আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যত অভিযোগ

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যত অভিযোগ আবু আহমেদ অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ------------------------------------------- তিন দিনের শেয়ার মেলায় অনেক লোক এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নতুন, যাঁরা এই বাজারে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন। প্রায় দুই ডজন ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস তাদের দোকান খুলে বিনিয়োগকারীদের কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তার অক্লান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে শেরাটন হোটেলের অন্য ভেন্যুগুলোতে সেমিনারও হয়েছে।

মেলায় এবং সেমিনারগুলোতে নতুন ও পুরনো বিনিয়োগকারীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সবাই কিছু জানতে এসেছে। তবে সবারই যেমন একটা সাধারণ লক্ষ্য ছিল, তেমনি সবারই একটা কমন অভিযোগও ছিল। আমিও একটা সেমিনারের প্রধান বক্তা ছিলাম। বিষয়টা ছিল, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ কৌশল।

আমার মনমতো বিষয় ছিল এবং ভেবেছিলাম, যেহেতু আমিই প্রধান বক্তা সেহেতু মন ভরে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে অনেক কথা বলতে পারব। বলেছিও, তবে যেভাবে আমি ওদের আরো বেশি উপকারে আসতে পারতাম সেভাবে সেমিনারটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। আমি শেখানোর জন্য চক বা বর্তমানে মার্কার ব্যবহার করি। তাতে ব্ল্যাক বোর্ড বা হোয়াইট বোর্ড দরকার ছিল। কিন্তু আয়োজকরা সেমিনারের ধরনের কারণে ওই ব্যবস্থা করতে পারেনি।

তবে এটাও ঠিক, এত লোককে মার্কার আর হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করে বোঝাতেও পারতাম না। তাই কথাগুলো অঙ্ক-সংকেতের মাধ্যমে না বলে মুখে বলেছি। এতেও আমার বিশ্বাস, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হয়েছে। বলরুম ভর্তি ছিল, আরো অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি শুধু বারবার চিন্তা করেছি, ওদের এই আকাঙ্ক্ষাকে আমরা যদি অর্থনীতির কাজে ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যেত।

তাঁরা হলেন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক, যাঁদের হাতে অর্থ আছে এবং যাঁরা অর্থটাকে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা করে দেওয়াই তো সরকারের কাজ। কিন্তু দুঃখ হলো, তাদের অর্থ আমরা ব্যবহার করতে বারবার অক্ষম হচ্ছি। তারা চায় পদ্মা ব্রিজ নির্মাণে অর্থ দিতে। কিন্তু সরকার নিতে ইচ্ছুক নয়। তারা চায় হোটেল-মোটেলে বিনিয়োগ করতে; কিন্তু সরকার তার হোটেল-মোটেল নিজের কাছেই রাখতে চায়।

তারা শেয়ারের সরবরাহে না গিয়ে একই শেয়ার বারবার কিনে মূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে এবং এতে রেগুলেটর এসইসি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। উদ্বিগ্ন হয়ে এই বাধা-ওই বাধা আরোপ করে। বাজার বাড়তে শুরু করলেই অনলাইনে ভেসে আসে_ এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না; কিন্তু এই উদ্বেগের তো একটাই সমাধান, সেটা হলো শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি করা। অর্থমন্ত্রী জানুয়ারিতে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ২৬টি রাষ্ট্র মালিকানার কম্পানির আংশিক শেয়ার ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে বেচতে হবে। কিন্তু দুঃখ হলো, এই লক্ষ্যে অগ্রগতি সামান্যই হয়েছে।

কেউ কেউ অতি প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছে। এই কেউ কেউ আবার সরকারের চাকরি করে। প্রশ্ন হলো, অর্থমন্ত্রী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন, না ওইসব কেউ কেউ যারা সরকারের চাকরি করছে? তারা নাকি বিষয়টা আরো বুঝতে চায়। যারা বিষয়টা বুঝতেই এত দিন লাগিয়েছে তাদের ওইসব পদে থাকার উপযুক্ততাই নেই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি তাঁদের শাস্তি দিতে বলেছেন।

লাখো বিনিয়োগকারীও তাই চান। ওটা সরকারকে বুঝতে হবে। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বলেছেন_শেরাটন, বিমান এবং সোনারগাঁও হোটেলের শেয়ার শিগগিরই বাজারে ছাড়া হবে। বলার সময় তিনি করতালি পেয়েছেন। আমরাও আশা করে থাকলাম, কাজটি করা হবে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ হলো, এসইসি ঘন ঘন বাজারে হস্তক্ষেপ করে। এতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটার ব্যাপারে আমারও সহানুভূতি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে যেতে শুরু করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে হবে রেগুলেটর সংকটে আছে। এখন তো বিক্ষোভ সর্বত্রই হয়।

একদিকে বিক্ষোভ, অন্যদিকে শেয়ারের উচ্চমূল্য_এর উভয় দিক সামাল দিতে গিয়ে এসইসিকে মুশকিলের মধ্যে পড়তে হয়। এসইসি শক্তিশালী করার কথা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকগুলোতে যদি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয় তাহলে এসইসিতে বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা দিতে অসুবিধা কোথায়? সরকারকে মনে রাখতে হবে ২৪ লাখ বিনিয়োগকারী প্রতিবাদের ক্ষেত্রেও বড় শক্তি। তারাই তো অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তারা মূলধন জোগান দিতে চায়।

সরকারের জন্য এর থেকে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে? অথচ বাজার শেয়ার সরবরাহের স্বল্পতায় ভুগছে। আমি বিনিয়োগকারীদের এ-ও বলেছি, না জেনে শেয়ার কিনবেন না। অনেক ঠকবাজ লোক চারদিকে গিজগিজ করছে। তাদের বসানো ফাঁদ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। সামনে বাজার অনেক বড় হবে।

তখনো সুযোগ নেওয়া যাবে। ঋণ করে শেয়ার কিনতে দ্বিগুণ হুঁশিয়ার হতে হবে। ঋণ বিক্রেতার অভাব নেই। অনেক বিনিয়োগকারী অনেক শেয়ার নিয়ে হতাশ। তারা মিউচুয়াল ফান্ড নিয়েও হতাশ।

কথিত নিরাপদ মিউচুয়াল ফান্ড এখন তাদের জন্য শুধু হতাশাই বহন করে এনেছে। এটার মুখ্য কারণ হলো মিউচুয়াল ফান্ড এবং অন্য শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য না বোঝা। আমাদের অর্থনীতির বাইরে শেয়ারবাজার থাকতে পারে না। অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হলে কম্পানির লাভ হবে। আর কম্পানি লাভ করলেই তো বিনিয়োগকারীরা পাবেন।

তথ্যপ্রবাহ অনেক বেড়েছে, তবে একজন প্রশ্ন করলেন, কম্পানিগুলো ভুল তথ্য দিলে আমরা কিভাবে শেয়ারের মূল্য হিসাব করব? --------------------- সুত্র, কালের কন্ঠ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.