আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ

প্রতিবন্ধীদের ভালোবাসুন। তারাও এ সমাজের নাগরিক।

শিক্ষা সকলের মৌলিক অধিকার। একটি শিশুর শিক্ষার ভিত তৈরী হয় প্রাথমিক স্কুলে। বাংলাদেশ সরকার সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।

কিন্তু নানা কারণে এখনো বাংলাদেশের সব শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় না। এই শিশুর মধ্যে বিশাল একটা অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশু। এখনো আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়ার বিষয়টি অভিভাবকেরা গুরুত্ব দেয় না। বংশের কোন অভিশাপ বা পাপের ফলে প্রতিবন্ধী হয়েছে এই ধারণাকে মাথায় রেখে নিভৃত গৃহকোণে প্রতিবন্ধী শিশুদের রেখে দেয়। খুব কম সংখ্যক প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবক তাদের শিশুকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে থাকেন।

এর মধ্যে শিক্ষিত অভিভাবকের সংখ্যাই বেশি। সাধারণত যে সকল কারণে তারা স্কুলে যেতে পারছে না সেগুলো হল - অভিভাবকরা সচেতন নন; অভিভাবকদের আর্থ সামাজিক অবস্থা অনুন্নত; স্কুলের অবকাঠামো প্রতিবন্ধী শিশুদের অনুকূলে নেই; প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য কোন স্কুলেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক নেই; প্রাথমিক স্কুলের ভর্তি নির্দেশিকায় প্রতিবন্ধীদের ভর্তির ব্যাপারে নির্দেশ থাকলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়ক উপকরণ না থাকায় তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয় না; অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলতে হয় সমস্যা থাকতেই পারে তাই বলে আপনার প্রতিবন্ধী শিশুকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। সমস্যা ও বাস্তবতা আপনাদের জানতে হবে। ঘরে আপনার সন্তানকে বসিয়ে রেখে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং আপনার প্রতিবন্ধী শিশুকে যদি যথা সময়ে লেখাপড়া করার সুযোগ না দেন তবে সারা জীবনই আপনার এই সন্তান পরিবারে বোঝা হিসেবে থাকবে।

সরকার এখন অনেক সচেতন। সরকারী এই সুযোগকে আপনাদের কাজে লাগাতে হবে। ২০০১ সালে প্রণিত প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইনে তফসিল ধারা ২(খ) এবং ৬(২) দ্রঃ “ঘ” তে প্রতিবন্ধী গনের শিক্ষার কথা উল্লে¬খ করে বলা হয়- ১. বিশেষ ধরণের প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দান, তাহাদের জন্য বিশেষ পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং ক্ষেত্রমত বিশেষ পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর ব্যবস্থা করা। ২. অনধিক আঠার বৎসর বয়স্ক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টিসহ তাহাদিগকে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। ৩. সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহিত একই শ্রেণীকক্ষে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।

৪. প্রতিবন্ধীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কর্মসূচী গ্রহণ করা। ৫. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক বা অন্যান্য কর্মীকে প্রশিক্ষণ দানের কর্মসূচী গ্রহণ করা। ৬. প্রতিবন্ধীদের জীবন ধারা এবং সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজ পরিচিতি বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে যথাযথ প্রবন্ধ ও আনুষংগিক বিষয়াদি সংযোজনের ব্যবস্থা করা। ৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য সহায়ক ব্যবস্থা করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী- ২ (পিইডিপি- ২) এর আওতায় সকল প্রতিবন্ধী শিশুকে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভূক্ত করানোর বিষয়ে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতীসংঘ কর্তৃক প্রণিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদের ২৪নং ধারাতে : শিক্ষার অধিকারের কথা উল্লেখ করে স্পষ্টত বলা হচ্ছে- ২৪ নম্বর ধারা : শিক্ষার অধিকার প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরই শিক্ষা লাভ করার অধিকার আছে। এই অধিকার সার্থকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার একীভূত শিক্ষা চালু করবে। একীভূত শিক্ষা হলো এমন এক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরা একসাথে লেখাপড়া করে। এছাড়াও সরকার জীবনব্যাপী শিক্ষার ব্যবস্থা করবে, যেখানে প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যে কোন বয়সেই শিক্ষা লাভ করতে পারবে। দেশে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে ; - যে শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হবে মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির যতরকম ও যতটুকু প্রতিভা, মেধা ও সামর্থ্য আছে তা যেন পুরোপুরি বিকশিত হতে পারে, তা সে প্রতিবন্ধী হোক আর না হোক এবং - যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধী, অন্য ধর্মের, অন্য ভাষাসহ সকল মানুষকে শ্রদ্ধা ও সন্মান জানাতে শেখে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার যা যা নিশ্চিত করবে তা হলো: - যে কোন স্কুলে ভর্তি হওয়া বা পড়ালেখার জন্য প্রতিবন্ধী হওয়াটা যেন বাধা না হয়। - আর দশজন অপ্রতিবন্ধী শিশু যে স্কুলে লেখাপড়া করে প্রতিবন্ধী শিশুরাও সেই স্কুলে একইসাথে লেখাপড়া করবে। - প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তির জন্য যে সমস্ত বিশেষ সুবিধা, সহযোগিতা ও পরিবেশ লাগবে সব সাধারন স্কুলেই তার ব্যবস্থা থাকবে। - দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সকল সাধারণ স্কুলে ব্রেইল পদ্ধতি শেখার ব্যবস্থা রাখা হবে এবং আর এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থাকবে। - ইশারা ভাষায় কথা বলা শিশুদের জন্য সকল সাধারণ স্কুলে ইশারা ভাষা শেখার ব্যবস্থা রাখা হবে এবং আর এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থাকবে।

- শ্রবণ দৃষ্টি দুই ধরনের বাঁধাই একসাথে আছে এমন প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সকল সাধারন স্কুলে টেকটাইল বা স্পর্শ ভাষায় যোগাযোগের কায়দা শেখানোর ব্যবস্থা রাখা হবে ও এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থাকবে। - সকল স্কুলেই প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চলাচলের দক্ষতা ও জীবন যাপনের দক্ষতা শেখানো ব্যবস্থা থাকবে। - শুধু স্কুল নয়; কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই প্রতিবন্ধী শিক্ষর্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা থাকবে। এ সনদ এখন আর পরদেশী অতিথি নয়। বর্তমানে এটিকে বাংলাদেশ সরকার এই দেশে বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধ পরিকর।

অতএব আপনারা অভিভাবকরা যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হন তবে আপনার শিশু কখনোই সমাজের মূল স্রোতধারায় আসতে পারবে না। আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষার স্কুলের কথা না ভেবে সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করার পরিবেশ তৈরী করার মাধ্যমে অভিভাবকসহ সমাজের সর্বস্তরে মানসিক বিকাশ তরান্বিত করতে হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.