আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরিকল্পিত নগরায়ন - আমাদের ভবিষ্যৎ কি?

আমার মাঝে তোমার আমি
বাংলাদেশে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে দুটি কারণ ১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ২) ভূমি ব্যবহার নীতির অনুপস্থিতি। গ্রামঞ্চল থেকে শহরে কাজের খোঁজে প্রচুর লোকের আগমনের কারণে প্রধাণ কিছু শহরে জনসংখ্যা অনেক বেশী। বিশেষ করে বলতে হয় ঢাকা শহরের কথা। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১২ মিলিয়নেরও বেশী। এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, বাসস্থান সহ আরো অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

ঢাকা শহরের উন্নয়নের জন্য একমাত্র কতৃপক্ষ হল রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ)। বর্তমানে পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য যে সকল আইন বলবৎ আছে তা উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিদ্যমান আইনগুলোর সঠিক ব্যবহার করা হয় না। উঁচু এপার্টমেন্টগুলো স্থাপন করা হয় বাসস্থান সমস্যা দূর করার জন্য। কিন্তু বস্তুত দেখা যাচ্ছে যে এই স্থপনাগুলোর কারণেই ঘনবসতির মত খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

বর্তমানে ঢাকায় খালি জায়গা একেবারেই দুষ্প্রাপ্য। সব জায়গাতেই উঁচু স্থাপনার ফলে জনবসতি এখানে অনেক বেশী ঘন। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পানি, বিদ্যুৎ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মত জটিল সমস্যা। যেহেতু পরিকল্পনার অভাবে যত্র তত্র বড় বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিং, অফিস আদালত ইত্যাদি গড়ে তোলা হচ্ছে ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ দূষন থেকে শুরু করে নানান সমস্যা। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা শহরে তিল পরিমাণ স্থান খুঁজে পাওয়া হয়ে পড়েছে দুষ্কর।

সমস্যার অন্ত নেই। বাসস্থানের অভাবের ফলে গড়ে উঠছে ভাসমান মানুষের বস্তি। যার ফলশ্রুতিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি। ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ ইত্যাদি নিত্যদিনের সঙ্গি এ শহরে। শহরের বিপুল জনসংখ্যার বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে অবৈধ দখলদারিত্ব বেড়ে চলেছে আশংকাজনক হারে।

লেক ও নদীর পাড়গুলো দখল করে নিচ্ছে কিছু অসাধু লোক। যার ফলে নদী হারাচ্ছে নাব্যতা, লেক হচ্ছে দূষিত। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। খুব সহজ সমীকরণে বলা যায় জনসংখ্যা যত বেশী হবে তাদের দ্বারা সৃষ্ট ময়লা আবর্জনা তত বেশী হবে এবং এই ময়লা আবর্জনা যত্র তত্র নিক্ষেপের ফলে সৃষ্টি হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পাশাপাশি পরিবেশ দূষনও মারত্মক আকার ধারণ করে।

লেক ও নদীতে ময়লা আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলার ফলে পানি হচ্ছে দূষিত এবং এ থেকে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের বস্তি এলাকগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সবচাইতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন জীবানু থাকে যা আশেপাশের পরিবেশকে দূষিত করে এবং এর ফলে মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পরে। অধিক জনসংখ্যা ও পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ঢাকায় বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। কয়েকটি নির্দিষ্ট পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র ছাড়া তেমন বিশুদ্ধ নির্মল পরিবেশের অভাব প্রকট আকার ধারন করেছে।

শিশুদের বিকাশে যে পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা উচিত তার ছিটেফোঁটাও নেই। নেই কোন খেলার মাঠ। কোন নির্মল পরিবেশ। গাছ-পালার অভাব ও বিশেষভাবে লক্ষনীয়। আজকাল আবার বিভিন্ন মাঠ দখল করে সুপার মার্কেট, এপার্টমেন্ট ইত্যাদি গড়ে তোলার হিড়িক পরেছে।

ফলে শিশুরা খেলার মাঠ থেকে বঞ্চিত। ঘরের কোনায় থাকতে থাকতে তাদের পর্যাপ্ত মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ঢাকার আরো একটি বড় সমস্যা হল যানজট। অপরিকল্পিত নগরায়নের আরো একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পরিকল্পনার অভাব ও দূর্নীতির ফলে শহরের রাস্তাঘাটে হরহামেশাই যানজট লক্ষ করা যায়।

আরো আছে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের রাস্তা খোঁড়া-খুঁড়ি। এর ফলে রাস্তার প্রত্যাশিত আয়ু অনেক কমে যায়। পাশাপাশি রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও জনগণের অনেক অসুবিধা হয়। বিশেষ ভাবে লক্ষনীয় যে রাস্তা খননের অনুমতি দেয়া হয় বর্ষাকালে। ফলে পথচারী ও যানবাহনগুলোর অসুবিধা অনেক বেশী হয়।

এখানেও পরিকল্পনার অভাব বিশেষভাবে লক্ষনীয়। রাস্তার নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড সিস্টেম না থাকায় বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠনগুলোকে রাস্তা খোঁড়া-খুঁড়ি করতে হয়। এখন আবার সরকারীভাবে ফ্লাইওভার বানানোর হিড়িক পরেছে। খুবই ভাল কথা ফ্লাইওভার বানালে যানজন অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু ভবিষ্যতে সরকার যদি আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল করার পরিকল্পনা করে তখন কি হবে? তখন ফ্লাইওভার নিশ্চই ফ্লাই করে আকাশে উঠে যাবে না? রাস্তা ভাঙার পাশাপাশি তখন ফ্লাইওভারগুলোও ভাঙা হবে।

ক্ষতিতো দেশেরই হবে তাই না। দীর্ঘ্যমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবটা অনেক ভাল ভাবেই উপলদ্ধি করা যায়। দেশের প্রতিটি বিভাগে যদি সঠিক ও পরিকল্পিত দীর্ঘ্য মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাহলে হয়তো নির্দিষ্ট কিছু বড় শহরগুলোতে কাজের খোঁজে যাওয়া লোকের সংখ্যা কমে আসত। আর লোকসংখ্যা কমে গেলে পরিবেশ দূষন থেকে শুরু করে আরো অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব হত। দেখা যায় সবাই পরিবেশ বাচাঁও বলে চিৎকার করে।

খাদ্য ঘাটতি দূর কর বলে চিৎকার করে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত গাল ভরা শব্দ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। পরিবেশ দিবসে সভা সেমিনার করে। সেই সব সেমিনারে যে খাবার সরবরাহ করা হয় তারই উচ্ছিস্ট দিয়ে সেমিনার স্থল নোংরা করে। আরো কত কিছুই করে।

ইদানিং আরেকটি বিষয় নিয়ে দেশে তোলপাড় হচ্ছে। সেটা হল টিপাইমুখ বাঁধ। এটা নির্দিধায় মেনে নিব যে এটা জাতীয় ইস্যু এবং এই বাঁধ দেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মধ্যেই যে হাজারো পর্বতসম সমস্যা আছে সেটা নিয়ে কাউকে বলতে শুনি না। কেউ বলে না আমাদের দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ন সম্পর্কে।

যত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সবই সাময়িক। দীর্ঘ্য মেয়াদী কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না। তাই আমার প্রশ্ন আমাদের দেশের কি হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তার মানে আমাদের দেশের আয়ু হলো আর মাত্র ৯১ বছর। এর জন্য কি অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনাই দায়ী নয়? ৯১ বছর পরে আমাদের কি হবে?
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.