আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক উপন্যাস - দিনও বসন্ত ছিলো-(৫)



বুক ধক্ ধক্ করছে মুসকানের। সে বুঝতে পারছে তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও সে তার সেলফোনটি শক্ত করে ধরে রাখলো কানের সাথে। ওপাশ থেকে কম্পাস বললো, ‘ইয়েস। ’ মুসকান নিরুত্তর! ‘হ্যালো!’ মুসকান বাকরুদ্ধ! চেষ্টা করেও গলা দিয়ে শব্দ বের করতে পারছে না।

ওপাশ থেকে আবারো ভেসে আসলো সেই ভরাট কন্ঠ- ‘হ্যা-----লো! কে বলছেন প্লিজ!’ ‘মুসকান। ’ ‘মুসকান? আমি কি আপনাকে চিনি?’ ‘কথা বলার জন্য এটাকি খুব বেশি জরুরী?’ ‘দেখুন মিষ্টা..... স্যরি, ‘মুসকান’ নামের আগে কী বসবে? মিস না মিষ্টার?’ ‘আপনার কী মনে হয়?’ ‘আমার মনে হওয়ার সাথে তো আপনার শারীরিক পরিবর্তন সম্ভব না। আপনি যা, আপনি তো তাই। ’ ‘আমার গলার আওয়াজ শুনে বুঝা যায় না?’ ‘স্যরি, আজকাল অনেক ছেলেও মেয়েদের মত চিকন গলায় কথা বলে। আবার কিছু কিছু মেয়ের গলার আওয়াজ শুনলে মনে হবে যেন ফাঁটা মুলিবাঁশের শব্দ।

’ ‘আমার আওয়াজকে কেমন বাঁশের শব্দ মনে হয়?’ কয়েক সেকেন্ড কেউ আর কোনো কথা বললো না। এক সময় কম্পাস বললো- ‘আপনার সাথে কি আমার কখনো দেখা হয়েছে?’ ‘আমার সাথে আপনার দেখা হয় নি, তবে আপনার সাথে আমার হয়েছে। ’ ‘দেখুন, আমি আপনার কথার মাথামুন্ডু তো কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ, ঝেড়ে কাশুন। ’ ‘ঝেড়ে কাশার জন্য আমাদের একান্তে দেখা হওয়া দরকার।

’ কম্পাস বিব্রত বোধ করতে লাগলো। মেয়েটি কে? আর তার পেছনেই বা লেগেছে কেন? ওপাশ থেকে আবারো ভেসে আসলো মুসকানের কন্ঠ- ‘হ্যালো?’ কম্পাস নিশ্চুপ। ‘হ্যা---লো। শুনতে পাচ্ছেন আমাকে?’ ‘হুঁ। ’ ‘তাহলে কথা বলছেন না কেন?’ কম্পাস বললো, ‘আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো কে আপনি?’ ‘বললাম তো, আমি মুসকান।

’ ‘স্পেসিফিক পরিচয় দিন। ’ ‘ইডেনে অনার্স করছি। সেকেন্ড ইয়ার। ’ ‘আর?’ ‘বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ’ ‘আর?’ ‘এত আর আর করছেন কেন? মনে হচ্ছে যেন ভাইবা পরীক্ষা নিচ্ছেন।

’ কম্পাস বললো, ‘আপনি আমার নাম্বার পেয়েছেন কোথায়?’ ‘নাম্বার কোথায় পেয়েছি, সেটা কি খুব জরুরী?’ ‘অবশ্যই জরুরী। ’ ‘যদি বলি স্বপ্নে পেয়েছি?’ ‘স্বপ্নে পেয়েছেন? ফাজলামী করেন, না?’ ‘দেখুন, আপনি আমাকে শুধু শুধুই গাল দিচ্ছেন। এটাকি ঠিক হচ্ছে? একটি সুন্দরী তরুণী মেয়ে ভদ্রভাষায় আপনার সাথে কথা বলছে আর আপনি তাকে ফাজিল বলে গালি দিচ্ছেন, ব্যাপারটি খারাপ দেখায় না? পরে কিন্তু আপনার নিজেরই খারাপ লাগবে। নিজেকে অপরাধী মনে হবে। ’ কম্পাস ভেবে পেল না কী বলবে? এই ধরণের কেইসে সে আগে কখনো পড়ে নি।

ওপাশের মেয়েটি আবারো বললো- ‘কী হলো! এখনি খারাপ লাগতে শুরু করেছে না কি?’ কম্পাস বললো, ‘আপনার কথা কি শেষ হয়েছে?’ ‘আপাতত। ’ ‘আপাতত মানে কি?’ ‘আপাতত মানে হল এখনকার মত কথা শেষ হয়েছে। পরে আবার হবে। ’ ‘পরে আবার কথা হবার দরকার কী?’ ‘আছে। দরকার আছে।

সেটা যথা-সময়েই আপনাকে জানানো হবে। আজ তাহলে রাখছি। ’ কম্পাস বললো, ‘শুনুন...’ ‘জ্বী, বলুন। ’ ‘আমি কি আপনাকে একটা অনুরোধ করতে পারি। ’ ‘হ্যা, পারেন।

’ ‘অনুরোধটা হচ্ছে আপনি ফোন কেটে দেয়ার পর লাষ্ট ডায়াল নাম্বারটা একটু চেক করবেন?’ ‘কেন?’ ‘কারণ, আমার বিশ্বাস আপনি ভুল করছেন?’ ‘ভুল করছি?’ ‘হ্যা। ’ ‘কীভাবে?’ ‘আমার মনে হচ্ছে আপনি যার সাথে কথা বলার জন্য ফোন করেছেন, সে আমি নই। অন্য কেউ। ভুলে আমার নাম্বারে চলে এসেছে। আপনি যাকে ফোন করেছেন, তার নাম্বারটি ভুলক্রমে আমার নাম্বারে ডাইভার্ট হয়ে গেছে।

আবার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম সমস্যার কারণেও এটা হতে পারে। ’ মুসকান বললো- ‘আপনি মিষ্টার কম্পাস না?’ ‘হ্যা। ’ ‘পিতা চৌধুরী আমানুল্লাহ কবীর?’ ‘হুঁ। ’ ‘মা মরহুমা জাহানারা বেগম?’ ‘হুঁ। ’ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স কমপ্লিট করেছেন।

বাবার সাথে থাকেন না। চাকরি খুঁজছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। আপনার মায়ের আরেক বোন আছেন। উনার বাসা উত্তরায়।

উনার নাম সুমনা। আপনি ডাকেন সুমু খালা। আপনার খালাত বোনের নাম ঝুমু। অনার্স পড়েছে। রাইট?’ কম্পাস বিব্রতবোধ করছে।

কোনো কথা বলতে পারছে না। মুসকান বললো- ‘কী বুঝলেন? আমি কি ভুল নাম্বারে রিং করেছি। ’ কম্পাস বললো, ‘সত্যিকরে বলুন তো আসলে আপনি কে? কী চান আমার কাছে?’ মুসকান বললো, ‘প্রথম দিন এত কথা ভাল না। ’ কম্পাস বললো, ‘আমি আপনাকে আরেকটি অনুরোধ করতে চাই। রাখবেন?’ ‘আগাম বলা যাচ্ছে না।

আগে শুনি। ’ ‘আপনি দয়া করে আর আমাকে ফোন করবেন না। আমি মেয়েদের সাথে জমিয়ে কথা বলা টাইপ ছেলে না। আপনি কি আমার উপর এই দয়াটুকু করবেন?’ মুসকান বললো, ‘না। ’ বলেই ফোন রেখে দিল।

ফোন রেখে নিজের কথাবার্তা ও আচরণে মুসকান নিজেই অবাক হয়ে গেল। এত কথা সে বললো কী করে? সে তো এমন মেয়ে না। তাহলে আজ তার কী হয়েছে? এমন গায়ে পড়া নির্লজ্জ ধরণের কথা বার্তা সে বললো কী করে? কম্পাস পুরোপুরি বিব্রত ও বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। সে ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটি কে হতে পারে? কী চায় তার কাছে? আর তার পিছুই বা নিয়েছে কেন? আজকাল প্রতারণার কত কেচ্ছা-কাহিনী শুনা যায়। মেয়েদের ব্যবহার করে প্রেমের ফাঁদ পেতে বড়লোকের ছেলেদের কাবু করা হয়।

তারপর আস্তে আস্তে সামাজিক সৌজন্যতার বিচারেও অন্যায় ও দৃষ্টিকটু মুহুর্তের মঞ্চ তৈরি করে তরুণকে আহ্বান করা হয় মঞ্চে আরোহণ করতে। তারুণ্যের উন্মাদনায় বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাওয়া ছেলেটি তখন পা দেয় প্রতারকদের বিছানো জালে। পা আটকে যাবার পর সরাসরি ব্লাকমেইল। মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায়। এটা চাঁদাবাজী নয়, ইজ্জত রক্ষার গ্যারান্টিপত্রের বাধ্যতামূলক ফিস।

এরপর ছেলেটি আর অই অশুভ চক্রের কবল থেকে বের হতে পারে না। অবশ্য একই ব্যাপার মেয়েদের বেলায়ও ঘটছে। কম্পাস ভাবছে এই মেয়েও তেমন কোনো চক্রের সদস্য কি না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ইনফরমার তাদেরকে ভুল তথ্য দিয়েছে। কারণ সে মেয়েদের মনভুলানো কথায় মোমের মত গলে যাওয়া টাইপ ছেলে না।

তার বাবা কোটিপতি হলেও সে বাবার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছে। তার সম্বন্ধে এত কথা যে মেয়েটি জানে, তার কাছে এই তথ্য গোপন থাকার কথা নয়। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা হতে পারে এই যে, ছেলেকে ফাসিয়ে বাবাকে ব্লাকমেইল করা। বাবা নিশ্চয় চাইবেন না সোসাইটিতে মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাক। আর ছেলে বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও বাবা তো আর করেন নি ..চলবে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।