আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম মানুষকে বদলাতে পারে? (স্বপ্নডানা) মন্তব্য (আশরাফ মাহমুদ মুন্না)

মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে।

সপ্নডানা ভাই, শেষের দু'টি লাইন যদি একটি স্তবক (Paragraph) ধরি, তা'হলে আপনি মোট ৭টি প্যারায় আপনার বক্তব্য সাজিয়েছেন। ব্লগের টাইটেল বা শিরোনাম দিয়েছেন, ' ধর্ম কি মানুষকে বদলাতে পারে? " দুঃখিত, আপনার বক্তব্য থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসা শুধু মুশকিলই নয়, অসম্ভবও বটে। আপনি ‘‘ধর্ম মানুষকে বদলাতে পারে”-এটিও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি এবং ‘‘ধর্ম মানুষকে বদলাতে পারে না ”- তা-ও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি। প্রথম প্যারা বুঝতে পারলাম।

“ ধর্মকে সভ্যতা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না ............. শাসিত হত ”, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, ২য় প্যারা তো বুঝলাম না। লিখেছেন, “যেহেতু ধর্মকে নিয়ে সভ্যতা দিন দিন এগিয়ে চলেছে, সেই কারণে ধর্ম গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে’’ - আপনার এ-কথার অর্থ কী? সভ্যতা ধর্মকে নিয়ে এগিয়ে গেছে বলেই, ধর্ম গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে, What does it mean? সভ্যতা ও প্রগতি - এ-দু’টি শব্দের মধ্যে পার্থক্য আছে। জানিনা, তা আপনি মানেন কি-না। আমার জানা মতে, সভ্যতা (Civilization) হলো বস্তুগত জিনিষ, যা ধরা যায়, ছোঁয়া যায় এবং দেখা যায়।

ইট-পাথর, বুল-ডোজার, রেডিও-টিভি, কম্পিউটার, গুলি-বন্ধুক-মিসাইল, ব্রীজ-কালভার্ট-দালানকোটা-স্কাইস্ক্রেপার, সমস্ত প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ইত্যাদি ইত্যাদি। আর প্রগতি (Progress) হচ্ছে, অবস্তুগত জিনিষ। প্রেম-ভালবাসা, দয়া-মায়া, মানবতা, মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি বোধহয়, “সভ্যতা” শব্দটির জায়গায় “ প্রগতি” শব্দটি লিখতে চেয়েছিলেন, মনের ভুলে “সভ্যতা” শব্দটি এসে গেছে। ঐ যে কী-না বলে, Slip of the Mind. তাই না? একই প্যারায় শেষ লাইনে লিখেছেন, “ধর্মীয় গোড়ামি আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া” - একথা প্রতিষ্ঠিত করা খুবই ডিফিকাল্ট।

ধর্মীয় গোড়ামির পিছনে সামাজিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক ইত্যাদি নানান কারণ বিদ্যমান। আপনার ঐ লাইনে সভ্যতার স্থলে প্রগতি শব্দটি বসালেও তো আপনার লাইনটি কোন তাৎপর্যে আসে না। আদিম যুগ থেকে শুরু করে সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র (সাম্যবাদ, আসি আসি করেও আসলো না, সমাজতন্ত্রেই মুখ থুবড়ে পড়লো। ) এবং কল্যাণরাষ্ট্র - প্রভৃতিকে যদি প্রগতির এক একটি খুঁটি ধরি, তা হলে সেগুলোও তো ধর্মকে গুরুত্বহীন করতে পারে নি। এখনো ধর্ম স্বমহিমায় বিদ্যমান।

উল্টো প্রগতির Monopoly’র দাবিদার সমাজতন্ত্র পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এবং ধর্ম উত্তোরোত্তর বর্ধিঞ্চু। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকা তথা বিশ্বে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হালাল ফুড তথা Commodity উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভারত ও চীন। এবং এর চাহিদা বৃদ্ধির হার বিলিয়নের ঘরে। আপনার ৩য় প্যারার জবাব উপরেই দেয়া হয়েছে।

তবু বলি, ধর্ম তো অনেক আছে। শিখ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বাহাই ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, ইসলাম ধর্ম। আপনি কোন ধর্মের কথা বলতে চেয়েছেন? এ-ব্যাপারে কোন গবেষণা, থিসিস বা পরিসংখ্যান আছে কী? না-কি কল্পনা থেকে সিদ্ধান্তে এসেছেন? ৪র্থ প্যারায় লিখেছেন, “ধর্ম ইনসিগনিফিকেন্ট হলেও এটার একটা দরকার সমাজে আছে। তা নাহলে, যারা অর্ধশিক্ষিত মানুষ, বা অশিক্ষিত মানুষ বা অন্ধ প্রকৃতির মনোবৃত্তি নিয়ে চলেন, তাদের অবলম্বন হারিয়ে যাবে। এই অবস্থায়, ধর্মকে রিনোভেট করার প্রয়োজন আছে।

ধর্মের আচার ব্যবহারের পরিপূর্ণতা দান করতে হবে। এবং এই যুগের সুপার ফাস্ট লাইফের সাথে তা মানানসই করে নিতে হবে। অন্যথায়, কিছু ধর্ম পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বাধ্য। “ আপনার কথায় মনে হচ্ছে অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতরাই শুধু ধর্ম পালন করে। শিক্ষিতরা করে না।

এ-তথ্য আপনি কোথায় পেলেন? এ-ব্যাপারে কোন গবেষণা হয়েছে কী বাংলাদেশে? না-কি আপনার মনগড়া তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের মন থেকেই প্রসব করেছেন এ-তথ্য। শিক্ষিতরা বরং সঠিকভাবে সহীহভাবেই ধর্ম পালন করে বা করতে চায়। আপনি লিখেছেন, ধর্মের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি এগুলোকে সুপার ফাষ্ট লাইফের সাথে মানানসই করার জন্য রিনোভেট করে পরিপূর্ণতা দান করতে হবে। আপনি নিজে প্রফেট হয়ে চেষ্টা করে দেখুন না? আর কোন কোন ধর্মের কোন কোন রীতিনীতি আপনার অপছন্দ তার একটি লিষ্ট দেবেন দয়া করে? বাংলাদেশে প্রায় ৯৫% মুসলমান। ইসলাম ধর্মের কোন কোন রীতিনীতি Change করা দরকার।

এবং পরিবর্তিত রীতিনীতি কেমন হওয়া দরকার, তা জানাবেন? আপনি প্রশ্ন রেখেছেন, ধর্মান্তর কী প্রয়োজনীয়? এটি আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন? যে ধর্মান্তরিত হচ্ছে তাকে প্রশ্নটি করুন। এ-টি তার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয় কী? তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা নয় কী? আপনার প্রশ্নটি হাস্যকর মনে হচ্ছে না এখন আপনার কাছে?। আপনি লিখেছেন, মানুষের আচার আচরণে ধর্ম প্রভাব ফেলতে পারে না। গভীর ভাবে চিন্তা করার দরকার নেই, অষ্টম শ্রেণীর কোন ছাত্রকে প্রশ্ন করলেই সে-ই বুঝিয়ে দেবে আপনাকে ধর্ম কী ভাবে মানুষের আচার আচরণে প্রভাব ফেলে বা মানুষের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার দুই লাইনের উপসংহারের কথা না-ই বা মন্তব্য করলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.