আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি নীরব আত্মহনন



একটি নীরব আত্মহন মনিজা আজ অনেক দূরে। ঐ দূর আকাশের লক্ষ কোটি তারার মধ্যে শিহাব আর ফারুক খুঁজে ফেরে মনিজাকে। শিহাব অপলার স্বামী, আর ফারুকরে সাথে মনিজার সম্পর্ক সেই ছেলেবেলা থেকে। শিহাবরে সাথে বিয়ের আগ পর্যন্ত সেই ছেলেবেলা থেকে কতো বেড়িয়েছে, তার হিসেব নেই। শিহাব আমার কাছের বন্ধু বিধায় আমার কাছে ওর সব কথা সব সময় আমার সাথে বলতো।

শিহাব প্রায়ই বলতো, বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো মেয়ে দেখেছি, মনিজার মতো এমন ওন্তর্মুখী মেয়ে কখনোই দেখিনি। এই মোবাইল আর কম্পিউটারের আধুনিক যুগেও মনিজা নিয়মিত চিঠি লিখতো শিহাবকে। শিহাবও তার জবাব দিতো প্রতিনিয়ত। এমনি করেই মনিজা আর শিহাবরে মধ্যে সম্পর্ক কখন যে গভীর হয়ে গেছে তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করেই মনিজার মা মেয়ের জন্য বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করেন।

বিয়ে ঠিক হয় হাফিজ নামের এক ছেলের সাথে। হাফিজ দেখতে সুন্দর, ভালো চাকুরে, সবদিক দিয়ে মনিজার যোগ্য একজন পাত্র। বিয়ের যখন সব ঠিকঠাক তখন মনিজা শিহাবকে চিঠিতে জানায় মায়ের জোড়াজুড়িতেই বিয়েটা করতে হচ্ছে, মায়ের খুশির জন্যে। শিহাবরে কাছে লেখা এটাই ছিলো মনিজার শেষ চিঠি। চিঠিতে মনিজা লিখেছিলো; ‘শিহাব, তোকে আমি ঠকাতে পারবো না’।

আর যার সাথে বিয়ে হচ্ছে মায়ের জোড়াজুড়িতে, সে-ও ঠকুক আমি তা কখনোই চাই না। তাই মাকে বার বার বলেছিলাম আমাকে যেনো বিয়ে না দেয়-তারপরেও বিয়েটা ঠেকিয়ে রাখতে পারলামনা"। শিহাব চিঠিতে এসব কথা লেখার অর্থ তখন ঠিক বুঝতে পারেনি। মনিজার বিয়ের ১ বছরের মাথায় যখন তার গর্ভে সন্তান আসে তখন থেকেই নানান অসুখ দেখা দিতে শুরু করে। স্বামী হাফিজ চিকিৎসা করাতে কোনো কার্পণ্য করেনি কখনোই।

বলে নেয়া দরকার, মনিজার বিয়ের পর শিহাবরে সাথে তার চিঠি আদান প্রদান না হলেও, শিহাব নিয়মিত তার খোঁজ রাখতো। মনিজার শরীর যখন বেশি খারাপ তখন হাফিজ তাকে ভর্তি করে ঢাকার একটি অভিজাত হাসপাতালে। ডাক্তার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাফিজকে একটাই কথা বলেছিলো, যে মেয়েটার এতো বড়ো অসুখ সে কেমন করে এতো শক্ত থেকেছে এতোদিন। তারিখটা ঠিক মনে নেই, মনিজার সুন্দর ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। প্রথম যেদিন মনিজা তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে গেলো, দুধের বদলে আসতে লাগলো রক্ত।

দ্রুত ডাক্তারকে খবর দেয়া হলো। ডাক্তার এসে হাফিজকে বাইরে ডেকে বলেছিলো, মনিজার আর দুই থেকে তিন দিন বাঁচতে পারে। ডাক্তার আরো বলেছিলো যে, একটা মেয়ের এতোদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সার, এটার কোন ট্রিটমেন্ট কেনো করান নি? হাফিজ নীরব, নিথর হয়ে শুনছিলো কথাগুলি। যাহোক, চিকিৎসকের দেয়া দু-তিন দিন সময়ের আগেই মনিজা মারা যায়। পরে জানতে পেরেছিলাম, বিয়ের অনেক আগে থেকেই মনিজার মা জানতো মনিজার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে।

কিন্ত মায়ের মনের সেই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে মনিজার শত নিষেধ স্বত্ত্বেও উপযুক্ত মেয়েকে উপযুক্ত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলো একটু সুখের আশায়। মা হিসেবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কর্তব্য করেছেন ঠিকই, কিন্তু এই কর্তব্য কী মনিজাকে স্বস্তি কিম্বা সুখ দিতে পেরেছে? পৃথিবীতে কী মনিজার মতো নারীরা এরকম ভুলের স্বীকার হয়েই দুঃখশোকে আত্মহননের পথ বেছে নেবে? আজ মনিজার স্বামী, মনিজার ফুটফুটে ছেলেটি, শিহাবরে মতো মানুষগুলো কী আকাশের তারার মাঝেই মনিজাকে খুঁজে ফিরবে আজীবন। পাঠকদের কাছে আমার আবেদন, মনিজার জন্য, তার ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য দোয়া করবেন। আর চাইনা মনিজার মতো কোনো নারীর এরকম নীরব আত্মহনন। আর চাই না এরকম সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসুক মনিজাদের জন্য এলেজি।

(পশোগত জীবনে দেখা একটি করুণ অভজ্ঞিতা পাঠকদরে সাথে শেয়ার নাকরে পারলামনা। লেখার সব চরিত্রই ছদ্দনাম)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.