আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে

মানবতার ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।

রাজধানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক) গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার পাড়াবর্থা-বড়কাউ মৌজার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল(প্রায়১৬০০ এশর) সহ পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প অনুমোদন করে প্রায় ১৮-২০ রছর আগে। অধিগ্রহনকৃত অঞ্চলের অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার লক্ষে পরবর্তীতে সম্পদের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য জরিপ চালানো হয় । জরিপ পরিচালনার সময় পরিবেশের জটিলতা এড়িয়ে সহজে সরকারকে ফাঁকি দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের বনভূমি উল্লেখ করেনি। এভাবে তারা পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের রূপগঞ্জ অংশ ইতিমধ্যেই অধিগ্রহন সম্পন্ন করেছে।

কিন্তু এলাকাবাসীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে কালিগঞ্জ অংশের পাড়াবর্থা-বড়কাউ মৌজার অধিগ্রহন এখনো সম্পন্ন হয়নি। এই অংশ জুড়ে রয়েছে প্রায় ১৩০০ এশর রনভূমি আছে যার মধ্যে প্রায় ৫০০ একর ঘণ শালবন যা ভাওয়াল গড়ের স¤প্রসারিত অংশ এবং অধিক ঘন। স¤প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত পর্যবেক্ষনে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্ত রাজউকের সর্ভে রিপোর্টে চালাজমি( গাছপালাহীন অনাবাদী জমি) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর’র বিবৃতি ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মো. নজরুল ইসলাম খান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাজউককে উক্ত এলাকার বনভূমি রক্ষা করার নির্দেশনা দেন।

এর কিছুদিন পর গাজীপুর জেলাপ্রশাসকের নামে পোস্টার ছাপিয়ে এলাকাবাসীকে জানানো হয় যে জুলাই ২০১০ এর মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা না আনলে পরবর্তীতে কেউ ক্ষতিপূরণ দাবী ও প্লটের আবেদন করতে পারবেন না। এর ফলে জনগণ চরম অনিশ্চয়তা ও আতংকের মধ্যে আছে। ইতি মধ্যে কিছ লোক ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রাপ্তির পর বনভূমি উজার করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। অথচ এখনো এই বনভূমির ভবিষ্যত সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না। এই জটিলতা ও অনিশ্চয়তার কয়েকটি কারণ রয়েছে।

প্রথমত, এই অঞ্চলের বনভূমিগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন যা সরকারের রনভূমির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দ্বিতীয়ত, রাজউক তাদের সর্ভে রিপোর্টে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এই রনভূমির কথা গোপন করে গেছে। তৃতীয়ত, অদৃশ্য কোন ক্ষমতা বলে রাজউক সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নীরব রাখতে সক্ষম হয়েছে। চতুর্থত, বিভিন্ন বেসরকারী আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করলেও রাজউকের রিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন থেকে সরকার বিরত থেকেছে। তাছাড়া এই এলাকার কৃষিনির্ভর জনগণের অধিকাংশই পরিবেশ রক্ষায় রনভূমির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অচেতন।

এই প্রকল্প যখন অনুমোদন করা হয়েছিল তখন পরিবেশের গুরুত্ব অনেকটাই ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবেশের ভারসাম্য বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রশংসিত হয়েছেন। অথচ সরকারেরই প্রতিষ্ঠান রাজউক বৃক্ষনিধনের যে পদক্ষেপ নিতে যাচেছ এর প্রতিকার করবে কে? কোন গ্রহনযোগ্য মূল্যায়ন ছাড়াই বিস্তীর্ণ এই বনভূমি অঞ্চলে আবাসিক প্রকল্পের অনুমোদন কিভাবে দেয়া হল? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সুস্পষ্ট কোন জবাব না দিয়ে কিভাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে পোষ্টার ছাপা হল? পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যরেক্ষণে বনভূমির অবস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরেও কেন এই অঞ্চলকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হল না? পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সবচাইতে ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই আত্মঘাতী প্রকল্পের বাস্তবায়ন কি মেনে নেয়া যায়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.