আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিসের স্বাধীনতা? কিসের বিজয় দিবস!!!!!!!



ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা!! আজ যদি আমরা স্বাধীন দেশের মাটিতে নিঃশ্বাসের অধিকার পেয়ে থাকি, মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তা পেয়েছি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের কারণে, দেশের নির্ভীক সৈনিক যাঁরা এসেছিলেন নিতান্ত সাধারণ ঘর থেকে, তাঁদের অসীম সাহসিকতা আর প্রাণের বিনিময়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কোন লক্ষ প্রাণের বিসর্জন হয়েছিলো? তাঁরা কি ক্ষমতার মসনদে আসীন কোন রাজনৈতিকা নেতা ছিলো? অথবা কোন দুর্নীতিবাজ নেতার অকালকুষ্মান্ড সন্তান? বিলাসীতার মাঝে গা এলিয়ে আয়েশী জীবনে অভ্যস্ত ক'জন শিল্পপতি শহীদ হয়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে? অথচ আজ তারাই বিজয়ী.. সত্যিকারের স্বাধীনতা স্বাদ আস্বাদনের অধিকার শুধু তাদের। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর, আমরা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের চেতনার গান গেয়ে যাই। পাতার পর পাতা ভরে উঠে পাতাআগুন ঝরা লেখায়, রাজনৈতিক দলের ক্রীতদাসের পাল সমর্থিত দলের নেতারূপী প্রভূদের বন্দনা সঙ্গীত আর মুক্তি যুদ্ধে তাদের অবদানের ঢাক পিটিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে!! আর যাঁরা নিজের রক্তের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে হায়নার পালের কাছ থেকে লাল সবুজে আঁকা পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলেন, তাঁরা.. সেই সাধারণ মানুষ কেমন আছেন? স্বাধীন দেশের স্বপ্ন চোখে আত্মাহুতি দেয়া সেসব বীর সেনানীর স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে যেন... সেদিনের হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আর তাদের দোসর রাজাকার আলবদররূপী শকুনেরা আজ ফিরে এসেছে নতুন রূপে, এরা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, দেশের সকল আয়েশ, বিলাসবসন সকল কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি। কখনও রাজনৈতিক নেতার রূপে, আবার কখনও শিল্পপতি- কারখানার মালিক।

কখনওবা পথে ওঁৎপেতে থাকা নারী সম্ভ্রমহানীকারী শিকারী হায়না রূপে... এরা ফিরে আসে বার বার। । দেশের সর্বত্র বিচরণ এদের। কোন ভীনদেশী ভাঁড় এসে আসর জমিয়ে বসলে, সেখানেও ক্ষমতার দুর্গন্ধ পৌঁছে যায়। ভাঁড়ামোতে শরিক হতে চলে যায় রাজপরিবারের বিশেষ দূত! শুধু তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়না শ্রমিকের লাশের ভীড়ে, খুঁজে পাওয়া যায়না রাজপথে পড়ে থাকা কোন বিপ্লবী বা মিছিলের বুলেটবিদ্ধ যুবকের মাঝে!! দেশের প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ গ্রহনে ব্যস্ত.. আজ যে স্বাধীনতা দিবস।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর তোষামোদকারীর পাল ভাবগাম্ভীর্যের সাথে তাকে ঘিরে যখন নিজের জীবন স্বার্থক করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মত্ত! -ওদিকে, তালাবদ্ধ ঘরে অসহায় শ্রমিকেরা দ্বিধাদ্বন্দে সময় কাটায়, জীবনের শেষ কয়কেটি মুহূর্তে তাঁরা ভীষণ বিচলিত.... “আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পরা মৃত্যু শ্রেয়তর হবে কিনা” সেই সিদ্ধান্ত গ্রহনে ব্যস্ত!!! বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে আর তপোধ্বনির শব্দে চাপা পড়ে যায় তাঁদের মৃত্যুর প্রহর গণনার গুন্জ্ঞন, বেঁচে থাকার শেষ আর্তনাদ!! কিসের স্বাধীনতা? কিসের মুক্তিযুদ্ধ? মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতিকে বলীয়ান করা এসব শ্রমিকের ঘর থেকে বাইরে যাবার নুন্যতম স্বাধীনতা নেই। । জীবনের শেষ মুহুর্তে মুক্ত বাতাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অধিকার নেই তাঁদের!! খাঁচায় বন্দী এক পাল অসহায় পতঙ্গের মতো প্রতি বছর তাঁরা নিয়ম করে পুড়ে মরে। জীবিত অবস্থায়ও যে তাঁরা “বেঁচে” থাকেন, এমন নয়!!! কর্মক্ষেত্রে, পথে ঘাটে প্রতিনিয়ত অপমান, অবহেলা আর সম্ভ্রমহানী তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এই অসহায় পতঙ্গদের রক্ত পানি করা অর্থে বিত্তের পাহাড় গড়ে শিল্পপতির দল।

বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই এসব শ্রমিকদের, জীবনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা এসব শুধুই অলীক স্বপ্ন তাঁদের জন্য- অথচ প্রতি পদে পদে অপমান, অবহেলা আর জীবন সংকটের মাঝে বেঁচে থাকা এসব শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে নিজের প্রবাসী সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশের মহামান্যরা... এমন স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলো লক্ষ লক্ষ শহীদ!!!! দেশের সাধারণ মানুষের এই অসহায়ত্ব, লান্ছনা আর অবমাননার জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ? বদ্ধ ঘরের ধোঁয়ায় ভারী হয়ে আসা বাতাসে জীবনের শেষ মুহুর্তের জন্য আপেক্ষমান এসব শ্রমিকদের কাছে, কিসের স্বাধীনতা? কিসের বিজয় দিবস? যুগ যুগ ধরে তাঁরা পরাজিত.. জীবনে এবং মরনেও..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.