আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি জীবন্ত পোষ্টার ...

আর একটি যুদ্ধ চাই
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম শহীদ নূর হোসেন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচার এর বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে তিনি একটি জীবন্ত পোষ্টার হিসাবে মিছিলের সামনে ছিলেন কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় মিছিলের উপর গুলি। সেই গুলি এসে পড়ে নূর হোসেনের বুকে। বায়তুল মোকাররমের প্রধান ফটকের কাছে লুটিয়ে পড়ে সময়ের সাহসী সন্তান নূর হোসেন। ক্লাস নাইনে পড়া সুমন নামের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে রিকশায় তুলে নিয়েছিল হাসপাতালে নেয়ার জন্য রিকসা’টা গোলাপ শাহ মাজারের কাছে আসতেই পুলিশের কয়েকটা গাড়ি এসে ঘিরে ফেলে তাদের।

কিশোর সুমনের কলার ধরে পুলিশরা তাকে টেনে রিকশা থেকে নামিয়ে নূর হোসেনকে টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে আরো দুজন শহীদের সাথে জুরাইন কবরস্থানে মাটিচাপা দেয়া হয় নূর হোসেনকে। নূর হোসেন এর বাবার নাম মুজিবর রহমান। স্কুটার চালক।

ঘটনার দিন নূর হোসেন এর পরিবার কিছুই জানতে পারে নি। পরদিন পত্রিকায় ছবি দেখে সবাই জানতে পারলো কি ঘটেছে তাদের ছেলে নূর হোসেন এর। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বার বার অনুরোধ করেও বাবাকে ছেলের খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশেরা। এমনকি নূর হোসেন এর লাশও একবারের জন্য দেখতে দেয়া হয়নি পরিবারের কাউকে। নূর হোসেন এর জন্ম ১৯৬১ সালে।

ঢাকার নারিন্দায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই নূর হোসেন ও তার পরিবার ৭৯/১ নং বনগ্রাম রোডের এই বাড়িতে থাকতেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝটিবুনিয়া গ্রামে। বনগ্রাম রোডের রাধা সুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর নূর হোসেন এর পড়ালেখা ছিল অষ্ট শ্রেনী পর্যন্ত। স্কুলের নাম গ্রাজুয়েট হাই স্কুল।

পড়াশোনা বন্ধ করে নূর হোসেন মটর মেকানিক্যাল কাজ শেখা শুরু করেন। নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন,তার নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরন করা হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার ও শহীদ নূর হোসন স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মু্রাল আছে। শহীদ নূর হোসন স্মরণে প্রকাশিত ডাকটিকেট শহীদ নূর হোসন স্মরণে জিরো পয়েন্টে স্থাপনাটির নাম হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার শহীদ নূর হোসন স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মু্রাল জীবন্ত নূর হোসেনকে স্বৈরাচারী ও তার দোসররা যতটা ভয় পেয়েছিল, তারচেয়ে বেশী ভয় পেয়েছিল তাঁর লাশকে। আর সে কারণেই গুম করতে চেয়েছিল তারা নূর হোসেনকে।

একই কারণে রাতের আঁধারে মাটিচাপা দিয়েছিল তারা নূর হোসেনকে - অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেএকজন নূর হোসেনকে হত্যার করার পর সারা দেশে তাই জেগে উঠেছে হাজার হাজার নূর হোসেন। নূর হোসেনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ফলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আরোও ত্বরান্বিত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় গণতস্ত্রকে স্বৈরাচারের বুটের তলা থেকে মুক্ত করতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারপর ঠিক তিন বছর পরেই ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেন। আমরা,আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি মনে রাখতে পারবো শহীদ নূর হোসেন এর আত্মত্যাগকে?আমরা কি শহীদ নূর হোসেনকে ভুলতে বসেছি?আমাদের গণতন্ত্রের রাজপুত্রকে কি ভুলে যেতে দেয়া যায়?কিন্তু গণতন্ত্র কি আজো প্রকৃতই মুক্ত হয়েছে?নূর হোসেনের আত্মার কাছে আজ আমরা কি জবাব দিব?কেউ কি বলতে পারেন ? শহীদ নূর হোসেন দিবসে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ......
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.