আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতের থাবার নখ এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে : ট্রানজিটওয়ালারা কী করবেন?



শেষ পর্যন্ত থলের বিড়াল বেশ ভালোভাবেই বের করে দেখিয়ে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় কৃপার ওপর উবুড় হয়ে পড়ে থাকা আমাদের মেরুদণ্ড ও আত্মসম্মানহীন সরকারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘দ্যাখ বাপু দালালি কিংবা তোষামুদি যাই কর, কথাবার্তা পরিষ্কার—তোমাদের দেশের ভেতর দিয়ে সরাসরি আমাদের ট্রেন, বাস ও ট্রাক চলাচলের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত তোমাদের প্রার্থিত ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেব না। ’ ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এই রূপরেখা আগে প্রাপ্ত তাদের অনৈতিক সুবিধার অতিরিক্ত। তারা বলছে, ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজগুলো চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করছে বা করবে, এটাই যথেষ্ট নয়; দিতে হবে ট্রেন ও বাস ট্রানজিট।

কেবল তারপরই বাংলাদেশ যে ৬১ পণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায়, তা তারা দেবে। ভারত বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৬টি পণ্য বাজারজাত করে, বিপরীতে বাংলাদেশ করে মাত্র ১৬৮টি পণ্য। ভারত শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত তুলে বাংলাদেশের ৭শ’ প্রকার পণ্য সেদেশে প্রবেশনিষিদ্ধ করে। পরে এ তালিকা কমিয়ে ৪শ’তে দাঁড় করায়। কিন্তু অনুধাবনের বিষয়, যেসব পণ্য থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে ভারত বুক ফুলিয়ে এলান করে দিয়েছিল, তার ৯৮ শতাংশই উত্পাদন করে না বাংলাদেশ।

শুধু তাই নয়, যে ৬১টি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করার আশায় ভারতের দ্বারে কাতর প্রণয়ীর মতো অপেক্ষায় আছে সরকার, তার মধ্যে ৪৮টি হলো বস্ত্রখাতের। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, বস্ত্রখাতের এসব পণ্যের ওপর কয়েক স্তরে শুল্ক আদায় করে ভারত। বাংলাদেশের নিটওয়্যার খাতের কটন টি-শার্ট রফতানিতে প্রতি পিসের বিপরীতে ভারত শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ৪৫ রুপি। ট্রাউজারের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রতি পিসের জন্য নির্ধারণ করেছে ১৩৫ রুপি। এই অতি এবং অযৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণের উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হলো, ভারতীয় আমদানিকারকদের নিরুত্সাহিত করা।

অন্য কথায় সেদেশের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে শক্ত প্রতিরোধ দাঁড় করানো। বলাবাহুল্য, ভারতের নীতিনির্ধারকরা তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছে। ওয়াকিবহাল মহলও তাই ধারণা করে। তাদের মতে, ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে কাগজে-কলমে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছে, অশুল্ক ও আধাশুল্ক বাধা নিয়ে।

তাদের মতে, একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আশ্বাস আর অন্যদিকে পণ্য প্রবেশে বাধা, এই দ্বৈতনীতির মুখে ভারতের বাজারে একে একে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি দিন দিন শুধু বেড়েই যাচ্ছে। এই ভয়ানক বৈষম্য দূর করার জন্য তোয়াজ-তদবির কম করেনি বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

যা পাওয়া গেছে তার নাম হলো গালভরা আশ্বাস। যে ধরনের আশ্বাস গত ৪০ বছর ধরে বহুবার দিয়ে এসেছে ভারত, যা একেবারেই ফাঁকা এবং ছেঁদো। অথচ ওই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ওই সামান্য ৬১টি পণ্যের শুল্কসুবিধার অন্য কোনো বিকল্প নেই। ভারত এখন বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার দেনদরবারকে বেমক্কা এক ধাক্কা দিয়ে চিত্ করে ফেলে বদলে ফেলেছে নিজের অবস্থান। এখন বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ শিকায় তুলে শুরু করেছে নতুন গান।

২ হাজার ৮৬টি পণ্যের বিপরীতে ৬১টি পণ্যের শুল্কসুবিধা দিতে তারা এখন দাবি করে বসেছে, বাস ও ট্রেন ট্রানজিট। ট্রানজিট একটি ভিন্ন বিষয়। এ নিয়ে গত শনিবারও আমাদের এই সম্পাদকীয় কলামে ‘থলের বিড়াল বেরুতে শুরু করেছে’ লিখেছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যার বাফার স্টেট প্রসঙ্গেই কোনো জ্ঞান নেই, তিনি হাজির করেছেন এক উদ্ভট কো-অপারেশন থিউরি। যে থিউরিকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে, ফালতু হিসেবে এককথায় নাকচ করা যায়।

জনগণ ও সংসদকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় স্বার্থের অনুকূলে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকারকে বিসর্জন দেয়ার এমন নির্লজ্জ নজির বিশ্বে বিরল। এখন ট্রানজিট পেতে মরিয়া ভারত হাজির করেছে এই নতুন বাহানা। খাইয়ের পর খাই। অজুহাতের পর অজুহাত। দাবির পর দাবি।

সত্যিকার অর্থেই এখন একথা বলার সময় এসেছে, ভারত হলো কিংবদন্তির সেই রাক্ষস, যার ক্ষুধা ও চাহিদার কোনো শেষ নেই; নিজের স্বার্থের ব্যাপারে অন্ধ এবং অন্যের বিষয়ে উদাসীন। ভারতকে বসতে দিলে শুতে চায়, শুতে দিলে দাবি করে বাড়ির মালিকানা। আসলে ভারতের চাই সবকিছু। শুধু বাণিজ্য কিংবা ট্রানজিট নয়, ভারতকে দিতে হবে সবকিছু, যার অর্থ বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি দিতে হবে মহাভারতের মহাসমুদ্রে। তবেই হয়তো তার খাই মিটবে।

আমাদের বর্তমান কর্তাদের যদি হুশ ফেরে তাহলে তারাও বিষয়টি অনুধাবন করে জাতীয় কর্তব্য পালনে তত্পর হয়ে উঠবে বলে আশা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.