আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদীনার পথে পথে- ০২

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা বাস চলছে। মদীনার সাদামাটা পথঘাট। তবুও এখানে ভীড় ও যানজট। অত্যন্ত বেদনার বিষয়, মদীনার রাস্তাঘাটে এখানে ওখানে ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। কোন কোন জায়গা নোংরা এবং ধুলোবালিতে ভরা।

প্রিয়তম নবীর পবিত্র ও বরকতময় নগরী মদীনার এমন মলিন দৃশ্য আমাকে ব্যথিত করেছে। মুসলমানদের অন্যতম এ মিলনমেলা ও তীর্থস্থানকে সামনে রেখে ব্যবসা বাণিজ্যের জোয়ার চারিদিকে। মদীনার পথে পথে ব্যবসা আর বাণিজ্য। মদীনাবাসীর দেখা নেই। চারিদিকে শুধু অনারব আর ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক।

খামসা রিয়াল, আশরা রিয়াল, ইয়া হাজ্জি- এসব চিৎকারে হারিয়ে যাচ্ছে মদীনার শান্ত ও সুনসান অলিগলির দৃশ্যপট। সহসাই বাসের ভেতর ডাকাডাকি। আমার সহযাত্রীরা ডাকছে। তারা আমাকে মসজিদে নববীর সুরম্য মিনারা দেখাতে চাচ্ছে। একে অন্যকে ডেকে ঐ আলোকিত মিনারা দেখানোর মধ্যেও লুকিয়ে আছে ভালোবাসার আনন্দময় প্রকাশ।

কারণ ঐ যে নবীর মসজিদের মিনার। ওখানেই তো শুয়ে আছেন আমাদের প্রিয়তম পিয়ারা রাসূল। আমার দৃষ্টিশক্তি ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্বল। সামান্য তিন মিটারের বেশি দূরত্ব আমার কাছে অস্পষ্ট ও অন্ধকার। কাজেই তাদের ডাক যেন না শুনতে হয়, সেজন্য হেলান দিয়ে ঘুমের ভান করে রইলাম।

মিনারা দেখতে গিয়ে আমার ব্যর্থ প্রয়াস তাদেরকে হয়তো আহত করবে নয়তো হাসির খোরাক হবে, দুটোই আমার জন্য বেদনাকর। আমি সযতেœ সেসব থেকে এড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আমি চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে তাদের আনন্দধ্বনি ও আবেগমাখা দরুদ ও সালাম শুনতে লাগলাম। বাস থামল। আমরা নেমে আমাদের যার যার রুম বুঝে নিলাম।

মাগরিবের আযানের আর বেশি বাকি নেই। আমি মসজিদের দিকে ছুটলাম। মাগরিবের পর তার কাছে হাযির হবো। তাকে আমার সালাম পেশ করবো। আনন্দময় আবেগ ও উত্তেজনা এবং সেইসাথে এক বুক ভয় আমাকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছে।

রাসূলে পাকের রওযায় হাজির হওয়ার মুহুর্তগুলো অনুভবের, সেসব না হয় গোপন থাকুক। চলে আসছি মসজিদে নববী প্রসঙ্গে। দশ বছর আগে দেখা মসজিদে নববীর সাথে এখনকার তেমন কোন পার্থক্য নেই। এখন সন্ধ্যা। চারিদিকে আলো ঝলমলে পরিবেশ।

সুবিশাল চত্বর ছড়িয়ে আছে মসজিদের চারপাশজুড়ে। মানুষ আসছে, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে নবীর প্রেমিক উম্মতেরা। সারা বছর এখানে একই রকম দৃশ্য। হজ্বের সময় ভিন্ন কথা। এখানে ওখানে বসে আছে অজস্র মানুষ।

পরিবারসহ বসে আছে অনেকে। তাদের সাথে ফ্লাস্কভর্তি চা, হালকা খাবার। মসজিদে নববী ঘিরে প্রিয়তম রাসূলের জন্য এ যেন মানববেষ্টনী। কি এক ভালোবাসা আর মায়ার টানে ছুটে আসছে মানুষ, দিন-রাত তারা সদাব্যস্ত ও কোলাহলমুখর করে রেখেছেন নবীর নগরীকে। বছরজুড়ে সবচেয়ে বেশি মুসলমান আসছেন ইন্দোনেশিয়া থেকে।

মিসর, পাকিস্তান, তুর্কি থেকে আসা অতিথিদের সংখ্যাও অনেক। আমি চারিদিকে তাকিয়ে থাকি। মদীনার সুশীতল বাতাস বড় স্নিগ্ধ ও মায়াময় মনে হয়। মদীনার প্রেমে রাসূলের টানে ছুটে আসা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মুখে চির প্রশান্তির হাসি আমাকে মুগ্ধ করে চলেছে। কোথাও হৈ হুল্লোড় নেই, চিৎকার চেঁচামেচি নেই, অথচ নানা বর্ণের নানা মানুষ একসাথে এ আঙিনায়- প্রিয়তমের সান্নিধ্য প্রাপ্তির অপূর্ব আনন্দ খেলা করছে মানুষগুলোর চোখেমুখে।

কি সৌভাগ্যবান এ প্রেমিকদল, আমিও কি আজ তাদের একজন!! চলবে... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।