আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে আরও একটি "ফালতু পোস্ট"

চির উন্নত মম শীর

বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্লগে আমাদের দেশে আগামী মাসে অনুষ্ঠেও বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে কথা হচ্ছে। সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে কেন বলিউডের নায়ক নায়িকা এসে নাচানাচি করবে। ফেসবুকেও চলছে আরেক প্রস্থ আক্রমন। আজকেও একজনের পোস্ট পড়লাম এই বিশ্বকাপের সাথে টুর্যিওজমের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে। সে বার বার আকুতি জানাচ্ছিলো যেন অন্তত ভাষার মাসে আমরা যেন আমাদের সংস্কৃতিটাকে অপমানের হাত থেকে বাচাই।

বেচারা। আজকে প্রথম আলোতে বেশ ভালো করেই লেখা হয়েছে আয়োজনে কোন কোন ভারতীয় ছবির নায়ক নায়িকা আসবেন। ভালো কথা। তার বিরুদ্ধেও অনেক সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই সব প্রতিবাদই বরাবরের মতো বেকার যাবে।

আমার মনে আছে যখন আমাদের দেশে প্রথম ইন্ডিয়ান আইডলদের আনা হয়েছিলো তখন এরকমই তোলপাড় করা হয়েছিলো, কিন্তু কোনই লাভ হয়নি। সেই সময়ে প্রথম আলোতে পড়েছিলাম প্রতিবেদক খুবই আফসোস করেছেন যে ইন্ডিয়ান আইডলরা বাংলাদেশের কোন সঙ্গীতশিল্পীকে চেনেন না। অবশ্য তাতে কোন অসুবিধে হয়নি। তারা গান শুনিয়ে আমাদেরই শ্রোতাদের মাতিয়ে গেছেন। এরপর আরও অনেকেই এসেছেন।

তারাও কনসার্ট ভর্তি দর্শকদের মাঝে গান গেয়ে গেছেন। আমাদের দেশেরই মানুষ। আমাদের বন্ধু-স্বজন। আমাদের দেশেরই হাজার শ্রোতার মাঝখানে ব্যান্ডদল জুনুনকে আনা হয়েছিলো হেলিকপ্টার চড়িয়ে। বাপেক্সের প্রোগ্রামে ভারতীয়দের উপস্থিতি তো কোন ব্যাপারই না।

এই ঘটনাগুলো এই কারনেই বললাম যে আজ বিশ্বকাপে যা হতে যাচ্ছে তা এই সব অভ্যাসের আরেকটা ফল মাত্র। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে শাহরুখের কনসার্ট নিয়ে কি পরিমান প্রতিবাদী ঝড় উঠেছিলো। কিন্তু আমরা কি খেয়াল করেছি ধীরে ধীরে যে আমরা আমাদের সংস্কৃতির কি নাজেহাল অবস্থা করেছি। অন্যদেশের শিল্পী এসে আমাদের এখানে পারফর্ম করে যাক তাতে আমার কোন অসুবিধাই নেই। এটা সংস্কৃতি বিনিময়ের জন্যে অবশ্যই দরকার।

আমাদের দেশের মাইলস এলআরবি ও অন্যান্য দেশে কনসার্টে যায়। কিন্তু অবশ্যই আমাদের দেশকে তুলে ধরা হবে এমন কোন অনুষ্ঠানে এই আচরন কাম্য নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আজকে আয়োজকরা এই সাহস পেলেন কোত্থেকে? উত্তর হলো এই সাহসটা আমরাই ওদের দিয়েছি। আমারা জাতীগত ভাবে যেপ্রকারে হিন্দি আসক্ত হয়ে পড়েছি তাতে যারা "গুড বিজনেস" করতে চায় তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিবেই। এখানে ভারত কোন বিষয় না এখানে বিষয় হলো কি দেখে লোকে জিভে জল আনবে।

আমরা যদি হ্দির বদলে পাকিস্থানী মুজরা দেখতে আসক্ত হতাম তাহলে এটিএন ইভেন্টস হয়ত সেই ব্যাবস্থাই করতো। এখানে বলে নেয়া ভালো আমার এক বন্ধু জিজ্ঞেসা করেছিলো আমাকে হিন্দির বদলে আরবী হলে কি আমরা প্রতিবাদ করতাম কিনা। আমি শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। অনেকেই মনে করেন আসলে আমাদের হিন্দির প্রতি ঘৃনা থেকেই আমরা এই রকমের কাজ করছি। এটা একটা সমস্যা।

আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ভালোবাসার চাইতে অপরের সংস্কৃতিকে ঘৃনা করি অথবা অধিক ভালোবাসি। একারনেই আমাদের সব ইস্যুর মধ্যে এই রকমের একটা গন্ধ খোজার চেষ্টা থাকে। হয়তো এটাও একটা কারন যেজন্যে আমাদের প্রতিবাদগুলো ফলপ্রসু হয়না। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি মনে করি আমরা যদি আমাদের দেশের এইরকম আয়োজনে অর্থাৎ যেখানে নিজের দেশকে তুলে ধরার মতো বিষয় জরিত সেইসব অনুষ্ঠানটাকে যদি নিজেদেরই রাখতে হয় তাহলে আগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিজের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা যদি আমাদের সংকৃতিকে আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে তার প্রাপ্য সম্মান দিতাম মাহফুজুর রহমানের মত ব্যাক্তিরা কখনও এই ধরনের প্রচেষ্টা নেয়ার সাহসও পেতোনা।

অনেকে বলতে পারেন বিশ্বায়নের যুগে এই রকম খোলা আকাশে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা যাবে না। আমি তাদের একটু সাউথ ইন্ডিয়ার দিকে তাকাতে বলবো। তারা গোটা বলিউড সাম্রাজ্যে বাস করেও তাদের স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। আমারাও যদি আমাদের প্রচেষ্টা চালাই তাহলে আমাদের পক্ষেও এই সংস্কৃতির সম্মান রক্ষা সম্ভব। আমাদের প্রতিবাদ করার ধরন দেখে বোঝা যায় আমাদের মধ্যে আগুন আছে।

এখন প্রয়োজন হলো এই আগুন গুলো একত্রিত করা, যায়গা মতো এই আগুনের শক্তি ব্যাবহার করা। আমরা সবাই যদি আমাদের সংস্কৃতিকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দেয়ার চেষ্টা করি, নিজের উপর অন্য যেকারো সংস্কৃতিকে যায়গা না দেই তাহলে হয়তো আমরা আমদের পরবর্তি প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে একটা বিষয় পৌছে দিতে পারব। আর বিশ্বকাপকে নিয়ে আমাদের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরী হয়েছে সেটাকে মিলিয়ে যাবার আগেই এই নতুন ভাষার সংগ্রামে ব্যাবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে এবার সালাম রফিক বরকতের প্রজন্ম হিসেবে আমাদের রক্তের পরিচয় দেবার সময় এসেছে। আমরা আবারো ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শক্তিশালী আকাশ সংস্কৃতির সামনে আমাদের ঝান্ডা তুলে দাড়াবো।

দেখবেন আমরা যদি আমাদের নিজেদের স্বকীয়তাকে ভালোবাসতে পারি আমাদের এরকম আর ১৭ই ফেব্রুয়ারীর মুখোমুখি হতে হবে না। তা না হলে এই বিশ্বকাপকে নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ পরিনত হবে আমাদের আরেকটি ব্যার্থ আস্ফালনে...


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.