আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেলে হাম জি জান সে..

জানতে চাই_জানতে চাই এবং জানতে চাই

স্বাধীনভাবে চলতে কার না ভালো লাগে.. সে স্বাধীনতা’র গতিকে যদি কেউ রোধ করে তবে তা সহজে মেনে নেয়া যায় কি? না। যায় না। তাই মানুষ সবসময়ই পরাধীনতার শেকল ভাঙতে প্রস্তুত। আর বাঙালির রক্ত একটু বেশিই গরম। তবে প্রতিটি যুদ্ধের জয় হয় না; সে যুদ্ধগুলো পথ দেখায় আগামী যুদ্ধ জয়ের।

মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন তেমনই পথ দেখানো একজন মানুষ। মানিনী চ্যাটার্জী’র উপন্যাস ‘ডু অ্যান্ড ডাই’ অবলম্বনে আশুতোষ গোয়ারিকার তৈরি করলেন পথ দেখানো সেই যোদ্ধাকে নিয়ে ‘খেলে হাম জি জান সে’ চলচিত্রটি.. ফুটবল খেলার দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়ে বিমান দেখানোটা মাথার উপর ইংরেজ শাসনেরই প্রতীক হিসেবে ধরে নেয়া যায়। তারপরই ঘটে সেনাদের আগমন এবং সেখান থেকে খেলা বিদায়। যে পরাধীনতা বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। আলোচনা করে শুরু করে আবার কিভাবে মাঠ ফিরে পাওয়ার যায় বিষয়ে।

বেরিয়ে পরে আলোচনা থেকে উঠে আসা মাস্টারদা সূর্য সেনকে খুঁজতে। একটা সময় পেয়েও যায় মাস্টারদাকে। তার আগে দেখানো হয় সূর্য সেন কিভাবে ছাত্রদের উজ্জ্বীবিত করত। মাস্টারদাকে তারা সব ঘটনা বললে সে তাদের জন্য কিছু করা ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু মাস্টারদার সহযোগী তার এ বিষয়টিকে স্বাভাবিকেভাবে নিতে পারে নি।

পরে আলোচনার মাধ্যমে মাস্টারদা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। ছাত্রদের স্বাক্ষাৎকার নিয়ে বাছাই করা হয়; প্রায় সব‍াই পাশ করে যায়। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরই তারা বিপ্লবী সুরে ব্যক্ত করে। .. মরতে চাই না, মরলে স্বাধীনতা দেখবো কি করে.. শুরু হয় প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনি থেকে উঠে আসা ছাত্রদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার যে ছন্দপতন ঘটে, তার চিত্রায়ন একথায় চমৎকার।

সে সময়ে নারীদের বিপ্লবী দলে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টারদা কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাকে দলে নিয়ে আধুনীক মানসিকতার যে পরিচয় দিয়েছেন তা চলচিত্রটিতে ভালোবাসার প্রতীক করে নিয়ে আসা হয়েছে। যা আলোচনা, সমালোচনার দাবি রাখে। মাস্টারদার পরিকল্পনা অনুসারে সবাই অর্থ জমা করা শুরু করে। দুই টাকা থেকে গহণা যার যেটুকু সামর্থ তা দিয়েই সাহায্য করতে থাকে।

কল্পনা ও প্রীতিলতা ঝাড়ুদার হয়ে অস্ত্রাগারের নকশা বের করে আনে। এভাবে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে শুরু হয় মূল কাজ। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান নির্বাচন করে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় গোটা দলকে। প্রতিটি দলে একজন করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হলো। রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়লো দল।

টেলিগ্রাম ও রেল যোগাযোগ সফলভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেও বিপত্তি ঘটে অস্ত্রাগারে। মূল নকশা মতো অস্ত্র পাওয়া গেলেও বারুদ মেলেনি। পুলিশের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধও করতে হয়। এক ছাত্র পুড়ে যায়। পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েও আধুনিক অস্ত্রের মুখে অধিকাংশ যোদ্ধার মৃত্যু সমস্ত পরিকল্পনাকেই ভন্ডুল করে দেয়।

তারা পিছু হটে যায়। মাস্টারদা যে বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন সেখানে হামলা হলে সহযোদ্ধা গণেষ ঘোষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এখানে প্রীতিলতার ভালোবাসার টান কি শুধু চলচিত্রের প্রয়োজনেই কিনা এ বিষয়ে ভাবতে হবে। তবে বাড়ির মাহিলা ও শিশু দুটির স্বাভাবিকত্ব যথেষ্ট আলোচনার দাবি রাখে। প্রীতিলতার ইংরেজদের অনুষ্ঠানে হামলার পর বিষাক্ত পদার্থ খেয়ে মৃত্যুর দৃশ্যটির প্রয়োজনীয়তা একটু গোলমেলে মনে হয়েছে।

শেষদিকে চার ছাত্রের আত্মহত্যা হৃদয়বিদারক.. মাস্টারদার গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ডের মধ্যদিয়ে তাদের পরিকল্পনার পরিসমাপ্তি ঘটে। তার উপর নির্যাতন অবাককরার মতো, ইংরেজরা কিভাবে মানুষকে দমন করতে চেয়েছিল তার স্বাক্ষর রাখে। সেই ইংরেজরাই আজ নিজেদের মানবিক দাবি করে; হাস্যকর। মাস্টারদার চরিত্রে বেশ ভালোই অভিনয় করেছে অভিষেক, তবে বা হাতের প্রাধান্য সমালোচনার পথকে নিয়ে যাবে অনেকদূর। সকলের অভিনয়ই ভালোলাগার মতো।

ছাত্রদের চরিত্রগুলো খুবই স্বাভাবিকভাবে উঠে এসেছে। চলচিত্রটির সংঙ্গীতগুলো হৃদয় ছুয়ে যাবে যে কারো। পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকার ধন্যবাদ পেতেই পারেন..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.