আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুয়াশায় হারানো বালক বালিকা!

আমি জানিনা কোন সুখের গল্প, কোন ভালোবাসার গল্প!

এসএমএস। বাবলস এর। টিনটিন চোখ খুলে একবার দেখেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সে স্বপ্ন দেখছিলো... আবারো সেই স্বপ্নে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে, স্বপ্নে ফিরেই বুঝতে পারে আসলে সে দুঃস্বপ্ন দেখছিলো। “শিট!” ঘুমের মধ্যেই বিরবির করে টিনটিন।

বাবলস ঘুম থেকে উঠেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। ঘন কুয়াশা! OMG! শীত পড়লো এতোদিনে! সে খুশীতে লাফাতে থাকে। লাফাতে লাফাতেই এসএমএস দেয় টিনটিনকে। তাই একটা বানান ভুলও হয়... “Joldi ghum theke oth, chorom ekta din shuru hoise! Sheet porse! Amra ajke shara din ghurbo! Eto shundor ekta shokal kichutei ghulaye* noshto kora jabe na…” বাবলসকে শীতের ভূতে ধরে। সে আচ্ছন্নের মতো ঘরের মধ্যেই ঘুরতে থাকে, কিছুটা নাচের ভঙ্গিতে, কিছুটা ঘোর লাগা অবস্থায়।

হঠাৎ ই তার মনে পড়ে, গতরাতে টিনটিনের সাথে তার ঝগড়া হয়েছিলো। টিনটিনকে সে অনেকক্ষন ধরে বুঝাচ্ছিলো কিভাবে এস্ট্রোলোজিক্যাল সাইন মানুষের ক্যারেক্টারিস্টিকস ডিফাইন করে। টিনটিন খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলো। মাঝে মাঝে সে এটা সেটা জানতেও চাচ্ছিলো। তাই বাবলস বিপুল উৎসাহিত হয়ে হড়বড় করে বলেই যাচ্ছিলো... “স্করপিও রা দেখবি সব সময় অনেক বেশি শর্ট টেম্পার্ড হয়...” : আর লিওরা কেমন হয়? : লিওরা অনেক জোশ হয়! সবচে’ বেস্ট! : তুই কোন রাশি? লিও না? : হুমমম, ইয়ে হুম, আমি তো লিও... : আর তোর ধারনা তুই জোশ? : এর মধ্যে ধারনার কি আছে? আমি তো জোশই! : ও! : ও মানে? ও মানে কি? : ও মানে ও! এই আধা ঘন্টা ধরে তুই আমাকে যেই বাল ছাল বুঝাইলি তার সামারী হচ্ছে তুই জোশ! এইটার জন্য ‘ও’ র চেয়ে ভালো রিএকশান দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব না! : বাল ছাল মানে? তুই বলতেসিশ তুই তোর রাশির মতো না? তোর রাশির যে কয়জনকে আমি চিনি সব কয়টা ফালতু! এতো ফালতু আমি আর জীবনেও দেখি নাই... ... এবং আরো আধা ঘন্টা কে কতটা ফালতু সেইটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হওয়ার পর দুইজন একই স্বিদ্ধান্তে পৌছায় যে, তারা আর জীবনেও কেও কারো কথাও শুনতে চায় না, দেখা হওয়া তো দিল্লি বহু দূর... এই কথা মনে পড়ার সাথে সাথে বাবলস বলে ওঠে, “শিট!” আর ঠিক তখনই ঘুম অথবা দুঃস্বপ্ন ভেঙ্গে উঠে পড়ে টিনটিন।

এরকম কখনো হয়নি টিনটিনের। বাবলস প্রায়ই মাঝরাতে, বা ভোরের দিকে কাঁদতে কাঁদতে ফোন দেয়, সে নাকি খুব ভয়ের স্বপ্ন দেখেছে। তারপর সে সেই স্বপ্নের বর্ণনা দিতে থাকে, যা শুনে টিনটিনের একই সাথে বিরক্তি লাগা শুরু হয়, হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেজাজ খিঁচড়ে থাকে, হাই উঠতে থাকে, এবং পুরা স্বপ্নের কাহিনী শোনার পর দম ফেটে হাসি আসতে থাকে। একই সাথে এতোরকম অনুভূতি যে একটা মানুষের মধ্যে কাজ করতে পারে, বাবলসের সাথে পরিচয় না হলে টিনটিন জীবনেও জানতো না! এতোদিন ও মনে করতো বাবলস অযথাই ভয় পায়, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে... বাবলসকে একটা ফোন করা উচিৎ! আর কিছু মাথায় খেলে না, সে ফোন হাতে নিয়ে বাবলসের নাম্বারে কল দেয়... বাবলস দেখে টিনটিনের ফোন কল। সে ফোন ধরে না, ফোনটা তুলে একটা আছাড় দিয়ে অফ করে দেয়।

নিশ্চয়ই টিনটিন এসএমএস দেখে ফোন করেছে। সে চায় না টিনটিনের সাথে দেখা করতে, সে কিচ্ছু চায় না... জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, এখনো কুয়াশা, সূর্যের মৃদু আলো, কিন্তু কমলা গোল বৃত্তটাকে দেখা যাচ্ছে না। না যাক। তার আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আজকের দিনটা এমনো কোন স্পেশাল না... বাবলসের ফোনে বিজি টোন আসে।

সে আবারো কল করে, “... cannot be reached…” সে বিছানা থেকে উঠে বসে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়... OMG! শীত পড়লো এতোদিনে! টিনটিন জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। আজকের দিনটা এতো সুন্দর আর সে ঘুমিয়ে নষ্ট করছিলো! আজকের দিনটা কিছুতেই ঘরে থাকার দিন না! বাবলস ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসে... ও নিশ্চয়ই খুব খুশী হবে এই অদ্ভুত ঘোর লাগা কুয়াশায় ঘুরে বেড়াতে! আবারো ফোন করে বাবলসকে... “... cannot be reached…” অনেক চিন্তা করে দেখলো টিনটিন, আজকের দিনটা ঝগড়া করে নষ্ট করার মতো না একেবারেই! বাবলস অনেক রেগে আছে, রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক কারন সে একটু আগেই বাবলসের একটা এসএমএস আবিষ্কার করেছে ঘুমের মধ্যে যেটার কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো। তাও চার ঘন্টা আগে এই এসএমএস এসেছে...!! বাবলসের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে টিনটিন...... “বাবলস আপা বাসায় নাই, ইকটু আগেই বাইর হয়া গেলো। ” বাবলসদের দারোয়ান জানায়।

টিনটিন আর উপরে ওঠে না। গেইট থেকেই ফিরে যায়। ধুর! এখন মেজাজটা আরো খারাপ হতে থাকে। নিশ্চয়ই বাবলস ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কোথাও ঘুরতে বের হয়েছে। আর সে ভেবে বসে আছে বাবলস তার জন্য মন খারাপ করে ঘরে বসে কান্নাকাটি করছে! টিনটিন আবারো ফোন করে বাবলসকে (শেষবারের মতো)... “... cannot be reached at this moment… ” ধুউউউৎ!! ওর আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো, এরকম একটা দিনে বাবলসের মতো উড়নচন্ডী মেয়ে জীবনেও ঘরে বসে থাকবে না... ভীষন, ভীষন রাগ উঠতে থাকে বাবলসের উপর!! অনেকক্ষন রাস্তায় ঘুর ঘুর করে টিনটিন, একগাদা সিগারেট পোঁড়ায়, কিছুতেই কিছু হয় না, রাগ বাড়তেই থাকে।

“I hate u bitch!” বাসায় ফিরে ঘুমানো প্ল্যান করে টিনটিন। আজকের দিনটা বোধহয় ঘুমানোর জন্যই পারফেক্ট! রিকশায় বসে আরেকটা সিগারেট ধরায় টিনটিন। ভাবতে থাকে... আজকেই শেষ। আর না, বাবলসের প্যানা সে আর নিতে পারবে না... সব শেষ। প্রেমের খ্যাতা পুড়ি, বালের প্রেম... পাশের রিকশায় দুই কিশোরী নিজেরাই কি বলে যেন হাসতে থাকে, দুপুরের কুয়াশায় সেই হাসি মিষ্টি রোদের মতো লাগে... ধুর দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব নাকি যে বাবলস প্যানাটার সাথেই থাকতে হবে?? উলটা দিক থেকে আসতে থাকে একটা রিকশায় আরেকটা মেয়েকে দেখে টিনটিন।

কিন্তু এই মেয়েটার হাসি নাই, উলটা মনে হচ্ছে কাঁদছে। গায়ের শাল দিয়ে চোখ মুছলো মনে হচ্ছে... “আরে! এইটা তো বাবলস!! এই বাবলস......” বাবলস অবাক আর ভেজা চোখে কুয়াশার মধ্যে দেখে উলটা দিক থেকে আসা রিকশায় টিনটিন বসে বাবলস- বাবলস করে চিৎকার করছে সবগুলা দাঁত বের করে। ওর হাসি দেখে বাবলসের আরো কান্না পেয়ে যায়! সে ফোন ভাঙ্গার পর হঠাৎ ই তার মনে হয়, কেন সে টিনটিনের ফোনটা ধরলো না? টিনটিনের আগের ফোনটা গত সপ্তাহে হাইজ্যাক হওয়ার পর সে নতুন নাম্বার নিয়েছে। সেই নাম্বার বাবলসের মোবাইলে সেইভ করা, কিন্তু ফোনের ডিসপ্লেই তো নষ্ট হয়ে গেছে! বাবলসের অস্থির লাগা শুরু হয়। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরতে থাকে, টিনটিনের সাথে দেখা করতে হবে!! টিনটিনের বাসায় যাওয়ার পর জানতে পারে সে বাসায় নাই! টিনটিন কুত্তাটা বাবলসের এসএমএসের রিপ্লাই দিতে পারে না, অথচ বাইরে ঘুরতে বের হতে পারে? নিশ্চয়ই ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছে! বাবলস টলোমলো পায়ে নিচে নেমে আসে।

কিভাবে যে রিকশা ঠিক করে, আর রিকশায় ওঠে নিজেও বুঝতে পারে না। রিকশায় উঠেই সে আর নিজেকে সামলাতে পারে না... তার চারপাশ ভয়াবহভাবে ঝাপসা হয়ে আসে! বাবলস আর টিনটিন। মুখোমুখি দাঁড়ানো। টিনটিনের মুখ হাসি হাসি। বাবলস অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

ওর এখনো কান্না পাচ্ছে। আবার কেমন ভালোও লাগছে... কিন্তু সে টিনটিনকে সেটা বুঝাতে চাচ্ছে না... : কি? (টিনটিন আর কিছু এরচেয়ে পারফেক্ট আর কিছু খুঁজে পায় না বলার মতো!) : কি? (বাবলসেরও একই অবস্থা!) : এতো ঢং করলি কেন? : তুই কেন ঢং করলি? : এখন শিক্ষা হইসে না ঢং করার? শিক্ষা পাইসিশ না? আর ঢং করবি? : না, শিক্ষা হয় নাই, আরো ঢং করবো! : কর, ঢং কর, আমার কি? নিজেই রাস্তা ঘাটে কান্দা কাটি করে বেড়াবি... : কি? আমি রাস্তা ঘাটে কান্দা কাটি করে বেড়াই? যা তুই যা আমার সামনে থেকে। আর কোন দিন যদি... (বাবলসের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে টিনটিন) : শাট আপ বিচ, আর একটা কথাও বলবি না... আজকে সারাটা দিন আমাকে কি পরিমান প্যানা দিসিশ জানিস তুই? তারপরেও আমার তোর উপর রাগ উঠতেসে না! আমার রাগ উঠতেসে আমার উপর এইটা চিন্তা করে যে, why do I still love you? তোকে দেখে আমার ভালো লাগতেসে কেন এইতা ভেবে আমার রাগ উঠতেসে!! : ... আর কিচ্ছু বলিস না, প্লিজ! আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না, রাস্তা ঘাটে কান্দা কাটি শুরু করে দিবো! : হইসে, আর ঢং করতে হবে না! একটু পাম দিসি আর উনি মাথায় উঠে গেসে! : I hate u, dog! : I hate u too!! এরপরের দৃশ্য সেই পুরানো... দুইজন হাত ধরে পাশা পাশি হাঁটতে থাকে। শহরের কুয়াশা তাদেরকে অনেক মমতা দিয়ে ঘিরে রাখে... এই কুয়াশাই যে তাদেরকে কাছে এনেছে..


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।