আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘অপহরণ নাটকে’ পুড়লো তাইন্দং

ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান বলেন, “সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্যই একটি চক্র বাঙালি মোটর সাইকেল চালক মো. কামালউদ্দীনকে অপহরণের নাটক সাজায়। এ ঘটনায় দায়ীদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ”
এলাকার ভুক্তভোগীরাও এ ঘটনাকে ‘শুধু অপহরণ’ বলে মেনে নিতে নারাজ।
পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। তারা যে তথ্য ও আলামত পেয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিজিবি।


শনিবার বেলা ১২টার দিকে ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেলচালক কামাল তাইন্দংয়ের বান্দরসিং এলাকা থেকে ‘অপহৃত’ হন খবরে স্থানীয় বাঙালি অধিবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
তাইন্দং এলাকাটি বাঙালি অধ্যুষিত। এখানের বাসিন্দাদের প্রায় ৮০ ভাগই বাঙালি।
এরই এক পর্যায়ে তাইন্দংয়ের বান্দরশিং পাড়া, বগা পাড়া, মনুদাস পাড়া, সর্বস্ব পাড়া ও লাকু হেডম্যান পাড়ায় চাকমা ও ত্রিপুরাদের ছয়টি গ্রামের প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়।
পরে তাইন্দংয়ের নোয়াপাড়া এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চালক কামালকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।


এদিকে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েকশ’ পাহাড়ি পরিবার আতঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আশ্রয় নেয়। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা বাড়ি ফেরেন।
সোমবার দুপুরে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনিল চাকমা বাদী হয়ে মাটিরাঙা থানায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ১৭৫  জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওই মামলার এক নম্বর আসামি কামালকে সোমবার রাতে মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ওই রাতেই এজাহারভুক্ত আসামি মনির হোসেন, আমির হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।


ঘটনার সন্দেহভাজন হিসাবে রোববার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয় আবেদ আলী মেম্বার, আবু হানিফ মেম্বার ও কামরুজ্জামানকে।
সোমবার মাটিরাঙা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কামালের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি নিজেকে খুবই ‘ক্লান্ত ও অসুস্থ’ দাবি করে খুবই নিচু স্বরে ধীরে ধীরে কথা বলেন।
অপহরণ সম্পর্কে কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার সকাল ১১টার দিকে এক নারী যাত্রীকে নিয়ে ভগবান টিলা থেকে ফেরার পথে বান্দরশিং এলাকায় অপরিচিত দুই যুবক তার মোটরসাইকেলে ওঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তায় আরো ১৪/১৫ জন পাহাড়ি যুবক তাদের গতিরোধ করে।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে যুবকরা তাকে ধরে ফেলে এবং চোখ বেঁধে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়।

তবে কামালকে মারধর করা হয়নি বা মুক্তিপণও চাওয়া হয়নি, যা পার্বত্য এলাকায় এর আগের অপহরণের ঘটনাগুলোর সময় ঘটেছিল।
 
কামাল বলেন, “যখন পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার খবর আসে তখন অপহরণকারীরা ছেড়ে দেয় এবং মোবাইল ফোনে নিকটজনদের জানাতে বলে যে, আমাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, যেন পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া বন্ধ করা হয়। ”
গত শনিবার মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বটতলী ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক কামালকে ‘উপজাতি সন্ত্রাসীরা’ অপহরণ করেছে।
তবে পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান বলেন, দুর্বৃত্তরা এখানে রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না।


মাটিরাঙ্গা থানার ওসি মাঈন উদ্দীন বলেন, “কামালের মোবাইল কললিস্ট ধরেই এ ঘটনার নেপথ্য নায়ক এবং সরাসরি অংশ নেয়া দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে। ”
বিজিবি জামিনিপাড়া জোনের কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন শোয়েব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তাণ্ডবের ব্যাপারে বলেন, “পুলিশ সরাসরি ঘটনাটি তদন্ত করছে। তারা কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে এবং সেখানে আসলে কী ঘটেছে, তাও জানতে পারছে। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসা ঘটনা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। ”
বিজিবি ঘটনাস্থলে শুধু আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জানিয়ে এ বিজিবি কমান্ডার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


মনুদাশ পাড়া গ্রামের তয়ন শশী চাকমা (৭৩), সর্বেস্বর পাড়ার বীর বাহু চাকমা (৬০) জানান, দুপুর থেকেই পাহাড়ের বিভিন্ন বসতিতে হামলা শুরু হয়। এ হামলা চলে বিকাল প্রায় ৫টা পর্যন্ত। এ সময় গ্রামে কোনো লোক ছিল না। সবাই ভয়ে পালিয়ে যায়।
ফিরেছে পাহাড়িরা, তবে ত্রাণ নেই
তাইন্দং ১ নম্বর ইউপি সদস্য ফনীভূষণ চাকমা জানিয়েছেন, পালিয়ে সীমান্তে ও জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া ৫৮৭ পরিবারের সবাই ফিরেছেন।

তবে তাদের সমস্যার অন্ত নেই।
 
আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে অনেক পাহাড়ির ঘরবাড়ি। তারা এখনো খোলা আকাশের নিচে। হাড়ি-পাতিলের অভাবে অনেকে রান্না করতে পারছেন না বলে জানান বগাপাড়ার মুদি দোকানদার গোপাল চাকমা।
সর্বেস্বর পাড়ার আশারানী চাকমা জানান, বাপ-দাদাদের অর্জিত আর কিছুই থাকলো না।

ঘরের কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র কিছুই রেখে যায়নি দুর্বৃত্তরা।
সকলেই ত্রাণ স্বল্পতার অভিযোগ করেন।
জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রশাসন সব কিছুই করবে। প্রাথমিকভাবে ৩ টন খাদ্যশস্য, নগদ আড়াই লাখ টাকা ও শুকনো খাবার সহায়তা দেয়া হয়েছে।
চূড়ান্ত তালিকা পেয়ে আরো ত্রাণ সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।