আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিক্সাওয়ালার আত্মহত্যা বনাম ক্রিকেটারদের প্রতিপত্তি লাভ



খেলা মানবদেহের জন্য দরকারি জিনিস। অফিস সভ্যতার প্রসারের পর নাগরিক মানুষ শারিরীক কোন কসরত করে না বললেই চলে। ফলে মোটা হয়ে যাওয়া ছাড়াও তাদের দেখা দিচ্ছে বুকের অসুখ, ব্লাড প্রেসার ডায়বেটিক সহ নানা ধরনের রোগ। যদিও খেলার মত কোনো জায়গা ঢাকা শহরে নাই। ফলে খেলা দেখেই মানুষ খেলার স্বাদ নিচ্ছে বলা যায়।

আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি যে খেলায় অর্থলগ্নী হয় তাকে জোয়াখেলা বলে। এ মূহুর্তে পৃথিবীতে ক্রিকেট আর ফুটবলের মত জোয়াখেলা আর নাই। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জোয়াড়িরা এই দুটি খেলাকে বাণিজ্যিকীকরণ করে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে আজ এই দুটি খেলার পেছনে কোটি কোটি ডলার লগ্নী হচ্ছে। যেহেতু পুঁজিবাদের চরম বিকাশের সময় তাই সবকিছুতে এখন বাজনার কোনো মাত্রা নাই। এই বাজনাতেই এই জোয়াখেলাটির বাজিমাত।

জোয়াখোররা সবসময় জোয়া খেলবে এটা আশ্চর্যের কি? তাই দেখা যায় ক্রিকেটের পরিচয় একটি দেশের নামে হলেও শেষ পর্যন্ত এই দেশপ্রেমের মুখে অহরহ চুনকালি মাখিয়ে টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করছে ক্রিকেটাররা। হেনসি ক্রনিয়ের মত লিজেণ্ড ও এর বাইরে নয়। এই জোয়ার গুটি ক্রিকেটারদের ভাল খেলা খারাপ খেলা সব টাকায় ধরাবাঁধা। আর প্রচারে গুণে দামি খেলা হলেও ক্রিকেটের মত নিম্মানের ও অলস খেলা আর নাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজবাজ ফেলে মানুষ এটা দেখতে থাকে।

দূর্ভাগ্যক্রমে এই ক্রিকেট ছড়িয়েছেও প্রাক্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কলোনীতে হয়তো গরীবদের নিস্কর্মা করে রাখার একটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে এটি। আর তাই নিয়ে মেতে উঠেছে তৃতীয় বিশ্বের উপোসী জনগণ ও সরকার। এমনকি একটা দেশের সরকার প্রধান পর্যন্ত যখন এই বিষয়টা নিয়ে মেতে উঠে তখন ধাঁধাঁ লাগে। তাদের ঘোষনা করা হয় জাতীয় বীর। তাদের কে গাড়ী বাড়ি ফ্যাট ডলার দেবার উন্মাদনায় আমরা শুনতে পাইনা কামরাঙ্গীর চরের আল আমিনের গগন বিদারি আর্তনাদ।

আল আমিন দুটি রিকশার মালিক। রিকশাগুলো হয়ত সে দিনের পর দিন রিকশা চালিয়ে, হয়তো সে কোন এন জিওর কাছ থেকে কর্জ করে কিনেছিল। এ দুটি থেকে হয়তো প্রতিদিন তার শ’দুয়েক টাকা আসত। আর এটা দিয়েই চলত তার সংসার আর কর্জ শোধ। সেই রিকশা দুটিই তিনদিনের মাথায় চুরি হয়ে যায়।

একটা চুরি হয় শনিবার অন্যটি সোমবার। চুরি হয় এজন্য যে আলআমিনের শ্রেণীর মানুষের রিকশার মালিক হবার অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারে নাই। রিকশা দুটি চুরি হওয়ার পর আলা উদ্দিন কী ভেবেছিল জানতে পারলে ভাল হত। কিন্ত হয়তো তিনি নিরর ছিলেন। সুইসাইট নোট লিখে যেতে পারেন নাই।

তিনি ভেবেছিলেন পুলিশের কাছে গেলে অভিযোগ করতে যে টাকা লাগে তা তিনি কোত্থেকে দেবেন, একজন রিকশাওয়ালার কি সেই সাহস হয়েছে যে থানায় গিয়ে রিকশা চুরির অভিযোগ করবে? মহল্লার শালিসকাররা কি ক্রিকেট বিজয়ের আনন্দ উল্লাস ফেলে তার সামান্য রিকশা চুরির অভিযোগ শুনতে চাইবেন? এই ধরণের অনেক পথই কি তিনি খুঁজেন নাই? কিন্তু তিনি সব প্রশ্নের উত্তরে কেবল একটা দানবীয় চেহারাই দেখতে পেলেন রাষ্ট্রের। যার হাত পা মাথা কোথায় তা আবিস্কার করা আল আমিনের একজীবনে সম্ভব? অন্যদিকে ঘরে উপোসী সন্তান, অসুস্থ স্ত্রী, ঘুপরি ভাড়া, দোকানদারের বকেয়া, এনজিওর কর্জ? তাকে নিয়ে যায় প্রতিবাদ ও মুক্তির কাছে। তিনি আদমবোমায় পরিণত হন। খলিফাঘাটের বাসায় সবাই ঘুমিয়ে গেলে চুপি চুপি আড়ার সাথে গলায় দঁড়ি বেধে তিনি চিরমুক্তি লাভ করেন। জীবনানন্দের আধুনিক মানুষ তিনি ছিলেন না।

এক গাছা দড়ি হাতে চুপি চুপি জীবনের অর্থহীনতার কারনে গলায় দঁড়ি দেন নাই। জীবনের অর্থময়তাই তাকে গলায় দড়ি দিতে বাধ্য করেছে। একচোখা দানবরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এর চেয়ে তীব্র অথচ নীরব প্রতিবাদ আর কী হতে পারে? তিনিইতো প্রকৃত ভূমিপূত্র। অন্ধ সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী জাতীয় বীর। আসুন আমরা নীরবে অপো করি আলাউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানদের অনাহারে মৃত্যুর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।