আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়েতে রাজি ছিল না ফাতেমা

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি।

গত শুক্রবার ফাতেমার বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু এ বিয়েতে রাজি ছিল না ফাতেমা। ফাতেমার মনের অনিচ্ছাই তার বিয়ের পিড়ি থেকে ফিড়িয়ে এনেছে। তাকে ফিড়িয়ে দিয়েছে তার সুন্দর জীবন।

এখন ফাতেমা আবার বিদ্যালয়ে যাবে। পুনরায় শুরু হবে তার শিক্ষা জীবন। গল্প নয়, সত্যি, আর এমন কাহিনী ঘটছে প্রতিদিন। তবে অন্যসব ঘটনার চেয়ে এখানে একটু তফাৎ রয়েছে। এখানে ফাতেমা তার সমাজকে বুঝিয়ে দিয়েছে মেয়েদের ইচ্ছাশক্তিই পারে সমাজ থেকে কুসংষ্কার দূর করে শিক্ষার আলো জ্বালাতে।

তথা সমাজে বাল্য বিবাহ রোধ ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের মোহাজেরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুর রব, তার স্ত্রী জাকিয়া বেগম ও তিন কন্যাসন্তান নিয়ে তাদের পরিবার। বড় মেয়ের নাম মোছা. ফাতেমা আক্তার। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরিক্ষার সনদপত্র অনুযায়ী তার বয়স ১৩ বছর। ফাতেমা তার নিজগ্রামে ফুলছড়া মোহাজেরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে (অ –) গ্রেড নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

পরে তার পার্শবর্ত্তী গ্রামের বিষামণি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। সেখানে এক বছর যেতে না যেতেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বর্তমানে ফাতেমা সপ্তম শ্রেীর ছাত্রী। শ্রেণীতে তার রোল নং হচ্ছে ৩। ফাতেমার মেধার সুষ্ঠু বিকাশ ও বিন্যাশের চেষ্টায় যখন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ এলাকাবাসী তৎপর ঠিক তখনই ফাতেমার বিয়ে ঠিক করেন তার পিতামাতা।

পার্শবর্ত্তী গ্রাম বিষামণি বাজারের এক তরুন সিডি-ভিসিডি ক্যাসেটের ব্যবসায়ী এলাকার মজিদ মিয়ার ছেলে তৌহিদ মিয়া (২২) এর প্রস্তাবে সংসারের নানা অভাবের তাড়নে ফাতেমার বিবেক-বুদ্ধিহীন পিতামাতা কারো সাথে কিছু পরামর্শ না করেই ফাতেমার বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা। জানা যায়, তৌহিদ গত বছরেও একটি বিয়ে করেছে। ফাতেমা এ বিষয়টি নিয়ে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে এবং এ বিয়েতে তার মত নেই বলে জানায়। এসময় শিক্ষকরা ফাতেমার পিতামাতাকে বুঝাতে ব্যার্থ হন। তারা ফাতেমার বিয়ে বন্ধ করতে বললে ফাতেমার বাড়ির আত্মীয় সজ্বনরা উত্যেক্ত হয়ে উঠে।

এমন কি ফাতেমার বিদ্যালয়ে যাওয়াও বন্ধ করে দেওয় হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূপুর রাণী সেন শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল (বামাকা) এর পৌরশাখা কার্যালয়ে এলাকার বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সাহায্য কামনা করেন। বামাকা কর্তৃপক্ষ শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মদের সাথে যোগাযোগ করেলে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ফাতেমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কামাকা’র নেতৃবৃন্দরা পুলিশসহ ফাতেমার বাড়িতে উপস্থিত হন। সেখানে তারা ‘‘বাল্য বিবাহ আইনানুগ অপরাধ এবং একটি সামাজিক ব্যাধি’’ শীর্ষক বিভিন্ন অলোচনায় বাল্য বিবাহের কুফল, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য, প্রজনন, শিক্ষা, চিকিৎসা তথা সমাজে নারী অধিকার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফাতেমার পরিবারের সদস্যদেও বুঝাতে সক্ষম হন। তারা এ বিয়ে বন্ধ করে দেন এবং পুনরায় ফাতেমাকে বিদ্যালয়ে পাঠাবার অঙ্গিকার করেন।

ফাতেমার মা জাকিয়া বেগম বলেন, “আমরা অশিক্ষিত, তাই না বুঝে এ ভুল করেছিলাম। আজ আমরা যা জানলাম তা অন্যদেরকেও বুঝাবার চেষ্টা করবো। আমাদের জানামতে আর কোন মেয়েকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিতে দেবো না। ” এসময় ফাতেমার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন, বামাকা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনুজ কান্তি দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ ফয়সল মানিক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ডা. এমদাদুর রশীদ, সদস্য তাপস ঘোষ, মাহফুজুর রহমান সুমন, শ্রীমঙ্গল থানার এ.এস.আই আবুল হাসান, ও শিক্ষক মো. ইব্রাহীম খাঁ প্রমুখ। ফাতেমা যেভাবে নিজেই নিজের বিয়ের প্রতিবাদ করেছে তার ভূয়সী প্রসংশা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মদ বামাকা কে বলেন, নারীর অধিকার রক্ষায় নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বামাকা’র সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতি সন্তোষ্ট হয়ে তিনি আরও বলেন, বামাকা কর্তৃক এরকম কর্মকান্ডে উপজেলা প্রশাসনের সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।