আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বোনের ধর্ষণের বিচার হয়না, কেবল আমাদের পিতৃহত্যার বিচার হয়

কেবল একজন নারীকে ভালবাস বধু হিসেবে আমার এক ভাতিজা আছে-বয়স ৩ প্রায় – আধো আধো কথা বলে, একদিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে । সে বোঝেনা চৌকাঠের কোন দোষ নাই, দোষটা তার। তাই যথারীতি সে আমার কাছে নালিশ করল এবং চোকাঠে তার সামনেই দুটা লাথি না মারা পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত দিল না। আজ বুঝতে পারছি আমাদের সকলের অবস্থাই অবুঝ শিশুদের মতই হয়ে যাচ্ছে। কে অপরাধী সেটা আমরা বুঝতে পারিনা।

রাস্তায় গাড়ির তলে পিষ্ট হলে অপরাধ রাস্তার - সে ভেঙ্গে গেছে কেন? তাই আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজ অবুঝ শিশুর মত আপনাদের কাছে কিছু অবুঝ নালিশ করব। জানি উত্তর দিতে পারবেন না। ১. প্রকৌশলবিদ্যা সম্পন্ন করার পর একবার বাড়িতে গেছি, আমার একে চাচাতো ভাই জিজ্ঞাসা করল "চাকরি-বাকরি কিছু হল?" বললাম জি । পরবর্তী প্রশ্ন আসল "কোথায়?" উত্তর দিলাম একটা সফটওয়ার ফার্ম এ । "সরকারী চাকরী পেলেনা?" , আমার সাদাসিধে উত্তর বেতন কম ।

চট করে বলে ফেলল - বেতন কম তো কি হয়েছে, ইনকাম আছে। আমি বুঝি বেতন কম হলেও কেন ইনকাম বেশি, আমরাও বুঝি, সবাই বোঝে। কিন্তু ব্যপারটা এখন অনেকটাই বৈধ হয়ে গেছে তাই বলতে দ্বিধা হয়না "বেতন কম হলেও ইনকাম আছে" । . সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হয়ে যখন কোন একটা বা একগোষ্ঠী দল সরকার গঠন করে তখন তারা একটা দায়িত্ব পায়। কিন্তু আমার চেয়েও অবুঝ নেতা সকল সেটাকে বলে ক্ষমতা।

তাই এই বিশেষ ক্ষমতার গরমে তারা তাদের দায়িত্ব টাকে ভুলে গিয়ে বারবার উচ্চারন করে "আমরা এবার ক্ষমতায় এসেছি" আর বিরোধী দল আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কেন আপনারা এটা বলেন না যে আমরা এবার দায়িত্বে এসেছি? ২. আমাদের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই যে বিশয়টা নিয়ে ভাবলেন তা হল নিরাপত্তা। খুবই ভাল কথা। তবে সেটা আমাদের নয়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের আজীবন নিরাপত্তা। ভাল লাগল, অন্তত একটা পরিবার তো তাদের জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছে এই ভেবে।

আমাদের দেশের পরিবারের সঙ্গা অনুযায়ী আমার পরিবারের সদস্য বলতে আমার ছেলে মেয়ে এবং আমার ছেলের ছেলে মেয়েরা। অর্থাৎ আমার মেয়ের ঘরের ছেলে মেয়েরা আমার পরিবারের সদস্য না। আরো খুলে বললে আমরা আমাদের দাদার পরিবারের সদস্য কিন্তু আমাদের নানার পরিবারের সদস্যনা। তাহলে সজিব ওয়াজেদ জয় কিভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে আজীবন নিরাপত্তার আওতায় আসে যেখানে আমরা সবাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হয়েও (কারন শেখ মুজিব আমাদের সকলের পিতা) সকালে ঘর থেকে বের হয়ে বিকেলে ঘরে ফেরার নিরাপত্তা টুকু পাইনা? ৩. বেশ কিছুদিন আগের কথা, বাড়ীতে গেছি। বাড়ী টা আমার অজোপাড়াগা বলতে পারেন।

একমাস আগের একটা পত্রিকার দুএকটা পাতা মাঝে মধ্যে বাদাম কিনলে দোকানদারের কাছে পাওয়া যায়। কিছু বাড়ীতে টেলিভিশন আছে তবে বিটিভি ছারা কিছু দেখা যায়না। সকালের সংবাদে জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধুর ক্ষুণিদের কয়েকজনের ফাসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। মনের ভিতরটা আনন্দে নেচে উঠল। অপরাধীর সাজা দেয়া অবশেষে শুরু হয়েছে।

সকালে প্রায় ৮ কিমি সাইকেল চালিয়ে নকিটস্থ এক বাজারে গিয়ে বসে রইলাম। হকার আসল ১১ টার দিকে। বহু হাতে পায়ে ধরে একটা পত্রিকা নিতে পারলাম তার কাছ থেকে। পড়া শুরু করতেই বয়োজ্যোষ্ঠ একজন এসে বলল দেখি পেপারটা। প্রথম পাতাটা তাকে দিয়ে দিলাম।

মাঝখানের একটা পাতা খুলতেই দেখি একটা ধর্ষণের সংবাদ। যতটা আনন্দ নিয়ে পত্রিকাট কিনেছিলাম তার পুরোটাই মাটি হয়ে গেল। আমাদের পিতৃহত্যার রায় ফাসির মাধ্যমে কার্যকর হল, আথচ সেইদিন আমার যে বোনটা ধর্ষণের শিকার হল তার বিচার আজও হলনা কেন? ৪. আমি একটা লাল সবুজ পতাকার ওয়ালম্যাট বানিয়েছিলাম। তার চারপাশে আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন তাদের ছবি লাগিয়ে রেখেছিলাম। মাঝে মাঝে দেখতাম শেখ মুজিব, ভাষাণী, মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, জিয়াউর রহমান, মনসুর আলী আরও অনেকের ছবি।

ভাল লাগত, ভাবতাম আমিও দেশের জন্য অনেক কিছু না পারি কিছু করব। একবার স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রচনার বিশয় ছিল যার মধ্যে একট ছিল বিশিষ্ঠ ব্যাক্তি সম্পর্কে ভাবনা - যেখানে বিশেষ ব্যাক্তিদের লিষ্ট এ শেখ মুজিবের পরের ব্যাক্তি টি ছিলেন জিয়াউর রহমান। এই অপরাধে আমাদের কয়েকজনকে ক্ষমতায় থাকা কয়েকজন অনুজের কাছে অসম্মানিত হতে হয়েছিল। তাদের দোষ দেই না।

দোষ আমাদের নেতৃবৃন্দের । বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়াকে বলি, জাতীয় শোক দিবস, যেদিন শেখ মুজিবকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সেই দিন আপনার কেক কেটে আনন্দের সাথে জন্মদিন পালন করা কি খুবই জরুরী? আপনার বিরোধী দলের লোক হিসেবে হিংসা না করে দেশের একজন বিশিষ্ঠ ব্যাক্তি হিসেবে অন্তত শোক সভায় যোগদান করতে পারেন। তার মাজারে গিয়ে দোয়া করতে পারেন। একবার আত্নত্যাগ করে দেখেন, এটা বাংলায় একটা নতুন ইতিহাস রচনা করবে। আপনারা ব্যাক্তিগত ইস্যু তৈরি করে ঈদের আগে সারাদেশে হরতাল ডাকতে পারেন, একবার খোজ নিয়ে দেখেছেন তাতে সাধারন জনগন কতটাই না হেনেস্তা হয়েছে? কতনা শিশু অপেক্ষায় ছিল তাদের বাবা ঢাকা থেকে আসার সময় তাদের জন্য নতুন জামা কাপড় নিয়ে আসবে হতে পারে সেটা ফুটপাতের দোকান থেকে কেনা, কিন্তু তারা সেটা পায়নি।

এই আবেগ আপনি যখন বোঝেন না তখন আপনি কেন আশা করেন জনগন আপনার বাড়িছারা করার কষ্টটা বুঝবে? আজ কেন আমাদের দেশে দেশাত্ববোধক গান নিয়ে রাজনীতি হয়। কেন একজন বলে প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, আরেকজন এটা শুনতেই পারেনা? প্রথম আলোতে এক লেখক লিখেছিলেন (নাম ভুলে গেছি) "আগে কারো সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতাম - ভালো আছেন? এখন জিজ্ঞাসা করি - বেচে আছেন? চলে যাওয়ার সময় বলতাম - ভাল থাকবেন, এখন বলি যেভাবেই থাকেন বেচে থাকবেন" । . আমাদের সবাইকেই মরে যেতে হবে । তাই ভয় করিনা, শুধু দোয়া করবেন ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ীর নিচে পড়ে, ডাকাত সন্দেহে পুলিশের গুলিতে, ছিনতাইকারী সন্দেহে পুলিশের সামনে গনপিটুনিতে যেন মরতে না হয়। যেভাইবেই থাকেন বেচে থাকবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।