আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি নিন্দা ক্ষোভ এবং বিচারকে তরান্বিত করতে ভিন্ন আঙ্গিকে আওয়ামী লীগের বিজয় র‌্যালি



লাখো মানুষের সমাগম। মাথায় লাল সবুজের পতাকা। বুকে দেশ প্রেম। গালে আঁকা মানচিত্র খচিত পতাকা নিয়ে বাবার কোলে চেপে বিজয় দিবসের র‌্যালিতে এসেছে এক বছরের সাজিদও। দুপুর গড়াতেই সব মিছিলের স্রোত ছুটে আসতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের দিকে।

ঘড়ির কাটায় ৩টা বেজে ১০ মিনিট। অস্থায়ী মঞ্চে একে একে উপস্থিত হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সবার চোখে মুখে ছিল বিজয়ের তৃপ্তি। এ যেন একাত্তরের পরে আরো একটি বিজয়। চারদিকের মাইকের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুৃর সেই স্বাধীনতার ধ্বনি।

দূর-দূরান্ত থেকে জয় বাংলা সেøাগান তুলে বাস-ট্রাকে চড়ে এসেছে বিজয়-আনন্দে উচ্ছল মানুষ। কোনো ট্রাকে আবার বানানো হয়েছে বিজয় মঞ্চ। আবার কোন ট্রাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিক নৌকা, কাগজের কামান, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রাজাকারের আত্মসমর্পণের দৃশ্যও উঠে এসেছে কোথাও কোথাও। যুদ্ধাপরাধের বিচারের অঙ্গীকার নিয়ে চলা এই বিজয় মিছিল যেখানে শেষ হওয়ার কথা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে যখন পৌঁছে একটি মুখ, তখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বের হতে পারেনি মিছিলের অন্য প্রান্ত। এ মিছিলের যেন শুরু আছে শেষ কোথায় বলা নেই।

আগে থেকে আওয়ামী লীগ বলে আসছিল এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করা হবে। উপস্থিত হয়ে তার প্রমাণও পাওয়া গেলো। সাকা চৌধুরীদের মতো চিহিত যুদ্ধপরাধীর গ্রেফতার আনন্দে বিজয় দিবসের র‌্যালি পরিগ্রহ করেছে ভিন্ন মাত্রা। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ এবং তাদের বিচারকে তরান্বিত করতে ভিন্ন আঙ্গিকে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের র‌্যালি বের করা হয়। বিজয় র‌্যালিটি সোহরাওয়াদী উদ্যানের শিখা চিরন্তন থেকে শুরু হয়।

সে কারণে মতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠন গুলোর প্রাধান্য ছিল একটু বেশি। কিন্তু এ বিজয় র‌্যালিতে সাধারণ মানুষও যোগ হয়েছে হাজারে হাজার। তাতে এটি পরিণত হয়েছে গণশোভাযাত্রায়। তার আগে যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেছিল সে জায়গাটাও দেখে নিতে চেয়েছিলেন অনেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর বিশালাকৃতির ছবি ও বড় নৌকা ছিল মিছিলের বিশেষ আকর্ষণ।

বিজয় র‌্যালি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা হবে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রেফতারে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, একজন বড় রাজাকার ধরে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের ইলেকট্রিক শক দিয়ে হত্যা করতো এবং সে হাঁসতো। গতকাল বৃহস্পতিবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মহানগর আাওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত র‌্যালির উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের মাটিতে হবেই হবে। যে যত বড় নেতাই হোক না কেন প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয় দিবসের র‌্যালিতে আগত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, আজকের বিজয় দিবসের সবচেয়ে বড় খবর রাজাকার সাকা চৌধুরী গ্রেফতার হয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রমান হলো কেউ আইনের উর্ধে নয়।

২০১১ সালের জানুয়ারি মধ্যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা যে আইনে গ্রেফতার হবে সেই আইনে তা মোকাবেলা করতে হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, সংসদ চত্তরের বাইরে থেকে কোন সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করলে পরবর্তীতে স্পীকারকে জানালেই হবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমেদ হোসেন, মেছবাহ উদ্দিন সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট মোল্লা মো. আবুু কাওছার, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুবলীগ নেতা হারুনুর রশিদ, একেএম রহমত উল্লাহ এমপি, সানজিদা খানম এমপি প্রমুখ। বিকেলের দিকে উৎসাহী জনতা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এলেও আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী সংগঠন দুপুর থেকেই শিখা চিরন্তনের আশপাশে জমায়েত হতে থাকে।

যুবলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। সংগঠন গুলোর নেতারা নিজ নিজ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এর বাইরে ওলামা লীগ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক কর্মচারী লীগ, টিএন্ডটি কর্মচারী ফেডারেল ইউনিয়ন, সড়ক পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, জাতীয় মৎসজীবী সমিতিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে অংশ নেয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে র‌্যালি শেষে আবারও দলে দলে ঘরে ফেরে মানুষ। এবার তাদের বুকে প্রচুর সাহস।

যে সংশয় সন্দেহ নিয়ে তারা র‌্যালিতে যোগ দিয়েছে জাতীয় নেতৃবৃন্দের আশার বাণিতে কেটে যায় সেই সংশয়। সম্প্রদায়িতা ও ধর্মান্ধ মুক্ত স্বদেশ গড়বে এই প্রত্যায় নিয়ে স্বাধীন চেতা মানুষগুলো যার যার নীড়ে ফিরে যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.