আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেন্টার আছে গবেষণা নেই

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক গবেষণা সেন্টার থাকলেও নেই মানসম্মত গবেষণা। বছরের পর বছর কম বেশি বরাদ্দের টাকা এলেও হয় না গবেষণা। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা সভা-সেমিনার বা সিম্পোজিয়াম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। একসময় গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের বা তত্ত্বের উদ্ভাবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ছিল। এখন সেই ঐতিহ্যও নেই।

মানসম্মত গবেষণা কার্যক্রমে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা আর শিক্ষকরাজনীতির কারণে গবেষণা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। একেকটি গবেষণা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাকাল দুই যুগেরও বেশি হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি। এ খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, অনিয়ম, আন্তরিকতা আর তত্ত্বাবধানের অভাব এর মূল কারণ।

প্রতি বছর গবেষণাকেন্দ্রগুলোর জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকা গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে গবেষণার জন্য এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আর ২০১০-১১ অর্থ বছরে দেওয়া হয় এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ৩০টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য পাঁচ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর আগের বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, যে সামান্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা-ও ঠিকমতো কাজে লাগে না। বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করার পরও শিক্ষকদের গবেষণার কোনো অগ্রগতি নেই। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই গবেষণার চেয়ে রাজনীতি করতে আগ্রহী বেশি। তারা আরও জানান, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে গবেষণা সেন্টার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগ্রহ দেখা গেলেও নিয়মিত প্রকাশনার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

গবেষণার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গবেষণা হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। তবে উপযুক্ত মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। তা ছাড়াও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দও নেই এই খাতে। বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে গবেষণার কাজ করা হচ্ছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত গড়ে ওঠা গবেষণাকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, ব্যবসায় গবেষণা সংস্থা, বসু গবেষণাকেন্দ্র, জীববিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র, উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণাকেন্দ্র, বাংলা চরিতাভিধান গ্রন্থ প্রণয়ন, গোবিন্দদেব দর্শন গবেষণাকেন্দ্র, ব-দ্বীপ গবেষণা কেন্দ্র (ভূগোল), সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি, বায়ো টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার, আরকাইভ ও ইতিহাস গবেষণাকেন্দ্র, নগর গবেষণাকেন্দ্র, নজরুল গবেষণাকেন্দ্র, সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চ, দুর্যোগ গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্র, নাজমুল করীম স্টাডি সেন্টার (২০০০), বাংলাদেশ সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্র, ড. সিরাজুল হক ইসলামী গবেষণাকেন্দ্র (২০০২), সেন্টার অব অ্যাডভান্সড রিসার্চ ফর আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, জাপান স্টাডি সেন্টার, ভূমিকম্প প্রকল্প, অধ্যাপক দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য গবেষণাকেন্দ্র (২০০৫), অরগানিক পলিউটেন্টস রিসার্চ সেন্টার, সেন্টার ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভিশন (২০০৭), সেন্টার ফর ইনটান-রিলিজিয়াস ডায়ালগ (২০০৮) এবং সেন্টার অব বুদ্ধিস্ট টেরিটেইজ কালচার (২০০৮)।

এর মধ্যে কতগুলো গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে যেগুলো আর্থিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণার জন্য যে অর্থ দিচ্ছে তার প্রায় সবটাই ব্যয় হয় গবেষণা কেন্দ্রের প্রশাসনিক কাজে। এ জন্য কোনো নীতিমালা না থাকাকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা গবেষণা না করে অগ্রিম খরচ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। এর একটা বিরাট অংশ থাকে নিজেদের সম্মানী ভাতা।

বাকি টাকা কেন্দ্রে উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয় বলে প্রতিবছর হিসাব দেখানো হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি কোনো কেন্দ্র প্রকাশনার জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে বলে হিসাব দেখায় তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিশোধ করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রিম দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গবেষকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গবেষকদের অল্প সম্মানী, যা তাদের গবেষণার কাজে উৎসাহ না দেওয়া। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের বাণিজ্যমুখী মানসিকতাও রয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাসের পর গবেষণায় মগ্ন থাকার কথা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার যথার্থ মান ও সুবিধা না থাকায় অনেক শিক্ষক দেশের বাইরে গিয়ে গবেষণা করেন। আবার অনেক গবেষক রয়েছেন যারা গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুরো টাকাই তুলে নেন। এর পর গবেষণার কার্যক্রম শেষ করেন না। অনেকের গবেষণা মানসম্পন্ন হয় না।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।