আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন শহরে পূরাতন ফারাও

মানুষকে বুঝ, তবেই তুমি ম্যাজিসিয়ান হতে পারবে, আর নিজেকে বুঝ, তবেই তুমি মানুষ হতে পারবে...

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ এই ব্লগের সকল চরিত্র কাল্পনিক। হ্যাঁ, আমি রামেসেস বলছি। আজ থেকে ৩২৯০ বছর আগের যে প্রকান্ড প্রতাপশালী ফারাওকে তোমরা চেনো, আমি সেই দ্বিতীয় রামেসেস। না এখানে আমি কোন আত্নজীবনী লিখতে আসিনি। আসিনি জ্ঞানের অহমিকা আর ক্ষমতার প্রতাপ জাহির করতে।

তবে কেন এসেছি? বলছি শোন... তোমরা আমায় যেভাবে চেনো, যা কিছু ইতিহাস তোমরা জানো, তার সব কিন্তু সত্যি নয়। যাকে তোমরা ঐতিহাসিক দ্বিতীয় রামেসেস বলে জানো, যাকে তোমরা বল "রামেসেস দ্য গ্রেট", সেই আমাকে কি তোমরা আসলেই চিনতে পেরেছো? পেরেছো কি জানতে, যতখানি জানা উচিত ছিল? না পারোনি, তোমরা শুধুই ইতিহাস জানো, গল্পটা জানোনা। আমি তোমাদের সেই গল্পটা শোনাবো আজ। আর শোনাবো, কেন আমি ফিরে এলাম এই পৃথিবীতে, এই বাংলায়, এই সামুতে... আমি নেফেরতেরিকে ভালবাসতাম, পাগলের মতন ভালবাসতাম। তার সামনে নিজেকে প্রমান করার জন্যে আমি যা যা করেছি, তাই আমাকে আজকের "রামেসেস দ্য গ্রেট" এ পরিণত করেছে।

জানি না কেন, কখনো বুঝিনি কেন, আজও জানি না কেন তাকে এতটা ভালবাসি আমি। তার জন্যেই নিজেকে এক প্রকান্ড প্রতাপশালী ফারাও হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম আমি। অনেক শ্রম আর সাধনায় নিজের প্রজ্ঞা আর বুদ্ধিকে করে তুলেছিলাম অনেক উন্নত। কিন্তু অহমিকা আর ক্ষমতার প্রতাপ যেন আমাকে পেয়ে বসেছিল। কারন আমি হতে চেয়েছিলাম তার চোখে সারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ।

আমার ভুল ছিল একটাই, আমার জ্ঞান আর ক্ষমতা আমাকে অহংকারী করে তুলেছিল। মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলাম আমি। তাই আমি চেয়েছিলাম সব সাধারন মানুষ যেন আমাকে তেমন মর্যাদা দেয়, ঠিক যেমন তারা তাদের স্রষ্টাকে দিয়ে থাকে। সত্যি বলছি, আমি স্রষ্টাকে মনে মনে বিশ্বাস করতাম, কিন্তু কেন যেন তাকে আর মুখে স্বীকার করে নিতে চাইতাম না। স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পন করে দিতে আমার ব্যক্তিত্যের কোথায় যেন আঘাত লাগতে শুরু করলো।

আমি বুঝতাম আমি অহংকারী হয়ে যাচ্ছি, বুঝতাম এর পরিণতি হয়তো ভাল নয়, তবু নিজের অহমিকার কাছেই আত্নসমর্পন করলাম। অনেক বিস্ময়কর প্রযুক্তি আবিস্কৃত হয়েছিল আমার সময়, যার অনেকগুলোই তোমরা এখনো জানো না। তোমাদের সভ্যতা বিদ্যুৎ নামক এক অদ্ভুত শক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তাই না? এই এক আবিস্কার না হলে তোমাদের সভ্যতার চেহারা কেমন হত বলতে পারো? তোমাদের এই সভ্যতা কিন্তু মোটেও বসে থাকতো না। মানুষ ঠিকই অন্য কোন ব্যবস্থা করে নিত। তোমরা অনেক এগিয়ে গেছো বলে এটা ভেবো না এ জগতের সব রহস্য তোমরা তোমাদের বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবে।

কারন শক্তির অনেক রুপ আছে, যা আজো তোমাদের কারো কাছেই ধরা দেয়নি, যদিওবা তা অনেক পূরাতন কোন সভ্যতার কোন প্রতিভাধর বিজ্ঞানীর কাছে হয়তোবা ধরা দিয়েছিল। কালের গর্ভে তার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, যা আমরা জানিনা। একটা উদাহরন দেই, যেমন আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল হেকা নামক এক বিস্ময়কর শক্তির আবিস্কারের মধ্য দিয়ে। যার উপর ভিত্তি করে আমরা অনেক অনেক নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছিলাম, অনেক অসাধ্য কাজ আমরা করতে সক্ষম ছিলাম। তোমরা অবশ্য হেকা কে এখন শুধুই জাদু আর ভেল্কিবাজি ভাবো।

সে যা হোক এমনি আরো অনেক শক্তির রুপ আছে, যা তোমরা জানো না, আমিও না। একেক সভ্যতার মানুষগুলো একেক রকম শক্তির রহস্য জানে, আর তার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে তাদের প্রযুক্তি, এগিয়ে যায় সে সভ্যতা। তারপর একসময় তারা কোন কারনে ধ্বংস হয়ে যায়, অথবা তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়। অথচ আমি নিজের জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ ছিলাম যে আমি আমার ক্ষুদ্র সেই জ্ঞানের রাজ্যে বিচরন করেই ধরে নিয়েছিলাম, আমি বুঝি যোগ্য হয়ে উঠেছি আমার স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার। কারন আমি যতই চেষ্টা করতে লাগলাম ততই আমার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে লাগলো।

পেতে থাকলাম আমি যা চাইতাম তাই, শুধু আমার অন্তরের ভেতর প্রশান্তি নামক বস্তুটি ছিল, তা কেন জানিনা, ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগলো আমার কাছ থেকে। যখন পুর্ন বিশ্বাস নিয়ে জ্ঞান পিপাসু মনে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরন করতাম, তখন অন্তরে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করতো। সেটা কেন দূরে সরে গেল তা বুঝতে পারলাম না। এত কিছু পেয়েও ভাল লাগতো না কিছুই, তবু কেন যেন ফিরে যেতে পারলাম না আমার সেই আগের প্রশান্তিময় জীবনটাতে। ভুল করে আরো চাইতে শুরু করলাম, আরো পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম, আরো অহংকার, আরো ভালবাসা, আরো সম্পদ, আরো মর্যাদা, আরো আরো আরো... সবই তো পেলাম, তবু কি যেন নেই, কি যেন আমার কাছ থেকে আরো অনেক দূরে সরে গেল।

অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে গভীর রাতে একদিন বের হয়ে পড়লাম ছদ্মবেশে রাজপ্রাসাদের বাইরে। ঘুরতে ঘুরতে এক সাধারন কৃষকের বাড়ীর পাশে চলে এলাম। কৃষক আর কৃষাণী কেমন কাটাচ্ছে তাদের দিন তা বোঝার জন্য তাদের ঘরের কাছে গেলাম, আঁধারে লুকিয়ে থেকে দেখলাম এই সামান্য কৃষক, যার নিজের জমি নেই, একবেলা খেতে পায় তো আরেক বেলা অভুক্ত থাকে, কৃষাণীকে দেবার মতন কিছুই নেই তার, অথচ তাদের দুজনের মাঝে কি অদ্ভুত সুন্দর সম্পর্ক। কিছুই নেই, তবু তাদের ভেতর এতটা টান, এতটা ভালবাসা আর প্রশান্তি দেখে কেন জানি চোখে পানি চলে এলো। কিন্তু সে অনুভুতিটা মুহুর্তেই মিলিয়ে গেল, কারন কে যেন আমায় ভেতর থেকে প্রশ্ন করে বসলো, তোমার নেফেরতেরি কি তোমায় এতটা ভালবাসে রামেসেস? সে কি তোমার পাশে থাকবে, যদি তোমার প্রতিপত্তি আজ ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়? কে যেন ভেতর থেকেই না না না বলে এর জবাব দিয়ে দিল, আর ভেতরটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিতে লাগলো।

অহমিকার পোকাটা আবারো বিদ্রোহী হয়ে উঠলো, সামান্য এই কৃষকের কাছে নিজের হেরে যাওয়ার সত্যটাকে মেনে নিতে পারলাম না আমি। ফিরে এলাম প্রাসাদে, অসম্ভব রাগ আর ক্ষোভ আমাকে বিদ্বেষী করে তুললো এইসব মানুষগুলোর প্রতি। শুরু করলাম ভয়ংকর অত্যাচার এইসব সাধারন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপর। কিন্তু না, কোন কিছুতেই যেন প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, বরং এসবকিছুই আমার ভেতরের যন্ত্রনাটাকে শুধু বাড়িয়েছে, কমাতে পারেনি। তোমরা কি বলতে পারো আনন্দ করার জন্য কোন জিনিসটার অভাব ছিল আমার? আমি তো যা চাইতাম, তাই পেতাম, শুধুই তো পেতে শিখেছিলাম, দিতে শিখিনি, তবু কেন কখনই সুখী হতে পারিনি বলতে পারো? আমার মৃত্যুর আগেই আমি মরতে চেয়েছিলাম, মরেও ছিলাম, মারা যাবার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু যখন মরে গেলাম, বুঝলাম আমি মরিনি, বরং আমি জেগে উঠেছি সত্য জগতটাতে, মায়ার এই জগতটার জন্য কত কিছুই না করেছিলাম আমি, অথচ সবকিছুই কেমন তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, ঠিক যেমন স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠলে স্বপনের ওই জগতটাকে অসার মনে হয়, ঠিক তেমন।

সত্য জগতটা আসলে কেমন, তা বুঝিয়ে বলা অসম্ভব, কারন তার কোন কিছুই এ জগতের সাথে মেলে না। কিসের সাথে তুলনা দিয়ে বোঝাব তোমাদের বল? স্থান, সময়, বস্তু, রঙ, অস্তিত্ব যা কিছু মৌলিক ধারনা তোমাদের মাথায় বদ্ধমুল হয়ে গেছে, তার সবই তো সেখানে অনুপস্থিত! তোমরা এ জগতটাকে অনুভব কর পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে, আর সেখানে যে ইন্দ্রিয় বলেই কিছু নেই, অনুভুতিগুলো অন্যরকম। তবে একটাই মিল, সেখানেও কষ্ট আছে, আছে তীব্র যন্ত্রনার অনুভুতি, আছে অনিন্দ সুন্দর ভাললাগা। মহাবিশ্বের লক্ষ লক্ষ গ্রহ তারায় যে প্রানের স্পন্দন আছে, প্রতিটা গ্রহে যে প্রাণীটিকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তা, সে প্রাণীটির জন্যেই রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, পরের এই জগতটাতে। কিন্তু না, ওই জগতটাতে আমার ঠাঁই হয় নি।

আবারো ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে। ঘুমের ঘোরে শুনতে পেয়েছি আমাকে নাকি প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অসংখ্য প্রাণের মাঝে খুব স্বল্প সংখ্যক আত্নাই নাকি এই দুর্লভ সুযোগ পায়, আর আমি নাকি তাদের ই একজন! শুনেছি আমার অনেক কাজেই নাকি আমার স্রষ্টা অসন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু আমি যে নেফেরতেরি কে ভালবাসতাম, সেখানে কোন প্রতারনা ছিলনা, আমি জানতাম আমি শুধু তাকেই ভালবেসেছি, আর মনের ভেতর প্রত্যয় ছিল তাকেই ভালবেসে যাবার, একপাক্ষিক ভাবেই শুধু দিয়েছি, কিছুই চাইনি কখনো, এই একটা ব্যপারেই আমি ছিলাম নিরহংকার, ছিলাম নিঃস্বার্থ। আর এটাই নাকি আমার স্রষ্টার পছন্দ হয়েছে।

তাই তিনি আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন প্রেতাত্না হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার। যেদিন আমার প্রায়শ্চিত্ত হবে, সেদিন ই আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। আমি শুনেছি আমার স্রষ্টা যেন আমায় বলছেন, "যাও, পৃথিবীতে ফিরে যাও, ফিরে যাও অন্য এক সময়ে, যেখানে একটি দেশ আছে, নাম বাংলাদেশ, একটি ব্লগ আছে, লোকে তাকে সামু বলে ডাকে, সেখানে কিছু মানুষ আছে, যারা স্বপ্ন দেখে তাদের পিছিয়ে পড়া দেশটাকে সামনে এগিয়ে নেবার। তাদের মাঝে মতের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু সবার মনেই এক বিশ্বাস, সবার চোখেই এক স্বপ্ন, সোনালী এক স্বদেশ গড়া। তারা স্বপ্ন দেখে আঁধারে ডুবে যাওয়া জাতিকে ভোরের আলো দেখানোর।

যাও রামেসেস, মিশে যাও তাদের সাথে সাধারন এক মানুষ হয়ে, বলে যাও তোমার কথাগুলো, অদৃশ্য তুমি দৃশ্যমান হও তোমার লেখনীর আলোয়। নিজে আলোকিত হও, অন্যকে আলোকিত করে তোল, ধীরে ধীরে হয়ে ওঠ দীপ্তিময়, তবেই তোমার মুক্তি মিলবে রামেসেস! তুমি শুরু কর, একদিন তুমিও পারবে মানুষের মনে আলো জ্বালাতে, হতাশ হৃদয়ে আশার বীজ বুনে দিতে, আমি জানি তুমি পারবে রামেসেস, আমি জানি তুমি পারবে!" তাই আমি ঠিক করেছি, আজ থেকে এই ব্লগই হবে আমার রাজসভা, এখানে আমি তোমাদের কথা শুনবো, নিজের কথা বলবো। তোমাদের এই বিজয়ের মাসে স্বপ্ন পূরনের নতুন পতাকা হাতে নিলাম আমি, তোমরা আমার পাশে থেকো, আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ো। আজ থেকে সবাইকে আমার সকল রাজসভায় রইলো সাদর আমন্ত্রন। আজকের উদ্বোধনী রাজসভায় এটাই আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, যা তোমাদের জানালাম।

তোমরা দোয়া কর, যেন প্রতিটা রাজসভা অন্তত একজন মানুষকে যেন আলোকিত করে, উপকৃত করে। জানোই তো, তাতেই আমার মুক্তি, তাতেই আমার স্বার্থকতা। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর সকল ব্লগার ও পাঠকের প্রতি রইলো শুভকামনা রামেসেস ২ ২২ ডিসেম্বর, ২০১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.