আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরান ঢাকার তিন হাট দর্শন ‘মায়ের গর্ভের থাইক্যা যে শিশু বাইর হয় সেই রহম আইজক্যা

মহান পুরুষ নিয়ে লেখার কি আছে।

‘আসেন ভাই, লইয়্যা যান, জাপানি পেয়ারা। কমদামে দিছি। ’ চটের ব¯ার মুখ খুলে দিয়ে দেশে উৎপাদিত কাগজী পেয়ারা দেখিয়ে এভাবেই ক্রেতাকে ডাকছেন এক আড়ৎদার। তাকে দর থেকে দেখছেন কিছু মানুষ।

তার থেকে খানিক দরে আরেকজন সামনে কিছু মানুষের জটলা। তিনি তাদের বুঝাচ্ছেন ‘মায়ের গর্ভের থাইক্যা যে শিশু বাইর হয় সেই রহম আইজক্যার পেয়ারা। লইয়্যা যান, ধুমায়া বেচবেন। ’ কিনতে আসা পাইকাররা তার কথা কতটুকু বুঝলো তা বোঝা গেলনা। তবে তিনি কথাটা বলেই আবার নিলামের ডাক দিলেন।

আশে পাশের পাইকাররাও আগ্রহের সঙ্গে দাম বলতে লাগলেন। পুরাণ ঢাকার বিখ্যাত পাইকারি বাজার ওয়াইজ ঘাটের দৃশ্য এটি। প্রতিদিন ভোররাত থেকে জমে ওঠে এ বাজার। সকল প্রকার দেশীয় ফলের জন্য বিখ্যাত ওয়াইজ ঘাট। এখানে ঢাকা শহরের অধিকাংশ দেশীয় ফল বিক্রেতা ভিড় জমান।

পাইকারি দরে নিলামের মাধ্যমে ফল কিনে সকালের মধ্যেই ঢাকা শহরের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে চলে যান। তবে তারা যে দামে কেনেন তা তাদের বিক্রয়মল্যের অর্ধেকেরও কম বলেই মনে হয়। কারণ এখানেই গত ২আগস্ট প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হয়েছে ১২/১৩ টাকা করে। ঢাকার সদরঘাট থেকে খানিকটা সামনের দিকে এগুলেই বীনা স্মৃতি øান ঘাটের সামনে ওয়াইজঘাট নামক জায়গা। ঘাটের সামনেই রয়েছে চার আউলিয়ার মাজার।

এই মাজারের পাশেই বসেছে আড়ৎ। পাকি¯ান আমল আগে থেকেই এই আড়তে বেচাকেনা চলছে বলে জানান এখানকার বিক্রেতারা। এখানে পাওয়া যায় সবধরণের দেশীয় ফল। তবে এটা অবশ্যই ঋতু ভিত্তিক। এখন বেচাকেনা হচ্ছে, আনারস, পেয়ারা, কলা, আমসহ দেশীয় ফল।

প্রতিটি আনারস বিক্রি হচ্ছে ৯/১০ টাকায়। কলা বিক্রি হয় কাদি হিসেবে। সাইজের উপরে দাম নির্ভর করে। প্রতিটি কাদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। রা¯ার পাশে এবং বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁসে আড়ৎগুলো গড়ে উঠেছে।

উল্লেখ্যযোগ্য এবং জমজমাট আড়ৎগুলোর মধ্যে রয়েছে মের্সাস ইসাহাক এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস সীমাš এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কিছু আড়ৎ। মের্সাস ইসাহাক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইসাহাক মিয়া বলেন, ‘এখানে যে কেউ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফল এনে বিক্রি করতে পারবে। তবে যে আড়তে দাড়িয়ে বিক্রি করবে সেখানে নির্দিষ্ট কমিশন দিতে হবে। সঙ্গে আড়ৎদারদের মালামাল তো রয়েছেই। কিন্তু দাম নির্ভর করে বাজারের আমদানির উপর।

’ তিনি জানান, যারা খুব সকালে এসে দ্রুত বিক্রি করতে পারে তারা ভাল দাম পায়। এখানে বিক্রি করার নিয়ম হলো, যে ফল আনা হয় তার যেকোন একটা ব¯া খুলে নমুনা হিসেবে সামনে রাখা হয়। তারপর সেটা ক্রেতারা দেখে। বিক্রেতা নির্দিষ্ট দাম ধরে নিলাম আহব্বান করে। যে বেশি দাম দিতে পারে সে সেটা কিনতে পারে।

অথবা তার সঙ্গে অন্যকেউ যদি ঐ দামে কিনতে চায় তাহলে সেও কিনতে পারে। হাটের জš§ থেকেই এই নিয়মে বেচাকেনা হয়ে আসছে এখানে। ওয়াইজ ঘাট থেকে একটু সামনে এগুলেই আহসান মঞ্জিলের। ঠিক তার পাশেই বাদামতলী। এটাও ফলের বাজার।

তবে এখানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফল বিক্রি হয় বেশি। কার্টুন হিসেবে এখানে বিক্রি হয় সবধরণের ফল। কেজিতে নয়। কাঠের কার্টুনকে বলা হয় ‘পেটি’ আর প্ল্যাটিকের কার্টুনকে বলা হয় ‘কেস’। এখানে বিক্রি হওয়া ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, মালটা, খেজুর, বিদেশী আম, আঙুর, স্টবেরিসহ বিদেশী সব ধরণের ফল।

কিন্তু এখানে নিলামে তোলা হয়না। দোকানে এসে ক্রেতার পছন্দ হলে কেস বা পেটি ধরে নিয়ে যায়। এখানে পেটি বা কেস ছাড়া খোলা বিক্রি করা হয় না। কেউ চাইলে একাধিক পেটি বা কেস কিনতে পারে। তবে এখানেও দাম নির্ভর করে পণ্য আমদানির উপর।

এখানে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে ফলের আগে বিভিন্ন বিশেষন যোগ করে ডাকা হয়। যেমন ইন্ডিয়ান আমকে ভিআইপি ও ¯েক্সশিয়াল আম বলে ডাকা হয়। আর আপেলের আলাদা নাম আছে। তবে সেটা যে জাতের সেই জাতের নাম বলেই ডাকা হয়। তবে দাম নির্ভর করে পণ্যর সাইজ এবং মানের উপর।

এছাড়া কেস বা কার্টুনের উপরও নির্ভর করে। যেমন কার্টুনের ভিতরে কয় ¯র রাখা হয়েছে সেটা দেখিয়ে দাম ডাকা হয়। তবে একেকটা ¯রকে এখানে ‘চালি’ হিসেবে বলা হয়। যেমন ৭ ¯র বিশিষ্ট কার্টুনকে, ৭ চালির কেস বলা হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দোকান হলো মাফুজ ফ্রূট এজেন্সি, রায়হান ফ্রূট এজেন্সি, প্রজাপ্রতি ফ্রূট স্টোর সহ অন্যান্য দোকান।

প্রজাপতি ফ্রূটেরস স্বত্বাধিকারী মো. নাজিমুদ্দিন বলেন,‘এই ফল বিদেশ থেকে আনা হয়। অনেক সময় লঞ্চে এবং ট্রাকে করে এই বাজারে নিয়ে আসে। ’ কোন দেশের ফল বেশি বাংলাদেশে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার কোন ঠিক নাই। যে দেশে যে ফল বেশি হয় সেই দেশে থেকেই ফল আসে। যেমন এখন আসছে ভারত, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দনি আফ্রিকা, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রার্চের বেশ কিছু দেশ।

’ তার ব্যবসায়ি ক্যারিয়ার স¤র্ক্সকে জানান, তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে বাদামতলীতে ব্যবসা করছেন। এখন তার একটা নিজস্ব দোকান হয়েছে। পরিবার কেউ এই পেশায় জড়িত না থাকলেও নিজের ইচ্ছাতেই তিনি এ পেশায় এসেছেন। ছাত্র জীবন থেকে ব্যবসা করতে থাকা নাজিমুদ্দিন বাদামতলী হাট স¤র্ক্সকে বলেন, ‘এই হাট পাকি¯ান আলম থেকে চালু আছে। কখনই এটা বন্ধ হয়নি।

এমনকি সাপ্তাহিক কোন বন্ধ নাই। ’ ব্যবসায় কেমন লাভ হয় জানতে চাইলে বলেন, ‘কাঁচামালের ব্যবসা লাভ লোকসান দুইটাই আছে। মানুষের চাহিদার উপর ব্যবসা নির্ভর করে। ’ বাদামতলী থেকে কিছুদর সামলে গেলেই সোয়ারীঘাট। একসময়ের বিখ্যাত এ বাজার এখন অনেকটাই তার খ্যাতি হারিয়েছে।

তবুও প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ আসে। বেশিরভাগ মাছই আসে বরিশাল থেকে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান দেশের সব প্রাš থেকেই লঞ্চে এবং ট্রাকে করে মাছ আসে। এখানে মাছ বিক্রি হয় নিলামে তুলে। প্রতি পাল্লা (৫ কেজিতে ১ পাল্লা) হিসেবে এখানে দাম-দর হয়।

অনেক সময় বড় মাছ হলে হালিতেও বিক্রি হয়। মাঝে মাঝে মাছের ঝুড়ি ধরেও বিক্রি হয়। তবে যারা ব্যবসায়ী নন এবং নতুন বাজারে প্রবেশ করেছেন তারা খানিকটা বিভ্রাš হতে পারেন। কারণ নিলামে কখন শতকের সংখ্যা বলা হয়না। যেমন ধরুণ মাছের দাম ২০৫ টাকা কেজি।

কিন্তু নিলামে ডাকার সময় বলা হয় ৫ টাকা, ৫ টাকা। তাই বোঝার উপায় নেই আসলে কত টাকা মাছের দাম। এখানকার ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে মাছ আসা শুরু হয়। ৮/৯টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। ’ মাছের বর্তমান দাম স¤র্ক্সকে তিনি বলেন, এখন মাছের দাম খুব চড়া।

তাই বিক্রিতে খুব বেশি লাভ হয়না। আর এই বাজারে আর বেশি চড়া। কারণ এখানে আর আগের মতো মাছ আমদানি হয় না। সব এখন শুধু যাত্রাবাড়িতে চলে যায়।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।