আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ দলে দ্বন্দ্বের আভাস

"বাউল মানুষ"

বিশ্বকাপ ক্রিকেট এসেই গেল। দলগুলো এখন মাঠে নামার চূড়ান্ত অপেক্ষায় রয়েছে। কে চ্যাম্পিয়ন হবে সেই হিসাব-নিকাশও শুরু হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বকাপ শুরু হলেও বাংলাদেশের অভিষেক হয়েছে ১৯৯৯ সালে। এক সময় বিশ্বকাপ খেলাটা ছিল স্বপ্নের ব্যাপার।

এখন বাংলাদেশ ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা করছে। বিশেষ করে সাকিব-তামিমদের যে পারফরম্যান্স তাতে সবাই চেয়ে আছেন স্বপ্নের বিশ্বকাপে স্বপ্নের নৈপুণ্য দেখতে। কথা হচ্ছে স্বপ্নটা কি, শিরোপা জেতা কি সম্ভব? সত্যি কথা বলতে সাম্প্রতিককালে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে ধারাবাহিক সাফল্য তাতে শিরোপা জেতার সামর্থ্যও আছে। উদাহরণটা দেওয়া যেতে পারে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে। ১৯৯৬ সালে তারা উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিতেছিল।

রানাতুঙ্গাদের কি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। অথচ শ্রীলঙ্কাকে কেউ সেবার গোনার মধ্যেও রাখেনি। আসলে রাখবেই বা কিভাবে। বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা তখন অন্যতম দুর্বল দল। এই শক্তি নিয়ে কি বিশ্বকাপ জেতা যায়।

রানাতুঙ্গাদের কেউ শেষ আটের তালিকায় রাখতেও সাহস পাচ্ছিলেন না। আগের তিন আসরে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ কিন্তু এবার নতুন রূপে বিশ্বকাপে খেলতে নামছে। টেস্ট পরিবারের এমন কোনো দল নেই যাদের বিপক্ষে সাকিবরা জয় পাননি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হোয়াইট ওয়াশের মাধ্যমে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যেখানে লক্ষ্য ছিল হোয়াইট ওয়াশ এড়ানো।

সেখানে কিনা ভেট্টরিদের ধোলাই করে দেশে পাঠিয়েছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কাতো বিশ্বকাপ জেতার আগে কাউকে হোয়াইট ওয়াশ করার কৃতিত্বই পায়নি। তাহলে এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতেই পারে। তারপরও বাংলাদেশ শিরোপার আশা করছে না। কারণ ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা বা ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল রয়েছে এ আসরে।

তাদের টপকিয়ে বিশ্বকাপ জেতার কথা বাংলাদেশের কেউ সাহস করে বলতে পারছেন না। কেউ কেউ বলছেন কোয়ার্টার ফাইনাল খেললেই খুশি। জানি না আশা তাদের এত ঠুনকো কেন! বাংলাদেশতো গতবারই গ্রুপে শক্তিশালী দুই দল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড ওঠে। এবার ফাইনাল না হোক সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা তো আছে। আর এ সেমিকেই অনেকে স্বপ্ন বলে চিহ্নিত করছেন।

নিউজিল্যান্ডের কোচ গ্রেট ব্যাচও বলে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে এত দূরের পথে সাকিবদের পক্ষে আসা সম্ভব হবে কিনা! ক্রিকেট এমনিতেই অনিশ্চয়তার খেলা, তারপর আবার গ্রুপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে আসতে বড় বড় বাধা অতিক্রম করতে হবে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দল রয়েছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড থাকলেও গত বছর অনেক সাফল্যের মাঝেও বাংলাদেশ এ দুই দলের কাছে পরাজয়ের লজ্জা পেয়েছে। প্রকৃত শক্তির হিসাব যদি করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের গ্রুপ থেকে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডতো আছেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সুতরাং যত আশা করি না কেন বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে আগে গ্রুপ ম্যাচেই জ্বলে উঠতে হবে। টাইগারদের অবিস্মরণীয় কিছু দেখবার জন্য যেখানে সারাদেশের মানুষ শীতে সারারাত জেগে টিকিটের জন্য লাইন দিচ্ছেন। সেখানে যদি এ হতাশার কথা উঠে তাহলে মন কি আর ঠিক থাকে। না, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সাকিব, তামিম, ইমরুল, জুনায়েদ, রিয়াদের যে যোগ্যতা তাতে ঠিকভাবে খেলতে পারলে সব ভয়কে জয় করা সম্ভব।

ভয়টা দলের মনোমালিন্য নিয়েই, কারণ বাংলাদেশের এ পর্যন্ত যত ভরাডুবি ঘটেছে, তার অধিকাংশ গ্রুপিং বা মনোমালিন্যর কারণে। বিশ্বকাপে তা মুক্ত থাকবে এ নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে বিশ্বকাপে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতর অসন্তোষ চলছে তা অনেকেরই ধারণা। আসলে প্রাথমিক দল ঘোষণার সঙ্গে অধিনায়ক বা সহ-অধিনায়ক যদি ঠিক করা হতো তাহলে এমনটি হতো না। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল যেকোনো কারণে বিসিবি মাশরাফিকে অধিনায়ক করতে চেয়েছিল।

মাশরাফি উঁচুমানের ক্রিকেটার তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বার বার ইনজুরিতে পড়ার পরও বিসিবি কেন যে তাকে অধিনায়ক করতে চাচ্ছিল তা বুঝা যায়নি। এখানে নাকি কে মোহামেডান কে আবাহনী এটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছিল বিসিবি। কর্মকর্তারা অধিকাংশ আবাহনী সংশ্লিষ্ট বলেই তারা নাকি মাশরাফির হাতে ক্যাপ্টেনসির ব্যান্ড পরাতে চাচ্ছিলেন। এ নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হয়, তখুনি মোহামেডানের দুই খেলোয়াড় সাকিবকে অধিনায়ক তামিমকে সহ-অধিনায়ক মনোনীত করেন।

বাংলাদেশ ইতিহাসে বড় কোনো দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক হওয়াটা এবারই প্রথম। তাও আবার বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে। সাকিবকে নিয়ে তেমন বিতর্ক উঠেনি। কিন্তু তামিমকে সহ-অধিনায়ক মনোনীত করাটা অনেকে মেনে নিতে পারেননি। এখানে মুশফিকুর বা রাজ্জাকের দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল।

অবশ্য রাজ্জাক নাকি নিজ থেকে সহ-অধিনায়ক হতে চাননি। তাহলে সাকিবের ডেপুটি হিসেবে উইকেটরক্ষক মুশফিকুরকে রাখলে ক্ষতি কি হতো। অনেকে বলছেন সাকিব ও তামিমের মধ্যে মিল থাকাতে বিসিবি প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস্তবে কি তাই, কেননা কেউ কেউ বলছেন আবাহনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জেদ দেখিয়ে কাজটি করেছেন। কর্মকর্তারা ক্ষোভ দেখিয়ে যদি এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে তো দলে গ্রুপিং তৈরি হবেই।

ক্রিকেটাররা এ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলছেন না ঠিকই। কিন্তু তামিমকে সহ-অধিনায়ক করাতে অনেকেই খুশি হতে পারেননি। এখন এ থেকে সত্যিই গ্রুপিং তৈরি হলে বাংলাদেশ কি মাঠে ঠিকমতো খেলতে পারবে। বিশ্বকাপে বড় ধরনের প্রত্যাশা করছেন দেশবাসী। এখন গ্রুপিংয়ের কারণে সব যদি ভেস্তে যায় তাহলে অবস্থা কি হবে।

কোয়ার্টার ফাইনালে নিজ দেশে দর্শক হয়ে অন্য দলের খেলা দেখা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কিছু অবশ্য ধারণা করে বলা হচ্ছে। এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করে টাইগাররা মাঠ নামতে পারলেই সব ভয়কে জয় করা সম্ভব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.