আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি..........বিচার মানি তালগাছ আমার



দেশের ছোট-বড় অসংখ্য নদীর পানি নিয়ে উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে জটিলতা অনেক অঅগে থেকেই। তার ইতিহাস অারও আগের। ভারত ভাটির দেশ বাংলাদেশকে নদ-নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করলে এখানে মরুকরণ ত্বরান্বিত হবে, এ আশঙ্কা এখন বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের মানুষ কৃষি-শিল্প ক্ষেত্র এবং দৈনন্দিন জীবনেও স্থায়ীভাবে খরা কবলিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি করেও এ বিপদ এড়ানো যায়নি।

কারণ কোনো বছরই হিস্যামত পানি দেয়া হয়নি বাংলাদেশকে। চলতি বছরের প্রথম দশ দিনে বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানির চেয়ে ১১ হাজার ৩৪০ কিউসেক কম পানি দেয়া হয়েছে। যদিও ভারত কড়ায়গণ্ডায় তার প্রাপ্য পানি ঠিকই নিয়েছে। বন্ধুত্বের এমন পরিচয় খুব কমই দেখা যায়। ০ বছরমেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

সে অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রতি দশ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে গঙ্গার প্রবাহ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু কোনো বছরই বাংলাদেশকে তার হিস্যা অনুযায়ী পানি দেয়া হয়নি। এ বছরের প্রথম দশ দিন বাংলাদেশের ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে ৫৬ হাজার ১৭৯ কিউসেক। অথচ ভারত তার প্রাপ্য ৪০ হাজার কিউসেক ঠিকই নিয়েছে বলে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সূত্রে জানা গেছে। এভাবে বাংলাদেশকে প্রতি বছরই বঞ্চিত করা হচ্ছে।

গত বছরও ১৫ কিস্তিতে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির এমন বরখেলাপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিবাদ ভারত কানে তোলেনি। এ অবস্থায় তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের যে কথা বলা হচ্ছে তার ফলাফল যে ভিন্ন হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল হয়েছিল। দ্বিপাক্ষিকভাবে সমঝোতা না হওয়ায় তত্কালীন বিএনপি সরকার বিষয়টি জাতিসংঘে তুলতে বাধ্য হলে ভারত চুক্তি করতে রাজি হয়।

পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালে তত্কালীন শেখ হাসিনা সরকার ৩০ বছরমেয়াদি চুক্তি করলেও লাভ হয়নি। পানির অভাবে গঙ্গা-কপোতাক্ষ বহুমুখী সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে গেছে। নদ-নদী, খাল-বিলে পানি শূন্যতার কারণে সেচের কাজে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে পানির স্তর নেমে গেছে। এখন গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েলেও পানি ওঠে না। পদ্মা ও তার শাখানদীগুলোতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় পুরো দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

গোটা উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ টের পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় চুপ করে বসে থাকার অর্থ দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া। সরকারকে অবশ্যই ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অগ্রগতি না হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তোলা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে গঙ্গা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে কী হয়েছে আমরা জানি না।

ভারত এখন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট এবং আমাদের বন্দর ব্যবহারের সুবিধা নিতে আগ্রহী। এ সময় গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি তুলে ধরলে ভারত নিজ স্বার্থেই সমঝোতা করতে এগিয়ে আসতে পারে। এ সরকারের সঙ্গে ভারতের বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বলেই এমন কথা বলা হচ্ছে না। এটা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে আমাদের আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বখাদ্য পরিস্থিতিও ভালো বলা যায় না। এ অবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ডাক দিয়েছেন। সেচের পানি নিশ্চিত না হলে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি দূরে থাক, বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না। অতএব, পেটের দায়ে, প্রাণের দায়ে আমাদের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.