আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচার আচার সমাচার

আমি ই লাদেন ভাই.. আপাতত বাংলাদেশে আছি। ওবামারে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি.. একছেপ্ট করলেই যামু গা..
পৃথিবীতে ঠিক যেদিন থেকে অপরাধের জন্ম হয়েছে ঠিক সেদিন থেকেই হয়তো শাস্তি বা বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টি। আদম সৃষ্টির পরেই তার কৃত প্রথম ভুলের জন্য শাস্তি স্বরূপ পৃথিবীতে প্রেরণের ঘটনা ছিলো স্রষ্টা কর্তৃক সৃষ্টির উপর করা প্রথম বিচার। আর পৃথিবীতে এই বিচার বা শাস্তি প্রদানের সুযোগ সব সময়ই শাসক বা শোসক গোষ্ঠীর হাতেই থাকে। কেননা নির্বিঘ্ন রাষ্ট্র পরিচালনায় তা খুবই জরুরি।

যে কোনো ধরণের অপরাধই হোক না কেন তা সুষ্ঠু বিচার না হলে তা যেমন ক্রমবর্ধমান হয় তেমনি অপরাধীও সুযোগ পায় নতুন কোনো অপরাধ সংঘটনের। সে কাৱণেই আমরা সাধারণ জনগন সবসময় বিচারের পক্ষে - তা গ্রাম্য সালিশে মীমাংসাই হোক কিংবা উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় গড়াক। আর সে বিচার জুতাচোর কিংবা সবচেয়ে বড় হীরা কোহিনুর চোর, যারই হোক। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ইতিহাসের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপই বটে। অপরদিকে ১/১১‌র পট পরিবর্তনের পর গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতায় আসীন হয়ে নতুন পথ চলাও কম যুগান্তকারী ঘটনা নয়।

এমন মিল থাকার কারণেই হয়তবা বর্তমান সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানা অপরাধের বিচার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতির জনকের হত্যাকারীদের ফাসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জাতি হয়েছে কলঙ্কমুক্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চার নেতা হত্যাকান্ড, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, পিলখানা হত্যাকান্ডসহ নানা অপরাধের বিচার কাজও চলছে পুরোদমে। এমন কি ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে এ সরকারের আমলেই প্রথম গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এ কাজে ৩০ বছর পর অপরাধের আলামত সংগ্রহ ও তদন্ত কাজে দেশ ভ্রমনে বের হয়েছে বিশেষ টিম।

আরোও নানাবিধ অপরাধের বিচার কাজ শুরু করতে বিভিন্ন বিষয়ে পূন:তদত্নের কাজেও হাত দিয়েছে সংসদীয় কমিটিগুলো। এতসব বিচারের ফাকে বাদ পরেনি কোন একটি বিশেষ পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনর বিচারও। যার দায়ে এরই মধ্যে পত্রিকা সম্পাদক সম্পাদনা ছেড়ে কারাভোগে ব্যাস্ত। সরকারের অপর বিশেষ কমিটি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সংবিধান বিচার-বিশ্লেষণে। আলোচিত সমালোচিত এসকল বিচার কাজের কাছে দুই ফারুক হত্যা, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতসহ রাষ্ট্রদ্রোহী নানা অপরাধের বিচার নিতান্তই গৌণ, যাদের প্রক্রিয়া আপন গতিতে চলমান।

সুযোগমত রিট আবেদনেও পিছিয়ে নেই সচেতন নাগরিকবৃন্দ্র। তাদের রিটে কোরবানীর সত্য-মিথ্যা ইতিহাস থেকে শুরু করে বোরকা পরা না পরার মত কঠিন সিদ্ধান্তগুলো উঠে আসছে। বাস্তবতা যাই হোক না কেন প্রয়োজনের তাগিতে আমরা আমজনতা সকল বিচারেরই পক্ষে থেকে মৌন সমর্থন দিয়ে আসছি। তবে চলমান এতসব বিচার কার্যের সার্বিক দিক বিচার-বিশ্লেষনে বিচারের দুটি দিক পাওয়া যায়, অর্থাত বিচারের ফলাফল সুবিচার ও অবিচার নামে দুটি দিকে বিভক্ত। যেখানে আমরা সবাই প্রথম প্রকারের পক্ষে ও দ্বিতীয় প্রকারের বিপক্ষে খাকি।

বিচার কাজে পটু বর্তমান সরকারের সকল বিচার কাজের ফলাফলেও এ দুটি দিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমরা যদি তা নিরুপনের প্রয়াস চালাই তবে তা কোন বিচারের মখোমুখি করার উপযোগী অপরাধ হবার কথা নয়। সুবিচারের উপমায় সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের শুরুর দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারুক হত্যাকান্ডকে উল্লেখ করতে হয়। যেখানে অপরাধ সংগঠনের সাথে সাথেই ঝটিকা অভিজান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়েছে এর সাথে জড়িত প্রায় অর্ধ সহস্র্র শিবির নেতা কর্মীকে। সেই সাথে মামলা পরিচালিত হচ্ছে ঘটনার মূল হোতা সংগঠনটিরর কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও।

আর একই দৃষ্টিতে চিন্তা করলে অবিচার বলা না গেলেও সুবিচার বঞ্চিত বলা চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র বকর, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়সার কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র রুবেল হত্যাকান্ডকে। আর সম্প্রতি রজযানের ইফতার প্রোগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু এই সুবিচার বঞ্চিতের তালিকাকে আরো ভারী করে তোলে। আবার পত্রিকায় প্রকাশিত কোন এক প্রতিবেদনে আদালতের অবমাননার দায়ে যখন কারাভোগ করতে দেখা যায় একটি পত্রিকার সম্পাদক, প্রতিবেদককে কিংবা কোন জেলার প্রশাসক কে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা, তাকে সুবিচার বলতে বাধ সাধে যখন সরকার দলীয় আইনজীবিদের দ্বারা খুবই নিকট অতীতে আদালত ভবনে চালানো হামলা ভাংচুরের ঘটনা বেমালুম ভুলে যায় সয়ং আদালত ও সরকার। আর অবিচার এর উপমায় সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সীমাহীন বিশৃংখলার বিচার কামনা করতে যেয়ে তুলনা করতে হবে সেই ঘটনার সাথে, যা ঘটেছিল কোন পরিচ্ছন্ন নগরীতে। সেখানে এক অন্ধ মহিলা পথ চলছিলেন তার পোষা কুকুর এর বেল্ট ধরে।

কিছু পথ চলার পর বিপত্তি ঘটাল কুকুরটি। পরিস্কার নগরীর পরিচ্ছন্ন পথটি সে নষ্ট করল মল ত্যাগ করে। অন্য পথচারীরা আপত্তি করলো না ভদ্রতার খাতিরে, কিন্তু তারা বেশিক্ষন এই ভদ্রতা ধরে রাখতে পারলো না। বিষ্ময়ের সাথে তারা দেখলো মহিলা এক টুকরো বিস্কিট বের করে অপরাধী কুকুরটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। বিরক্ত হয়ে কেউ একজন বলেই ফেলল- কেমন মহিলা আপনি..!! কই শাস্তি দেবেন উল্টো বিস্কিট সাধছেন বেয়ারা ছানাটিকে..! জবাবে অন্ধ মহিলা জানালেন- আসলে আামি কুকুরটির মুখ চেনার চেষ্টা করছি.. তারপর কষে এর পাছায় একটি লাথ্থি মারবো..।

সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সয়ং প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারী জনগনকে আশার আলো দেখানোর পাশাপাশি যদি এভাবে তার পোষা ছানাটির সকল অপরাধে বিস্কিট খাওয়তেই থাকেন তবে তাকে অবিচার বলা যেতেই পারে্। বিচার্-সুবিচার কিংবা অবিচার যাই হোক, জনসার্থে করা সব আচারই প্রয়োজন। তবে নানা সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় আমরা যারা খুড়িয়ে খুড়িয়ে জীবন অতিবাহিত করে চলেছি তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চালাতে থাকা সকল বিচার-আচার নিতান্তই অত্যাচার। কেননা এই জনতার কাতারেই আছেন ইভটিজিং এর কবলে আত্নহননকারী মেয়ের অভিভাবক। এ কাতারেই আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সন্ত্রাসের শিকার ছাত্রের মা।

সেই সাথে আছেন উশৃংখল ছাত্রের হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষক, আছে অভাবে তাড়িত গার্মেন্টস শ্রমিকসহ অনেকেই। যারা সবাই হয়তো বিচারের চেয়ে তাদের সমস্যার প্রতিকারকেই মূখ্য মনে করছে। দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা যে কোন সরকারেরই দায়িত্বশীলতার সাথে তা সম্পাদন করার কথা। যখন সে সরকারের অতিবাহিত সময়ে যানজট, গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, দলীয় লোকের সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যার মাঝে সরকারেরই উচ্চপদে অবস্থান করে কথায় কথায় অতীতে ঘটে যাওয়া কিংবা ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সব অপরাধের বিচার কাজকেই তাদের মূলকাজ মনে করা, আর তা নিয়ে কালক্ষেপন করা চলমান সমস্যার সমাধানে কতটুকু জরুরী তা বোঝা দুস্কর।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.