আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিসিঞ্জারের মুজিব-বিদ্বেষ দালিলিকভাবে প্রমাণিত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের প্রতি হেনরি কিসিঞ্জারের ব্যক্তিগত বিরাগ দালিলিকভাবে প্রমাণিত। শুধু ‘বাস্কেট কেস’ নয়, মুজিব প্রজ্ঞা দেখাতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না বলেও উক্তি করেছিলেন কিসিঞ্জার। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় কিসিঞ্জারের বিশ্বাস ছিল না। মুজিব সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি খাদ্য-সাহায্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। যদিও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার ‘বাংলাদেশের পিঠ দেয়ালে না ঠেকানোর’ পরামর্শ দিয়েছিলেন।


প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড শীর্ষক বইয়ে সাংবাদিক ও লেখক মিজানুর রহমান খান এ মন্তব্য করেছেন।
এতে বলা হয়, অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে কথিত মার্কিন-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্তযোগ্য। মুজিব সরকার উৎখাতের ঘটনায় মার্কিন দূতাবাস বা হেনরি কিসিঞ্জার প্রশাসনের বিস্মিত হওয়ার কথা ছিল না। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলার অভাব, অসন্তোষ এবং সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব-গুঞ্জন ঢাকা, ইসলামাবাদ ও দিল্লির মার্কিন দূতাবাস এবং ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশ ডেস্ক কর্মকর্তাদের আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছিল। কিসিঞ্জার নিবিড়ভাবে এসব পর্যবেক্ষণ করেছেন।

১৯৭৫ সালের মার্চে ‘অভ্যুত্থানের গুজব’ নিয়ে মার্কিন দূতাবাস খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে উইলিয়াম বি স্যাক্সবি নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভারতে যাওয়ার আগে ওয়াশিংটনে কিসিঞ্জারের মুখোমুখি হন। স্যাক্সবি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তিনি জানতে চাইলেন, ‘বাংলাদেশ অভ্যুত্থান (বাকশাল প্রবর্তন) কি কোনো পরিবর্তন এনেছে?’ উত্তরে কিসিঞ্জার বললেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ ঠিক সেভাবেই অগ্রসর হচ্ছে, যেমনটা পূর্বানুমান করা হয়েছিল। আমি কখনো ভাবিনি যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আসবে।

’ তিনি এ সময় স্মরণ করেন যে দেশটিকে তিনি ‘বাস্কেট কেস’ বলেছিলেন। ‘বাস্কেট কেস’ কথাটি বহুল প্রচারিত। কিন্তু ১৯৭৪ সালে ঢাকায় মুজিবের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর (মুজিবের) দীর্ঘদিনের গুণগ্রাহী। একজনের জীবনে এমন কারও সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ সচরাচর ঘটে না যে যিনি তাঁর দেশের জনক এবং যিনি তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় থেকে একটি জাতি সৃষ্টি করেছেন। ...এবং প্রধানমন্ত্রী যদি গভীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী না হন, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।


কিউবায় পাট রপ্তানির কারণে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বোস্টার ১৯৭৪ সালে লিখেছেন: ‘আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে বাংলাদেশের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে আমাদের লাভটা কী। সোভিয়েত ব্লক থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়া বাংলাদেশের জন্য দুরূহ। তবে মুজিব সরকার তার পররাষ্ট্রনীতিতে যেভাবে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে, সেটা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল। বাংলাদেশ এক বছর ধরে সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে। ’
ওই বইয়ের বিবরণ অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি ১৯৭৫।

সন্ধ্যা ৭: ২০। টেলিফোনে কথা হচ্ছে কিসিঞ্জার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট টম এন্ডার্সের মধ্যে:
কিসিঞ্জার: গত তিন দিন আমি প্রেসিডেন্টের কাছে আমাদের পিএল-৪৮০ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাইছি। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি ভালো কার্যপত্র পাইনি। প্রতিটি কার্যপত্রে ইন্দোনেশিয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা ইন্দোনেশিয়াকে বাদ দেব না।

ইন্দোনেশিয়াকে নয়, বাংলাদেশকে বাদ দিন।
যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছিল যে ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জোসেফ সিসকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যেকোনো পর্যায়ে বৈঠকে বসতে চায়। তার অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, পাকিস্তানের সঙ্গে দর-কষাকষির জন্য আর কোনো রাজনৈতিক সামর্থ্য নেই। ’
বই পরিচিতি: মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড, মিজানুর রহমান খান, প্রথমা প্রকাশন, আগস্ট ২০১৩। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।