আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের বর্তমান অবস্থায় মিডিয়াকে আপনি কতটুকু দায়ী মনে করেন ?

অনেক দিন থেকেই আর ব্লগে লিখা হয় না, আসা ও হয় কম। এর একটাই কারন কিছু ব্লগারদের অসামাজিক আচরণ। ব্লগে আসলেই দেখা যায় আস্তিক-নাস্তিক, ছাগু-ভাদা এই সব নিয়ে কাচ্যাল, লাগামছাড়া গালাগালি। সামাজিক মিডিয়াতে যে নুন্যতম শালীনতাবোধ প্রয়োজন সেটা যেন কারো খেয়াল নেই। যাইহোক শেষ পর্যন্ত আবার আসলাম লিখতে।

বর্তমানে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে মনে হচ্ছে সহনশীলতার বড়ই অভাব এবং পরমত সহিষ্ণুতা বলে যে একটা কথা প্রচলিত আছে সেটা যেন সবাই বেমালুম ভুলে গেছে। যারা সাধারনত মনে করিয়ে দেয় তারা ও যেন আজ অন্য ভুমিকায়। আমি মিডিয়ার কথাই বলছি। বর্তমানে দেশে যে পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে মিডিয়ার ভুমিকা কি? আজকের একটা ঘটনা বলি, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আজ আমার একজন লোককে গুলিস্থান জিপিও তে পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। নামাজের পরে টিভি খুলে দেখি বায়তুল মোকাররম, পল্টনসহ অই এলাকা রণক্ষেত্র।

নিজের স্বার্থে একটা লোককে এমন বিপদের মুখে ঠেলে দেই কি করে। তাই খুব জুরুরি হলে ও বলতে পারছিলাম না, তুমি যাও। কিন্তু জিপিও তে অবস্থানকারী অন্যলোকটি বলছিল, ভাই এইখানে কোন সমস্যা নেই, সমস্য ছিল নামাজের পরে এখন মোটামুটি স্বাভাবিক। তখন প্রায়ই ৩ টা বাজে। তখন ও কয়েকটি টিভি চ্যানেল অনবরত প্রচার করে যাচ্ছে সংঘর্ষ চলছে।

ঠিক ওই মুহূর্তে আমার ফোনে কথা হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি বাম ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে। ওই প্রথমে বলল, টিভিতে যা দেখাচ্ছে তাতে তো মনে হয় পরিস্থিতি বেশ খারাপ। আমি তখন আমার অবস্থার কথা বললাম, জিপিও থেকে লোকে বলছে অবস্থা মোটামুটি শান্ত কিন্তু টিভি নিউজ দেখাচ্ছে বেগতিক, কি যে করি। আমার বন্ধুটি বলল, মিডিয়া আসলে ইদানিং একটু বাড়াবাড়ি রকম করছে, মিডিয়া নিজেদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, দেশের অবাস্থা নিয়ে না। আমার ও গত কিছুদিন তাই মনে হলে ও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে মিডিয়া গুলো এত দায়িত্বহীন।

শেষ পর্যন্ত আমার লোকটিকে পাঠালাম এবং সে ৪:৩০ এ ই ফিরে আসলো এবং বলল সবই শান্ত, বাইতুল মোকাররম মুল গেইট এর দিকে কিছু হতে পারে কিন্তু অই দিকে সমস্য নেই। ঠিক তখনই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। একদিন বন্ধুরা মিলে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে তাস খেলছিলাম। আমাদের থেকে ৩০০ মিটার দূরে বড়জোর, ২ দলে ১৫/২০ জন করে হবে, দাওয়া-পাল্টা দাওয়া হল এবং ২০-৩০ মিনিট স্থায়ী ছিল এটি, পরে সব শান্ত। আমরা আমাদের মত খেলা চালিয়ে গেলাম, নড়তে ও হয়নি।

কিন্তু পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রথম আলো তে নিউজ “ লীগ-শিবির সংঘর্ষ .. বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র”। আমি যেমন যার পরনাই বিস্মিত, আমার অন্য রুমমেট দের ও একই অবস্থা। সেই প্রথম দেখলাম “মিডিয়া কি করে তিলকে তাল করে”। কিন্তু মজার বিষয় হল সেই ভার্সিটি জীবন থেকে আমি নিয়মিত প্রথম আলোই পড়ে যাচ্ছি। এত কিছুর পরে ও প্রথম আলোর নিউজকে যতটুকু বস্তুনিষ্ঠ মনে হয় অন্যগুলোকে তা মনে হয় না।

আজকে কয়েকটি চ্যানেল এর ভিডিও ফুটেজ গুলো দেখলাম, একটা ছোট ৩/৪ বার করে জোড়া দিয়ে লম্বা করে দেখানো হচ্ছে, যাতে ঘটনার তীব্রটা অনেক বেশী প্রকাশ পায়। মিডিয়ার কর্ম কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা এক পক্ষকে আকাশে তুলে দিতে চায় আর অন্য পক্ষকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে চায়। যতই বিভাজন তৈরি হবে, ততই সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে, চ্যানেল গুলোর কাড়তি ও বাড়বে- “জয় ব্যবসা, হায় দেশ প্রেম”। এখনও মনে পরে ভার্সিটি লাইফএ বন্ধু হওয়ার সুবাধে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি ও ছাত্রশিবির সভাপতিকে একসাথে নিয়ে কাম্পাসেই আড্ডা দিয়েছি, আড্ডার পরে যে যার পথে চলে গিয়েছি। ছাত্রশিবির সভাপতি বন্ধুকে বলেছি “রাজাকার” তোমার দলের আমির কেন? সে তার কথা বলেছে কিন্তু মারতে আসেনি।

ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি কে প্রশ্ন করেছি, তোমাদের দলে এত নাস্তিক কেন? তোমরা নাস্তিক কেন? তর্ক হয়েছে কিন্তু ঝগড়া হয়নি। আমরা এখনও বন্ধু। আর এখন দেখি ভিন্ন মত দেখলে কেউ কথা বলার আগে গালি দেয়। সত্যি আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। আমাদের দেশ অনেক এগিয়েছে।

প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ও অনেক বিস্তার ঘটেছে। অনলাইন মিডিয়ার কল্যানে “রাজাকারের ফাঁসি চাই” আন্দোলন ও জনমত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই মিডিয়াই যেন মানুষে মানুষে ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে, মানুষকে অসহিস্নু করে তুলেছে। মানুষ এখন যুক্তির আগে গালাগাল দেয়, সত্য না জেনেই অন্যের উপর হামলা চালায়। বড়ই বিচিত্র !! বিঃ দ্রঃ দয়া করে উপরের লিখা পরে কেউ ভেবে নিবেন না, মিডিয়াকে দায়ী করছি বলে আজ যে মিডিয়া কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে তাকে সমর্থন করছি বা জায়েজ করার চেষ্টা করছি।

যে কোন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কে ঘৃণা করি সেটা যেই করুক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.