ঈদের চলচ্চিত্র সাড়া জাগিয়েছে। দর্শক উপচে পড়েছে প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখতে গিয়ে নানা সমস্যায় নাকাল হচ্ছে দর্শক। কালোবাজারির দৌরাত্দ্য, এসি নেই, সিট ও টয়লেটের অবস্থা নাজুক, পতিতা এবং মাদকসেবীদের উপদ্রবের অভিযোগ করছেন দর্শকরা।
রাজধানীর একটি প্রেক্ষাগৃহে ঈদের দিন সপরিবারে ছবি দেখতে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। তার বর্ণনায় প্রেক্ষাগৃহের সামনে নেমে প্রথমেই কালোবাজারির শিকার হতে হলো। জোর করে সে টিকিট বিক্রি করতে চায়। জামা-কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে। তার হাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে কাউন্টারের দীর্ঘলাইনে দাঁড়ালাম। সামনের পাঁচজন টিকিট নেওয়ার পর জানানো হলো টিকিট শেষ। অগত্যা কালোবাজারির দ্বারস্থ হতে হলো। চারগুণ বেশি দামে টিকিট কিনলাম। এবার হলের ভেতর ঢোকার পালা। পরিবার নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। বখাটে টাইপের বেশ ক'জন যুবক পরিবারের দিকে আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছে এবং অঙ্গভঙ্গি করছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। হলের ভেতরে ঢুকতেই ভ্যাপসা গরম আর বিশ্রী গন্ধ। টিকিটে এসির চার্জের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে পাখাও নেই। সিটে বসতে গিয়ে মনে হলো, যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। কাভার ছেঁড়া নারিকেলের ছোবড়া আর তুলা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
এদিকে ঝাপসা পর্দা আর কানফাটা শব্দে ছবি চলছে। সঙ্গে দর্শকদের শিস ও চেঁচামেচির শব্দে বধির হওয়ার জোগাড়। অথচ শোনা গিয়েছিল ডিজিটাল ছবি ডিজিটাল সিনেমা, ঝকঝকে পর্দা, নিখুঁত শব্দ। বিরতির সময় টয়লেটে ঢুকতে গিয়ে নাক চেপে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে হলো। অবশেষে ছবি শেষ হওয়ার আগে অপূর্ণ তৃপ্তি নিয়েই প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। এ অভিযোগের বিষয়ে প্রেক্ষাগৃহের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেল। আনন্দের ব্যবস্থাপক শামসুল আলম বললেন, ঈদের আগে শবেকদরের বন্ধের দিন সংস্কারের মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহকে দর্শক উপযোগী করা হয়েছে। একই কথা বললেন আরও কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এমনিতেই ছবি চলে না, লোকসান দিয়ে হল চালাচ্ছি। কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সংস্কার করার টাকা পাব কোথায়। ব্যাংক লোন নিয়ে সংস্কার করলে সে টাকা ফেরত দেব কীভাবে।
প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন দর্শকের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব কথা ঠিক নয়। দেশে এখন প্রায় ৫০০ প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয়েছে। পরিবেশেরও উন্নতি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কিছু প্রেক্ষাগৃহ হয়তো পুরনো আমলের সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। তাই বলে ছবি দেখার একেবারে অযোগ্য নয়। ভালো ছবি পেলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ছুটে আসে। এর প্রমাণ মনপুরা। তবে পতিতা, বখাটে কিংবা নেশাগ্রস্তদের উপদ্রব ঠেকানো, টয়লেট ও সার্বিক পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের। ব্যবসা করতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যেমনটি করেছে স্টার সিনেপ্লেঙ্, মধুমিতা, বলাকাসহ আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহ। এগুলোতে দর্শক স্বস্তিতে ছবি দেখতে যেতে পারছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।