আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেত্রী দ্বয়ের প্রস্থানই সমাধান নয়; অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চাই একমাত্র সমাধান।

ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের। আমাদের দেশের এত এত সমস্যা। সব ছাপিয়ে যে সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হল রাজনৈতিক অস্থিরতা।

অনেকে বিশ্বাস করেন নেত্রী দ্বয়ের প্রস্থানই সব সমস্যার সমাধান করে দেবে। আর সে লক্ষে পর্দার অন্তরালে কর্মযজ্ঞও কম চলেনি। কি লাভ হল? যারা এখনো তাদের প্রস্থানের জন্য অপেক্ষা করে আছেন শান্তির প্রত্যাশায়। তারা বোধ হয় শান্তি নয় অশান্তি আর অস্থিরতারই পথ চেয়ে আছেন। দুই নেত্রীর প্রস্থানকে যারা আমাদের দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করেন তাদের কাছে আমার সবিনয়ে প্রশ্ন- নেত্রী দ্বয়ের প্রস্থানের পরে কারা দলের হাল ধরবেন? যাদেরকে এদের উত্তরসূরি বলে মনে করা হয় তারা কতটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন? দুই নেত্রীরই রাজনীতিতে প্রবেশ ছিল অনেকটা সময়ের প্রয়োজনে একান্ত বাধ্য হয়ে।

স্ব স্ব দলের ক্রান্তিকালে অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তাদের হাল ধরা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু কেন? দুটি দলেই তো বেশ কিছু যোগ্য নেতা তখনো উপস্থিত ছিলেন। তারপরেও কেন দুই নেত্রীকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে আনতে হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরেই তাদের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। সেদিনের সেই দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক অবিশ্বাস, সর্বোপরি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কি আজো কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? না তারা সে চেষ্টাটা করেছে? দুই নেত্রী তো আর চিরঞ্জীব নন, একদিন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তাদের গত হতেই হবে। তখন কি পুরাতন সেই দ্বন্দ্ব নতুন করে আরও প্রকট আকারে দেখা দেবে না? দেবে, প্রকটভাবেই দেবে তার কারণ।

তখন হয়ত সে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য আজকের অনেক প্রবীণ নেতাও আর অবশিষ্ট থাকবেন না। তখন কি হবে? এই দল দুটির মধ্যে কোন রকম গণতন্ত্রের চর্চা নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে যে প্রক্রিয়ায়ই নির্বাচন করা হোক কেন নিঃসন্দেহে বর্তমান নেত্রী দ্বয়ই নির্বাচিত হবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলিয় প্রধানের পর থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের নেতৃত্বে। তারমানে হচ্ছে দলে গণতন্ত্রের চর্চা না হওয়ায় লাভবান হচ্ছে তারাই যারা সহজে নেতৃত্ব পেতে চান।

ক্ষতি যা কিছু তা দলের। এটা তারা বুঝেও কেন ইলেকশনের চেয়ে সিলেকশনকেই বেশি পছন্দ করেন তা নেত্রী দ্বয়ই ভাল জানেন। আমরা যা বুঝি তা হল এতে করে এমন কোন নেতা তৈরি হচ্ছেনা যারা পরবর্তীতে এত বড় একটি দলকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। একটি বড় দলে, দলীয় শৃঙ্খলা অত্যন্ত জরুরি যা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত নেতৃত্ব না থাকলে রক্ষা করা অসম্ভব। দল ক্ষমতায় থাকলে দলীয় বিশৃঙ্খলা অতটা চোখে পড়ে না আজ তাই আওয়ামী লীগের গৃহ বিবাদ বিএনপির মত অতটা স্পষ্ট নয়।

আর তাছাড়া বিএনপি’র তুলনায় আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও গণতান্ত্রিক চর্চা করেন। কিন্তু সেটা কি যথেষ্ট? অনেকে বলেন নেত্রী দ্বয়ের প্রস্থানের পরে দলে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য নেতা স্ট্যান্ড বাই রাখা হয়েছে। তারা কারা তাও খুব একটা গোপন নয়। কিন্তু কথা হল তারা কি তখন খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবেন? যদি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েও থাকেন দল চালাতে কতটা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারবেন তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। এই সব আগামীর নেতাদের দলিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করিয়ে আগে থেকেই তৈরি করে নেয়াটাই কি ভাল নয়? দুটি দল থেকে সর্বোচ্চ উচ্চারিত শব্দ “গণতন্ত্র”।

এ শব্দটি বলতে আসলে তারা কি বোঝান তা তারাই জানেন। তবে সাধারণ মানুষ দেখে এ দুটি দলের মধ্যে যেমন গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তেমনি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ষোল আনা ভোগ করলেও অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। বিরোধীদলকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে বার বারই নামতে হয় রাস্তায়। রাস্তায় নেমে তারা হরণ করে চলেন সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।

সরকারও তখন সাধারণ মানুষের দোহাই দিয়েই তাদের হটান অগণতান্ত্রিক পন্থায়। এই যে গণতন্ত্র শব্দটির সুবিধা মত ব্যবহার এটাই আমাদের এখনকার রাজনীতির চালচিত্র। আমাদের নেতৃবৃন্দের দিবারাত্র একটিই কম্ম আর তা হল কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় আর কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সে নিয়েই কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের চেষ্টা। ক্ষমতা বলতে যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারোহন, তা নয়। যেহেতু দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই সেহেতু সবারই চেষ্টা কিভাবে বিশেষ নোটবুকে নিজের নামটা অঙ্কিত করা যায়।

আর তা করতে তারা সবই করেন। এমনকি এক নেতাকে বিপদে ফেলতে আরেক নেতার বিরোধী শিবিরের সাথে আঁতাতের খবরও পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। দ্রষ্টব্য-** রাজনীতি যখন হয় ক্ষমতা কেন্দ্রিক তখন জনস্বার্থ উপেক্ষিত হতে বাধ্য। আর তাই এই মুহূর্তে আমাদের দেশে চলমান হানাহানি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিনাশ, জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতিসাধন এ সবই করা হচ্ছে রাজনীতির নামে কিছু ব্যক্তি, পরিবার ও দলের স্বার্থে। এখানে আদর্শ বা জনকল্যাণ বিবেচ্য নয়।

দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র হীনতা স্বাভাবিকভাবেই প্রভাবিত করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে। যেখানে দলের সব নেতারা একটি বিশেষ আসনে উপবিষ্ট’র দিকে তাকিয়ে থাকেন সকল সিদ্ধান্তের জন্য। যখন নিজের অবস্থান চ্যুতির ভয়ে স্বীয় মত তুলে ধরার চিন্তাও করতে পারেন না কেউ। সেখানে সেই একজন তো তখন সঙ্গত কারণেই একনায়ক হয়ে উঠবেন, এটাই স্বাভাবিক। যা একসময় তাকে স্বেচ্ছাচারীও করে তোলে।

এতে তার দোষ কোথায়? আমাদের দেশে এর উদাহরণ খুঁজে দেখতে হবে না। চোখ তুলে তাকালেই দেখা যায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমস্যা মানেই দেশের সমস্যা। কারণ অদূর ভবিষ্যতেও এ দুটি দলের বিকল্প কোন রাজনৈতিক দলের দেখা মিলবে বলে আশা করা দুরূহ। এমন নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত চোখে পড়ে না।

যারা বিভিন্ন সময়ে এ দুটি দল থেকে বিভিন্ন কারণে বেড়িয়ে এসেছেন তারাও একই দোষে দুষ্ট। এরা না ঘরকা না ঘাটকা। এদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় মুখে যাই বলুন না কেন এরা ক্ষমতার মোহেই দল ত্যাগ করেছিলেন, কোন আদর্শগত কারণে নয়। তাদের দেখলে মনে হয় সত্যিই এ দেশে কথা বলার মানুষের অভাব নেই। অভাব কাজের মানুষের।

আর তার থেকেও বেশি অভাব সৎ মানুষের। এখানে আমি সৎ বলতে তাদেরকে বোঝাচ্ছি যারা কথা ও কাজে সৎ। আমাদের আছেন ড., আছেন ডাঃ, আছেন বির বিক্রম, আছেন দুই নৌকায় পা রাখা “ভাই”। এ ছাড়াও আছেন সফল অনেক বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ। যাদের প্রত্যেকেই অনেক আশা নিয়ে এক একটি দল গঠন করেছিলেন।

সাধারণ মানুষ ভেবেছিল তারা একটি আদর্শকে ধারণ করেন বলেই হয়ত দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা, শীর্ষ নেতৃত্বের একনায়কতন্ত্র সুলভ আচরণ মেনে নিতে না পেরে দল ত্যাগ করে একটি আলাদা প্লাটফর্ম গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই তারাই যখন পুড়নো ছায়ায় জড়ো হয়ে একই সুরে আওয়াজ তোলেন তখন তাদেরও ক্ষমতার মোহে অন্ধ বলেই প্রতিভাত হয়। সাধারণ মানুষ পৌনঃপুনিক আশাহত হয়। আদর্শহীন রাজনীতি এই নেতাদের গড়া দলগুলোকে এক দল-এক নেতার নাম সর্বস্ব দলে পরিণত করেছে। ফলে আজ তারা নিজেরাই অস্তিত্ব সঙ্কটে পরেছেন।

নিজেদের এবং স্বীয় দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গিয়ে পুনরায় ছেড়ে আশা দলেরই ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া কতটা সম্মানজনক তা নিশ্চয়ই তারা আমাদের চেয়ে ভাল জানেন। তবে সাধারণের মানুষের আস্থার জায়গাটি যে খুইয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। এই নেতাদের কাছে যদি নিজ স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ ঊর্ধ্বে স্থান পেত, যদি গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সামান্যতম শ্রদ্ধা থাকত, যদি তারা এতটা মোহান্ধ না হতেন তাহলে খুব সহজেই তারা সবগুলো দলকে নিয়ে একটি জোট করে গণতান্ত্রিক পন্থায় নিজেদের নেতা ঠিক করে নিতে পারতেন। তাদের নিজেদের গণতান্ত্রিক চর্চা দেখে সাধারণ মানুষ আশান্বিত হতে পারত। নিঃসন্দেহে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাত।

কিন্তু সেই আলোকিত পথে না গিয়ে তারা আধারেরই সহযাত্রী হলেন। আজ জোটের নামে তারা এক মঞ্চে বসেন, একই কথা বলেন। প্যাড ছাড়া তাদের আলাদা কোন সত্ত্বা নেই। মহাজোট বলুন আর আঠারো দলীয় জোট বলুন একই কথা। এ সবই দল ছুটদের পুনরেকত্রিকরনের ক্ষেত্র বৈ আর কিছু নয়।

এখানে নেই ভিন্ন মত, ভিন্ন সুর। মহাজোটে একশ দল ভিড়লেও যেমন আওয়ামী লীগের ধ্যান-ধারনার বাইরে যাবার সুযোগ নেই। তেমনি বিএনপিতে আঠার দল কেন আরও একশ দলছুটরা ভিড় করুক আন্দোলনের মঞ্চের শোভাবর্ধনের বেশি কিছু করার ক্ষমতাই তাদের নেই। তাই এরাও আজ পতিত। এ অবস্থায় আমাদের দেশের রাজনৈতিক অনাচার দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিটি দলের ভিতরে-বাইরে গণতন্ত্রের চর্চা।

এর কোন বিকল্প নেই। আর এর শুরুটা যে মাননীয় নেত্রী দ্বয়কেই করতে হবে তা বলাই বাহুল্য। আজ তারা যদি দলের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করে না যান। তাদের অবর্তমানে তাদের প্রিয় দল সুসংগঠিত থাকতে সক্ষম হবে না। আর যেহেতু এ দেশের মানুষকে ধারণ করতে পারার মত এ দুটি দলের কোন বিকল্পও নেই।

তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বিপর্যয় দেশকেও ঠেলে দিতে পারে সমূহ বিপর্যয়ের মুখে। তা নিশ্চয়ই নেত্রী দ্বয় চান না। তাই এ দেশের স্বার্থেই নেত্রী দ্বয়ের প্রস্থান নয় চাই তাদের দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা। কারণ ওটাই একমাত্র সমাধান। ** Click This Link 2013&type=gold&data=Tax&pub_no=1087&cat_id=1&menu_id=1&news_type_id=1&news_id=168267  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.