আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার শেয়ারবাজারে আসার গল্প ।

https://www.zulutradesforex24.zulutrade.com

শেয়ার বাজারে আমার হাতেখড়ি হয় ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে। তখনকার লেনদেন এখনকার ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থার মত ছিল না। আজকে ক্রয়াদেশ দিলে পরদিন গিয়ে খোঁজ নিতে হত ক্রয়াদেশটি কার্যকর হয়েছে কিনা। ১৯৯৬ সালের শেয়ার মার্কেটের ব্যাপক দরপতনের কথা আমরা সবাই জানি। আমি যখন শেয়ার বাজারে প্রবেশ করি তখন অনেকটা হুজুগের বশেই রাতারাতি টাকা কামানোর আশায় শেয়ারবাজারে প্রবেশ করি।

সিংগারের ৩ লট শেয়ার কিনি ৭০,০০০ টাকায়। অল্প কয়েকদিন পরেই আমার কেনা শেয়ারের দাম দ্বিগুন হয়ে যায়। আমি আরো আগ্রহী হয়ে উঠি। শেয়ারবাজার নামে একটি মাসিক ম্যাগাজিন নিয়মিত পড়তাম। ইপিএস, এনএভি, পিই বিষয়গুলো সবে শিখতে শুরু করেছি।

নবেম্বরের শুরুতে আমার কেনা শেয়ারের দাম প্রায় তিনগুন হয়ে যায়। হঠাৎ করে আমার ব্যক্তিগত কারনে বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নবেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমার শেয়ারগুলো ২,৮৫,০০০ টাকায় বিক্রি করে ফেলি। পরের দিন ঐ শেয়ারের দাম আরো বাড়তে থাকে। আমার পরিষ্কার মনে আছে ঐ শেয়ারের দাম ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

আমি আফসোস করি অনেক লাভ মিস করলাম। শেয়ারবাজার পত্রিকার নবেম্বর মাসের সংখ্যায় প্রধান শিরোনাম করেছিল "নবেম্বরে দাম আরো বাড়বে। " আমার আফসোসের মাত্রা বাড়তে থাকে। নবেম্বরের মাঝামাঝি শেয়ার বাজারে মূল্যপতন শুরু হয়। অল্প কয়েকদিনে সব শেয়ার প্রায় কাগজে পরিনত হয়ে যায়।

আমি স্বস্তি অনুভব করি, ভাগ্যিস ওই সময়ে আমার টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। না হলে সব জলে যেত। শেয়ারবাজারের ওই বেসামাল অবস্থায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন সূচক ১৫০০ পয়েন্টের নিচে যাবে না। লোকজন আবার আশাবাদী হয়ে শেয়ার কিনতে থাকে। আবার শুরু হয় দরপতন।

ব্যাপক দরপতনের সময় আমি নিরাপদ থাকায় বেশ আশাবাদী হয়ে উঠি। আবার বিনিয়োগ করি পঞ্চাশ হাজার টাকা। মাত্র একমাসের মধ্যে অর্ধেক পূজি হারিয়ে যায়। অনেকে বলেন আরো কিছু কিনে এভারেজ কর আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। আরো কয়েকমাস পরে দাম পড়তে পড়তে আমার পুঁজি এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে।

শেয়ারের দাম আর বাড়ে না। ইতিমধ্যে সরকার ১:২ হারে ঋন প্রদানের ঘোষণা দেয়। এবার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ঋনের সুবিধা গ্রহন করি। শেয়ারের দাম একদিন বাড়ে আবার দুই দিন কমে। ঋনের সুদ বাড়তে থাকে।

৯৭ সাল পার হয়ে যায়। কিছু শেয়ারে বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ পাই। কিন্তু ঋনের সুদ সমন্বয় করার পর পূঁজিতে টান পড়ে। ৯৮ সালও চলে যায়। ঋনের বোঝা বাড়তে থাকে।

হাতে আর কোন টাকা ও নেই। একসময় শেয়ারবাজারের ওই বিনিয়োগের কথাই ভুলে থাকতে চাই। মনে জেদ চাপে, এর শেষ দেখে ছাড়বো। আস্তে আস্তে বিভিন্ন বইপত্র জোগাড় করি, পড়তে থাকি। এরপর মিলিয়ে দেখি আমার শেয়ারগুলোর দাম তার ফান্ডামেন্টালের সাথে সংগতিপূর্ন কিনা।

আমি দেখতে পাই কয়েকটি শেয়ারের দাম তার প্রকৃতমূল্যের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে একটি ছিল চিটাগাং ভেজিটেবল। আমার ১৪০ টাকা দরে কেনা। হিসাব করে দেখা গেলো ঐ শেয়ারের দাম ৪০ টাকার বেশি হওয়া ঝুঁকিপূর্ন। বাজারে তখনো ওই শেয়ার ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল।

আমি চিটাগাং ভেজিটেবলের সব শেয়ার বিক্রি করে চিটাগাং সিমেন্ট(বর্তমানে হেইডেলবার্গ সিমেন্ট নামে পরিচিত) এর শেয়ার কিনলাম। ৯৯ সালের শেষ দিকে বাজার উঠতে শুরু করলো, ভালো শেয়ারগুলো থেকে ভালো লভ্যাংশ পেলাম। চিটাগাং সিমেন্ট, বেক্সিমকো ফার্মা থেকে বোনাস শেয়ার পেলাম। ঋনের সুদ সমন্বয় করে আমার বিনিয়োগকৃত টাকার ৮০% পুনরুদ্ধার করলাম। পরের বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমার পুঁজি পুনরুদ্ধার হল।

ঋনের টাকা শোধ করলাম। এরমধ্যে আমার জানা হয়ে গেলো কোন শেয়ারের দাম কখন বাড়ে। কোন সময়ে কোন শেয়ার কেনা নিরাপদ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ইতিমধ্যে শেয়ারবাজারে প্রযুক্তিগত অনেক পরিবর্তন এসেছে।

ইন্টারনেটে ব্রাউজিং করতে করতে একসময় দেখলাম টেকনিক্যাল এনালাইসিস বলে একটা বিষয় আছে, ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করলাম। কিন্তূ চার্ট দেখে বড় গোলমেলে মনে হয়। এমএসিডি লাইন সিগনাল লাইনকে অতিক্রম করার পরও শেয়ারের দাম পড়ছে, কিংবা আরএসাই ৩০ এর কাছাকছি পৌঁছার পরও শেয়ারের দাম পড়ছে। আস্তে আস্তে বিষয়গুলো বুঝতে শুরু করলাম। পড়তি বাজারে যখন শেয়ারের দাম দ্রুত পড়তে থাকে আমি তখন বটম আউট থেকে বিনিয়োগ করি।

ভলিউম স্প্রেড দেখি, প্রত্যাশিত মূল্য হিসাব করি। ৮০% ক্ষেত্রেই শেয়ারের দাম যৌক্তিক আচরন করে। আমার শেয়ার বাজারে ঢুকার পর থেকে অনেক ভুলত্রুটি ছিল। আমি সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমার ভুলগুলো কি ছিল দেখা যাকঃ ১।

শেয়ার বাজার সম্পর্কে না জেনে ঢুকে পড়া, ২। গুজবের পিছনে ছোটা, ৩। শেয়ারের মৌলভিত্তি সম্পর্কে না জানা, ৪। যে সব শেয়ারের দাম বাড়ছে, দাম আরো বাড়বে ভেবে বিনিয়োগ করা, ৫। মুল্যপতনের সময় দাম আরো কমবে ভেবে বিক্রি করা, ৬।

অতিরিক্ত লোভে যথাসময়ে শেয়ার বিক্রি না করা, ৭। আতংকগ্রস্ত হয়ে ভাল শেয়ার জলের দামে বিক্রি করা, ৮। দ্রুত টাকা কামানোর আশায় অল্প সময়ে বিক্রি করে দেওয়া, ৯। পুঁজি পুনরুদ্ধারের জন্য মার্জিন লোন গ্রহন করে ঋনের বোঝা বাড়ানো, ১০। শেয়ার বাজারের সার্বিক আচরন সম্পর্কে না জানা।

আসুন, আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করি। কিছু পড়াশোনা করি, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ কে প্রফেশনালি গ্রহন করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.