আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্ন বাঁচার। ( ছোট গল্প)

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

লেখাপড়া না জানার যন্ত্রনা অনেক। তা সেটা লেখাপড়া করার সময় কেই বা আর বুঝতে পারে? বারেক এর সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়।

গ্রামের ছেলেদের পক্ষে লেখাপড়া করাটা একটু কঠিনই। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে বারেক এর ভাই জাভেদ যে এত বড় ডাক্তার? এফসিপিএস পাস করা? আরেক ভাই তো আবার ব্যাঙ্কে চাকরি করে। কথা উঠতেই পারে বারেক তাহলে ফাঁকিবাজ ছিল। লেখাপড়া করেনায়। লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চরে সে।

জাভেদ আর ফারুক দুই ভাই তাহলে গাড়ি ঘোড়া চড়বে আর বারেক গ্রামে থাকবে ব্যাপারটা তাহলে মেনে নেওয়া যায়? সমস্যা আসলে এখন এদের কাউকে নিয়েই না। সমস্যা বারেক এর ছেলে লিটনকে নিয়ে। লিটন যে কিনা গ্রামের স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছিল তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ঢাকায়। উদ্দেশ্য হয় চাচার বাসায় নাহলে ফুপুর বাসায়। তিনি ভাইয়ের পর বারেক এর দুই খানা বোনও আছে।

দুইজনেই ঢাকায় এবং বারেক এর এহেন আচরনে সবাই ত্যক্ত এবং বিরক্ত। কোন কিছুইতেই তাদের অনুরক্ত করা যাচ্ছেনা কারন পরের ছেলেকে কি আর ঘরে রাখা যায়। অন্যের ছেলেকে কি পালা যায়! বুঝলাম বারেক দাদা আমাদের জন্য এককালে অনেক কিছু করেছেন। তাই বলে এখন সবার ঘর সংসার আলাদা। বারেক দাদার এটা অবশ্যই বোঝা উচিত।

বারেক দাদা মনে কষ্ট পান। কষ্ট পেতেই পারেন। জাভেদ আজকে ডাক্তার। ৩০ বছর আগে ছিলনা। ফারুক আজকে ব্যাঙ্কে চাকুরি করে, ৩০ বছর আগে করত না।

তখন যে তাদের নুন আনতে ভাত ফুরায় অবস্থা। গ্রামে থাকে সবাই। জাভেদ এর ছিল পড়াশোনার ভারি শখ। বারেক কোনোমতে মেট্রিকটা পাশ করল আর কি। একেবারেই কোনো রকমে, গ্রামের ছেলে যদ্দুর করতে পারে আর কি।

বলা বাহুল্য গ্রামের ছেলে ফার্স্ট হয়না ব্যাপারটা এমন না। কিন্তু যারা সেটা হতে পারেনা তাদের অবস্থা আবার খুব খারাপের দিকে। সৌদিয়া আরবে নাকি মধ্যবিত্ত বলে কিছু নাই। হয় বড়লোক নাহলে গরীব। সেরকম ব্যাপার।

হাতে গোনা কয়েকজন খুব ভালো করে কিন্তু বেশির ভাগেরি অবস্থা খারাপ। যাকগে সৌদি এর কথা দেখি বলে ফেললাম!! হা ম্যাট্রিক দেওয়ার পর পাশের বাড়ির আব্দুল হাইয়ের থেকে বুদ্ধি ধার করা হল। দরকার ছিল বৈকি। আব্দুল হাইয়ের যেখানে ৫ বছর আগে ভিটা বলতে খালি কোনোরকমে একটা বাড়ি সেখানে তিনতলা দালান প্রায় হয় বলে। পুরা গ্রামে এক মাত্র সে বাসাতেই টিভি।

তাই আব্দুল হাই যখন প্রস্তাব দিল বারেককে সৌদি পাঠানোর তখন সেটা করাই লাগে। সৌদি আরবে তেলের খনি টাকা পয়সা অনেক কিন্তু বাংলাদেশি যারা যাবে তারা যে সবাই শ্রমিক। মানে বারেক যেভাবে গেল আর কি। এরপর অবস্থা ভাল হওয়া শুরু। জাভেদ ডাক্তারি পড়বা অনেক খরচ তা সমস্যা নেই বারেক টাকা দিবে।

দুই বোন রিমি আর সিমি। তাদের বিয়ে দিতে হবে সমস্যা নেই এক ভাই সৌদি থাকে। সে টাকা পাঠাবে আর বিয়ে হবে। কারন সৌদিতে যে থাকে সে সবসময় গৌরী সেন। ছোট ভাই ফারুক ঢাকা শহরে থেকে পড়ালেখা করবে মাসে মাসে খরচ পাঠায় বারেক।

দিন যায়, সময় যায়, জল অনেক পথ গড়ায়, জলের নিয়ম এটা, গড়িয়েই যায় আর সময়ের নিয়ম হল জলে মত করে বয়ে যাওয়া। এর মধ্যে বারেক বিয়ে করে অবশ্য। বউ গ্রামেই থাকে। ততদিনে অন্য ভাইবোনেরা সবাই ঢাকা শহরে চলে এসেছে। সৌদিতে কাজ করতে গিয়ে এর মধ্যে পা ভঙ্গে ফেলল বারেক।

উপর থেকে পড়ে গেল। ঢাকায় এল। ফিরে গিয়ে জানতে পারল তাকে আর কাজে রাখা হবেনা। আবার দেশে ফিরে এল। এরপর থেকেই ভাই বোনদের আচরন পরিবর্তন হতে লাগল।

কারন অনেক। এখন যে দেওয়ার সময় পাওয়ার সময় নয়। ভাইবোন অবশ্য খুব যে খারাপ তা না কিন্তু ঐযে নিয়তি খারাপ, অথবা আপন গতিতে চলমান সময় খারাপ। বারেক গারেম জমিজমা দেখা শুরু করল, ছোটখাট ব্যাবসা শুরু করল। কিন্তু নিজের অনেক ভাইবোনদের অনেকেই যে তাকে চিনেও না চিনার ভান করে।

বুঝতে পারে বারেক। লেখাপড়া না শিখার যন্ত্রনা বুঝতে পারে। কেন সবাই তাকে এমন অবজ্ঞা করে বুঝতে পারে। নিজের ছেলে লিটনের ক্ষেত্রে এমনটা হতে দেওয়া যায়না। কিন্তু ঢাকা শহরে থাকার মত অবস্থা এখন নাই।

লিটনকে যেভাবেই হোক ঢাকায় পাঠাতে হবে। কোন ভাই বোন লিটনকে রাখতে রাজি হলনা। তারপরে এক বোনের কাছে কোনভাবে দিয়ে আসল। লিটনের মন টিকেনা। কিন্তু একেবারে অবুঝ না।

বাবার অসুবিধা বুঝতে পারে। মেট্রিক রেজাল্ট দিল। চার দশমিক শুণ্য শুণ্য। বারেক স্বল্প জ্ঞ্যান নিয়েই বুঝতে পারে অবস্থা সুবিধার না। জিপিএ জিনিসটার সাথে পাঁচ শব্দটা ভাল তার ভাই বোনের ছেলেমেয়েরা সেটাই পায়।

বারেক থেমে থাকতে চায় না। সে লিটনকে গ্রামে নিয়ে আসল একদিন। পথিমধ্যে নিজের চোখের জল ফেলল লিটনের সামনে। পড়ালেখা নাই দেখে কতবার তাকে কত অপমান সহ্য করতে হয়। তার আপন ভাইবোনদের জন্য সে কত কিছু করছে তারাই আজ অপমান করে।

লিটন বুঝার চেস্টা করল। সব কিছু শুধু চেস্টা দিয়ে হয়না কিন্তু চেস্টার শুরু করা লাগে। লিটনকে সাইন্স থেকে কমার্সে আনা হল। কমার্স কলেযে ভর্তি করা হল। বারেক মাসে মাসে টাকা পাঠায়।

এখন বাবা আর ছেলের মধ্যে বেশ হৃদ্যতা হয়েছে। তবে বারেক এর মধ্যে শুনল লিটন সিগারেট ধরেছে। কষ্টে বুক ফেটে গেল। মোবাইলে কথা হল। নাহ লিটন সিগারেট ধরেনি।

মাঝখানে কবে জানি লিটন কোন মাসে টাকা বেশি চাইল। বারেক শুনতে পেল লিটন তিনদিন ক্লাস ফাকি দেওয়ায় এই অবস্থা। তারপরেও বারেকের বিশ্বাস লিটন রেজাল্ট ভাল করবে। এইচএসসিতে লিটন চার দশমিক আট পেল। বারেক আবারো কষ্ট পেল।

তবে তাকে বুঝানো হল এই লেভেলে এটা খারাপ রেজাল্ট না। আর যেহেতু কমার্স। এবার লিটনকে আগে বাড়াতে হবে। এর মধ্যে অন্য ঝামেল বাধল। লিটিন তার যে ফুপুর বাসায় ছিল তার ছেলের রেজাল্ট লিটনের থেকে খারাপ হয়ে গেল।

অথচ এসএসসিতে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া। ফুপুর আর কাহাতক সহ্য হয়। বলা শুরু করল সব লিটনের দোষ। লিটনের কারনে তার ছেলে খারাপ করসে। বারেককে বলল লিটনকে নিয়ে যেতে।

বারেক আবারো মনে কষ্ট পেল। লিটনকে গ্রামে নিয়ে এল। বারেক ঠিক করল তার জমিজমা সব বিক্রি করবে। লিটন ঢাবি তে না টিকলে যাতে প্রাইভেটে পড়ানো যায়। একদিন বিকালে বারেক লিটনকে খুঁজতে গয়ে দেখে বাজারে লিটন বসে সিগারেট খাচ্ছে।

মাথায় রক্ত উঠে গেল বারেক এর। মারতে মারতে লিটনকে নিয়ে আসল বাসায়। অনেক মারল। লিটন চুপচাপ স্বভাবের। কিছুই বলল না।

ঠিক এই সময়ে বারেক খুব মধুর একটা খবর শুনল। তার আধা ভাঙ্গা মোবাইলে ফোন আসল। লিটন ঢাবি তে গ ইউনিটে ৩১৩। ৩১৩ কি বারেক জানেনা। তবে হা বুঝতে পেরছে লিটনের হয়ে যাবে।

যেহেতু এটা হিন্দি সিনেমা না তাই গল্পের খুব ড্রামাটিক এন্ড টানা হলনা। বারেকের স্বপ্নপূরনের সূচনা দিয়ে গল্প শেষ হল। ২০ বছর পরের ঘটনায় অবশ্য বারেক তার নাতিকে খুব আদর করে ঠিকি বলেছিল, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। এই যে একটু আগে তোমার আব্বার গাড়িতে চড়ে আসলাম। কারন তোমার আব্বা লেখাপড়া করা।

দাদাভাই। তুমিও লেখাপড়া কইরো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.