আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঠারো বসন্ত - একটি চাইনিজ সিনেমা রিভিউ

স্মৃতিগুলো একপাল কুকুরের মত খিঁচিয়ে ধাড়ালো দাঁত মনের পেছনে করে তাড়া Ann Hui পরিচালিত এবং Jacklyn Wu, Leon Lai, Anita Mui, Huang Lei ও Ge You অভিনীত "আঠার বসন্ত" চীনের একটি সিনেমা। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। চলচ্চিত্রের গল্পটি ১৯৩০ সালে শাংহাই শহরের একটি ঘটনা থেকে নেয়া হয়েছে। সিনেমার গল্পটি আমি নিচে লিখে গেলাম। যদি কেউ সিনেমাটি দেখতে আগ্রহী হন তবে রিভিউ টা না পড়াই ভাল হবে মান লু এবং মান চেন দুই বোন।

একটি আকস্মিক ঘটনায় পরিবারের একমাত্র ভরসা বাবা মারা যাওয়ার পর এই বোনের বোনের স্বাভাবিক জীবন যেন মূহুর্তেই উল্টা-পাল্টা হয়ে যায়। ছোট ছোট এক বোন আর দুই ভাই অন্যদিকে অসুস্থ মা এবং বয়স্ক দাদি সবার দায়িত্ব এখন এই বড় বোনটির ওপর। বড় বোন মান লু বুঝলো সব দায়ভার এখন তাকেই নিতে হবে। তাই প্রথমে স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিল আর এরপর ত্যাগ করলো প্রিয়তম ছেলে বন্ধুকে। তাঁর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে এরপর মান লু যৌনকর্মী হিসেবে টাকা উপার্জন শুরু করে।

এসময়ে ছোট বন মান চেন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। সে বড় বোনের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে আর স্কুলের সহায়তায় একটি কারখানায় পার্ট-টাইম শ্রমিক হিসেবে কাজ যোগ দেয়। সে মনে করলো যে, কারখানায় কাজের বিনিময়ে বড় বোনের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারবে। কারখানায় মান চেন একই কারখানায় কাজ করা শি চুনের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং দু'জন দু'জনকে ভালবেসে ফেলে। এদিকে বড় বোন মান লুও পরিচিত হয় চু হোং ছাই নামে একজন ছেলের সঙ্গে ।

চু হোং ছাই ছিল প্রতারক । সে মুখে মধুর সুরে কথা বললেও আসলে সে মান লুকে প্রতারিত করতো। সে মান লুকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিলেও গ্রামে রয়েছে তাঁর অপর এক স্ত্রী এবং একটি ছোট মেয়ে, আর এই বিষয়টি সম্পর্কে মান লু'কে কখনোই কিছুই বলেনি। একজন যৌনকর্মী হিসেবে মান লু নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। দাদি ও মার বিরোধিতা উপেক্ষা করে মান লু চু হোং ছাইয়কে বিয়ে করে।

অন্যদিকে ছোট বোন মান চেন এবং শি চুনও বিবাহের ব্যাপারে চিন্তা শুরু করেছে। কিন্তু গভীর প্রেমে বিভোর মান চেনের সুন্দর স্বপ্ন মূহুর্তেই ভেঙ্গে গেলো যখন একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা শি চুনের বাবা-মা জানলেন যে, মান চেনের বড় বোন একজন যৌনকর্মী এবং তারা খুব দরিদ্র। কিন্তু মা-বাবার বিরোধিতা মান চেন এবং শি চুনের ভালোবাসায় বাধা সৃষ্টি করতে পারলো না। একদিন শি চুন আনুষ্ঠানিকভাবে মান চেনের কাছে বিয়ের প্রস্তাব করে। মান চেন বিনা দ্বিধায় শি চুনের প্রস্তাব গ্রহণ করে।

তখনও মান চেন এবং শি চুন জানত না যে, আরও কোনো শক্তিশালী ঝড় তাদের প্রেমে আঘাত হানার জন্য অপেক্ষা করছে। এদিকে চু হোং ছাই মান লুকে বিয়ে করেছে মূলত একটি ছেলে সন্তানের আশায়। কিন্তু একটি শারীরিক পরীক্ষায় মান লু বুঝতে পারলো যে এমন এক ক্যান্সারে আক্রান্ত যে আর কখনোই সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। শুধু তাই নয় তার বাকী জীবনটা এক ধরনের ঔষুধের সাহায্যেই বেঁচে থাকতে হবে। এ তথ্য জানার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন চু হোং ছাই, মান লুকে শারিরিক নির্যাতন আর বকাবকি করা শুরু করে দেয়।

দিনে দিনে তা এমন খারাপ অবস্থায় পৌছায় যে কখনো মান লু অজ্ঞান হয়ে যায়। এদিকে চু হোং ছাইয়ের দৃষ্টি পড়ে ছোট বোন মান চেনের ওপর এবং তাকে ভালবাসার গল্প শোনায়। তা দেখে মান লু মনে মনে একটি অত্যন্ত যঘন্য পরিকল্পনা করে। সে নিজের ছোট বোন মান চেনের সাথে কৌশলে চু হোং ছাইকে দিয়ে যৌন সম্পর্ক করায়। এরফলে মান চেন গর্ভবর্তী হয়।

মান চেন মনে মনে ভাবতে শুরু করলো যে, চু হোং ছাই আর তাকে ছেড়ে যাবে না। তারপর মান লু শি চুনের সাথে দেখা করে জানায় তার ছোট বোন অন্য একজনকে বিয়ে করেছে এবং সে আর তাকে ভালোবাসে না। এ কথায় শি চুন অনেক কষ্ট পায় এবং এরপর মা-বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। চলচ্চিত্রের শেষে মান লু তীব্র ঘৃণা ও ছোট বোনের সাথে করা অনৈতিক আচরনের আত্মদহনেই মারা যায়। এরপর কোন এক আকস্মিক ঘটনায় শাংহাইয়ের অভিজাত এক রাস্তায় মান চেন এবং শি চুন-এর দেখা হয়।

তখন তারা বুঝলো যে, তাদের দু'জনের আর আগেকার সময় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। যেন বিপরীত দিকে চলে যাওয়া দুটি রেলগাড়ির মতো দু'জন দু'জনকে পেরিয়ে চলে গেল দূর বহুদূর। উল্লেখ্য, 'এইটিং স্পিরিং' চলচ্চিত্রটি চীনের বিখ্যাত নারী লেখক চাং আই লিংয়ের ঐ একই নামের সাহিত্য থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁর এই সাহিত্যকর্মে চীনের মধ্যযুগীয় সমাজের দু'জন মহিলার দুঃসহ জীবন তুলে ধরা হয়। পুরানো যুগের প্রতি অভিযোগ আর নিষ্ঠুর ভাগ্যের সামনে প্রধান চরিত্রদের দুর্বলতা চলচ্চিত্রটিতে প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।

আগ্রহী পাঠকরা সিনেমাটি দেখতে পারেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।