অনুশোচনায় আমি রাজি খুশি হইয়াছি- সেইহেতু আজ বাদ মাগরিব পাপ মোচনের গ্যারান্টি দিয়া- জান্নাতুল ফেরদাউস এর গায়েবী লাইসেন্স প্রদান করিব ইনশাল্লাহ- আম্বর ঃ আহা! শরীরের পশম সব খাড়া হয়ে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে আমি যেন খুশির জোয়ারে গায়েবী উত্তেজনায় ভাসছি- গোলাম ঃ আওর! আওর! ইনসান কি তাবেদার- শ্লোগানং শুরুং করং- (নেপথ্যে গোলামের ঈশারায় শ্লোগান হবে) শুভেচ্ছা স্বাগতম- ময়ালে বাবার আগমন- হযরত গোলাম আদম ঢগঢগি- জিন্দাবাদ- জিন্দাবাদ- তরিকায়ে চিশতিয়া- জিন্দাবাদ- জিন্দাবাদ- (গান) আশরাফুল আউলিয়া চেরাগে চিশতিয়া খাজা পেয়ারে মেরে বান্দারে- হামতো নাদান হে বারি পেরেসান হে খাজা তু লে হামকো পারকে মে তুমকো ছবকুচ দিয়া তু হামারা দিল দরিয়া আজা আজা মেরি আন্দারে- গোলাম ঃ আওর! আওর! খামোশি হো যা জিন্কা রাজা- (শ্লোগান থেমে যায় আম্বর ও আলো গোলামের পায়ে সেজদায় পড়ে- মোনাজাতে মশগুল হয়) আম্বর ঃ গুনাহে বে আদদ রবা রেবস্তাম- হাজারা বার তওবাহা সেকাস্তাম- হার তরফছে হুকে হাম খারও তবা- আপরে হাম তেরে দরবার আ-য়েলা- বুজুর্গি নেহি হামকো জরুরাত- গোলাম আপনা বানা হামকো খোদায়া- গোলাম ঃ শুকরিয়া- উঠিয়ে মেরে পেয়ারে মাহ্তারাম- মাইনে সব কবুল কিয়া- আম্বর ঃ আপনার বড়ই মেহেরবানী- আলো ঃ হুজুর খাবেন চলুন- গোলাম ঃ বহুত বহুত শুকরিয়া বেটি- হাম বুখা নেহিহে- আমি কিছুকাল পূর্বে জ্বীন পরীদের আসরে দুম্বার গোস্ত আর ছাগীর দুগ্ধ দ্বারা লুচি পরোয়াটা খাইয়া আসিয়াছি- তুমকো লিয়ে খানা জরুরী হে- হামারা ফিকির মাত কার- তুমকো খানা পারেগা- হাম ইজাজত দিতা হু- আম্বর ঃ আপনার বিশেষ কেরামতি- আপনাকে দেখে আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণা- কখন যে কোথায় হারিয় গ্যাছে জানিনা- গোলাম ঃ (হাসে) বেটি তোমহারা কিয়া হাল হে- আলো ঃ তাঁর মতই- অবিকল- এক- অভিন্ন গোলাম ঃ সবই তাহার ইচ্ছা- তিনি মালিক- স্বামী- অন্তর্যামী- ক্ষুদ্র পিপিলিকা থেকে শুরু করে সর্ববৃহৎ দরিয়ার নীল তিমি সমেত তামাম মাখলুকের অন্নদাতা রাজ্জাক তিনি- তার হুকুম ব্যতিত ক্ষুধা- তৃপ্তি- পরিপুষ্টি- কোন প্রকার অনুভুতিই প্রকাশ পাইবেনা- সেই নূরে পাক রাব্বুল ইজ্জত এর অশেষ কৃপায়- আমার দাদা পীর হযরত গায়রুল্লাহ আল মাছির উছিলায় আমি তোমাদের বাড়িটা- শরীয়তের সূক্ষ্ম পদ্বতিতে নূরের তাজেল্লা দ্বারা মোছেহ্ করিয়া দিয়াছি- আম্বর ঃ তাইতো ইদানিং চলে ফিরে আরাম পাচ্ছি- শরীরের তাক্দ-বল বৃব্ধি পেয়েছে- আর বাড়িটা যেন বেহেশতের ফুল বাগিচা- বাহারি ফুলের রকমারি মৌ মৌ গন্ধে সুবাসিত মনে হচ্ছে- আহা -পুরা বাড়িতে মেশকো আম্বরের ছড়াছড়ি- হরিণীর নাভী কস্তরীর তীব্র ঘ্রাণে নিজেকে অস্থির চপলা-চঞ্চলা মনে হচ্ছে- গোলাম ঃ উহা নিতান্তই আমার শাহাদাৎ আঙ্গুলীর ঈশারা মাত্র- এক জাররা কেরামতির নিদর্শন- আমি জিনের বাদশাহকে জরুরী তলব করিয়াছিলাম- সে সুদুর তুরে সীন পাহাড় আর দারুচিনি দ্বীপ হইতে প্রকৃতিজাত নানা গাছ গাছরা সহ হরেক রকম খুশবু লইয়া তোমাদের বাড়ির সীমান্তে হাজির হইয়াছে- চল্লিশ হাজার জ্বীন পরী লইয়া জোড়ায় জোড়ায় কাতারে কাতারে দাড়াইয়া- এক নিবিষ্টে মায়াবী ইন্দ্রজালের মোহে সমস্ত বাড়িটা তোয়াফ করিতেছে- শীতল বায়ে আসে নিশি করতে মোরে উদাসী হয় মনে আজ তুমি বিনে গলেতে লাগাই ফাশি শুক্ল পক্ষের চাঁদোয়া রাতে জাগে তারা চাঁদের সাথে আমি জাগি তোমার সাথে প্রেম সাগরে ভাসি। । হ্যাঁ- জিকির কর- কর জিকির- সমাগত চল্লিশ হাজার জ্বীন-পরী তোমাদের এই মাহফিলে শরীক হইয়াছে- আলো ঃ কোথায়? দেখিনাতো- গোলাম ঃ নাউযুবিল্লাহ মিন জালেক! দুর হোজা নালায়েগ- বেয়াকুব জেনানা- আম্বর ঃ না- হুজুর এক জাররা সময় ভিক্ষা দিন- বউ! তওবা কাটো!! বেদাতি বাত চিত করলে কেন? গোলাম ঃ আওর! আওর!! সমাগত জ্বীনের মজলিস বহুত নারাজ আর গোস্বা হইয়াছে- তাহারা বেজার হইয়া চলিয়া যাইবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করিতেছে- আলো ঃ হে আলেমুল গায়েবের বন্ধু- আমাদের ভাগ্য বিধাতা দয়া করুন- এলমে দ্বীনে আমি নাদান- অজ্ঞ মূর্খ- না বুঝে ভীষণ অন্যায় করেছি- ক্ষমা করুন- প্লিজ এমন কথা আর বলবনা- হুজুর! মাফ করে দিন- প্লিজ ! গোলাম ঃ খামোশ! বিজাতীয় ভাষা উচ্চারণ করিবেনা - তুমি জাননা ? ইংরেজী একটি বেত্তমীজ ভাষা- এই ভাষায় আদব-কায়দা আর তাজিমের রীতি নাই- ইংরেজী কাফের মুশরিক আর বেদ্বীনের ভাষা- আরবী-ফারসি-উর্দু-হিন্দী না জানিলে বাংলায় বলিবা- কই বুরা নেহি লাগা- হার জবান বাংলাছে কাহো- লেকিন ইংরেজী মাত কর- আগলে বার মেয় ইংরেজী বাত নেহি ছুন্না চাহিয়ে- ঠিক হায় ? আম্বর ঃ ঠিক হায়- এবারের মত ক্ষমা করুন- আমি আলোমতির সকল ভুলের জন্য কাফ্ফারা দিব আপনার পবিত্র হাতে- দয়া করে ফতোয়া দিন হুজুর- ইংরেজী বলার জন্য কত কাফ্ফারা দিতে হবে ? গোলাম ঃ ও- সাব্বাতু সাব্বাতু বাট রুসামাতুর রজু- শুকরু শুকরুন- সাব্বাস! সাব্বাস বেটা!! শুকরিয়া- বন্দেরুতু গন্দেনুতু ফাতুরু- আকু সুলু পাতু জিরু নাসুরু- শেরে আওলাদ- জরুর ইয়াদ রাখনা- তদ্নগদ পাঁচশত তের টাকা পঞ্চাশ পয়সা- দুইটা সাদা লুঙ্গি- আড়াই মন সাদা আতব চাউল দিতে হইবে অদ্য সুর্য অস্ত যাইবার প্রাক্কালে- নচেৎ ডিমের খোসার মত একটা চাপ দিয়া তোমাদের এই শান শওকত এক পলকে নাই করিয়া দিবে- কেয়া মালুম হায় ? তুমকো জরুর কাফ্ফারা দেনা পারেগা- ও রিসকামাতুরি ওয়ানিরাতুনি সাব্বিনুকতাকানু ও আওর আওর- বাতাও কাফ্ফারা দেগাকি নেহি- জরুর বাতাও বারনা বরবাদ হগি তুম লোক- তোমরা তলাইয়া যাইবা অজানা পাতালে- আম্বর ঃ না হুজুর! আমি বেলা ডোবার আগেই সবকিছু হাজির করব আপনার সামনে- গোলাম ঃ আওর! আওর! ঠেরিয়ে ইনসান কি মেহবুব- পেয়ারে দোস্ত বুজুর্গ রুক যা- শুকরিয়া, তারা বেজায় খুশি হইয়াছে- তোমাদের প্রীতি ভোজে জীনের পুৃরা জামাত তশরীফ আনিবে- রসনা পুজায় খুশি খুশি শরীক হইবে- আম্বর ঃ আলহামদুলিল্লাহ! খোশ আমদেদ-খোশ আমদেদ- বাদশা ভাই- গোলাম ঃ আওর! আওর!! ভাই নেহি! ভাই নেহি- বোল জ্বীনের বাদশাহ্- আম্বর ঃ ঠিক হে- আমার কথা ফেরত নিলাম- জ্বীনের বাদশাহ্- আ-হা-হা, জিল্লে এলাহি- সর্দারে পাবন্দি- আইয়ে আইয়ে- আহলান ওয়া সাহলান- চল্লিশ হাজার জ্বীন আমার বাড়ীতে রসনা পুজায় তশরীফ আনবেন- সত্যিই পরম সৌভাগ্যের কথা- এই পরম সুখযে আমার গতরে সয়না- ও বৌ এত আনন্দ আমি রাখি কোথায়! আলো ঃ আনন্দ রাখা যাবে কিন্তু চল্লিশ হাজার জ্বীনের খাবার আমরা কোথায় পাব? গোলাম ঃ আহ্হা কমজোর জেনানা- ঈমানের তেজ নাই- শয়তানের ওয়াছ-ওয়াছা তোমার দিলে- বার বার বেদাতী বাতচিত করিতেছো- কইসমাইতুক্কালু পাটকে পাটকে লুটা তুক্করি আওর আওর- আম্বর ঃ থামেন হুজুর- আর বকা দিবেন না- আসলে এই জন্যে মুরুব্বীরা কয়- মাইয়া মানুষের মাথার বেরেন হাটুর নিচে- হুজুর আল্লার ওয়াস্তে মাফ করে দিন- আমার পক্ষে আর কাফ্ফারা দেয়া সম্ভব না- গোলাম ঃ কই বাত নেহি- আমার উপর তোয়াক্কল রাখো- আপনা ঈমানকো ইস্তেমাল কর- ছব কুচ মিলেগা- আলো ঃ কেইছে মিলেগা হুজুর- বাতায়েনা- (আলোমতি গোলামের সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে) হামারা কসুর মাফ কারদো- আগলাবার এইছে বুরা বাত অর গলতি নেহি করেগা- বাতায়েনা- জো হুকুম- গোলাম ঃ বাতাতাহু- ইহা একটি মামুলি তেলেসমাতি- আমার পবিত্র কনিষ্ঠ আঙুলির ঈশারা মাত্র- আমার ভক্ত ঐ পোষা জ্বীন জল-স্থল-আর অন্তরীক্ষ হইতে দুনিয়ার সব খাবার আনিয়া- খাদ্যের পাহাড় বানাইবে তোমাদের আঙিনায়- উপরন্ত খাছ করিয়া নিয়ত করিব- বিসমিল্লাহ বলিয়া ঢাকনা সরাইয়া দেখিবে বিষ্ময়ে- শুন্য পাত্রে জমা হইবে রাজভোগ-মুরগী-পোলাও আর কাচ্চি বিরিয়ানি- কিয়ামত পর্যন্ত খাইলেও ফুরাইবেনা সেই অফুরন্ত ভান্ডার- আবে জমজম- শরবতে রুহ আফজা- আর দুধের নহর ছালছাবিল বইতে থাকবে সাদা পানির বদলে- সমজগিয়া তুমলোক ? আলো ঃ হ্যাঁ-জ্বীন- সাচ্চা জ্বীন- নূরের তৈরী- তাদের ইজাজতে আমাদের এই র্জীণ কুটির রাতারাতি সুুরুম্য প্রাসাদ- রমনীয় অট্রালিকায় পরিণত হতে পারে- মেতো সামঝা- হ্যা না ? গোলাম ঃ শুকরিয়া- রুস্তরি তুরি তু খাট দুধ আদুরি- লাটে পুটে আন্ত মারে ছেডাব তু আন্নরি- যাও বেটি অযুর জন্য একবাটি খাঁটি দুধ আর ছয়টা ডাবের পানি লইয়া আস- আমি জ্বীনদের কাতারে সালাতুত তাসবীর ঈমামতি করিব- আম্বর ঃ আসুন- আমার সাথে এই দিকে পথ দিলেই হবে- (আম্বর পথ দেখিয়ে গোলাম কে নিয়ে যায়) আলো ঃ কিছু বুঝলেন? দেখলেনতো ভন্ড বাবার ফুটানি কত! সুধীজন আর একটু ধের্য্য ধরে অপেক্ষা করুন- তার পর মজা পাইবেন- (আলোমতি আম্বরকে ডাকে) এই যে শুনছেন- এদিকে আসুন- (আম্বর আসে) আলো ঃ জ্বী বলুন- ঘরে তেল নেই- কুলুবাড়ি থেকে দেড়সের খাঁটি সরিষার তেল নিয়ে আসুন- আম্বর ঃ খাঁটি সরিষার তেল! কেন কি হবে? আলো ঃ রান্না হবে- আজকের জেফতের রান্না হবে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে- আম্বর ঃ বহুত আচ্ছা বউ- আমার লক্ষ্মী বউ- আমার ছায়ারাণী- যাই- তবে সাবধান! বাবাজির খেদমতের যেন কমতি না হয়- (গোলাম আসে) আলো ঃ এ নিয়ে খামাখা ভাববেননা- হুজুরের জন্যে জানের ছদ্কা- (আম্বর তেলের পাত্র নিয়ে রওনা হয়) আম্বর ঃ খুব খুশি হইলাম- এবার তাহলে আমি যাই- গোলাম ঃ তুম কাহা যারাহাহে বেটা আম্বর আলী ? কোথায় যাইতাছো ? কোন সমস্যা ? আম্বর ঃ না হুজুর- সামান্য জরুরাত- কুলুবাড়ি যাব আর আসব- আপনি বিশ্রাম করুন- আমার ঘরের লক্ষ্রী আলোমতি আপকো সাহারা দেগা- আপ বহুত খোশ হোনা চাহিয়ে- কোন সংকোচ করবেননা হুজুর- আপকো জো চাহিয়ে আভি আভি ওহি মিলেগা- হামকো জানা পারেগা- ইজাজত দিজিয়ে- গোলাম ঃ ইজাজত হে- ফি আমানিল্লাহ্- (আম্বর চলে যায়) আলো ঃ আসুন- বসুন- (আলো উর্বসী/বেগানা মেয়ের মত বাহানা করে গোলামের হাত মুখ মছে দেয়) আরও কাছে- আহা শরমিন্দা ছোড়োনা- আরও কাছে- না না না কেন দূরে থাকো বাড়ীতে কেউ কাছে আসো দুরু দুরু বুক কাঁপে দেখো আমাকে বাহুডোরে ধরে রাখো গোলাম ঃ না না- এক্ষনি আম্বর আলী চলিয়া আসিবে যে- আলো ঃ আরেনা- আসতে দেড়ি হবে- খাঁটি সরিষার তেল বলে কথা- আসুক না- তেল যোগাড় করে আসুক- ততক্ষণে আমরা খোশগল্প করি- বসুননা- আরও কাছে- হ্যা- গোলাম ঃ শুকরিয়া- (গোলামের চোখে মুখে উচ্ছল যৌবন) ওহ! তুমি আমাকে পাগল করিয়া ফালাইছো- আলোমতি তোমার হাত দুইখান ধরি- তুমতো হামারা দিল তোরা- পাকারলিয়া হামকো- কতবার এসেছি কত ভালবেসেছি কতভাবে চেয়েছি কত সাজে সেজেছি পাইনি তোমায় এমন নেক সুরতে আজ পেয়েছি তোমায়- আজ পেয়েছি তোমায় পরাণে পরাণ বাঁধিয়া তাই প্রতি অঙ্গ কাঁদে প্রতি অঙ্গের লাগিয়া ওগো আলোমতি- তোমার হউক সুমতি- তুমি দিওনা আমায় আজ ফিরিয়া- এশকে দিওয়ানা হয়ে আমি যাবো যে গো মরিয়া- আলো ঃ আহ্ অমন করে বলবেন না- এমন নির্জন ভর দুপুরে- এই বিরান বাড়ীতে কোন বাঁধা-নিষেধ মানবনা- ভুল যদি হয়ে যায় অজান্তে- হোক না- বদনাম হয় হোক- কুৎসা রটুক- লোকের মন্দ পুষ্প চন্দন- আমরা প্রেমিক- আমরা সৈনিক- আমরা করিনা ভয়- কি হবে হোক কপালে যা হয়- গোলাম ঃ তবে আর দেড়ি করিতেছ কেন আলো! আসো তুমি আমি আমরা দুজনে একান্ত এই আধার ও ছায়াতে মিশে একাকার হয়ে যাই- আলো ঃ আপনার আদেশ আমার শীরধার্য হে পরী পতি- তবে- গোলাম ঃ তবে! আওর! আওর!! আবার তবে কেন হে মায়াময়ী-মেঘবতী-বিশ্ব সুন্দরী নারী আমার আলোমতি হুরমতি- কাছে আসো- না না কোন ওজর আপত্তি করিও না- আলো ঃ না হুজুর- ওজর আপত্তির কথা বলে আমাকে গুনাহগার করবেন না- আপনি নামায সেরে আসুন- এই ফাঁকে আমি হাতের কাজ সেরে আপনাকে সঙ্গ দিব- আপনার সব আশা-আকাঙ্খা-চাহিদা পুরা করে দিব আজ- (স্বগত) এমন দেওয়াই দিবো- এ জীবনে আর কিছু চাইতে হবেনা আমার কাছে- গোলাম ঃ কিয়া কাহা ? আলো ঃ অর কুছ নেহি হায়! মাইনে কাহাথা- থরি দেড়মে হাম দুনো ইশকমে ডুব যায়েগা আউর মজাক পায়েগা- বহুত দিন মাহিনা গুজারতাহু- লেকিন হামারা পতিনে হার মকসুদ নেহি মিটায়া- গোলাম ঃ শুকরিয়া বহুত বহুত শুুকরিয়া! যাই অতি সত্তর নামাজ সারিয়া আসি- (আলো শরীর দুলিয়ে গোলামের সামনে দিয়ে চলে যায় মঞ্চের এক কোনে- গোলাম জায়নামাজায বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ায়- মাঝে মাঝে লোলুপ্য দৃষ্টিতে আলোর দিকে তাকায়- হঠাৎ আলো গুন গুন সূরে কাঁদে গোলাম থমকে দাঁড়ায় অবাক বিষ্ময়ে- কান্নার সূর তীব্র হয়- গোলাম আলোর কাছে যায়- মাথায় হাত বুলায়- আলো আরও বেশি কাঁদে- দেখা যায় আলো একটি পুতা একটি পাথরের সাথে ঘষছে- যেন ধারালো করছে ওটাকে) গোলাম ঃ রো মাত আলোমতি- রো মাত- আজকি আচ্ছি মেরা পয়গামমে- রোতা কিউ ? বাতা হামকো- কই গরবর নেহিহে- তেরা ছব মুশকিল আছান হগি- এয়ছে ইশকি দরিয়ামে ডুবদেকার ঘাবড়াতা কিউ ? অর কই গরবর থা বাতানা- কিছলিয়ে তু পেরেশান হে ? বাতায়ে মুজকো- তেরি ইয়ে হাল- বেহাল বদন ম্যায় নেহি চাতাহু- ম্যায়নে ইয়ে বরদাস্ত নেহি করেগা- দেখ তেরে লিয়ে মেয় বরবাদ হো জায়েঙ্গে লেকিন তেরা আছু মেয়নে দেখনা চাহিয়ে- রো মাত গুরিয়া- হাম পাগল হো জায়ে- ইয়াদ রাখ- জো চিজ আম্বর আলী তুনে নেহি দিয়া- মেয়নে দিঙ্গু- মেয়নে আভি আভি তেরা হার জরুরাত পুরি করেগা- আলো ঃ শুকরিয়া- হুজুর এই যে দেখুন- এই জিনিসটি আমার মায়ের হাতের- গোলাম ঃ বহুত আচ্ছা- লেকিন হুয়া কেয়া ? আলো ঃ আপনার মুরিদ- এটাকে অতি সূক্ষ্ম ধারালো করতে বলেছেন- মানে এক মাথা চোক্কা- গোলাম ঃ কেন? ইহাতে কি হইবে? ইছকি কেয়া জরুরাত পড়তা হায় ? আলো ঃ জরুরাত হে- উনকি আভি আভি বহুত জরুরাত হে- আপনার তরিকায় তাহার মাথায় অজানা এক ভুত চেপেছে- তাজিম আর তালিমের শিক্ষায় হিতে বিপরীত হয়েছে- উল্টা-সিধা আমলে ব্রেইনে শুরু হয়েছে উল্টা রিয়াকশন- ইবলিশ তাহার কাঁধে হামেশাই সওয়ার- দুষ্ট পীর আর ভূত-পেতœীর আস্তানা তাহার আপাদমস্তক- গোলাম ঃ এ তুমি কি বলিতেছো !! তরিকায়ে চিশতীর উল্টা রিয়াকশন!! আছান কর মাবুদ- আলো ঃ হুজুর সে এখন পেশাদার খুনি- পাষন্ড বর্বর ছাও খাওয়া কুমির- তার চোখে মুখে যমদুতের হাসি- জানেনকি ? কত কায়দা করে আপনাকে নিমন্ত্রণ করেছে- তিনি খাঁটি সরিষার তেল আনতে গ্যাছেন- গোলাম ঃ জানি জানি- কিন্তু কেন? আলো ঃ সবকিছু আগাম বুঝেন- অন্তর চক্ষু দ্বারা দেখেন অথচ এটা বোঝেননা- আপনার জ্বীনের বাদশা কি কিছুই বলেননা? শুনুন পরের বাড়িতে জেফত খেয়ে খেয়ে আপনার জ্বিবটা বড় বেপরোয়া হয়ে গ্যাছে- আপনি পরের ধনে ধনী হয়ে পোদ্দারি করছেন- সাধু সেজে সেজে ঈমানদারির ভাওতা দিয়ে ফটকা বাজির তরিকা দিচ্ছেন- গোলাম ঃ ওয়াক্ থু- ওয়াসতাগর্ফিরুল্লাহ্- আওর! আওর!! আলো ঃ ডেকে কোন লাভ নেই- আপনার জ্বীন ভুত তাহার সামনে অচল পাথর- শুনুন আপনার মুরিদ বলেছেন- এই পুতায় খাঁটি সরিষার তেল মেখে- আপনার পিছন দিয়ে- না না আপনি জবয়ঁবংঃ করলে এই পুতা আপনার পিছন দিয়ে না দিয়ে আপনার গলার ভিতর ঢুকিয়ে দিবে- গোলাম ঃ নাউযুবিল্লাহ্ মিন জালিক! কাফের মুরতাদ্ ইবলিশ- অভিশাপের আগুনে তোমরা জ্বলিয়া পুড়িয়া মরিবে- আমি চলিলাম- ওরে বাপরে বাপ! কি সর্বনাশের কথা! কেবল নাফরমান- বাতিলের দলই এমন কথা বলিতে পারে- (গোলাম প্রস্থান উদ্যত) আলো ঃ কোথায় যাচ্ছেন হুজুর? গোলাম ঃ পালিয়ে যাইতেছি- সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি- নিকাল যা- (আলো গোলাম আদমের পা জড়িয়ে ধরে) আলো ঃ কেন হুজুর! আপনার মনের খায়েশ পুরা করবেন না ? চলুন অন্দর মহলে- আমি প্রস্তুত- মন দিব প্রাণ দিব যাচিয়া যৌবন দিবগো আমি ষোল আনা সবই দিব রইবোনা কিছু বাকী আপনার সাথে প্রেম করিয়া আমি হইবো অসতি- গোলাম ঃ খামোশ! বেত্তমিজ-নালায়েগ-জেনানা- দুর হো যা- আলো ঃ না হুজুর! আপনি যাবেন না- আমাকে এ অবস্থায় ফেলে আপনি চলে গেলে আপনার মুরিদ আমাকে নির্ঘাত তালাক দিবে- আমার এতবড় ক্ষতি করবেন না- সে ফিরে এসে আপনাকে না পেলে সব আক্রশ আমার উপর ঝারবে- আপনি শান্ত হয়ে বসুন- জবষধী! জবষধী!! চষবধংব!! গোলাম ঃ দূর হো- খবিস! বেপর্র্দা নারী- তমিজ আর তাজিমের সাথে কথা বল- আলো ঃ হুজুর! আমি আচল পেতে সময় ভিক্ষা চাই- আপনি আমাকে গলা টিপে হত্যা করুন- তবু আপনার মুরিদের না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন- সামনে দিয়ে কিংবা পিছন দিয়ে- উপর দিয়ে অথবা নিচ দিয়ে- যেদিক দিয়েই হউক এই পুতা আপনাকে নিতেই হবে- (আরও বেপর্দা ভাবে বাহানা শুরু করে আচঁল পেতে কাঁদে গানের সুরে সুরে) হুজুরগো- ও হুজুর মাইরেন না আমারে মাইরেন না এ মনে দাগা দিয়া চইলা যাইয়েন না অঞ্চল বিছাইয়া দিব আপনার চরণে আমার পরাণ সইপা দিব আপনার পরাণে পাহাড় সমান ভালবাসায় বাঁধিব আপনারে যদি ঠাঁই দেন হুজুর আমার মত প্রেমে পোড়া এই অভাগীরে আপনার ঐ মহাপবিত্র বাহু ডোরে- যদি চান হুজুর মুখ ফুটে বলেন একবার উঠি চাঙ্গে আশেক মাশেকের খেলা খেলিব আপনার সঙ্গে ইশ্কে দিওয়ানা হয়ে পালিয়ে যাইব চির তরে আপনার ঐ বরকতময় নুরানী হাত দুটি ধরে। ।

গোলাম ঃ খবরদার কাছে আসিবেনা- বান মারিব বান!!! যাদু টোনা পাথর চালান দিয়া নিশ্চল মুর্তি বানাইয়া রাখিব- হট যাও- যাও- যাও- যাও- আলো ঃ না হুজুর এতটা কঠিন হবেন না! যদি চলেই য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.