আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলবোর্ড কি ফিরিয়ে আনবে জনপ্রিয়তা?

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

আওয়ামীলীগের প্রচারণা বুমেরাং বিলবোর্ড প্রচারণা তুঙ্গে। শহরের বিলবোর্ডগুলো ছেয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দলের উন্নয়ন প্রচারণায়। কিন্তু জনসাধারণের প্রশ্ন- বিষয়টি একটু বেশী বাড়াবাড়িই হয়ে গেল না? সরকারের শেষ সময়ে এসে সরকার ইমেজ উদ্ধারে যে কৌশল গ্রহণ করেছে, তাকে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করে নি বলেই মনে হচ্ছে।

অন্ততপক্ষে রাজপথে নিয়মিত চলাচলকারী পেশাজীবী, শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের আলোচনা থেকে, তাদের সাথে কথা বলে তাই জানা গেল। এ নিয়ে পত্র পত্রিকা, ব্লগসহ গণমাধ্যমগুলোতেও আলোচনা তুঙ্গে। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা এ নিয়ে শীর্ষ নিউজ থেকে শুরু করে মতামত, বিশ্লেষণ ছাপিয়েছে এবং আরো ছাপাবে বলেই মনে হয়। টকশোগুলোও মেতেছে এই বিলবোর্ড রাজনীতির সমালোচনায়। রাজধানী শহর ঢাকায় এ এক অভাবনীয় কাণ্ড বলেই বিবেচনা করছেন সাধারণ মানুষ।

অপরদিকে প্রশ্ন উঠছে কার বুদ্ধিতে আওয়ামীলীগের এই কার্যক্রম। যে হারে উন্নয়নের চিত্র ভেসে উঠেছে বিলবোর্ডগুলোয়, তা দেখে মনে হয় উন্নয়ন জোয়ারে ভাসছে দেশ। কিন্তু এত উন্নয়ন যদি হয়েই থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের চোখ এড়ায় কি করে? এত উন্নয়ন যদি হয়েই থাকে তবে বিলবোর্ডে তা তুলে ধরতে হবে কেন? খালি চোখেই তা দেখতে পারার কথা। এই ভাবে কি ভোট বাড়ানো যাবে? অপরদিকে এই প্রচারণার অর্থের উৎস নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেছেন বিলবোর্ড প্রচারণায় খরচ হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।

তিনি সরকারের কাছে এই অর্থের উৎস কি তা জানতে চেয়েছেন। গত মঙ্গলবার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার’ বন্ধের দাবিতে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদী যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, “আইনের তোয়াক্কা না করে সারা দেশে বাণিজ্যিক বিলবোর্ডের মাধ্যমে মিথ্যাচার করছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। ” তিনি বলেন, ভাড়া না দিয়ে দখল করা এ বিলবোর্ডে ভোট আসবে না। ” তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিলবোর্ড দখল করা হলেও ভাড়া দেওয়া হয়নি। বিলবোর্ডে আইনের শাসনের কথা বলা হয়েছে, অথচ বিলবোর্ড দখল করা হয়েছে, যা বেআইনি।

’ যেকোন দেশে একটি সরকার ক্ষমতায় যায় উন্নয়ন করার জন্যই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারী ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের এই দলীয় প্রচার প্রচারণা কতটা যুক্তিযুক্ত- মানুষ কিন্তু বিবেচনা করছে এই বিষয়টিই। মানা গেল যে সরকার খুব উন্নয়ন করেছে, মানুষ তা বিবেচনায় না এনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়েছে। এ থেকে আওয়ামীলীগে নেমে এসেছে এক ধরনের হতাশা।

সেই হতাশা থেকেই কি তাদের এই মরিয়া প্রচারণা? কিন্তু সর্বসাকুল্যে এই প্রচারণার ফল কি তাদের পক্ষে আসবে নাকি বিপক্ষে যাবে? প্রচারণা বুমেরাং হবে না তো? এই বিষয়টি চিন্তা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত আওয়ামীলীগের জন্য এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত, হাইব্রীডিয় মস্তিষ্কের ফল। কেননা সংবাদে প্রকাশ হচ্ছে যে, এই বিলবোর্ডগুলো একদিকে যেমন আইনকে তোয়াক্কা না করে করা হয়েছে, তেমনি পূর্বে যাদের বিজ্ঞাপনগুলো শোভা পাচ্ছিল, বিশেষ করে ঈদ বাজারে যাদের ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনে ব্যাপক ভুমিকা রাখতো-তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যতদিন এই উন্নয়ন প্রচারণা চলবে ততদিন ঠিকই তাদের ভাড়া গুনতে হবে, ভ্যাট-টেক্স পরিশোধ করতে হবে। তা না দিলে মালিকদের এ ক্ষতি গুনতে হবে। এই অংশটি দেশীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি।

তারা এই কর্মকাণ্ডে মোটেও খুশি হন নি। তাদের কথার সূত্র ধরে পত্রিকাগুলো সংবাদ করছে ‘জোর যার বিলবোর্ড তার’ শিরোনামে। তাই ফল কোনদিকে গেল তা ভালোভাবে ভেবে দেখা দরকার। সেই সাথে হানাহানির রাজনীতি আওয়ামীলীগ আরো একটি নতুন কালচার চালু করেছে। আগে দেওয়ালে দেওয়ালে, পোস্টারে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিজ্ঞাপন শোভা পেলেও এখন কয়েকধাপ এগিয়ে বিলবোর্ডে স্থান পেয়েছে।

আগামীতে যদি অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসে তারাও নিশ্চয় এই নীতি অনুসরণ করবে। কিংবা এই সরকারও যদি সফলতা লাভ করে তাহলে তারাও এর পুনরাবৃত্তি করবে। তবে আর যাই হোক, খোদ আওয়ামীলীগের অনেক সমর্থকও এই প্রচার-প্রচারণাকে ভাল চোখে দেখছেন না। তাদের মতে, বিষয়টি দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। তারা প্রশ্ন করছেন আওয়ামীলীগ আসলে চালাচ্ছে কে? দলকি দিশেহারা হয়ে ভীমরতিতে পড়েছে, নাকি দলের ঘাড়ে ভুত চেপেছে? সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে শেষ সময়ে আওয়ামীলীগের কোন পদক্ষেপই আখেরে লাভবান হচ্ছে না।

যত দাপাদাপি করছে তত পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পুরনো রীতিরই বাস্তবায়ন হতে চলেছে বলে মনে করছেন তারা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোন সরকারই পরপর দুইবার আসতে পারছে না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার যারা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে- তাদের অবস্থা কী- তাও মানুষের ভাল জানা আছে। নিরুপায় মানুষ একবার এই দলকে আনে তো আবার ঐদলকে টানে।

কিন্তু বার বার তাদের কাছ থেকে প্রতিদান পায় হাতাশাই। কারণ তাদের উপর এমনই এক সিস্টেম চেপে আছে- যার অবশ্যম্ভাবী ফলই এটা। যে গাছ জাতি রোপণ করেছে- সে ফলই তারা গিলছে। তাই গাছ উপড়ানো ছাড়া কি আর কোন পথ আছে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.