বলে যায় কত কথা,আমার নীরবতা । ।
“আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয়,পাখির বাসা-
বিন্না পাতার ছানী,
একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি,
একটুখানি হাওয়া দিলে ঘর নড়বড় করে,
তারই তলে আসমানীরা থাকে বছর ধরে। ।
”
কাব্যপ্রেমিক বাবার আবেগভরা আবৃত্তি শুনে কবিতাখানি পড়ার ভীষণ ইচ্ছে জেগেছিল মনে। তাই হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দিনান্তে উপলব্ধি হল- বাংলাদেশের বিদ্যুৎ এর মতো কবিতাখানিও বেশ দুর্লভ। ইতিহাসের পাতায় খুঁজে না পেয়ে ভাবলাম আসমানীকে খুঁজতে কি তবে রসুলপুরেই যেতে হবে?
কিন্তু বাস্তবচিত্রে তার প্রয়োজন পড়ল না আর। চারপাশে তাকালেই নজর কাড়ে শত-সহস্র আসমানী ও তাদের স্বপ্নবিহীন জীবন সংগ্রামের কাব্যমালা-
নীলা।
বয়স খুব বেশি হলে দশ বছর হবে। বসুন্ধরা সিটির সামনের ট্র্যাফিকে ফুল বেঁচে দু’পয়সা যা পায় তা দিয়ে যেখানে একবেলাও পেট ভরে না সেখানে স্বপ্ন দেখার মতো দুঃসাহস কি করে হয় তার?।
কমলা। বেড়িবাঁধের বস্তিতে ছোট ভাই আর মায়ের সাথে পলিথিনের ছাদের নিচে তার বসবাস। মা যখন মানুষের বাড়িতে কাজে যায় তখন ছোট ভাইকে দেখাশোনা,রান্না-বান্না করেই দিন কেটে যায়।
স্বপ্নের কথা তো স্বপ্নেও ভাবা দায়।
গোলাপী। মা মারা যাওয়ার পর দরিদ্র বাবা শখের বশে আরেকটা বিয়ে করলে সৎ মায়ের অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে একটু সুখ পাবার স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছিল। এখন তার দিন শুরু কিংবা শেষ হয় গৃহকর্ত্রীর লাথি খেয়ে।
এসব আসমানীরা চারিত্রিক, দৈহিক, বয়স এবং আরও বিভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন হলেও তাদের অব্যক্ত গল্পগুলো কিন্তু অভিন্ন।
আর সেই না বলা গল্পগুলো হারিয়ে যায় কালের অতল গভীর জলে, কেউ কখনও জানতে পারে না - আসমানীদের জীবনযুদ্ধের গল্প।
কী করেই বা জানবে? কে জানাবে? আসমানীরা তো আর ঠাঁয় পায় না ইতিহাসে। এছাড়া ডিজিটাল যুগের ইতিহাসটাও যে ভিন্ন আঙ্গিকে রচিত। একারণেই আসমানীদের খুঁজে পাওয়া যায় না- দন্ত্যস রওশন অথবা অনিক খানের “ডিজিটাল আসমানীকাব্যে”, হুমায়ুন আহমেদের “নন্দিত সড়কে” কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের “আমার বান্ধবী আসমানী’’ –তে!
তবে ইতিহাসে তাদের কথা তুলে নিয়ে আসার, পরের প্রজন্মকে জানানোর দায়িত্ব তো আমাদের। তাহলে ইতিহাস কেন নেবে আমাদের এ দায়ভার?
আমরা না জানালে বিশ্ব কী করে জানবে – জীবন শুধুই মোভেনপিকের আইস্ক্রীম, ইটালিয়ান পিৎজা কিংবা আমেরিকান বার্গার না ; কী করে জানবে – একবেলা অর্ধপেট নুনভাত খেতে কতো টন ঘাম মাথা থেকে পায়ে ফেলতে হয়?
আমরা না শোনালে কে শোনাবে –
স্বপ্ন বিকিয়ে জীবন কেনার গল্প !?!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।